- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

গুয়াতেমালা: গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া জেসুস টেকুর কর্মকাণ্ড

বিষয়বস্তু: ল্যাটিন আমেরিকা, গুয়াতেমালা, ইতিহাস, মানবাধিকার

মায়া আচি অ্যাক্টিভিস্ট জেসুস টেকু অসারিও [1] গণহত্যা থেকে বেঁচে আসা এক ব্যক্তি, শিশু বয়সে সে ছিল রিও নেগ্রো গণহত্যার [2] এক সাক্ষী। এটি ছিল গুয়াতেমালার সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাসে এক জঘন্য হত্যাকাণ্ড। তার অনেক বন্ধু, তার দুই বছর বয়স্ক ছোট ভাই এবং তার তরুণ বাবা-মাকে হত্যা করা হয়। সে ও তার সাথে বেঁচে যাওয়া ১৭ জন শিশুকে কিছু সময় জোর করে কাজ করানো হয়। যে লোকটি তার ভাইকে মেরেছিল তার বাসায় টেকু কাজ করতে বাধ্য হয়।

ছবি রেনাটা অভিলা

ছবি রেনাটা অভিলা

কয়েক বছর পর টেকু তার বোনের বাসা থেকে বের হয়ে আসে। গণহত্যায় যারা মারা গেছে টেকু তাদের শরীরের অবশিষ্ট অংশ কবর থেকে তুলে এনে পরীক্ষা করে। এই ঘটনার ফলে যারা এই গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল, তাদের ৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়। ঘটনাটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ন্যায় বিচার প্রতিস্থাপিত করণ ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

টেকু একটি বই লিখেছেন যার নাম “রিও নেগ্রো গণহত্যার স্মৃতি” যা যুদ্ধ থেকে বেঁচে আসা এক গৃহহীন শিশুর অভিজ্ঞতা। তাডেও নামক ব্লগার টেকুর গল্পের আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন [3]:

সেদিন সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী মহিলা ও শিশুদের ঘিরে ধরে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে তারা গেরিলাদের সাহায্য করছে। তারা এক সাথে সবাইকে ধর্ষণ, অত্যাচার ও খুন করার জন্য এগিয়ে যায়। ১৯৮২ সালের ১৩ মার্চ রিও নেগ্রোর হত্যাকাণ্ডে ১৭৭ জনকে মারা হয়, যাদের মধ্যে ১০৭ জন শিশু্ও ছিল। যে অল্প কয়েকজন এই ঘটনা থেকে বেঁচে যায়, যাদের বেশীরভাগই অল্প বয়স্ক বালক, তাদের জোর করে দাসত্ব মূলক শ্রমে যুক্ত করা হয়। রিও নেগ্রোর ঘটনায় বেঁচে যাওয়া জেসুস টেকু বর্ণনা করেন জাকোক প্যাক এর এক নেতা তাকে দাস বানিয়ে ফেলে, যে তার ছোট ভাইয়ের হাত কেটে টুকরো করে এবং পা দিয়ে লাথি মারে, তার সামনে তার ছোট ভাইয়ের মাথা পাথরে আছাড় মারে, কারণ তার স্ত্রী এত ছোট একটা বাচ্চাকে বহন করতে সক্ষম ছিল না।

টেকুর ঘটনা অন্যদের থেকে আলাদা, কারণ সে তার সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে গেছে, যাতে সে তাদের মানবাধিকার লড়াই-এ সাহায্য করতে পারে। সে দরিদ্র মানুষ ও অল্প শিক্ষিত লোকজনদের আইনী সহায়তা দেবার জন্য এক কেন্দ্র খুলছে, যাতে তারা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারে। গুয়াতেমালার গৃহযুদ্ধ থেকে বেঁচে আসা টেকু এবং তার মত লোকজন মিলে সৃষ্টি করেছেন নিউ হোপ ফাউন্ডেশন (এফএনএফ)। তাদের উদ্দেশ্য কি এই বিষয় সম্বন্ধে জানা যাবে তাদের ব্লগে [স্প্যানিশ ভাষায়] [4]:

Consideramos que una buena educación para nuestros hijos es la única manera de combatir la intolerancia, construir una paz verdadera, y mejorar la calidad de vida para nuestras comunidades en las que viven en extrema pobreza tantos sobrevivientes de la violencia pasada.

আমরা বিবেচনা করি আমাদের সন্তানদের কেবল মান সম্মত শিক্ষা প্রদানই আমাদের উপেক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করা, দেশটিতে সত্যিকারের শান্তি বয়ে আনা এবং আমাদের সম্প্রদায়ের লোকদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব, গণহত্যার ঘটনা থেকে বেঁচে যাবার পর অনেকে প্রচণ্ড দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

আচি সম্প্রদায়ের মধ্যে অতীতকে স্মরণ করার এরকম আরো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা এটি নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে তা পালন করছে। আচি সম্প্রদায় সম্প্রতি রাবিনাল [5] শহরে রীজ ইবো’ই সেন্টার [6] নামের এক প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে, যেখানে লোকজন এই গণহত্যা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারবে এবং একই সাথে তারা এই মায়া সম্প্রদায়ের গৌরব ময় সংস্কৃতি ও অতীত সম্বন্ধে জানতে পারবে। কো অর্ডিনেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল একোম্পানিমেন্ট ইন গুয়াতেমালার (একুগুয়াতে) সাথে এক সাক্ষাৎকারে টেকু ব্যাখ্যা করেছেন, রাবিনালের পরিস্থিতি খুবই জটিল, যখন থেকে এই অপরাধ ঘটেছে এবং যারা এর শিকার, তারা সেই একই ছোট্ট গ্রামে জায়গা ভাগাভাগি করে বাস করছে।

ক্রিস্টিনা গ্রের প্রতিষ্ঠানের নাম ইয়োথ হেল্পিং ইয়োথ। তিনি তার ব্লগে বলছেন কি ভাবে টেকু সেখানে আসা ভ্রমণকারীদের গ্রামের মানুষদের অবস্থা বর্ণনা করছে [7]

রোববার সকালে, প্রতিনিধি দল, উদ্বাস্তু শিবিরের বাস করা ব্যক্তি এবং উভয়ের মধ্যে যিনি সঞ্চালক হিসেবে কাজ করেছেন, তারা সবাই জেসুস টেকুর সাথে সাক্ষাৎ করেন, যিনি একজন মায়া আচি ভাষী ব্যক্তি এবং তিনি ১৯৮২ সালে সংঘটিত রিও নেগ্রো গণহত্যা থেকে বেঁচে যান। তিনি আমাদের শোনাচ্ছেন রাবিনাল এবং প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের কিছু ইতিহাস, যা সেই সব মুহূর্তের ধারক, যেখানে সে সকল গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এই সকল মুহূর্ত এই সম্প্রদায় ও বিদেশীদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কথা, যারা এই গণহত্যাকাণ্ডে মারা গেছে এবং যখন সরকার এই বিষয়টি সকলের কাছে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দিতে চায়, তখন এই প্রচেষ্টা সেই বিষয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে ওঠে।

এই কাজের জন্য টেকু রিবক মানবাধিকার পুরস্কার [8] পেয়েছেন, এই প্রত্যক্ষদর্শী ভিডিওতে তিনি ন্যায়বিচার অর্জনের পথে যে সমস্ত সমস্যাকে মোকাবেলা করেছেন [9] সেগুলোর কথা উল্লেখ করেন:

টেকু এবং আচি সম্প্রদায়ের লোকের নেওয়া উন্নয়ন পরিকল্পনা সত্বেও, সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন এখনো গুয়াতেমালা সরকারকে চাপ প্রদান করছে এই ঘটনায় যারা দোষী তাদের শাস্তি প্রদান করার জন্য, যা কালেকটিভো গুয়াতেমালা ব্লগে [10] প্রদর্শন করা হয়েছে। সে ঘটনায় অংশ নেওয়া কয়েকজন ব্যক্তি তাদের কাজের মধ্যে দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল।

সম্প্রতি টেকুকে ভয় দেখানোর জন্য ফোন করা হয়েছিল। গুয়াতেমালা সলিডারিটি নেটওয়ার্কের পাড ডানিয়েল এই সংবাদটির কথা বর্ণনা করেছেন [11]:

২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরের এক বিকেল বেলা, মানবাধিকার কর্মী জেসুস টেকু অসরিও তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে অচেনা এক নম্বর থেকে এক ফোন পান, যে ব্যক্তি তার সন্তানদের অপহরণ, অত্যাচার ও তাদের কেটে টুকরো টুকরো করার ভয় দেখায়, তার প্রত্যেকটি ছেলেকে একই অবস্থা করবে বলে সে হুমকি দেয়। উক্ত ফোন করা ব্যক্তি জানায় যে, সে জানে জেসুস কোথায় তার ছেলেমেয়ে এবং সন্তানসহ বাস করে এবং তার বড় ছেলে যে স্কুলে পড়ে সেই স্কুলের অবস্থানও সে জানে। গুয়াতেমালার অনেক মানবাধিকার কর্মীর মতো তাকেও বছরের পর বছর অনেক বার খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেসুস এইসব ভয়ে ভীত হয়নি, সে তার মানবাধিকারের কাজ চালিয়ে গেছে।

গুয়াতেমালার সামাজিক পরিবর্তনের সমস্যায় এই শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে এই রকম ভয় দেখানো ফোন করার কারণে এটি পরিষ্কার বোঝা যায় যে, এই ব্যাপারে আরো অনেক কাজ করতে হবে।