আগস্টের ২৪ তারিখে, দুই তরুণ পথচারী, যাদের একজন আমেরিকান, যার বয়স ১৯ বছর ও অপরজন এক চীন বংশদ্ভূত নাগরিক যার বয়স ২১ বছর, স্টামপেডের দুর্গম পথে হারিয়ে যাওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। এই এলাকাটি আলাস্কার ফেয়ারব্যাঙ্কসের কাছে অবস্থিত। যখন তাদের আবিষ্কার করা হয়, তখন তাদের পরনে ছিল শহুরে পোশাক এবং তাদের কাছে জীবন ধারনের জন্য সামান্য কিছু খাবার ছিল। এ রকম প্রস্তুতি ছাড়া বন্য এবং মানব বসতিহীন কোন এলাকায় অভিযাত্রীকে পাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়।
অন্যদের মতো তারাও ম্যাজিক বাস বা যাদুকরী বাসটিকে খুঁজে বের করা চেষ্টা করছিল,যা ১৯৯৬ সালে সবেচেয়ে বেশি হওয়া বিক্রি ইন টু দা ওয়াইল্ড বইয়ের অন্যতম প্রধান চরিত্র। পরে এই বইটিকে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত করা হয় যাতে সীন পেন অভিনয় করে। ২০০৭ সালে তৈরি হওয়া এই চলচ্চিত্রটির পরিচালক ছিলেন সীন পেন নিজে।
এই বইটির লেখক জোন ক্রাকাউয়ের, যিনি এই বইটি লিখেছেন ক্রিস্টোফার আলেকজান্ডার ম্যাকক্যান্ডেলের সত্য ঘটনা অনুসারে যে সুপারট্রাম্প নাম গ্রহণ করেছিল। সে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স্নাতক পর্বের এক ছাত্র। সে যুক্তরাষ্ট্রের পথে বেরিয়ে পড়ে তার বন্ধু ও পরিবারকে পেছনে ফেলে। এই পথ তাকে তার দুর্ভাগ্যজনক লক্ষ্যের পথে ঠেলে দেয়, আলাস্কার পথে। সেখানে ১৯৯২ সালে তাকে এক বাসে আবিষ্কার করা হয় মৃত অবস্থায়। সেই বাসটি এক সময় জনসাধারণকে পরিবহন করত, পরে তা স্থানীয় শিকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়।
তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে, অনাহারে মারা যাওয়া থেকে বিষ শরীরে প্রবেশ করা অথবা এমন এক ক্ষত যা ঘটনাটিকে রহস্যাবৃত করে ফেলে।
কানাডার স্টার নিউজপেপারে মতে প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১০০ মতো লোক তীর্থ হিসেবে ম্যাকক্যান্ডেলের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তাকে বিবেচনা করা হয় স্বাধীনতা ও প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া এক মানুষের প্রতীক হিসেবে।
বাসের প্রতি তীর্থযাত্রা
রোমাঞ্চের সন্ধানে বের হওয়া অভিযাত্রী ও ব্লগার ডান যার ব্লগ দা রোড চুজ মি। তিনি বর্ণনা করেন যে পথে গমন করে ম্যাকক্যান্ডেল মৃত্যু বরণ করেছে সেই পথের বিপদ সম্পর্কে।
এই পথে আমি অস্ট্রিয়ার দুই বর্ণ ময়/ঠান্ডা চরিত্রের অধিকারি ব্যক্তি থমাস ও (আর-কে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চারণ করতে হবে) রোলান্ড, তাদের দেখা পেলাম ডালটন সড়কে এবং বাসটি দেখতে যাবার জন্য তাদের অনুরোধ করে এই বিষয়ে তাদের প্রভাবিত করতে ১০ সেকেন্ড সময় লেগেছে। আমরা স্টাম্পেডের রাস্তার উপর প্রায় ১২.৫ মাইল গাড়ি চালাতে পারলাম, তারপর যানটিকে রাস্তায় রেখে পায়ে হেঁটে চললাম। পরের দিন দেড় ঘন্টা পায়ে হাঁটার পর আমরা সত্যিকারের এক সুন্দর পথ চিহ্ন পেলাম, যার উপর দিয়ে আমরা ভ্রমণ করতে শুরু করে দিলাম। পথে কয়েকটা জলাভূমি, পায়ের পাতা ভিজে যায় এমন কয়েকটি অগভীর নদী পড়ল এবং তা আমাদের টেকলিনিকা নদীর কিনারে নিয়ে গেল।
তারা নদীর স্রোতে বিস্মিত হল এবং একটা জায়গা আবিষ্কার করল যেখান দিয়ে নদী পার হওয়া যায়। যখন নদীর এক খানে উরু পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেল, তখন আমি কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম এবং তখন স্রোত সত্যিই জোরে ধাক্কা দিচ্ছিল,” ডান লিখেছে, ঘটনাক্রমে তারা ফেয়ারব্যাঙ্কস বাস ১৪২ এর কাছে পৌঁছায়”:
যখন এই পথের ধারে ১৪২ নম্বর বাসটি দৃশ্যমান হলো তখন এক আমার ভিতর থেকে আকস্মিক এক দীর্ঘশ্বাস বের হল […], কিন্তু সেখানে যাবার জন্য তখন প্রস্তুত ছিলাম না, আমি পরিষ্কার প্রান্তে এক মুহূর্ত থামলাম এবং এরপর ক্লান্ত শরীরে দরজার দিকে এগুলাম, সবকিছু যেন ভেতরে নেবার চেষ্টা করলাম, যদিও আমি এর আগে কখনো সেখানে প্রবেশ করি নি- কিন্তু সবকিছু আমার কাছে খুব পরিচিত মনে হচ্ছিল-বইয়ের বর্ণনা, চলচ্চিত্র এবং অনলাইনে আমি যে ছবি দেখেছি, সব কিছু ঠিক তার মতই।
আমি মনে করেছিলাম যে ম্যাজিক বাস হবে এমন এক জায়গা যেখানে সময় কাটানো হবে বেদনার- কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে আমি ঠিক এর উল্টোটাই আবিষ্কার করলাম।
বাসের বর্ণনা
দেখে মনে হচ্ছে কিছু ভ্রমণকারী এই সমাধিসৌধের প্রতি শ্রদ্ধা রাখে না। আলাস্কার ফেয়ারবাঙ্কসের ব্লগার এড প্লুম্বস বিষয়টি তার ব্লগ দি এ্যাডভেঞ্চারে বর্ণনা করেছেন, তিনি লিখেছেন: এই বাসে তার দ্বিতীয় ভ্রমণ সম্বন্ধে:
অবশেষে আমরা বাসের কাছে এসে পৌঁছলাম এবং আবিষ্কার করলাম পুরো বাসটি এলোমেলো হয়ে আছে। কিছু জানালা ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে, ভাঙ্গা কাচের টুকরো এখানে সেখানে পরে আছে এবং বাসটির বেশীরভাগ জিনিসপত্র ওলটপালট অবস্থায় রয়েছে, বাসের ভেতরে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে এবং এর কাছে কিছু ফার জাতীয় গাছ জন্মেছে।
এই বাস কেবল যে নির্ভীক রোমাঞ্চ সন্ধানী অভিযাত্রী অথবা যারা জীবনকে নিয়ে খেলা করে কেবল তাদেরই আকর্ষণ করে না, এই বাস চিত্রশিল্পী এবং ব্লগার হীদার হর্টনকে আকর্ষণ করেছে, ভদ্রমহিলা তার ওয়েবসাইটে এক চিত্রশিল্পের প্রদর্শন করেছেন এই বাস ভ্রমণের অনুপ্রেরণায়:
যখন আমি এই চিত্র অঙ্কন করি তখন আমার মাথায় ছিল ক্রিস ম্যাকক্যান্ডেল এর কথা। যখন সে বাসে বাস করছিল সে সময় আমিও বাসের কাছে গিয়েছিলাম। সৌভাগ্যজনক ভাবে সে সময় কিছু ছবি তুলেছিলাম, যেগুলো আমার ভেতরে আবেগ এবং স্মৃতি বন্যার মত ফিরিয়ে এনেছে। যে ১১৩ দিন সে বাসে কাটিয়েছে, আমি সে সময়কার কথা আমি ভাবছিলাম, সে কি ভেবেছিল, যে জানলা দিয়ে সে বাইরে দিকে তাকিয়েছিল, জানালার এক খণ্ডে তার যে প্রতিচ্ছবি পড়েছিল তার মধ্যে দিয়ে সে নিজের দিকে তাকিয়েছিল। এই পেইন্টিং-এ আমার নিজের যাত্রার শুরু, ঠিক সেখানে সে নিজের উপর শেষ পরীক্ষাটি করে, তার নিজের দুর্ভাগ্যজনক পথে, চূড়ান্ত যাত্রায় রওনা দেয়।
দুর্ভাগ্যজনক এই রকমের অসংখ্য অভিযান স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর এক চাপ সৃষ্টি করেছে, যখন এদের কারণে বাসিন্দাদের ব্যয়বহুল উদ্ধার অভিযান চালাতে হয়। ঘটনাক্রমে আলাস্কার লোকেরা আলোচনা করছে এক সময় তারা ম্যাজিক বাসটিকে সরিয়ে এমন এক জায়গায় নিয়ে আসবে যেখানে ভ্রমণকারীরা সহজেই যেতে পারে।