- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

আরব বিশ্ব: ৯/১১ নামক ঘটনায় তৈরি হওয়া ক্ষত নিরাময়

বিষয়বস্তু: উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., মরোক্কো, যুক্তরাষ্ট্র, লেবানন, স. আরব আমিরাত, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, ধর্ম, নতুন চিন্তা, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি, শিল্প ও সংস্কৃতি, সরকার

২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ঘটনা ঘটে দেশটি সেই স্মৃতি বেদনার সাথে স্মরণ করছে। সারা বিশ্বের বাকী দেশগুলোও এই ঘটনা একই ভাবে স্মরণ করছে। অনেক আরবের জন্য এই দিনটি যৌথ ভাবে এক উপলব্ধি পরিবর্তনের দিন। এই দিনে বিশ্ব যে ভাবে আরবদের দেখে এবং আরবরা বিশ্বকে যে ভাবে জানত সে ধারণা মৌলিকভাবে বদলে যায়। অনেকের মতে সন্দেহ আর ভয়, এখন উভয়ের মধ্যে সাধারণ বিভাজন রেখা তৈরি করে ফেলেছে। অন্যদের মতে এটা আরো সচেতনতার প্রয়োজনকে তীব্র করেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বুজ এল আরব আলোচনা করেছেন ২০০১ সালের পর থেকে বিশ্ব কতটা বদলে গেছে তা নিয়ে। তিনি ৯/১১ নামক ঘটনার যারা শিকার তাদের স্মরণ করেছেন এবং চিহ্নিত করেছেন [1] এর পর বিশ্ব কতটা বদলে গেছে।

আট বছর আগের এই দুর্ভাগা দিনে নিউ ইয়র্ক শহরের ৩০০০ বাসিন্দা প্রাণ হারায়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এইসব নিষ্পাপ লোকদের মেরে ফেলার ঘটনা, বিশ্বের আরো অনেক লোকের জীবন ছিনিয়ে নেয়। এই দিনটি আমাদের আধুনিক বিশ্বকে চির দিনের জন্য বদলে দিয়েছে এবং অনেকে হয়তো বলতে পারে এই পরিবর্তন ভালো কিছু্ বয়ে আনে নি..।

আট বছর মনে হয় অনেক লম্বা সময় এবং আমি মনে করতে পারি না ৯/১১-এর আগে বিমান ভ্রমণ কেমন ছিল, কতটা কম জটিল ছিল। আমি স্মরণ করতে পারি না, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কতটা সহজ ছিল। আমি মনে করতে পারি না, যেহেতু আমি গত আট বছর এই সব কাজ করার চেষ্টা করি নি। চলুন আমরা আশা করি, ভালো কিছু পরিবর্তন করব, আরো স্বাধীনতা ও নাগরিক মুক্তির জন্য চেষ্টা করে যাব, গরিবদের কন্ঠস্বর দেব এবং যখন সমস্যা সমাধানের আর কোন উপায় থাকবে না কেবল তখন যুদ্ধকে সমাধান হিসেবে বেছে নেব।

উইল ডোনাভান একজন আমেরিকান ব্লগার, যার ব্লগ শিরোনাম সাম গাই ইন লেবানন বা লেবাননের কিছু লোক, তিনি আমাদের জানাচ্ছেন [2] কি ভাবে ৯/১১-এর পর বিশ্ব কতটা বদলে গেছে:

আমি এই তারিখটির উপর এক মুহূর্ত প্রতিফলিত করবো- সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখটিকে মনে হয় পরিচয় করিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই। এটা এমন একটা দিন, যা লম্বা সময় ধরে এক আতঙ্কের সাথে স্মরণ করা হবে যে, এদিন আমেরিকায় এক নজীর বিহীন সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এই দিনে মনে হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির লম্বা হাত ও ঘটনা হঠাৎ সমুদ্র পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে হাজির হয়েছে। যেমন সৌদি আরব, তেলের পয়সায় যারা সমৃদ্ধ হয়েছে এবং আমেরিকার অন্যতম এক সহযোগী তার নাকের ডগায়, আমাদের নিরাপত্তার ধারণাকে মুছে ফেলা হয়েছে এবং বিচ্ছিন্নতাকে গ্রহণ করা হয়েছে। হঠাৎ এক তীব্র উপলব্ধি হয় যে, আমেরিকা একাই শূন্যের উপর দাঁড়িয়ে নেই। মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন কৌতূহল জন্মলাভ করেছে- লোকজন আরবীকে এক অভূতপূর্ব সংখ্যায় গ্রহণ করেছে এবং আমাদের রাষ্ট্রপতি ও পররাষ্ট্রনীতি এই অঞ্চলের উপর এক নতুন নীতি গ্রহণ করেছে, বেশীর ভাগ সময় যা আরো খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। ১১ই সেপ্টেম্বরকে অস্বীকার করা আমার পক্ষে অসম্ভব, যা আমাকে জাগিয়ে তোলে, একই সাথে মধ্যপ্রাচ্যে সর্ম্পকে কৌতূহলী করে তোলে।

আমেরিকান কৌতূহল অনেকগুলো বিপর্যয় তৈরি করে, যার মধ্যে রয়েছে নিশ্চিতভাবে ইরাক যুদ্ধ, গাজায় ফাতার বিপর্যয়কারী অর্থবিনিয়োগ, এবং আরব স্বৈরশাসকদের উপর একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নতুন অংশীদার, নির্মম ভাবে মধ্যপন্থী মুসলিম গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিনষ্ট করা, কিন্তু তার একটাই কৌতুহলী মুহূর্ত রয়েছে- বুশ উচ্চস্বরে লেবাননে “মার্চ ১৪” যৌথ বাহিনীকে সমর্থন করে যাচ্ছে, যখন ২০০৫ সালে এটি লেবাননের রাস্তায় সিরিয়া কর্তৃক দেশটি দখলের প্রতিবাদ করে, ঘটনাটি ঘটে সে সময় যখন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রফিক হারারিকে খুন করা হয়। আমি আমেরিকার বৈদেশিক নীতির সকলই যে একই রকম গুণাবলী সম্পন্ন তা বলবো না, কিন্তু এটা অস্বীকার করা যাবে না যে , এক সমুদ্র পরিমাণ ব্যর্থতার মাঝে, সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখের পরে আমেরিকার আলোচ্য সূচির ভেতরে একটা উজ্জ্বল চিহ্ন। এটা আমার নতুন জীবন ধারাকে শক্তিশালী করেছে।

আরেকজন আমেরিকান এক আরব দেশে বাস করে, তিনি ৭৬০ ডে ইন মরোক্কোর বা মরোক্কোতে ৭৬০ দিন, ব্লগিং-এর পেছনে রয়েছেন। তিনি একজন আমেরিকান, যার পূর্বপুরুষ আরব, তিনি বর্তমানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি ওই দিনটি সম্বন্ধে তার আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জানাচ্ছেন [3], কিভাবে সে দিনটি তার জীবনের উপর প্রভাব ফেলেছিল:

এটা সেই দিন, যে দিনের ঠিক আট বছর আগে এক নিষ্ঠুর কার্য ঘটে। “যে দিনটি আজও পৃথিবীতে রয়ে গেছে”। যে দিনটিতে আমরা স্মরণ করি আমরা ঠিক কোথায় ছিলাম এবং আমরা ঠিক কি করছিলাম। যে দিনটিতে অনেকের জীবন চির দিনের জন্য পাল্টে গেছে। এরপর থেকে আমরা প্রতি বছর ওই দিনটিকে স্মরণ করি। এই দিনটিতে আমার এক বন্ধু আমাকে ডেকেছিল এবং বলেছিল, “কেন এই সব কাজ আমরা আমাদের উপর সৃষ্টি করছি”? সে সময় আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি নি। এর আগে আমি ইসলাম সম্বন্ধে তেমন একটা ভাবিনি। এর আগে আমি বিল লাদেন অথবা আল কায়দা সম্বন্ধে তেমন একটা শুনি নি। যদিও লেবাননের আরব -আমেরিকান বংশজ হিসেবে এই ঘটনার জন্য আমাকেও আংশিকভাবে দায়ী হতে হয়, এমনকি এখন একজন মুসলিম হিসেবে আমি আমার হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে এই ব্যাপারে অপরাধ অনুভব করি, এ ব্যাপারে আমি একা নই। বিশ্বের বেশীর ভাগ মুসলিম এই বিষয়ে দোষ স্বীকার করে নেয়। আমি আমার হৃদয়ের গভীর থেকে বিশ্বাস করি যে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা এই সমস্ত ঘটনায় অপরাধ অনুভব করেন। ওই সমস্ত লোকেরা যে কাজ করছে তা পুরোপুরি ইসলাম বিরোধী। আমি তা জানতে এসেছি ভালোবাসায় এবং তা গ্রহণ করেছি। তারা যা করছে তা যদি ইসলামের সত্যিকারে অংশ হত, তা হলে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতাম না।

ব্লগার উপসংহার টানছেন একটা গল্প বলে যে কি ভাবে তিনি এক উন্নত ভাবনার অংশীদার ছিলেন:

হ্যাঁ, এই কাজটি থেকে আমাদের নিজেদের বাইরে রাখে করতে হবে।। আমি আমার খালার বলা এক গল্প স্মরণ করতে পারি, যেখানে খালার বাস করা ছোট্ট শহরে এক মুসলিম পরিবার বাস করত। ৯/১১ পরে এই পরিবার সেখানকার সম্প্রদায়ের মধ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করল, এটা ব্যাখ্যা করার জন্য যে ইসলাম কি এবং কেন সন্ত্রাসবাদ ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তারা নিজেদের এ সবের বাইরে সম্পৃক্ত রাখল, যাতে তাদের প্রতিবেশীরা বুঝতে পারে ইসলামের প্রকৃত মানে। যে কলেজে আমি এর আগে আমি কাজ করতাম, সেখানে আমি একটি বিভাগে যোগদান করি এবং সেখানকার কর্মীরা আলোচনা করত যা প্রায়শই আমার মাথার উপর দিয়ে যেত, তারা মুসলিম কন্ঠস্বরকে টেবিলের এক আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে নিয়ে আসত। আমি নিজেকে এর বাইরে রাখতাম যাতে তারা ইসলাম সম্বন্ধে এক সত্যিকারের ধারণা লাভ করতে পারে। নিজেদের সেই সমস্ত বিষয়ের বাইরে রাখার মধ্যে দিয়ে ইসলামের সত্যিকারের অর্থ ছড়িয়ে দেবার মাঝেই ইসলামের প্রকৃতি জিহাদ পালন করা হয় এবং সে দিনের পর থেকে এই ভাবনা ৮ বছর কেবল ধারাবাহিক ভাবে চালিয়ে আসা নয়, রোজ কেয়ামতের আগ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া।

মরোক্কোর ব্লগার মার্টাস খুব সাধারণ একটা বার্তা আমাদের জানাচ্ছেন [4]:

আমি শান্তি, ভালোবাসা, স্বাধীনতা এবং সহ-অবস্থান প্রবর্তনের প্রস্তাব রাখছি যেখানে/যেভাবে পারি। কেবল সামান্য এক সহৃদয়তার মধ্যে দিয়ে…. এবং স্মরণ রাখা দরকার আমরা সকলেই প্রথমে এবং সব সময়ের জন্য মানুষ বটে।

একটা কৌতূহলজনক বিষয় রয়েছে কি ভাবে আমেরিকানদের দৃষ্টিভঙ্গি আরব ও অন্য মুসলিমদের ক্ষেত্রে ২০০১ সালের পর পাল্টে গেছে, পিউ রিসার্চ সেন্টার ফর পিপল এন্ড প্রেস নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এক গবেষণা [5] প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম “ মুসলিমরা সারা বিশ্বে এক বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছে”।