সিনেটর এডওয়ার্ড “টেড” কেনেডি ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে ল্যাটিন আমেরিকার থেকে আগত সম্প্রদায় যাদের যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাটিনো নামা জানা যায়, তারা বৃষ্টির মতো ব্লগ পোস্ট করে। এই সব শব্দে বেদনা ছিল এবং তাকে স্মরণ করার মাঝে অজস্র প্রশংসা বাক্য ঝরে পড়ছিল।
ইউনাইটেড ফার্ম ওয়ার্কার্স বা সংযুক্ত খামার শ্রমিক সংগঠন- মাঠ পর্যায়ের অভিবাসী অধিকার আদায়কারী দল, যারা খামার শ্রমিকদের কাজের শর্ত ও আইনগত অবস্থান সংস্কার করেছে-তারা তাদের ব্লগে কেনেডির বন্ধুত্ব ও সমর্থনের কারণে, তার সম্মানে এক এক লেখা পোস্ট করেছে। এই লেখার শিরোনাম, “আমাদের দীর্ঘ সময়ের বন্ধু সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি স্মরণে”। এখানে বলা হয়েছে:
বছরের পর বছর ভালো ও মন্দ উভয় সময়েই সিনেটর কেনেডি খামার শ্রমিকদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের সাথে পথযাত্রা ও শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে, তাদের হয়ে রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়েছে এবং তাদের আইনগত অধিকার আদায়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবনের কক্ষ থেকে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়ার ধুলায় ধুসরিত মাঠ পর্যন্ত গিয়েছে।
যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের খামার শ্রমিকদের সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডোলারেস হুর্য়েতো একবার বলেছিলেন, রবার্ট ও টেড কেনেডি, আমাদের কাছে এসে বলেন নি আমাদের জন্য কোনটা ভালো? তারা বলেছেন, “তোমরা কি চাও? এবং কি ভাবে তোমাদের আমি সাহায্য করতে পারি? এ কারণেই আমরা তাদের ভালবাসি”।
ওয়াশিংটনে একজন বিশ্বস্ত সহযোগীর প্রস্থানে অভিবাসীরা সমন্বিত অভিবাসন সংস্কার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে, যা ২০১০ সালের এক সময় পর্যন্ত পর্যালোচনার জন্য আটকে রয়েছে। ল্যাটিনা লিস্টা এ সম্বন্ধে লিখেছে, এই বিষয়ে কেনেডির ভূমিকা কেবল এক সহযোগীর চেয়ে অনেক বেশি ছিল:
….প্রবীণ প্রজন্মের ল্যাটিনোদের কাছে তার মৃত্যু একটা যুগের পরিসমাপ্তির সঙ্কেত প্রদান করছে, যখন “সম্মানিত ল্যাটিনো” শব্দে এক বিশ্বস্ত অপরাজিত লড়াকু ওয়াশিংটনে লা জেনটে ভাষণে আওয়াজ তুলেছিল।
১৯৬৫ সালে কেনেডির ঐতিহাসিক অভিবাসন সংস্কার আইনের কারণে ন্যাশনাল অরিজিন ইমিগ্রেশন (১৮৯০ এর আগে থেকে যারা আমেরিকায় বাস করত, সেই সমস্ত ব্যক্তিরা যে দেশ থেকে এসেছিল কেবল সেই দেশ থেকে অভিবাসী আসতে পারবে এই ছিল আইন) কোটা বা সংখ্যার পরিসমাপ্তি ঘটে। এর ফলে পশ্চিম ইউরোপের দেশ থেকে কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণ লোক নেওয়া উঠে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের দরজা -অপশ্চিমা দেশগুলোর জন্য খুলে যায়, প্রাথমিক ভাবে বলা যায়, ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ার লোকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়।
সম্প্রতি তিনি যে সমস্ত বিষয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন তার মধ্যে রয়েছে ড্রিম এ্যাক্ট, এজিজবস, চিপ এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ।
তিনি সমন্বিত অভিবাসন সংস্কার আইন ২০০৭ এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, যা এখনো আইনে পরিণত হয় নি। এটিকে বর্তমান অভিবাসন সংস্কার আইনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, সিএইচআইপি এবং ভিএডাব্লিউ সামাজিক সেবার সুযোগ করে দেবে, যার ফলে যে সমস্ত অভিবাসী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছে তারা নানা ভাবে সাহায্য পাবে। ড্রিম এ্যাক্ট ও এজি জবস বৈধ কাগজ নেই এমন অনেক অভিবাসীর নাগরিকত্ব প্রদানের রাস্তা তৈরি করবে, এ দেশে তার চাকুরি প্রদান ও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে।
সমন্বিত অভিবাসন আইন সংস্কার এই সকল পদ্ধতির পরিবর্তন আনবে, যেখানে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার নামে অভিবাসীদের যে পদ্ধতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, সেই সকল পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে, বৈধ কাগজ ছাড়া যে সমস্ত অভিবাসী এ দেশে রয়েছে তাদের শুনানিতে সহায়তা করবে, বর্তমানে যারা দেশটিতে কাগজ ছাড়া বাস করছে, তাদের এ দেশের নাগরিকত্ব পাবার পথ তৈরি করে দেবে, মেক্সিকোর বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় সাহায্য করবে, এবং অভিবাসন সংক্রান্ত আমলাতন্ত্রকে উন্নত করবে।
কেনেডির অভিবাসন সংস্কার উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছে। এর সাথে কিছু ঐতিহাসিক সংগঠন যুক্ত ছিল, অভিবাসন অধিকার নীতি আদায়ের ব্যাপারে। যেমন, ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ লা রাজা বা লা রাজার জাতীয় সমিতি, লিগ অফ ল্যাটিন আমেরিকান সিটিজেন বা সংযুক্ত ল্যাটিন আমেরিকান নাগরিকদের দল, মেক্সিকান -আমেরিকান লিগাল ডিফেন্স এন্ড এডুকেশন ফাণ্ড বা মেক্সিকান-আমেরিকান বাসিন্দার বৈধতা রক্ষা সমিতি এবং শিক্ষা তহবিল।
২০০৯ এর ৭ সেপ্টেম্বরে জাতীয় শ্রম দিবসে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ লা রাজা ল্যাটিন শ্রমিকদের অভিজ্ঞতার উপর মনোযোগ প্রদান করে। এটা ল্যাটিন শ্রমিকদের অনেক বিষাদময় এক বাস্তবতার ছবি তুলে ধরে: কম বেতন, সুবিধার অভাব, কাজে বিপজ্জনক শর্তাবলি এবং উচ্চ মৃত্যুহার, এই সমস্ত ঘটনায় বেশি আক্রান্ত হয় ল্যাটিনো শ্রমিকরা। লেখক লেইহ গ্রাহাম চেঞ্জ.অর্গে ব্লগ করেন। গ্রাহাম বলেন এইসব তথ্যে অভিবাসী সংস্কার আইনে শ্রমের শর্তাবলী উন্নত করার যে কথা বলা হয়েছে, তা সমর্থন করে।
এইসব সংবাদ জানাচ্ছে, উন্নত ও নৈতিক এক অভিবাসন আইন সংস্কার দরকার। এটি শ্রম শোষণ রোধ ও কাজের বাজার উন্নত করার প্রথম ধাপ সৃষ্টি করবে, যারা কম মজুরিতে কাজ করে তাদের জন্য।
ল্যাটিন সম্প্রদায়ের উপর কেনেডির প্রভাব, তাদের মধ্যে এক আদরণীয় সম্পর্ক তৈরি করেছিল। তিনি কখনই অভিবাসীদের, ‘আমরা বনাম তারা’ বলে উল্লেখ করতেন না। তিনি কখনই ভুলে যান নি তিনি নিজেই ছিলেন এক আইরিশ অভিবাসী পরিবারের উত্তরপুরুষ। “এ নেশনস অফ ইমিগ্রান্ট” বা “অভিবাসী এক জাতির” কথা বইয়ে তার লেখা মুখবন্ধটি ছিল কেনেডি পরিবারের মূল্যবোধের তীক্ষ্ণ স্বীকারোক্তি, যে পরিবার এক অভিবাসন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। এই বইটি লিখেছিল তার ভাই জন এফ কেনেডি।
এনডিএনে ব্লগ করেন ওয়াশিংটন ডিসির এক চিন্তাবিদ জোরা টাপিয়া-আলফারো। তিনি এ নেশন অফ ইমিগ্রান্টস এর মুখবন্ধ সবার সাথে ভাগাভাগি করেছেন তার পোস্টে, এই পোস্টের তিনি শিরোনাম দেন, এডোয়ার্ড কেনেডি: “যে মানুষটি ভুল কিছু দেখেছিলেন এবং সেটাকে ঠিক করার চেষ্টা করেছিলেন”।
“এখন থেকে ১৫০ বছর আগে আমাদের আইরিশ পুর্বপুরুষদের আটজনের সকলেই সাফল্যের সাথে আটলান্টিক পাড়ি দিতে সক্ষম হন, তাদের বিখ্যাত জাহাজ নিয়ে, যাকে আমরা জানি “কফিন শপ” বা “লাশবাহী” হিসেবে, কারণ এই কষ্টসাধ্য যাত্রায় অনেকেই বেঁচে যেতে ব্যর্থ হত… কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষ জীবিত ছিলেন, অভিবাসন আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে”।