ভারতীয় ব্লগাররা রাস্তায় যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করছে

493599_2ceb3d4d5e_mইভ-টিজিং” শব্দটি ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে মেয়েদের যৌন হয়রানি বা নিগৃহীত করা অর্থে ব্যবহার করা হয়। ছয় বছর আগে ভারতে চারুকলার এক ছাত্রী প্রথম ব্লাঙ্ক নয়েজ নামক এক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর উদ্দেশ্য ছিল রাস্তাঘাটে হয়রানি বন্ধ করা এবং এই বিষয়ে মানুষের মধ্যে ধারণা পরিবর্তন করা।

“ব্লাঙ্ক নয়েজ” এর মানে কি? এই অভিযানের সাথে যে ব্লগ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে:

ব্লাঙ্ক: আকারহীন, অর্থহীন
নয়েজ: উচ্চতা তৈরি করা, নির্মাণ, পূর্বের আকার ভেঙ্গে ফেলা।
ব্লাঙ্ক নয়েজ এক সঙ্গে দু'টি শব্দ যোগ করে, যারা পরস্পরের বিপরীত এক অর্থ তৈরি করে।
রাস্তাঘাটে আমরা প্রতিদিন ইভ টিজিং-এর শিকার হই। এটা এক ধরনের যৌন আঘাত, কিন্তু আমরা তা উপেক্ষা করি। একই সময় আমরা আমাদের জীবনকে এমন ভাবে তৈরি করি, যেন এই সমস্ত ঘটনাগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারি- অনেক ‘পরিচ্ছন্ন কাপড় পরি’, ঠিক সময়ে ঘরে ফিরে আসি, ইত্যাদি। এভাবেই নিজেদের জন্য এক না চাওয়া আইন তৈরি করি এবং নিজেদের নাগরিক হিসেবে চিনতে ব্যর্থ হই।

প্রতিদিন রাস্তায় যৌন হয়রানির নীরব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে ব্লাঙ্ক নয়েজ ধারণাটি এসেছে।

২০০৩ সালে চারুকলার শেষ বর্ষের এক ছাত্রী জেসমিন পাথেঝার এক পরিকল্পনা থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছে, যা ছিল রাস্তায় যৌন হয়রানির ব্যাপারে তার নিজস্ব জবাব। যৌন হয়রানির ঘটনাকে অনেক ভারতীয় পুরুষ এবং মহিলা স্বাভাবিকভাবে নেয় এবং তাকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করে। হয়রানি বন্ধের এই উদ্যোগ প্রথমে ছোট ছোট কর্মশালার উপর মনোযোগ দেয়, কিন্তু এরপর তা এক দলের মাধ্যমে সারা ভারতের ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা রাস্তার মাঝে এ ধরনের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে, রাস্তার শিল্প বা পাবলিক আর্ট এবং ব্লগ ব্যবহার করে, এই হয়রানির প্রকৃতি উদ্ঘাটন করার জন্য।

ইভ টিজিং কি?

এখানে মোটাদাগে রাখা চিহ্নটিতে যে মতামত দেওয়া হয়েছে, তা নির্দেশ করছে ইভ-টিজিং এর ব্যাপারে লোকজন কি ভাবে

এখানে মোটা দাগে রাখা চিহ্নটিতে যে মতামত দেওয়া হয়েছে, তা নির্দেশ করছে ইভ-টিজিং এর ব্যাপারে লোকজন কি ভাবে

ব্লাক নয়েজ গ্রুপ হয়রানির এই বিষয়টি তুলে ধরতে সারা দেশের জনগণের মতামত নিয়েছে:

অতীতে ব্লগে এই বিষয়ে অসংখ্য বির্তক হয়েছে, ঠিক কাকে নির্দিষ্ট ভাবে “রাস্তায় সংঘটিত যৌন আক্রমণ” বলে অভিহিত করা হবে। […] এ ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েছে, কোন ধরনের লোলুপ দৃষ্টিকে আইনগত ভাবে হয়রানি বলা হবে এবং যারা এই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে, তারা বলবে যে “হ্যাঁ, এটাই হয়রানি” আমরা কেবল জানি! এটা এমন এক ধরনের আলোচনা, যা আমরা রাস্তার উপর নিয়ে আসতে পারি। এই ব্যাপারে তথ্য এবং পরিসংখ্যান যা আমরা জোগাড় করার চেষ্টা করছি, যাতে এই বিষয়ে মতামত প্রদান করার মতো আলোচনা শুরু করা যায়। এই জনমত প্রদান, জনগণের জন্য এক নিরাপদ উপায়, যেখানে এই বিষয়টি যাচাই করে দেখা যেতে পারে এবং রাস্তায় তারা যে সমস্ত হয়রানির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তা স্বীকার করতে পারে।

২০০৭: নমিতা শর্মার চায়ের দোকান (গড়িয়াহাট, কোলকাতা) ব্লাঙ্ক নয়েজ এর জন্য ভোট প্রদানে স্বাগতম

২০০৭: নমিতা শর্মার চায়ের দোকান (গড়িয়াহাট, কোলকাতা) ব্লাঙ্ক নয়েজ এর জন্য ভোট প্রদানে স্বাগতম

4আই নেভার আস্কড ফর ইট:

২০০৮ সালের ৮ মার্চ (আন্তর্জাতিক নারী দিবস) ব্লাঙ্ক নয়েজ সারা ভারত জুড়ে রাস্তার বেশ কিছু ঘটনায় ধারাবাহিক হস্তক্ষেপ করে এই নামে, আই নেভার আস্কড ফর ইট বা আমি এর জন্য আহ্বান জানাই নি:

মারদাঙ্গা নায়ক: এন. একটি মহিলা যে রাস্তার যৌন হয়রানির মুখে, বিষয়টিকে ন্যায়সঙ্গত ভাবে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিল। তার চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া হতে পারত এই হয়রানির বিষয়টিকে উপেক্ষা করা, কিন্তু তা সে করতে বাধ্য হল, এটা খেয়াল না করার ভান করে। […] ব্লাঙ্ক নয়েজ স্ট্রিট এ্যাকশন আপনাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে একজন বীরত্ব পূর্ণ নায়ক হবার জন্য, অংশগ্রহণ কারীকে অনুরোধ করা হয় এমন এক পোশাক পরার জন্য, যে সমস্ত পোশাক পড়ে তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়। এই কাজটি করে তারা সক্রিয় ভাবে এমন এক অবস্থান নেয়, যাকে বলা যায় এভাবে যে ‘আই নেবার আস্কড ফর ইট’ বা ‘আমি এর জন্য আহ্বান জানাই নি ’।

এই কাজটি আরেক ভাবে করা হয়, এতে মেয়েদের একটি পোশাক পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়।

আপনি কি মনে করেন, আপনি এর জন্য তাদের উৎসাহিত করেন, যখন আপনি রাস্তায় যৌন হয়রানির শিকার হন? কতবার আপনি এক জোড়া জীনসের পোশাক, সালোয়ার কামিজ, স্কার্ট, টি শার্ট পড়ার জন্য নিজেকে অভিযুক্ত করেন? আপনি কি মনে করেন আপনি অপমানিত হবার যোগ্য? আপনি কি মনে কর এই বিশেষ ধরনের পোশাকের জন্য মেয়েরা রাস্তায় যৌন হয়রানির শিকার হয়?

আমরা বলি ‘না’। আমরা বলি হয়রানির জন্য ‘আহ্বান জানানোর’ মতো কোন বিষয় নেই এবং আপনাকে আমাদের প্রয়োজন এই বিষয় আমাদের/ আপনার নিজের ক্ষেত্রে এই হয়রানির বিষয়টি প্রমাণের জন্য।

যে সমস্ত পোশাক পরার জন্য আপনি ইভ টিজিং এর শিকার হয়েছেন সে রকম একটা পোশাক আমাদের পাঠিয়ে দিন। আপনার পোশাক হবে আপনার সত্য প্রকাশের হাতিয়ার, আপনার সাক্ষী, আপনার প্রমাণ, আপনার স্মৃতি। […] এরপর? আমরা প্রস্তাব করবো এই সমস্ত পোশাক আপনার শহরের রাস্তায় চালু করতে এবং যৌথ ভাবে এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাবো, যে মেয়েরা নিজেরাই যৌন আঘাতের জন্য আহ্বান জানায়।

ঘুরে দাঁড়ানো অথবা না দাঁড়ানো

ব্লাঙ্ক নয়েজ সম্প্রতি যৌন হয়রানি থেকে আত্মরক্ষার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিল।

গুঁড়া মরিচ, বাঁশের লাঠি, বেইগন স্প্রে (কীট নাশক মারা ওষুধ), খেলনা বন্দুক, বডি স্প্রে বা শরীরে দেওয়ার সুগন্ধী, বড় আকারের থলে, চোখ, লোহার মাপকাঠি, নখ, আত্মবিশ্বাস, রিং, কলম, গোল মরিচের গুঁড়া, কাগজ কাটার চাকু, পেনসিল, রাগী চোখে তাকানো, মুখ, হাত, পা, কনুই, চোখা পেনসিল, দাঁত, হাতব্যাগ, চিরুনি, বডি স্প্রে বা শরীরে দেওয়ার সুগন্ধী, ছোট সরু চাকু, মনোবিজ্ঞানের মোটা বই, সেল ফোন, মাথা, সদম্ভে চলাফেরা, মনোভাব, মোবাইল ফোন, বই, ফাইল, ব্যাগ, আড়াআড়ি দুই বাহু রাখা, কথোপকথন, কলম, পিন, সুই, শ্বাস নেবার স্প্রে, এক গোছা চাবি, মাথায় দেবার পিন, ৩৫৪ ধারার উপর করা ব্লাঙ্ক নয়েজের প্রচার পত্র, দোপাট্টা বা ওড়না ,দুই বাহু আড়াআড়ি করে রাখা, স্থির দৃষ্টিতে তাকানো, কটমট করে তাকানো, মোবাইল ফোনে কথা বলতে থাকা, চোখে চোখ না রাখা।

জনসম্মুখে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এই সমস্ত অস্ত্রগুলো মেয়েরা ব্যবহার কর। এই তালিকায় যে সমস্ত বস্তু অস্ত্র হিসেবে রাখা হয়েছে, সেগুলো সাধারণ দৃষ্টিতে অস্ত্র নয়, তবে সারা বিশ্বে অনেক মেয়ে এই সমস্ত বস্তু ব্যবহার করে, খানিকটা নিরাপত্তার খাতিরে। […] যৌন হয়রানি ক্ষেত্রে সংঘাতময় আত্মরক্ষা প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পড়ে না, কিন্তু তা এ ধরনের ঘটনায়, আদৌও কি কোন সাড়া দেবার মতো অবস্থার সৃষ্টি করে?

ব্লাঙ্ক নয়েজ গাই

এ বছরের শুরুতে ব্লাঙ্ক নয়েজ পুরুষদের জন্য একটা ব্লগ তৈরি করেছে যাকে বলা হয় ব্লাঙ্ক নয়েজ গাই:

ব্লাঙ্ক নয়েজ তীব্র ভাবে পুরুষদের প্রতি কৌতূহলী! প্রথম পর্যায়ে ব্লাঙ্ক নয়েজ গাই ব্লগ, পুরুষ/কিশোরদের রাস্তায় সংঘটিত যৌন হয়রানির প্রতি সাড়া দিতে আহ্বান জানায়। রাস্তায় সংঘটিত যৌন হয়রানির ব্যাপারে আপনার চিন্তা আমাদের লিখে পাঠান। যদি আপনি এ ধরনের কোন দৃশ্য দেখে থাকেন, তা হলে আমাদের লিখে পাঠান এবং তার প্রতিউত্তরে আপনি কি করেছেন সেই বিষয়ে আপনার অনুভূতি লিখে জানান, এমনকি যদি আপনি নিজেই এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত থাকেন, তা জানান (জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে)।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .