প্যালেস্টাইন: গাজায় রমজানের অভিজ্ঞতা

গাজার ব্লগাররা লিখছে কি ভাবে সেখানকার লোকজন রমজান পালন করছে এবং বর্ণনা করছে কিভাবে এখনো কিছু ঐতিহ্য সেখানে জীবিত রয়েছে।
৩৬০ কিলোমিটার২ অফ কেয়স ব্লগে লেখেন লিনা আল শরিফ, তিনি লিখেছেন:

গাজার রমজান অন্য সকল এলাকার মতো নয়। এখানকার লোকজনদের দুর্ভোগ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, এখন লোকজন ইফতার করে পানি পান করে, কারণ তারা এত গরিব যে তাদের খাবার কেনার মতো পয়সা নেই। অন্যরা উদ্বাস্তু শিবিরে বসেই ইফতার করে, কারণ যুদ্ধে তারা তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে।

এখানে মিশর থেকে চোরাই পথে খাবার আসে, তবে গড়ে এখানকার পরিবারগুলো সেই খাবার কিনতে সমর্থ। ইজরায়েলি অবরোধের কারণে সব জিনিসের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

তারপরেও, এখানে অনেক কিছু রয়েছে যে সব ঘটনায় আনন্দ পাওয়া যায়। লিনা এবং তার বন্ধু বদোউর আবু-কুয়াউক একসাথে গাজায় রমজানের এই দৃশ্যটি তুলে ধরেছে:

ইফতারের সময় আয়মান কাদার তার এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিল:

আজ আমার বন্ধু জুমার বাসায় রমজানের ইফতারের দাওয়াত ছিল। সে আল মাঘাজি উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করে। সেখানকার লোকজন যুদ্ধের প্রভাবের কারণে এখনো ভয়াবহ ভাবে ভুগছে। তাদের বাসা এবং রাস্তাগুলোর একই অবস্থা। গাজার বেশিরভাগ বিধ্বস্ত বাড়ির বাসিন্দারা ইতমধ্যেই উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং যুদ্ধের সময় তারা আরো একবার বাড়ি খালি করে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আমি আমার বন্ধুকে বললাম উদ্বাস্তু শিবিরে নিয়ে যেতে, সরু এক গলি ধরে আমরা সেখানে উপস্থিত হলাম। সেখানে বাস করা লোকদের যতই আমি কাছে পৌঁছলাম, বলা যায় ততই আমি উপলদ্ধি করতে থাকলাম উদ্বাস্তু শিবিরে থাকা লোকেরা কতখানি বেদনার মধ্যে বসবাস করছে। আল মাঘাজি উদ্বাস্তু শিবিরের মাঝখানে একটা ভবন রয়েছে যেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে- এই উদ্বাস্তু শিবিরে যে সমস্ত লোক বাস করছে তাদের জন্য বিষয়টি উপেক্ষা করা কঠিন। আমি আবিষ্কার করলাম সেখানকার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, এই ভবনের ভাঙ্গা ইঁটের টুকরো দিয়ে খেলছে, যা আমাকে সত্যিই ব্যথিত করে তুললো। কিন্তু মনে হলে এইসব বিষয় তাদের মনে কোন রেখাপাত করছে না এবং তারা সত্যিই সুখী।

প্যালটুডেই নিউজ নেটওয়ার্ক সম্প্রতি প্রকাশ করেছে যে গাজার বেকার লোকেরা অস্থায়ী এক পেশা মুশারিয়াতকে গ্রহণ করেছে। মুশারিয়াত নামক পেশার লোকেরা সুহর (সেহরী) খাওয়ার সময় লোকজনকে ডেকে তোলে। কানাডার এভা বার্টলেট ব্লগ ইন গাজায় লিখেছেন:

রাত ২টার সময় হাঁটতে হাঁটতে আমরা রমজানে যারা গান গেয়ে এবং ঢোল বাজিয়ে যায়, সেই মুশাহেরদের পার হচ্ছিলাম: এরা ভোররাতের (সেহরীর) খাবার খাওয়া ও ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মানুষদের জাগিয়ে তোলে।

সারা বিশ্বের মুসলিমদের মাঝে এই ঐতিহ্য বজায় রয়েছে এবং তা এখনো জীবিত। গাজার প্রায় নির্জন রাস্তায়, যেখানে গত কয়েক বছর রমজান সামান্য খুশি আর উৎসবের সাথে পালন হয়েছে, সেখানে এই শব্দ যে কোন ভাবেই হোক উৎসাহ জনক…. এই কারণে যে, এই সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য এখনো জীবিত রয়েছে, সবচেয়ে খারাপ সময় এবং ঘটনার মধ্যে দিয়েও।

কারো মতে, রমজানের এই মাসে ঢোল বাজানো আয়ের এক উপায়, অন্যথায় এক শ্বাসরুদ্ধকর অবরোধের কারণে সারা বছর কোন কাজ থাকে না।

এভার তোলা কিছু বিস্তারিত দৃশ্য:

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .