
টেড কেনেডির ছবি- উইকিমিডিয়ার মাধ্যমে পাবলিক ডোমেন থেকে নেওয়া
সিনেটর কেনেডিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের এক সত্যিকারের বন্ধু বলে উল্লেখ করেন এবং তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলায় কেনেডির ভূমিকার কথা আবার স্মরণ করেন। আমেরিকায় বসবাসরত একজন বাংলাদেশী ব্লগার হাবিব সিদ্দিকী বলেছেন:
গভীর বেদনার সাথে আমি এই মহান মানুষটির কথা স্মরণ করি, বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে যার অবদানের কথা আমাদের বংশধররা কখনই ভুলবে না।
আসলে বাংলাদেশের জন্য সিনেটর কেনেডি কি করেছিলেন? বিষয়টি সম্বন্ধে ব্লগারদের বলতে দেওয়া যাক।
স্মিথ বার্নি মিশ্র (হাইব্রিড) ব্লগিং প্লাটফর্ম ও সোশাল নেটওয়ার্ক সাইট ওপেন স্যালনে লিখেছেন:
১৯৭১ সালে মার্চে পূর্ব পাকিস্তানে (পূর্ব পাকিস্তান, যাকে পূর্ব বাংলা নামে ডাকা হত, এখন তার পরিচয় বাংলাদেশ নামে) পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর হামলার পর প্রায় ৯০ লাখ শরণার্থী সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্র (নিক্সন/কিসিঞ্জার সে সময়কার আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যারা ভিয়েতনামের কাদায় আটকে গিয়েছিল এবং পাকিস্তানের প্রতি দুর্বলতা প্রদর্শনের জন্য বিখ্যাত ছিল) এই বিষয়ে সামান্য জানাতে চেষ্টা করে। এদের থেকে ব্যতিক্রম ছিল আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ৩৯ বছর বয়স্ক সিনিয়র সিনেটর এডোয়ার্ড এম. কেনেডি।
তীব্র তাপ এবং আগষ্টের মৌসুমী বর্ষার মাঝেও সিনেটর কেনেডি পশ্চিম বাংলার (প্রতিবেশি ভারতের অঙ্গরাজ্য, পূর্ববাংলার সীমান্ত প্রদেশ) শরণার্থী শিবিরগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। দেশে ফিরে তিনি এ সম্বন্ধে অসাধারণ সব তথ্য সিনেটে উপস্থাপন করেছেন যে ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের দুর্দশার পরিমাণ কতটা বেদনাদায়ক। তিনি যাকে বলেছেন “সন্ত্রাসের শাসন” তা কি ভাবে পূর্ব বাংলাকে ঘিরে ধরেছে, সে সম্বন্ধেও তিনি সংসদে প্রমাণ উপস্থাপন করেন।
তিনি সে সময় উপসংহার টেনেছিলেন এভাবে: ইসলামাবাদের (পশ্চিম পাকিস্তান) প্রতি আমেরিকার এই পূর্ণ সমর্থন পূর্ব বাংলার মানবিক ও রাজনৈতিক দুর্দশা বাড়ানো ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা ছাড়া আর কোন কাজেই আসছে না।
কেনেডি কেবল সাক্ষ্য প্রমাণই নিয়ে হাজির হন নি, একই সাথে তিনি বিশ্বকে নাড়া দিয়েছেন, পূর্ব বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি সাহায্য না করলেও, শরণার্থীর দুর্দশা জানানো ও তাদের সাহায্য করার জন্য কাজ করে গেছেন।
আনহার্ড ভয়েস এক বাংলাদেশী মানবাধিকার ব্লগ যা সিনেটর এডোয়ার্ড কেনেডির যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট উপস্থাপন করা রিপোর্ট পুনরায় প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্ট শরণার্থীদের দুর্দশার কথা পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরে।
মেহরাব শাহরিয়ার ১৯৭১ সালে কেনেডির এই সব শরণার্থী কেন্দ্রে ঘুরে বেড়ানো সহ কিছু শরণার্থী ছবি পোস্ট করেছেন।
এইচ. এ. মাহমুদ জানাচ্ছেন:
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এডওয়ার্ড সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশে আসেন। এখানে তিনি একটি শোভা যাত্রায় অংশ নেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেন। এডওয়ার্ড কেনেডির স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক বটগাছটি এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
সাদা কালো ব্লগ কৃতজ্ঞতার সাথে কেনেডিকে স্মরণ করছেন:
টেড, তুমি বাংলাদেশের এক বন্ধু ছিলে। যদি তুমি আগস্টের ঘাম ঝরানো রোদের মধ্যে কাদার উপর দিয়ে হেঁটে এই সব শরণার্থী শিবিরে ঘুরে নাও বেড়াতে তবু তোমার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করত না। এই কারণে তুমি কোন ভোট লাভ কর নি। কিন্তু তুমি তা করেছিলে কারণ তা ছিল এক সঠিক কাজ। এবং তুমি আমাদের সাহায্য করেছিলে, কারণ এই কাজটিও এক সঠিক কাজ ছিল।