ইরান: অত্যাচার ও ধর্ষণের সাক্ষ্য প্রদান

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও ইরানের বর্তমান শাসন বিরোধীরা, ইরানী কর্তৃপক্ষের প্রতি অভিযোগ করেছে, যারা ১২ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জেলে গেছে, কর্তৃপক্ষ তাদের উপর অত্যাচার ও ধর্ষণ করেছে। ইরানের বিরোধী নেতা ও সংসদের প্রাক্তন স্পীকার মেহেদি কারুবি। তিনি দাবি করেন পুরুষ এবং নারী বন্দি উভয়কেই তেহরানের ইভিন ও কাহরিজাক জেলে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক বন্দিদের উপর মৃত্যুর পথে নিয়ে যাবার মতো অত্যাচার করা হয়েছে।

ইরানী জেলে ধর্ষণ ও অত্যাচারের মতো ঘটনা নূতন কিছু নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ইসলামী শাসনামলে জেলখানার উপর মনোযোগ প্রদান করে। ইরানের নাগরিক সমাজ, সামাজিক কর্মী, যার মধ্যে ইরানের অন্যতম চলচ্চিত্র পরিচালক রেজা আলমেজাদেহ অন্তর্ভুক্ত, তারা নাগরিক মিডিয়া ব্যবহার করেছেন ইরানের এই দু:খজনক ঘটনার সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করার জন্য।

১৯৮০র দশকে একজন রাজ বন্দি স্মরণ করেন তার জেলে যাওয়া, অত্যাচারিত ও ধর্ষিত হওয়ার ইতিহাস, যা তিনি পুনরায় বর্ণনা করেন। সে সময় তিনি ছিলেন এক ১৭ বছরের কিশোরী। তিনি জানতেন না কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় ৮৪,০০০ দর্শক ইউটিউবে তার সাক্ষ্য প্রদান ভিডিওটি দেখেছে।

কাহরিজাক

হাজার হাজার প্রতিবাদকারী যার মধ্যে কয়েক জন আহত ব্যক্তি ছিল, তাদের জুলাই-এ প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের মধ্যে থেকে কয়েকশ লোককে হয় জেলে বন্দী করা হয় অথবা এক অত্যাচার কক্ষ যার নাম কাহরিজাক, সেখানে পাঠানো হয়।

এখানে কারহিজাক থেকে ফিরে আসা এক ব্যক্তির সাক্ষ্য রয়েছে, যা কিনা কয়েকটি ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে।

তারা আর দশ জনের সাথে আমাকে কাহরিজাক ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আমাকে যে রুমের ভিতর রাখা হয়েছিল, সেখানে আরো অন্তত ২০০ জন লোক ছিল। তাদের ব্যাটন (পুলিশি লাঠি) দিয়ে মারা হয় এবং কক্ষের সকলেই আহত হয়েছিল। সেখানে, সব খানেই লোকজনের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল- সাদা পোশাকের প্রহরীরা রুমে প্রবেশ করে…সামনে যাকে পেয়েছে, তাকে মারতে শুরু করে.. প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এই কর্মকাণ্ড চলায়.. এরপর তারা একটা উজ্জ্বল আলো আমাদের চোখের সামনে ধরে এবং বলে তোমাদের পাছায় যদি এই ব্যাটনের বাড়ি পড়ে, তবে চেঁচিয়েছ কি মরেছ…আমরা যাতে ক্ষুধায় মারা না যাই, তার জন্য এক ব্যাগ ভর্তি ফেলে দেওয়া পুরোনো খাবার রেখে যায়।

এই সাক্ষাৎকারে এই ব্যক্তি আমাদের জানাচ্ছে, কি ভাবে কাহরিজাক বন্দিশালায় বন্দিদের জোর করে মেঝের উপর ঢেলে পানি চেটে পান করানো হত।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেইনি কাহরিজাক বন্ধ করে দেবার আদেশ দিয়েছেন। সংসদ সদস্যরা বলছেন যে, ১২ জন অফিসার ও বিচারক, কাহরিজাক এর ঘটনার পর বিচারের সম্মুখীন হয়েছে।

বিদ্যুৎ-এর তার দিয়ে পেটানো, কোন প্রশ্ন নয়

৩০ বছর ধরে ইরানের অত্যাচার কক্ষ গুলো টিকে রয়েছে, তবে কাহরিজাকই এ রকম একমাত্র বন্দিশালা নয়। এখানে ইরানী এক নাগরিকের আরেকটি সাক্ষ্য উঠানো হয়েছে, যাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ইভিন জেলে অত্যাচার করা হয়। তাকে গ্রেফতার করার কারণ আর কিছুই নয়, যখন বিক্ষোভ হচ্ছিল, সে সময় সে এই বিক্ষোভ মিছিলের কাছেই ছিল।

এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেবার আমার কোন ইচ্ছেই ছিল না, আমি স্বাভাবিক ভাবে রাস্তায় হাঁটছিলাম। আকস্মিক ভাবে তারা আমাকে ধরে এবং আমাকে এক গাড়িতে উঠানো হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত আমাকে সেখানে রাখা হয়। এই গাড়ির সকল বন্দির চোখ বাঁধা ছিল সব সময়ের জন্য এবং এরপর আমাদের অন্যখানে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনদিন পরে আমরা আবিষ্কার করি আমাদের মোতাহারি স্ট্রীটে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে আমাদের ক্রমাগত ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আমাকে বেলা ১টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়েছিল, কিন্তু আমাকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় নি। আমাকে বিদ্যুৎ-এর তার ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে পেটানো হয়, কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করেই।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .