- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

আফ্রিকা: সিকম কেবলের আগমন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, উগান্ডা, কেনিয়া, তান্জানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, মোজাম্বিক, প্রযুক্তি

আফ্রিকায় সম্প্রতি একটি সাবমেরিন (সমুদ্রের তলার) কেবল এসেছে যা এই মহাদেশ ব্যাপী ব্যান্ডউইথ (ইন্টারনেটের ক্ষমতা) বাড়াবে আর ইন্টারনেটের খরচ কমাবে। তবে ইতিমধ্যেই তা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে এবং আফ্রিকার ব্লগ জগৎে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। সিকম [1] নামে এই সাবমেরিন কেবল, যা দক্ষিণ আফ্রিকা, তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা আর মোজাম্বিক কে ইউরোপ আর এশিয়ার সাথে যুক্ত করবে, গত বৃহস্পতিবার (২৩শে জুলাই, ২০০৯) কাজ শুরু করে [2]। এটি পূর্ব আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্ব ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করেছে।

সাবমেরিন কেবল [3]

সিকম পূর্ব আফ্রিকার তীরকে ইউরোপ আর এশিয়ার সাথে যুক্ত করেছে।

জোহানেসবার্গ, নাইরোবি আর কাম্পালা ২৩শে জুলাই, ২০০৯ তাদের সংযোগ পেয়েছে [4], আর আদ্দিস আবাবা আর কিগালি অচিরেই পাবে। সাবমেরিন কেবলের আগমন জুলাই এর প্রথম দিকে নির্ধারিত ছিল, কিন্তু সোমালিয়ার তীরের অদূরে জলদস্যুর হামলা [5] স্থাপনায় দেরি করিয়ে দিয়েছে।

এই সাবমেরিন কেবল লিঙ্ক ব্যান্ডউইথের দাম ৯০% পর্যন্ত কমিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং পূর্ব আফ্রিকার তীরবর্তী এলাকাগুলো ভিডিও কনফারেন্স, হাই ডেফিনিশন টেলিভিশন আর হাই স্পিড ইন্টারনেটের সুবিধা পাবে ।

“হুমম… ডাউনলোড আরম্ভ হতে অপেক্ষা করতে পারছি না,” লিখেছেন আইটি ব্লগ কেনিয়া [6]

উগান্ডাতে, ইন এন আফ্রিকান মিনিট [7] ব্লগের জশ এরই মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন:

বিপুল ভাবে পরিচিত প্রযুক্তি ইউটিউবে আফ্রিকাতে বসে ভিডিও দেখতে ভিডিও শুরু হওয়ার সাথে সাথে থেমে যায়, ২০ মিনিট ( বা তারও বেশী ) অপেক্ষা করতে হয় যখন ভিডিও পুরোটা লোড হয়, আর তারপরে দেখা যায়। আজকে আমি সিকমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আছি… একটা কনফারেন্স রুমের কোনায়। সিকমের ব্যবস্থাপক পিটার মোরেটন আমাকে একটা কম্পিউটারের সামনে ডাকলেন যেখানে ইউটিউব খোলা ছিল। আমরা কুং ফু বেবী শুরু করেছিলাম আর আফ্রিকাতে প্রথমবারের মতো আমি একটা ইউটিউব ভিডিও দেখলাম যা পুরোপুরি ৬ সেকেন্ডে লোড হয়ে দেখা যায়।

টেকমাসাইতে [8] মুনাশি একইভাবে উৎসাহিত:

কিছুদিন আগে [9] আমরা যে সমুদ্রের তলার কেবলের কথা বলছিলাম তা বসানো সম্পূর্ণ হয়ে কাজ শুরু করেছে, আজকে। এই উদ্যোগ বৈপ্লবিক এই কারনে যে যেসব দেশ এখন এর ব্যবহার করবে তাদের মধ্যে আছে কেনিয়া, উগান্ডা, মোজাম্বিক আর দক্ষিণ আফ্রিকা।

…আফ্রিকার জন্য এটা সুন্দর একটা মুহূর্ত, আমি কেনিয়ার কথা বলতে পারি যারা স্যাটেলাইটের উপরে নির্ভরশীল ছিল এখন পর্যন্ত তাদের ইন্টারনেটের যোগাযোগের জন্য।

নাইজেরিয়ান ব্লগার জেরেমি নাইজাব্লগে সিকমের সাথে পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন কেবল লিঙ্কের সাথে তুলনা করেছেন [10]। তিন বলছেন পশ্চিম আফ্রিকার ভাগে কম পরেছে:

পূর্ব আফ্রিকাতে ব্রডব্যান্ড এসে গেছে… কিন্তু পশ্চিম আফ্রিকা এখনো প্রারম্ভিক পর্যায়ে আছে (আসলে এখনো পোশাক পাল্টাবার কামরায় ভাবছে কি পরা যায়) বেকার এবং প্রায় সময়ই বিচ্যুত স্যাট৩ সাবমেরিন কেবল নিয়ে। তাদের আছে একটা কাল্পনিক গ্লো ১ কেবলের মূলো ঝুলানো (আল্কাটেলের কন্ট্রাক্টাররা কি বালির নীচে চাপা পড়েছে?) আর নতুন দুই অন্তর্ভুক্তি, ওয়াকস আর মেইন১, যা সীমানার অনেক দূরে (সামনের বছর যদি আমরা সৌভাগ্যবান হই)। পূর্ব আফ্রিকা ব্রডব্যান্ডকে স্বাগত জানিয়েছে আর এটা নিয়ে এগিয়ে গেছে আর পশ্চিম আফ্রিকা অপেক্ষা করছে আর দেখছে।

টুইটারও সরব হয়ে আছে সিকম কেবলের খবরে। কিছু ব্যবহারকারী উত্তেজিত, আর অন্যরা সমালোচনায় মুখর:

“এখনো একেবারেই বিস্ময়কর যে আসলেই পুরো ওয়েবের দুনিয়াকে একটা ছোট্ট হলুদ কেবল #সিকম [11] দিয়ে ডাউনলোড করা যায়।“ – নেকালিগারি [12]

“সিকমে সত্যি আজ থেকে চালু হয়েছে। দেখা যাক কতদিন লাগে আইএসপির গতি বাড়িয়ে দাম কমাতে…” -দেনায়গা [13]

“ এটা কি শুধু আমি অনুভব করছি নাকি নাইরোবির নেট আজকে আস্তে চলছে #সিকম [11] চালু হওয়ার পরে? হয়ত বা ব্যান্ডউইথ সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করছে এখানে আসার আগে!” – মেন্টালঅ্যাক্রোব্যাটিক [14]

সিকম কেবলের বেশীরভাগ সমালোচনা এর দাম নিয়ে: যদিও কিছু বিশ্লেষক দাবি করছেন যে ব্যান্ডউইথের মূল্য শতকরা ৯০ ভাগ কমে যাবে, আর অন্যরা মনে করছেন যে আসল মূল্য হ্রাস আরো কম হবে। কাচোয়ানিয়া [15] লিখেছেন:

আদর্শগত ভাবে এই মূল্য ৯০% এর বেশী কমে যাওয়া উচিত। বর্তমানে প্রতি ১ মেগাবাইট ব্যান্ডউইথের জন্যে আইএসপির মূল্য ৬৫০০ আমেরিকান ডলার। সিকম অনুসারে তারা ৪০০ আমেরিকান ডলার এর মতো নেবে প্রতি ১ মেগাবাইট ব্যান্ডউইথের জন্য। কিন্তু থামেন, এই ক্ষেত্রে যাদু আশা করবেন না। সম্প্রতি ইউইউনেট সিইও টম ওমারিবা দাবি করেছেন যে সাবমেরিন কেবল বর্তমান মূল্যের ২০-৩০ ভাগ মাত্র কমাবে।

ট্রু কেনিয়ান [16] স্বচ্ছতার ব্যাপারে চিন্তিত:

সিকম সোজাসুজি অস্বীকার করেছে আমাদের কাছে জানাতে, ইন্টারনেটের ভোক্তাদের কাছে, কোন আইএসপি তাদের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনেছে। তাই আমরা এখনো জানি না কোথা থেকে সস্তা আর নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট আমরা কিনতে পারবো… তাই একমাত্র উপায় আমার কাছে আছে আমার বর্তমান আইএসপি নিয়েই কাজ চালানো। মেশিনের দিকে তাকিয়ে থাকব আর ওটা নিজের গতিতে পাতা লোড করবে আর আমি ভাববো যে একদিন আমাদের স্বপ্ন সত্যি হবে।

তাঞ্জানিয়ার ব্লগার ইসা নিচুজির একটা পোস্টের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে, মাদাউও মূল্যের ব্যাপারে চিন্তিত [17], যদিও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার উচ্চ আশা আছে:

সাবমেরিন কেবলের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু কবে এটা দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়াবে। আমি বলতে চাচ্ছি যে আমাদের যদি ভালো দেশের বাইরে যোগাযোগ থাকে যখন দেশের ভিতরে তা নেই- তারপরেও মূল্য অনেক বেশী হবে আর আমার মতে আমরা সি কেবলের ক্ষমতার কম ব্যবহার করবো। এখনকার জন্য, ভালো হয়েছে! ভবিষ্যৎের জন্য, আমাদেরকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে!

জেলিফিস [18] মূল্য নিয়ে দুর্ভাবনা ঝেড়ে ফেলেছেন যে স্পিড আর মানের এমন উন্নত সার্ভিসের জন্য মূল্য বৃদ্ধি সাথে সাথে থাকবে। তিনি বলছেন যে সিকমের আগমন সুন্দর একটা ঘটনা:

বহুল প্রচারিত একটা অনুষ্ঠানে সিকম সুইচ চালু করেছে যা সাথে সাথে টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ ছড়াল আলোর গতিতে ফাইবার অপটিক্সের ভিতর দিয়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার আকি আনাস্তাসিও [19] বলছেন, ”এটা আমার ল্যাপটপের জন্য ছোট্ট একটা মেগাবাইট, আফ্রিকার জন্য বিশাল একটা টেরাবাইট।“