ভারত: শোয়াইন ফ্লু ভীতি

ভারতে মাত্র কয়েক দিনে শোয়াইন ফ্লুতে মৃত্যুর সংখ্যা দশ থেকে বিশে উন্নীত হয়েছে। প্রথম বারের মতো শোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়েছে। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হল মহারাষ্ট্র প্রদেশ, বিশেষ করে তার দুটো মেগা শহর- মুম্বাই আর পুনে, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশী। আর এখন মনে হচ্ছে ভাইরাসটির থেকেও বেশী দ্রুত আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। মুম্বাইতে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আর পুনেতে রাস্তায় যানবাহন অনেক কম। অসুস্থ লোকেরা স্বল্প সংখ্যক এইচ১এন১ পরীক্ষা কেন্দ্রে লাইন দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ব্লগাররা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

টেকনো৩৬০ ব্লগ বেশ কটি ছবি পোস্ট করেছেন দেখাতে যে ভারতীয়রা কি ভাবে এই শোয়াইন ফ্লুর আতঙ্কে জীবন যাপন করছে।

কিছু ব্লগ তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন পোস্ট করছে শোয়াইন ফ্লুকে কি ভাবে সামলানো যায়। কিছু ব্লগ ভারত ব্যাপী শোয়াইন ফ্লুর পরীক্ষা কেন্দ্রের তথ্য পোস্ট করছেন। দ্যা কানপুর স্কুলস প্যারেন্টস এসোসিয়েশন ব্লগ শোয়াইন ফ্লু নিয়ে প্রায়শ: জিজ্ঞাস্য কিছু প্রশ্ন পোস্ট করেছেন।

কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া তাদের দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার বদলে আতন্ককে আরো উস্কিয়ে দিচ্ছে। দ্যা রেভিলিউশনার্স মিডিয়াকে দোষ দিয়েছেন শোয়াইন ফ্লুর ভীতি সৃষ্টির জন্য:

আমরা ভারতীয়রা দেশী মিডিয়ার বাজে রিপোর্টিং এর শিকার। আমরা এটা থেকে নিস্তার পাবো না যতক্ষণ না আমাদের সরকার এই ব্যাপারে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেবে। এমন বেশ কিছু পরিস্থিতি হয়েছে যখন মিডিয়ার প্রভাব আমাদের ভারতীয়দের অনেক খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পারত। কিন্তু আমাদের ভারতীয় মিডিয়া পছন্দ করে একেবারে জঞ্জাল হয়ে থাকার। কেবল মাত্র সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য তারা যে কোন কিছু আর যাচ্ছেতাই জিনিষ দেখায়। আমি জানি না এটা কখন থামবে। আমি যদি কিছু করতে পারতাম এই ব্যাপারে।

ডঃ সুরাজ এ ধিরওয়ানি ভীতি আর ভীতি সামলানোর ব্যাপারে লিখেছেন:

শোয়াইন ফ্লু এখানে এসেছে- বিশ্বাস করেন বা না করেন… কিন্তু এটা আশেপাশে আছে…

কিন্তু আপনি কি জানেন এটা সাথে আর কি এনেছে? ভয় আর আতঙ্ক।

এটা দেখে মজা লাগল যে ২৬শে জুলাই আর এত সন্ত্রাসী হামলা সত্ত্বেও, মুম্বাই বাসী আতঙ্ক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কিছুই শেখে নি।

ফিরোজ শাকির আর একটা দু:খজনক বাস্তবতার ব্যাপারে কথা বলেছেন:

সুযোগের রাজনীতি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ, শোয়াইন ফ্লুকেও রাজনীতিকরণ করা হবে, যেহেতু এসেম্বলির নির্বাচন একেবারেই কাছে।

শোয়াইন ফ্লুর অর্থনীতি বেশ কৌতূহল জনক। এরই মধ্যে সার্জিকাল মাস্ক ‌এর দাম ২০ গুণ হয়ে গেছে আর তার পরেও এটা অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এখনো প্রমাণিত হয় নি যে এই মাস্ক শোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধ করতে পারে। সুযোগ সন্ধানীরা দাবী করছেন যে তুলসি (ভারতের একটা সাধারন ঔষধী) শোয়াইন ফ্লু তাড়িয়ে দেয় বা যোগ ব্যায়াম শোয়াইন ফ্লুর নিরাময় করে।

লেজি পন্ডার্স ব্লগের অগ্নিতৃষা সরকারকে দোষ দিয়েছেন যথেষ্ট কিছু না করার জন্য:

কি করে একটা সরকার এত আনাড়ি হয়? তারা কি জানে এই ধরনের একটা রোগ ভারতে আমন্ত্রণের মূল ফলাফল কি হতে পারে? যেখানে মানুষ ছোঁয়াচে অসুখ নিয়ে গর্ব সহকারে ঘোরে, এটা একেবারেই চিন্তা না করে যে তারা অন্যদের জন্য কি বিপদ ঢেকে আনছেন।

বা যে দেশে মানুষের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার চল নেই যদি না তারা ভীষণ অসুস্থ হয়… কত লোক আরো মানুষকে অসুস্থ করবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে?

ইন্ডিয়া কট ডে ড্রিমিং ভাবছে:

আমরা পরিকল্পনা করছি ৩য় প্রজন্মের সার্ভিস শুরু করে একটি ছোট্ট যন্ত্র (মোবাইল ফোন) ভারতীয়দের হাতে দিয়ে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য। নন্দন নিলেকানির মতো মানুষ ইউআইডির (ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট) এর জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন সকল ভারতীয়কে একটা একক পরিচয় পত্র দেয়ার জন্য। অন্যদিকে ভারতীয়রা তাদের পরিচিতি এই ভয়াবহ অসুখের কাছে হারছেন, যার ব্যাপারে আমরা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছি।

কেন ভারত দেশ হিসেবে জেগে ওঠে চোর চুরি করার পরে? আমরা কেন এসব বিপদের প্রতিরোধের জন্য আগে থেকে প্রস্তুত হতে পারি না? আমরা কি কারণ বা সংকল্পের অভাবে ভুগি?

জাস্ট আ রেগুলার ব্লগের হরিহরন মানুষকে অনুরোধ করেছেন এই সমস্যা ভীতির মাধ্যমে না, যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে:

পুনেতে…শোয়াইন ফ্লু নিয়ে বিপুল আতঙ্ক… শুধু পুনে কেন…পুরো ভারতবর্ষ …মানুষ আমাদেরকে ফোন করছে আশঙ্কা আর চিন্তা নিয়ে যে আমরা কেমন আছি…ইত্যাদি ইত্যাদি…সংবাদ মাধ্যম গুলো আগুনে ঘি ঢালছে এই ব্যাপারে সংবাদের পর সংবাদ দিয়ে (পিছনের উত্তেজক বাজনাসহ যা আতঙ্ক তৈরিতে সাহায্য করে) আর সংবাদপত্র গুলো পরিস্থিতির কেবলমাত্র খারাপ দিক গুলো দেখাচ্ছে (মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে পরীক্ষার জন্য আর মানুষ মুখোশ পরে…খালি রাস্তা ইত্যাদি)!! কিন্তু আমাদের আসলেই কি এতটা চিন্তিত হওয়ার দরকার আছে?? ১০০ কোটি মানুষের মধ্যে ১৭-১৮টি মৃত্যু…অন্য রোগে এর থেকে প্রতিদিন বেশী মানুষ মারা যায়…ঠিক আছে… আমি ব্যাপারটার গুরুত্ব কম করে দেখাতে চাচ্ছি না কিন্তু একই সাথে এতটা আতঙ্কের প্রয়োজন নেই…

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করে দেখবেন যে মারা গেছে তারা হয় শিশু (দুর্বল রোগ প্রতিরোধ যাদের) বা অন্যান্য জটিলতাসহ মানুষ…

তাই আসুন আমরা সিদ্ধান্ত নেই আতঙ্কের সাথে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা না করে পক্বতা আর স্থিরতা দিয়ে মোকাবিলা করার।

ভারতীয় টুইটার ব্যবহারকারী দের কাছ থেকে কিছু প্রতিক্রিয়া এখানে দেয়া হল:

অক্ষয়:

“ভারতে প্রতিদিন ১০০০ জনের বেশী যক্ষা রোগে মারা যায়- ‘#শোয়াইনফ্লুর মৃত্যুর হার ১৭’- ভেবে দেখেন।

ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর টুইটার ব্যবহারকারী শশী থারুর:

ঠাণ্ডা বা কাশি নিয়ে কাজ করছি তাই আজ শেষ করছি তাড়াতাড়ি। কিন্তু একে শোয়াইন ফ্লু ভাবার কোন কারণ নেই! মিডিয়ার তৈরি এই আতঙ্ক নিষ্প্রয়োজন আর ক্ষতিকারক।

আর পরিশেষে দীপকের এই পরামর্শ আছে:

সরকার আর মিডিয়ার আরো বেশী স্পর্শকাতর হতে হবে আর ফ্লুর লক্ষণ সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করতে হবে। আতঙ্ক ছড়াবার চাইতে দেশব্যাপী পরীক্ষা আর পরীক্ষা কেন্দ্রের তথ্য, প্রতিরোধ আর রোগের চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন খবর জানাতে হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .