দক্ষিণপূর্ব এশিয়া: ইন্টারনেট ও জাতীয়তাবাদ

অনেক দক্ষিণপূর্ব এশিয়াবাসী বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী প্রচারণার জন্যে ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার করছেন। এখন এমন কি সরকারী নেতারাও সাইবার স্পেসের পূর্ণ ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তাদের দেশের সংহতি ও দেশাত্মবোধ বাড়াবার জন্য।

এই ধারা আশা ব্যঞ্জক যেহেতু এটা সাধারণ নাগরিকদের সুযোগ দেয় বৃহত্তর সমাজের অংশ হিসেবে নিজেকে প্রকাশিত করার সুযোগ দিয়ে। তবে, উগ্র জাতীয়তাবাদ অনলাইন উদ্যোগও আছে যা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংহতি গঠনে বাধা দেয়।

সম্ভবত: ইন্দোচীনের আজকের সব থেকে বিতর্কিত ওয়েবসাইট হচ্ছে আইলাভথাইল্যান্ড.অর্গ। দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এই ওয়েবসাইট তৈরি করেন। ওয়েবসাইটটি আরো চেষ্টা করে থাইদের একত্র আর উদ্বুদ্ধ করার জন্যে, যাদের অনেকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কোন্দলের কারনে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

চ্যাং নোই এই ওয়েবসাইট প্রচারণাকে থাই সরকারের বিশাল প্রোপাগান্ডা উপায় হিসেবে অভিহিত করেছেন:

কোন প্রচারণাই স্বীকার করে না যে এইসব বিভেদের পেছনে আসলে কোন কারণ থাকতে পারে। কোন প্রচারণাই এমন কারণের কোন সমাধান দেয় না। কোনটাই স্বীকার করে না যে মানুষ রাজনৈতিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাদের নাগরিক দায়িত্ব ভেবে আর দেশের স্বার্থ তাদের মনে ছিল। দুটোই আসল সমস্যা কার্পেটের নীচে চাপা দিয়ে রাখতে চায় যেখানে এটা পচবে।

ওয়েবসাইটটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে কারণ এখানে দাবী করা হয়েছে যে ক্যাম্বোডিয়ার কিছু অংশ থাইল্যান্ডের ‘হারানো ভূমি'।

ক্যাম্বোডিয়া আর থাইল্যান্ড প্রাচীন প্রিয়াহ বিহার মন্দিরের মালিকানা নিয়ে কয়েক দশক ধরে বিরোধে লিপ্ত। এই ভূমি বিরোধ দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের সৃষ্টি করেছে বেশ কয়েক বার।

অনেক ব্লগার তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন যে থাই সরকার দেশের ভিতরের লোকদের একত্র করতে চেয়েছেন অন্য দেশের সাথে সংঘাতকে উস্কিয়ে দিয়ে। তারা বিশ্বাস করেন যে নেটিজেনদের (নেট নাগরিকদের) উচিত না এই ধরনের ভুল সংস্করণের জাতীয়তাবাদকে তুলে ধরা।

যেমন আশা করা হয়েছিল, ক্যাম্বোডিয়ার সরকার এই ওয়েবসাইট তৈরির জন্যে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর ফলে একটা ক্যাম্বোডিয়াপন্থী ওয়েবসাইটও গঠিত হয়েছে: আইলাভখেমার.অর্গ নামে। এই ওয়েবসাইট চেষ্টা করছে আইলাভথাইল্যান্ড.অর্গ এ কথিত মিথ্যা দাবীর প্রতিবাদ করে সত্য জানানো।

থাইল্যান্ড আর ক্যাম্বোডিয়াতে আইলাভথাইল্যান্ড.অর্গ আর আইলাভখেমার.অর্গ এই দুই ওয়েবসাইট বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। যদিও এটা একটা ভালো দিক যে দুই দেশ তাদের সীমান্ত সংঘাতকে সাইবার এলাকাতে এনেছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে এই সাইবার যুদ্ধ দুই দেশে জাতিগত বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এরকম আর একজন নেতা যিনি সমাজে সংহতি আনার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গুরুত্ব বুঝেছেন। তার দৈনন্দিন কাজ ব্লগ আর টুইট করা ছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী নাজিব আব্দুল রাজ্জাক ১মালায়শিয়া.কম.মাই সাইটটিকে সৃষ্টি করেছেন এই নেতার সাথে তার এলাকার মানুষের মধ্যে একটা যোগাযোগের প্লাটফর্ম হিসেবে । প্রধানমন্ত্রীর স্লোগান হল “১ মালয়েশিয়া: মানুষ আগে, কাজ কর এখনই”।

এর মধ্যে মালয়েশিয়ার গণতন্ত্রপন্থী কর্মীরা তাদের নিজেদের সাইবার প্রচারণা শুরু করেছেন “১ব্লাকমালয়েশিয়া: গণতন্ত্র প্রথম, নির্বাচন এখন” নামে। তারা বিশ্বাস করেন যে নতুন নেতা মালয়েশিয়ার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ছোট করেছেন। এই মাসের প্রথম দিকে, এই দল ফেসবুক গ্রুপ আর ব্লগ ঠিক করেছেন মালয়েশিয়াবাসীকে উৎসাহিত করতে যাতে তারা “কোথায় গণতন্ত্র?” প্লাকার্ড সৃষ্টি করে ওয়েবে আপলোড করেন ।

ইন্দোনেশিয়া প্রমাণ করেছে যে জাতীয় সমস্যা নেটিজেনদেরকে একত্র করতে পারে। গত মাসের ভয়ংকর বোমা বিস্ফোরণের কয়েক ঘন্টার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার টুইটারকারীরা “আমরা ভীত নই” টুইট পাঠানো শুরু করেন। কয়েক দিন ধরে, #ইন্দোনেশিয়াইউনাইট হ্যাশট্যাগ সব থেকে ব্যস্ত বিষয় হয়ে দাঁড়ায় টুইটারে। প্লার্ক আর ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাদের অবতার (প্রোফাইল ছবি) পরিবর্তন করে ইন্দোনেশিয়ার পতাকার লাল আর সাদা ধারণ করেন। স্থানীয় ব্লগাররা মাইক্রোব্লগিং সাইটের ব্যবহারের সুবিধা বুঝেছেন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে। বিশ্লেষণকারীরা মুগ্ধ ছিলেন যে অরাজনৈতিক তরুণ ইন্দোনেশিয়ানরা অন্যান্য বুদ্ধিজীবী ইন্দোনেশিয়ানদের সাথে মিলিত হয়েছেন জাকার্তার সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাতে।

এই বছরের শুরুর দিকে ফিলিপিনো প্লার্কাররা মিন্দানাও এর বন্যায় আক্রান্তদের জন্য পেপালের মাধ্যমে ত্রাণ সংগ্রহ করেছেন । গত সপ্তাহে মারা যাওয়া ভূতপূর্ব একজন প্রেসিডেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে, টুইটার ব্যবহারকারীরা তাদের প্রোফাইলের ছবিতে হলুদ টুইবন যুক্ত করেছেন। অনলাইন আবেদন দেশের ১৯৮৭ এর সংবিধানের সংশোধনের বিরুদ্ধে হাজার হাজার সই আর সমর্থক যোগাড় করতে পেরেছে, বিশেষ করে ফেসবুকে

ভিয়েতনামে আরো বেশী ইন্টারনেটের স্বাধীনতার জন্য লবির প্রচেষ্টা আর প্রচারণা করা হচ্ছে। ওয়েব প্রচারণার সংখ্যা অসংখ্য যেখানে মিয়ানমারের বিরোধী ব্যক্তিত্ব অং সাং সু কি কে সমর্থন করা হচ্ছে। ব্রুনাই এর ব্লগাররা বিভিন্ন চাঁদা তোলার কার্যক্রম ঠিক করেছে খেলার দল, বন্যা আক্রান্ত আর পরিবেশ বাদী দলের সুবিধার্থে।

ইন্টারনেটে জাতীয়তাবাদ একটা জনপ্রিয় কিন্তু বিতর্কিত বিষয়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার রাজনীতিবিদ আর সরকার বিরোধী দল লাগাতার দৃঢ়ভাবে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছেন জাতীয়তাবাদী কার্যক্রম চালানোর জন্য। এই ওয়েবের ব্যাপারটা ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক যতক্ষণ এটা সাধারণ মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ প্রসারিত আর উন্নত করে। কিন্তু এটা খারাপ যখন এটা জাতীয়তা ভেদ আর ভীতি সৃষ্টি করে।

এটা কু রুচির ব্যাপার যখন রাজনীতিবিদরা ওয়েবকে ব্যবহার করেন তাদের কুকর্ম লুকাতে প্রশ্ন সম্বলিত জাতীয়তাবাদী কার্যক্রম শুরু করে। জাতীয়তাবাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রচারের জন্য আন্তরিক ব্যক্তি আর দলের জন্য ইন্টারনেট একটা ভালো মাধ্যম আর প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে । এই অঞ্চলের নেটিজেনদের উচিত না কোন একটা ব্যক্তি কে বিশ্বব্যাপী ওয়েবের সম্ভাবনা কে পরাজিত আর কলুষিত করতে দেয়ার।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .