পাকিস্তানের আইনজীবীদের উদ্ধত আচরণ

২০০৭ সালে পাকিস্তানে আইনজীবী আন্দোলনের শুরু হয়েছিল এবং এর জন্য যথেষ্ট জনসমর্থন লাভ করায় তারা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। আইনজীবীদের এই প্রতিবাদ ছিল ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, যা নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার কর্মী, প্রচার মাধ্যম ও ছাত্রদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কিছু আইনজীবীর দ্বারা নাগরিক সমাজের সদস্য, সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যদের হয়রানির সংবাদ প্রচুর ভুরু কুঞ্চনের সৃষ্টি করে।

পাকিস্তানী স্পেক্টেটর এর আদনান ফারুক বিস্মিত:

গত কয়েক সপ্তাহ থেকে যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে তার ব্যাখ্যা দেবার কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির সকল শিশু সাক্ষী যে আইনজীবীরা সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে এবং আক্ষরিক অর্থেই তারা নিষ্ঠুর মানুষে পরিণত হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে, বলতে গেলে কেউ আশা করে না যে এ রকম উচ্চ শিক্ষিত এবং বিবেকবান ভ্রাতৃত্ব মূলক সমাজে এমনটি ঘটবে।

জাজবা ব্লগ রিপোর্ট করেছে এক ঘটনার কথা, যেখানে পাঁচজন আইনজীবী এক সহকারী সাব ইন্সপেক্টরকে (এএসআই) প্রহার করে। এই এএসআই তাদের এক মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অবৈধ ভাবে তদন্ত করছিল।

আগস্টের ছয় তারিখে এই এএসআই-এর উপর আইনজীবী হামলার সুয়োমোটো মামলার শুনানি শেষে কয়েকজন আইনজীবী লাহোর হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম. আর আওয়ানের নেতৃত্বে সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদের উপর চড়াও হয় ও তাদের মারধর করে। ঠিক লাহোর হাইকোর্ট এর সামনে এই ঘটনা ঘটে। জিও টিভির নীচের ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে আইনজীবীরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের আক্রমণ করছে:

লাহোর নামা ব্লগে রানা তানভীর একই ধরনের ঘটনা জানাচ্ছে এক পোস্টে, যার শিরোনাম, নিয়ন্ত্রণ হীন আইনজীবী, নিয়মিত আইন ভঙ্গ হচ্ছে

গতবছর এপ্রিল মাসে আইনজীবীরা লাহোর হাইকোর্টের সামনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড: শের আফগান নিয়াজিকে প্রহার করে। লাহোর হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশনের বেয়ারা, আইনজীবী ও প্রচার মাধ্যমকে বলে যে তারা নিয়াজিকে আটক করেছে এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফকে সমর্থন ও তাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেবার কারণে তাকে একটা শিক্ষা দেওয়া হবে।[…]

কয়েকদিন আগে এক ট্রাফিক পুলিশের প্রধানকে একদল আইনজীবী মারধর করে। এক আইনজীবী এক মল বা বড় দোকানের সামনে আইন ভঙ্গ করে মোটর সাইকেল রেখেছিল। এই কারণে ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামতে বলে, তারই কারণে এই কাণ্ড।

ডেডপ্যান থটস- এর ফয়সাল কাপাডিয়া এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন “আইনজীবিরা উন্মাদ হয়ে গেছে” শিরোনামে এক পোস্টে।

এখন মনে হচ্ছে যে আইনজীবীদের আন্দোলন আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে তাদের নিজেদের ছুরি মানে আচরণের দ্বারা। যেখানে আইনজীবীরা আইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে সেখানে তারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের মারধর করছে। এখন তারা নিজেদের কি ভাবছে? এক ধরনের টার্মিনেটর বা (যে তার নিয়মে না চললে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলে) রাস্তায় ভ্রমণ করা ন্যায়বিচারের প্রহরী? তাদের নিজেদের দৃষ্টিতে তারা কি ন্যায় বিচারকারী? এই প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোন আশা নেই।

পাকিস্তান ফার্স্ট-এর মাহির শেখ এর দ্রুত বিচার দাবি করেছেন, তিনি দাবী করছেন যে, “লাহোর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে”:

সাধারণ মানুষ বিচার ব্যবস্থা উপর থেকে তাদের পুরো আস্থা হারিয়ে ফেলার আগেই, পাকিস্তানের জনগণ এবং আইনজীবীদের জেগে উঠতে হবে, আদালতের মাঝে এই ধরনের বাজে কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। বিচার বিভাগ তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার বদলে জনপ্রিয় জনমত ও রাজনৈতিক অবস্থানে এক বিপজ্জনক বিকল্প ইগো তৈরি করছে।

আদনান ফারুকি বিষয়টিকে এক দৃষ্টিভঙ্গিতে রেখেছেন এই দাবী করে যে, প্রচার মাধ্যম সেই সমস্ত পুলিশদের ডাকে নি যারা তাদের দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত হয়েছে। এই সমস্ত পুলিশ প্রধান বিচারপতি নিয়ে আন্দোলন চলছিল সে সময় আন্দোলনকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে।

তিনি উপসংহার টানেন কিছু প্রশ্ন দিয়ে:

কয়েকজন লোক, তারা কি দেশের সামনে আইনজীবীদের জনপ্রিয় ভাবমূর্তিতে কালিমা লিপ্ত করতে চাচ্ছে? নাকি আইনজীবীরা এখন নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবতে শুরু করেছে?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .