- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

হাঙ্গেরি: হাঙ্গেরিয়ান গার্ডকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব ও মধ্য ইউরোপ, হাঙ্গেরি, আইন, আদিবাসী, জাতি-বর্ণ, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, রাজনীতি, সরকার

একটা লম্বা এবং জটিল ইতিহাস যা মনে হচ্ছে এক সপ্তাহ আগে সমাপ্ত হয়েছে। সংসদীয় সহযোগী এক সংস্থা, হাঙ্গেরিয় গার্ড (ম্যাগিয়ার গার্ডা) যারা হাঙ্গেরির অতি ডান দল জোববিকের [1]অংশ, তাদের জুলাই-এ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বুদাপেস্টের আদালত এক বছরের এক তদন্ত শেষে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০০৮ এর ডিসেম্বরে আদালত যে প্রথম সিদ্ধান্ত নেয় তার উপর হাঙ্গেরিয়ান স্পেকট্রামের এভা এস বালোগ এক রিপোর্ট করে [2]:

[…] এটা বিশ্বাস করা কঠিন, কিন্তু আদালতের প্রথম দফা রায়ে হাঙ্গেরিয়ান গার্ড(ম্যাগিয়ার গার্ডা ইন হাঙ্গেরিয়ান) একেবারে খতম হয়ে গেল। বুদাপেস্টের প্রধান বিচারক রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবির সাথে একমত হয়েছে যে হাঙ্গেরিয়ান গার্ড অবৈধ। তারা কোন সাংস্কৃতিক সংগঠন নয়, তাই তারা অবৈধ […]। ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি এই অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ বুদাপেস্ট আদালতে পাঠিয়ে দেয়। এখন থেকে এক বছর আগে। এই ব্যাপারে আদালতের কোন তাড়া ছিল না। প্রাথমিক অবস্থায় ২০০৮ সালের মার্চ মাসে এই মামলার নথি তলব করা হয়। […]

২০০৭ সালে হাঙ্গেরিয়ান গার্ড সৃষ্টির সময় কিছু সমস্যা তৈরী হয়েছিল:

[…] এই মামলা সামান্য জটিল ছিল, কারণ এই মামলায় মাগিইয়ার গার্ডার সংগঠকদের আইনের আশ্রয়ে থাকা যে কোন দলকে অপমান করার সম্ভবনা ছিল অভিযুক্ত সংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে। তারা এক আলাদা বৈধ পরিচয় তৈরী করেছিল, একদল পোশাকধারী অনুসারী, তাদের কালো বুট ও সাথে তাদের নিজস্ব পোশাক সন্দেহজনক ভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছিল হাঙ্গেরির নাজি দল ফেরেন্ক সাজালাশির কথা। মুল দল থেকে তারা আইনগত ভাবে আলাদা ছিল। তারা নিজেদের বর্ণনা দিয়েছিল সাংস্কৃতিক অভিযাত্রী হিসেবে। এভাবে আমরা পেলাম ম্যাগিয়ের গার্ডা মোজগালোম (হাঙ্গেরিয়ান গার্ডদের আন্দোলন, বাহিনী) এবং ম্যাগিয়ের গার্ডা এগিয়াসুলেট (হাঙ্গেরিয়ান গার্ডদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান- তাদের তথাকথিত সাংস্কৃতিক সহযোগী)। জোবিবক এর হয়ে এক আইনজীবি দু’টি প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করার কাজ করছিল। অতি ডান দলটি এই হাঙ্গেরিয়ান গার্ডদের সৃষ্টির জন্য দায়ী। তারা এই পোশাকধারী দলটিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে চেষ্টা করছিল। […]

যেমনটা এভা এস বালোগ লিখেছে, ২০০৮ এর এই রায় পরিস্কার ভাবে ঘোষণা দেয় যে, এভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়াই যথেষ্ট নয়, গার্ডদের অস্তীত্ব রক্ষার জন্য:

[…] কোর্টের এই মামলা এর সহযোগীদের সম্বোধন করেছে, তাদের আন্দোলনকে নয়। এটা পুরো হাঙ্গেরিয়ান গার্ডদের উপর আঘাত, কারন বিচারক ঠিক ভাবে নির্দেশ করেছে যে আন্দোলন এবং প্রতিষ্ঠান একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মুল কাগজপত্রে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তা ভালোভাবে প্রর্দশনের জন্য বলা হয়েছে। দু’টি প্রতিষ্ঠানের মধ্য স্বাক্ষরিত চুক্তির কাগজপত্র এবং উভয়ের মধ্যে যে অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিদ্যমান তার ভিত্তিতে বিচারক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে হাঙ্গেরিয়ান গার্ডদের মুল উদ্দেশ্য ছিল জিপসিদের মধ্যে ভয় ধরিয়ে দেওয়া। বিচারক পাটাকি লক্ষ্য করেছেন যে গার্ডরা সেমেটিক বা ইহুদি জাতির প্রতি বিদ্বেষপরায়ন, কারন গার্ডদের এক মুখপাত্র তার এক ভাষণে উল্লেখ করেন “ইহুদি ইদুর”, ঘাসফড়িং এবং জাতির গোরখোদক ইত্যাদি শব্দ”। বিচারক নির্দেশ করেন, এই সকল কাজকর্ম অসাংবিধানিক এবং হাঙ্গেরির আর্ন্তজাতিক বাধ্যবাধকতার সাথে তার মিল নেই। […]

প্রথম যে রায় হয় তার বিরুদ্ধে আপীল করা হয়েছিল। গার্ডদের চেয়ারম্যান গাবর ভোনা এক সাক্ষাৎকারে [3] বর্ণনা করেন

[…] যে ভাবেই আমরা শুরু করি না কেন, এমনকি ভিন্ন কোন প্রতিষ্ঠান হিসেবে অথবা নাগরিক দল হিসবে আমরা আমাদের জাতির সেবা করে যাবো। […] এই রায় হাঙ্গেরিয়ান গার্ড মুভমেন্টের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না, এমনকি বিচারক তা নিশ্চিত করেছে। এই রায় এই প্রতিষ্ঠানের উপর প্রভাব তৈরী করবে না। পরোক্ষভাবে আদালত ঘোষণা দিয়েছে যে গার্ডরা তাদের কাজ চালাতে পারবে এবং আমিও তা নিশ্চিত করছি। […]

জুলাই চুড়ান্ত রায় প্রদান করা হয়। হাঙ্গেরিয়ান স্পেকট্রাম এর এভা এস বালোগ লিখেছেন [4]:
[…] গত বছরেরর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নিম্ন আদালতের প্রধান বিচারক আবিষ্কার করেন যে হাঙ্গেরিয়ান গার্ড এক ক্ষুদ্র জাতির অধিকার লংঘনের দোষে দোষী। গার্ডদের প্রতিনিধি আইনজীবি এ ব্যাপারে আপীল করে। আজ হাঙ্গেরিয়ান গার্ড একই সাথে সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং আন্দোলনকারী দল হিসেবে অপরাধী। যে অভিযোগ তাদের উপর আনা হয়েছে তা প্রমাণিত হয়েছে। […]

তিন দিন পরে গাবর ভোনা ঘোষণা করে [5]হাঙ্গেরিয়ান গার্ডরা এই রায়ের বিরুদ্ধে এক আনুষ্ঠানিক বিক্ষোভ প্রর্দশন করবে। কতৃপক্ষ কতৃক গার্ড বাহিনীকে ভেঙ্গে দেবার পর যে স্বত:ফুর্ত মিছিল অনুষ্ঠিত হয় তা হয় বুদাপেস্টের ঠিক কেন্দ্রে। করুক.ইনফো [6]চরম ডানপন্থীদের একটি ওয়েব সাইট। তাদের সাথে জোববিকের সর্ম্পক রয়েছে। তারা বলছে:

হাঙ্গেরিয় আইন বিভিন্ন বিভাগে বিক্ষোভ প্রর্দশন করার সুযোগ দেয়। রায়ের ৭২ ঘন্টার মধ্যে তুলনামুলক সমসময়িক বিষয়ের উপর বিক্ষোভ প্রর্দশনের অনুমতি দেয়। এ ধরনের বিক্ষোভ প্রর্দশনের জন্য কোন বিশেষ অনুমতি লাগে না। […] পরবর্তী প্রতিবাদ যা কয়েকশ হাঙ্গেরিয়ান গার্ডদের দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, জোববিকের সমর্থক এবং সদস্যরা এই সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি সাড়া দিয়েছিল। বিশেষত, একজন অনির্বাচিত বিচারক দ্বারা বিচার করা হয়েছে বলে। বুদাপেস্টের আপীল কোর্টে জুলাইয়ের ২ তারিখে হাঙ্গেরিয় গার্ড বাহিনীকে ভেঙ্গে দেবার আদেশ দেয়। [….]

ওয়েব সাইট জানাচ্ছে যে প্রতিবাদকারীরা পুলিশ পরিবেষ্টিত ছিল এবং তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে বসে ছিল।

এই মিছিল চালিয়ে যাবার জন্য: বসে থাকা এই সব প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশ বেশ কয়েক বার তীব্র আক্রমণ করে: এবং সাধারণত যে সমস্ত প্রর্দশন পুলিশ করে থাকে সেদিনও তাই করেছিল, খু্ব কাছ থেকে মুখে কাদানে গ্যাস ছুঁড়ে মারা ও নির্মমভাবে প্রতিবাদকারীদের প্রহার করা, যে কোন বয়স বা দুর্বল স্বাস্থ্যের প্রতিবাদকারী হোক না কেন। […] পুলিশ জোর করে প্রতিবাদকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় ও গ্রেফতার করে, তাদের এক এক ধরে এবং সেখান থেকে টেনে সরিয়ে দুরে নিয়ে যায়। […]।

স্বত:স্ফুর্ত মিছিল বরে করার জন্য গাবর ভোনাকে গ্রেফতার করা হয়। দ্বিতীয় দফা প্রতিবাদ মিছিল জুলাই এর ১১ তারিখে অনুষ্ঠিত হবার ঘোষণা দেওয়া হয় যা শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটি ঘোষণা [7]দিয়েছে যে তারা হাঙ্গেরিয়ান গার্ডকে আবার সংগঠিত করবে। মিছিলে সম্প্রতি নির্বাচিত ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের(এমইপি)সদস্য গার্ডদের পোশাক পরে উপস্থিত ছিলেন।

পলিটিকস.এইচইউ [8] জানাচ্ছে যে তিনদিন পরে জোববিক-এর এমইপির প্রতিনিধি কাসানড সেজইগেডি ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের উদ্ভোধনি অনুষ্ঠানে গার্ডদের পোশাক পরে এসেছিলেন। প্রোগ্রেস এলায়েন্স অফ সোশালিষ্ট এন্ড ডেমোক্রাটস এই ঘটনার নিন্দা [9] জানিয়েছে।