আফ্রিকা: আফ্রিকার সমকামী পুরুষদের মধ্যে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ নিয়ে আলোচনা করছে ব্লগাররা

সাব সাহারা অঞ্চলে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যাচ্ছে যে আফ্রিকার সমকামী পুরুষদের মধ্যে এইচআইভির হার অনেক বেশি। বিবিসি রিপোর্ট করেছে যে রাষ্ট্র আফ্রিকার সমকামীদের এই উদাসীনতার ও যৌন শিক্ষার অভাবের ব্যপারে অনেক কিছু করতে পারে। যৌন অনুভুতি প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষেত্রে এটা পরিস্কার যে পুরুষ সমকামীরা এখনো জাতীয় পর্যায়ে মনোযোগ আর্কষণ করতে পারেনি এবং পুরুষ ও পুরুষে যৌন মিলনের সময় রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। এই বিষয়টি অনেক সমকামী এবং উভকামীদের ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে যে সমস্ত পুরুষ মিলনের সময় কোন ধরণের সর্তকতামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই পুরুষ ও নারী উভয়ের সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হয় এবং তাদের উভয় ধরণের যৌনসঙ্গী থাকে। এমএসএম বা পুরুষ ও পুরুষে মিলন সমন্ধে জানা খুবই কঠিন। কারন তারা তাদের এই সম্পর্ক প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক। তারা এই সর্ম্পকের ফলে যে সমস্যা হতে পারে সে ব্যপারে উদাসীন এবং এখনো তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে যেখানে এইচআইভি নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। চলুন আমরা সমকামী বিষয় নিয়ে আফ্রিকান ব্লগারদের দৃষ্টিভঙ্গি সমন্ধে শুনি।

সাইমন কলেরি যুক্তি দেখাচ্ছেন যে সমকামীতা প্রতিরোধ আইন যা সমলিঙ্গের মধ্যে যৌন সর্ম্পককে অপরাধ হিসেবে গন্য করবে তা এইচআইভি ছড়িয়ে পড়া রোধ করাকে আরো কঠিন করে তুলবে:

যখন এইচআইভি ছড়ানো কি ভাবে বন্ধ করানো যায় তার কথা আসে, সমলিঙ্গের সর্ম্পককে অপরাধ হিসেবে দেখার কারনে তা প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে পুরুষ ও পুরুষের মধ্য যৌন সর্ম্পকের ক্ষেত্রে। সমকামী পুরুষেরা এইচআইভি রোগে আক্রান্ত হবার ক্ষেত্রে খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং তাদের দ্বারা এই রোগ আরো বেশি পরিমানে ছড়িয়ে পড়তে পারে তাদের চেয়ে যারা এককভাবে উভয়কামী যৌন সর্ম্পকে জড়িয়ে রয়েছে।

এর মানে এই হওয়া উচিত যে পুরুষে পুরুষে যৌন সর্ম্পক নিয়ে কোন লুকোচুরি খেলা উচিত নয়। তাদের যৌনসর্ম্পকের বিষয়টি পরিস্কার ভাবে জানানো উচিত। যদি এই সর্ম্পকের বিষয়টি তারা না জানাতে পারে, এ ক্ষেত্রে পুরুষ সমকামী শ্রেণীর মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণের হার কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার জন্য যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তা পুরণ করা সম্ভব হবে না। তারা নিজেদের সমকামী পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার তাই করবে। পুরুষ সমকামীরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে যেতে আগ্রহী হবে না। আইন তাদের আশ্রয় দেবে না। এমনকি তারা বর্তমানে যতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তখন তারা এর চেয়ে বেশি নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়ে যাবে। এটি আরো বিপজ্জনকভাবে এইডস এর রোগ ছড়ানো বন্ধ করার পথে এক বিশাল বাঁধা হয়ে দাড়াবে”।

উগান্ডার এইডস কমিশনের ডাইরেক্টর জেনারেলের (ইউএসি) গত বছরের এক বক্তব্য এখানে উদ্ধৃত করা হয়েছে। “পুরুষ সমকামীরা উগান্ডায় এইচআইভি ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু স্বল্প সম্পদের কারণে এই সময়ে আমরা সরাসরি তাদের মাঝে কোন কর্মকান্ড পরিচালিত করতে পারি না”। উগান্ডা হোমোসেক্সুয়াল এর জবাব দিচ্ছে:

* প্রায় ২৬ বছর হলো সেখানে এইচআইভি নামের মহামারি শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত একটি সরকারও উগান্ডার পুরুষ সমকামীদের মধ্যে এই রোগ প্রতিরোধের কোন উদ্যাগ নেয়নি।
* সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এইডস নামের মহামারি শুরু হবার পর থেকেই জানা গেছে যে পুরুষ সমকামীরা এই রোগের ক্ষেত্রে একটি ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়।
ডিরেক্টর জেনারেলের এই বিবৃতি দু:খজনক, তার সাথে উগান্ডার অন্য সব নেতাদের বক্তব্যও, যারা বলেছেন যে পুরুষ সমকামীদের এক দ্বীপে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রেখে আসতে হবে, যাতে তারা সেখানে মারা যায় এবং ইউএসির একজন উপদেষ্টা বলেন যে, “আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে যে এইচআইভির বিরুদ্ধে প্রচারে সমকামীদের নিয়ে আসলে তা কেবল তাদের এই অবৈধ এবং অস্বাভাবিক কাজকে বৈধতা দেওয়া হয়”।

আমরা উগান্ডাবাসী। আমরা সমকামী উগান্ডাবাসী।

আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

আমাদের স্বাস্থ্যবান ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

এইচআইভি মুক্ত হয়ে আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

এইচআইভি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমাদের নিজেদের রক্ষা করার অধিকার রয়েছে, আমাদের প্রেমিক, পরিবার ও সম্প্রদায়কে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।

এইচআইভি রোগ আবিষ্কারের ২৬ বছর পার হয়ে গেছে। পুরুষ সমকামীরা এইচআইভি সমন্ধে প্রচলিত গল্প আর কল্পকাহিনীকে বিশ্বাস করে। অবৈজ্ঞানিক জনশিক্ষা ও সরকার যে সমস্ত প্রচার চালায় তার কারণেই তাদের এই বিশ্বাস তৈরী হয়েছে। এই সমস্ত মিথ্যা সত্বেও আমরা বলি সকল মানুষের পক্ষপতাহীনভাবে প্রতিরোধ, যত্ন, চিকিৎসা এবং সমর্থন দরকার।

এখনো আফ্রিকায় পুরুষ সমকামী হওয়া মানে সবার চোখে ঘৃণার পাত্র হওয়া। সংস্কৃতি, ধর্ম এবং মানুষের ঘৃণা, সবকিছুতেই। ব্লগাররা অনুভব করছে যে পুরুষ সমকামীদের মধ্যে এইচআইভি প্রতিরোধ প্রচারণা আরো কার্যকর হওয়া উচিত এবং পুরুষ সমকামীদের খারাপ চোখে দেখাকে অবশ্যই এড়াতে হবে। এতে পুরুষ সমকামী নিজেদের রক্ষা করার ব্যাপারে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। সরকার অন্তত চেষ্টা করলে এই লোকগুলোকে অজ্ঞতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

সিবাস্পেস এই বিষয়ে তার অনুভুতির সারাংশ প্রকাশ করছে:

দু:খজনক, এটা বাজে একটা বিষয় যে আফ্রিকার কোন দেশের সরকার এ ব্যাপারে মনোযোগ দেয়নি বা দেবার ইচ্ছাও প্রকাশ করেনি। এটা আসলেই অপরাধ ….. উচ্চারণ অযোগ্য খারাপ কর্ম।

গে উগান্ডা অনুভব করে সম্প্রদায়ও সাধারণভাবে এর জন্য মুল্য দিচ্ছে:

ঠিকভাবে বললে, পুরো সম্প্রদায় আমাদের সাথে এর জন্য মুল্য দেবে। কাজেই, কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন? মনে হচ্ছে, যদি আমরা আমাদের অভিযোগগুলোও ছুঁড়ে ফেলতে পারতাম।

টামাকু কেনিয়ার এক নাগরিক। তিনি একজন পুরুষ সমকামীর দিনপঞ্জি নামের ব্লগ লিখেন। তিনি লিখেছেন:

সাব-সাহারান আফ্রিকায় এইচআইভি তার ধ্বংস সাধন করে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের যে কোন এলাকার চেয়ে এখানে এইডস রোগের হার বেশি। এটি আফ্রিকার পুরুষদের এই রোগ দেখা যায়। যায় বিশেষ করে যে সমস্ত পুরুষ আরেকজন পুরুষের সাথে মিলিত হয় তারা এই রোগে আক্রান্ত হয়।

অন্যতম এক পাঠক তার পোস্টে মন্তব্য করেছে:

দুভার্গ্যজনকভাবে আফ্রিকার সাব-সাহারার দেশগুলোতে এইচআইভি প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরালোভাবে সংখ্যাগরিষ্ট উভকামীদের মধ্যে বেশী চালানো হয। কিছুদিন আগ পর্যন্ত অল্প সংখ্যক সমকামী পুরুষ বিশ্বাস করতো যে, এই রোগ কেবলমাত্র পুরুষ ও মহিলার মিলনেই হয়। পুরুষ তার পুরুষ সঙ্গীদের সাথে কোন ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া মিলিত হয় এবং এই ধরণের পুরুষ কেবল একজন মহিলার সাথে মিলিত হত (সম্ভবত তাদের স্ত্রী)। তাই তারা বিশ্বাস করতো যৌন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সবকিছু ঠিক আছে।

এই ভাইরাস প্রচণ্ড সুযোগ সন্ধানী, যা একবার সুযোগ পেলেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং পায়ু পথে তার প্রবেশ ঘটে থাকে, যেখান দিয়ে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।

আফ্রিকার সমকামীদের কঠিন অবস্থার কথা তুলে ধরে দি এলজিবিটি এ্যাসাইলাম একটি প্রবন্ধ পোস্ট করছে, যার লেখক এডওয়ার্ড কুওরো। এর শিরোনাম “তানজানিয়ায় পুরষ সমকামীদের অধিকার লংঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের কাছে এ্যাকটিভিস্টের দরখাস্ত” :

মানবাধিকার প্রচার কর্মীরা জাতি সংঘের কাছে এক তথ্য জমা দিয়েছে। তারা তানজানিয়ার বিরুদ্ধে এক অভিযোগ করেছে যে, দেশটি মহিলা ও পুরুষ সমকামী, উভলিঙ্গ ও লিঙ্গ পরিবর্তন (এলজিবিটি) ব্যক্তিদের অধিকার লংঘন করছে।

এই রিপোর্ট এ মাসেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে তুলে ধরা হয়েছে সামাজিক ও আইনগত বাঁধাগুলো। এই সমস্ত বিষয় এই সম্প্রদায়ের অধিকার অর্জনে জটিলতা সৃষ্টি করে, এক ধরনের সামাজিক সর্ম্পকের মাধ্যমে।

এই রিপোর্ট তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা পুরণ করা হয়েছে: দি সেন্টার অফ হিউম্যান রাইটস প্রমোশন অফ ইস্ট আফ্রিকা, ইন্টারন্যাশনাল লেসবিয়ান এন্ড গে হিউম্যান রাইটস কমিশন, দি গ্লোবাল রাইটস।

টামাকু তার ব্লগে তিন মাস ধরে এক জরীপের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি পাঠকদের জিজ্ঞেস করেছেন কেনিয়ায় সমাকামীতাকে নিরপরাধ কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হবে কি না। ৪১ শতাংশ লোক বলেছে না, এবং ২৮ শতাংশ লোক অনুভব করে কেনিয়ায় সমকামীতার কোন স্থান নেই। তার ব্লগের এক পোস্টে দেখা যাচ্ছে ৯৬% জন সমকামীতার বিপক্ষে।

যাইহোক এ ব্যাপারে যে জনতার বৈরিতা রয়েছে যা এক সত্য। ২০০৫ সালের এক জরিপে দেখা গেছে যে ৯৬ শতাংশ সাড়া প্রদানকারী অনুভব করেন যে সমকামীতা তাদের বিশ্বাসের প্রতি অপমান।

অনেক তরুণ সমকামী তাদের এই পরিচয়ের কারনে গর্বিত। তারা নিজেদের কথা বলেছ এবং তারা সমকামী পুরুষদের আর্দশ হবার জন্য যা নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। আফ্রোগে একজন নাইজেরিয়ান। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় বাস করছেন। তিনি লিখেছেন:

এখন নতুন প্রজন্ম এমন এক জগতে বাস করছে যা প্রচার মাধ্যম তাদের দিয়েছে। পুরুষ সমকামীতা কি এই? এর উত্তর হলো না, সেখানে কালো পুরুষ সমকামী রয়েছে যারা কিছু ভালো আর্দশ রয়েছে। কেউ এর বাইরে কেউ বা নয়। এই সমস্ত বৃদ্ধলোকরা অবশ্যই তরুণদের শিক্ষক হতে পারে এবং তাদের কাছ থেকে সবাই কেবল যৌনতা চাইবে না। ইতিবাচক ভাবে তারা তরুণদের উৎসাহ দেবে যাতে তারা তাদের প্রতিভা গড়ে নেয় এবং একে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য ব্যবহার করে।

একজন তরুণ আফ্রিকান আমেরিকান পুরুষ হিসেবে আমি যা অন্বেষণ করছি তা হলো, একজন গুরু, একজন আর্দশ পুরুষ, আমি খুঁজছি এমন একজনকে যে এক তরুণ পুরুষ সমকামীর যত্ন নিতে পারবে ও তাকে শিক্ষা দিতে পারবে।

কেউ একজন আছেন কি?

গোপনীয়তায় এইচআইভি: কথন এবং বাস্তবতা?:

আমি মনে করি, আমরা এক বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছি। যখন লোকজন স্বাকীর করতে অস্বীকার করে যে ভিন্ন ধরনের যৌন ভাবনার মানুষও রয়েছে এবং এভাবে তারা বাস করে! তখন এই বিষয়টি লোকজনকে (কিছু) বিষয় গোপন রাখতে বাধ্য করে।

জনগণ যে বিষয়টি উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়, তা হলো সমকামী পুরুষেরাও সামাজিক মানুষ। তারাও সারা পৃথিবীর অন্য সকল মানুষের মতো। তারা ভালোবাসতে চায় এবং ভালেবাসা পেতে চায় এবং তারা শারিরীক আনন্দ ও তৃপ্তির মধ্য যুক্ত হয়, কাজেই আপনি যদি তাদের জোর করে বিস্মৃত করে ফেলেন এবং তাদের যৌন কর্মকান্ডকে লুকাতে বাধ্য করেন বিষয়টি এ ধরণের লোকজনের ক্ষেত্রে যৌনতার হিসেবকে এক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .