বাংলাদেশে এক উচ্ছল বিদেশীদের সমাজ তৈরী হয়েছে। তাদের অনেকে এদেশে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে অথবা কোন বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছে। তাদের মধ্যে অনেকে ব্লগে লিখছে এবং তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করছে। আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমগুলো বাংলাদেশ সমন্ধে যে সব তথ্য প্রদান করে সেগুলোর চেয়ে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো সাধারণত: সত্যের কাছাকাছি এবং অনেক বেশী বিশ্বাসযোগ্য। যারা বাংলাদেশে বেড়াতে আসতে চান তাদের জন্যে এই সমস্ত অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজনীয় এবং বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্যও এসব জানা জরুরী। এই ধারাবাহিক সিরিজের প্রথম পর্বে আমি বাংলাদেশে বাস করা সেরকম কিছু বিদেশী ব্লগারদের লেখা তুলে ধরব এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সমন্ধে তারা কি বলছে তা জানা যাবে।
আমার বাংলা না এর নিক্কিবম্ব পার্বত্য চট্টগ্রাম-এ বেড়াতে গিয়েছিলেন এবং লিখেছেন:
পার্বত্য চট্টগ্রাম এক অবিশ্বাস্য কোমল সবুজ এলাকা। চারপাশের যেদিকেই আপনি তাকান না কেন দেখবেন এই সবুজ রং -এ নিজেকে জড়াতেই যেন বাংলাদেশীরা ভালোবাসে।
এসটেল ভিসাজি নামক ব্লগার রাঙ্গামাটির পাহাড়ে গিয়েছিলেন। সেখানে এই ভদ্রমহিলা দেখা পান তিনজন মহিলা বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীর। তারা তাকে একটা চাকমা নাম দিয়েছে।
ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে সারা বাংলাদেশে গবেষণা করতে এসেছেন। তিনি অজস্র ছবি পোস্ট করেছেন এবং বাংলাদেশীদের সাথে তার মেলামেশার অভিজ্ঞতাও তিনি শেয়ার করেছেন।
অ্যামি ময়ার (বাংলাদেশের) রাজধানীর ক্ষ্যাপাটে জীবন থেকে পালিয়েছেন এবং লিখেছেন:
আমরা আমাদের ভ্রমণ এমন একটা গ্রামে এসে শেষ করলাম যেখানে হাতে জামদানী শাড়ী বোনা হয়। জামদানী খুবই সুন্দর শাড়ী। এটি এক রকম হালকা মসলিন কাপড় এবং বাংলাদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রবাদ রয়েছে যে একটি ১৩ গজের জামদানি শাড়ী একটা ম্যাচ বাক্সের সমান আকারের কোন জিনিষের মধ্যে ভাঁজ করে রাখা যাবে। এখানকার লোকজন এতটা বন্ধুত্বভাবাপন্ন যে তারা আমাদের তাঁত বুনতে দিয়েছিল। আমরা তাঁতী হবার চেষ্টা করলাম। এই অভিজ্ঞতার বিনিময় সত্যিই মুল্যে প্রদান করা সম্ভব নয় এবং আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে তারা ভিসা নামক ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করে না।
মিয়ানডারিং মেমোস নারায়ণগঞ্জের একটি কারুশিল্প প্রকল্প ঘুরে দেখেন। নারায়ণগঞ্জ রাজধানী ঢাকার কাছেই অবস্থিত। এই প্রকল্পে প্রায় ২৬০০০ মহিলা শ্রমিক কাজ করে। তিনি লিখেছেন:
শাড়ি প্রিন্ট করা- এ সমন্ধে আমার কোন ধারণা ছিল না। এখানকার সমস্ত নকশা হাতে তৈরী! কি সময় ঘনিষ্ট কাজ – ডিজাইন হাতে করার জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। রং করার জন্য তারা যে সমস্ত উপাদান ব্যবহার করে সেগুলো সব প্রাকৃতিক।
জ্যাকব এবং সানার ব্লগএই সময়ের অন্যতম বাংলা গানের ব্যান্ড ‘বাংলা’-র প্রশংসা করেছে:
এই ব্যান্ড আলাদা- তারা স্বার্থকভাবে পশ্চিমা গিটার ও গুরুগম্ভীর ছন্দের সাথে দেশী ঢোল ও পল্লী সুরের মিশ্রণ ঘটিয়েছে। তাদের মুল গায়িকা আনুশেহ যার কন্ঠ অসাধারণ।
ফ্রম স্পা-হা টু বাংলা ব্লগের ভ্যালেরি এই দেশে রয়েছেন দুই মাস। তিনি তার স্বামীর সাথে দেখা করার জন্য এদেশে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সত্যিকারে গৃহিণী হিসেবে সময় কাটিয়েছেন একদিন এবং লক্ষ্য করেছেন:
এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সস্তা দিন। আমি এত সবকিছুর জন্য খুব অল্প ব্যয় করেছি। স্পা চিকিৎসার (শরীর মর্দন) জন্য আমার মোট ব্যয় হয়েছে ৬০০ টাকা যা ১০ ডলারের কম। আমরা গাড়ী চালক এবং ঘরের কাজের জন্য যারা ছিল তাদের আমরা অনেক বেশী বেতন দেই এবং আমাদের বলা হয়েছে কারন আমরা বোকা। আমার সেবায় তাদের সেদিনের বেতন ছিল ৪.৩০ ডলার ও ৭ ডলার। এখানে টেনিস কোর্টে সময় কাটানোর মুল্য ১ ডলার এবং খাবারের দাম এত কম ছিল যে তা খরচের খাতায় কয়েক সেন্ট যোগ করেছে মাত্র।
লাইফ এন্ড ওয়ার্ক এ্যাট ঢাকা সিটি ব্লগের বার্নি এ্যালেন সোনারগাঁ ভ্রমণ করেছেন। সোনারগাঁ বাংলার এক অন্যতম প্রাচীন রাজধানী। ভদ্রমহিলা লিখেছেন:
সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর রয়েছে। আমি এটাই দেখতে এসেছি। সারাদেশের ঘরে তৈরী প্রত্যেকটি সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের উপাদান যাকে লোকশিল্প বলে তা এখানে রয়েছে। এই জায়গাটি আসলেই সুন্দর।
তিনি ঢাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা নদীতেও ভ্রমণ করেছেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে এই নদী দূষণের কারণে হুমকির সম্মুখীন। একই ভাবে নদী ভিড়ে ভর্তি এবং অস্বাভাবিক, তবে তা ঢাকা শহরের রাস্তার ভীড়ের তুলনায় কম।
এ বাংলাদেশ এ্যাডভেঞ্চার-এর হীদার ঢাকা শহরের কিছু ভিন্ন ধরনের যানের ছবি এখানে পোস্ট করেছে।
সবেশষে বুর্খাস, বাইবেলস এন্ড বাংলাদেশ-এর ক্যারোলিন একটি পোস্ট করেছেন। এতে তিনি বাংলাদেশ সমন্ধে ২০ টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, আপনি হয়তো এগুলো সমন্ধে জানেন অথবা জানেন না।