আজারবাইযান: অ্যাকটিভিস্ট, ব্লগারকে আটক করার প্রতিবাদে সিটিজেন মিডিয়া

ফেসবুকে আপনারা ভিডিও ব্লগার আদনান হাজিজাদে এবং তরুন অ্যাকটিভিস্ট এমিন মিলির আটকাদেশ সংক্রান্ত বেশীর ভাগ খবর জানতে পাবেন, যেখানে এর ব্যবহারকারীরা প্রত্যেকে তাজা সংবাদ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের গত সপ্তাহে আটক করা হয় এবং দুই মাসের প্রাক-আটকাদেশ দন্ড দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে মুলধারার প্রচার মাধ্যমে অনেক কম কর্মকান্ড চোখে পড়েছে। যদিও পরিস্থিত পাল্টাচ্ছে, সিটিজেন মিডিয়াই শুধু এই খবরের মুল উৎস হয়ে রয়েছে এখনও।

হৃদয় থেকে লেখা এক ব্যাক্তিগত চিঠিতে, ফাইটিং উইন্ডমিলস? টেক এ পিল নামের ভদ্রমহিলা স্মরণ করছেন তার বন্ধুরা এখন জেলে রয়েছে যা অনেকের বিবেচনায় রাজনৈতিক-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের কারনে।

আমার কম্পিউটারের ডেস্কটপে একটা নতুন ছবি রয়েছে- নিউ ইর্য়কে জাতি সংঘ ভবনের সামনে আজারবাইযানের পতাকা নাড়ছে এমিন, সেই দেশের পতাকা, যে দেশে সে বাস করে ও যে দেশের জন্য কাজ করে, তার অন্যতম স্বপ্ন দেশকে সে দুর্নীতিবাজ এবং অসৎ রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের হাত থেকে মুক্ত করবে। এ কারণে সে নিউইর্য়ক থেকে ফিরে এসেছে। এ কারণে তাকে এবং আদনানকে জীবনের দুটি মাস জেলে বসে কাটাতে হচ্ছে।

[…]

“একজন ভিন্নমতাবলম্বী হওয়া সম্মানের” আমার একজন জর্জিয়ান বন্ধু এ কথা বলেছিল, যখন আমি তাকে পুরো গল্প শোনাই। আমি মনে করি এমিন অনেকটাই এ রকমই বলেছিল। তারপর আমি কল্পনা করার চেষ্টা করি, যদি আমাদের মধ্যে কেউ জেলে যেত তাহলে তার জন্য সে কি করার চেষ্টা করতো?

[…]

তারা বলে “তোমরা আমার দেহকে জেলে ঢোকাতে পার কিন্তু আমার আত্মাকে জেলে ধরে রাখতে পারবে না”। হয়তো তারা এমিন এবং আদনানকে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু তাদের জন্য আমাদের যে ভালোবাসা তা কখনই কম হবে না, যাই ঘটুক না কেন। খাঁটি, শর্তহীন ভালোবাসা, তেলের বিনিময়ে পাওয়া টাকার ভালোবাসা নয়, আমার বন্ধুরা আমায় অপেক্ষায় রেখেছে, যেন আমি তাদের একজন খালায় পরিণত হতে পারি এবং তারা নিশ্চিত করেছে যে আমি আমার ঘরে নিরাপদে ফিরতে পারি। যার ফলে আজারবাইযানের সাবাইল নামের আদালতের সামনে পঞ্চাশ জন লোক আজারবাইযানের জাতীয় সঙ্গীত গাইছিল। এক ধরনের ভালোবাসা, যা সারাবিশ্বের লোকজনকে সাহসী করে তোলে, তাদের ভয় ভুলে যেতে বলে। যা কিছুই ঘটুক না কেন, তাদের সাহসী করে তোলে আমাদের বন্ধুদের স্বাধীনতার জন্য।

[…]

আমরা একই বন্ধনে একসাথে দাঁড়াই।

হাজিজাদের আরেক বন্ধু হিউমেই, হাজিজাদের জন্মদিনে ভদ্রমহিলাও তার ব্যাক্তিগত চিন্তা নিজের ফেসবুকের এক পাতায় লিখে রেখেছেন

এখন আড়ম্বরপূর্ণ শব্দ কানে তিক্ত শোনাতে পারে, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সুযোগ ছিল আদনানকে খুব কাছে থেকে দেখার। তিনি আসলে সেই ধরণের মানুষ যে দুর্লভ ব্যক্তিত্ব, তাও আমাদের মতো এমন এক নীতির দেশেও আদনান তার নিজের কাছে যা সত্য সেই মত নিয়ে চলতো। হতাশা এড়ানোর জন্য নিজেকে বার বার বোঝাতো কিন্তু কখনই তার নিজের বা অন্যর জন্য চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পায়নি। […]

[…]

আদনান, এজিজিম, আজ তুমি ২৬ বছরে পা দিলে। আজকের দিনটি তুমি জেলের ভেতরে উদযাপন করছ অথবা আমি ধারনা করছি তুমি তা উদযাপন করছও না। কিন্তু আমরা তোমার জন্মদিন উদযাপন করছি। আমি আনন্দিত যে তুমি এই পৃথিবীতে এসেছ এবং আমাদের জীবনে এসেছ। আমি আনন্দিত যে তুমি প্রমাণ করেছ যে একজন মানুষের বিশ্বাস হাজার মানুষের কৌতুহলের থেকে উত্তম। আমি আনন্দিত যে তুমি স্বপ্ন দেখতে সাহস কর এবং আমাদের সেই স্বপ্নযাত্রায় সাথী কর। এবার দয়া করে ফিরে আস। আমরা তোমার সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

একই সময় অলাভজনক একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মিডিয়া হেল্পিং মিডিয়া, যারা বিভিন্ন দেশ, যেমন আজারবাইযানের সাংবাদিক ও অ্যাকটিভিস্টদের সাহায্য করে, বলছে যে মিলি এবং হাজিজাদেকে জেল থেকে মুক্তির জন্য শব্দ তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণ প্রচারমাধ্যমের কোন কিছু করার চেয়ে ব্লগ এবং টুইটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ

গতানুগতিক প্রচারমাধ্যম আজারবাইযানের এই দুই ইয়থ মুভমেন্ট আন্দোলনের নেতাকে গ্রেফতারের খবর প্রচার করার জন্য ২৪ ঘন্টা সময় নিয়েছে। এই সময়ের মধ্য ডজন খানেক ব্লগ লেখা হয়েছে এবং সম্ভবত হাজার খানেক টুইটার সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এই সংবাদ সব জায়গায় ছিল, কেবল মুলধারার প্রচারমাধ্যম ছাড়া। কিন্ত যখন এই সংবাদ মুল ধারার প্রচারমাধ্যমে উপস্থিত হলো তখন তা এমন ভাবে এলো যেন গতকালের সংবাদ। হয়তো সেই সমস্ত প্রচারমাধ্যমের জন্য এই সংবাদ ততটা দেরী করে উপস্থিত হয়নি যারা সংবাদের উপর মতামত চায় না বা খবরটি পুনরায় ছাপাতে চায় না, কিন্তু যারা ঘটনা ঘটার সাথে সাথে খবরটা সমন্ধে জানতে চায় তাদের জন্য তা অনেক দেরী হয়ে যায়।

[…]

এ সকল কিছু হয়েছে শুক্রবার আর শনিবার। আমি মুলধারার কোন প্রচারমাধ্যমে এ সমন্ধে একটাও সংবাদ পাইনি। আমি এই সংক্রান্ত কোন সংবাদ সাধারণ মুলধারার সংবাদপত্রে পাইনি।

প্রায় ২৪ ঘন্টা পার এই অবস্থার অবসান হয়। প্রথম এএফপি একটা শিরোনাম দেয় আজারবাইযানে গুন্ডামির অভিযোগে ব্লগার জেলে: ‘রাইটস গ্রুপ’ এরপর এবং রয়টার্স এর সংবাদ আজেরি ব্লগার গ্রেফতার, তেল সংক্রান্ত সংবাদপত্রের ঘটনায়।

নিশ্চিতকরে বলা যায়, রয়টার্স এর সাথে এক কৌতুহলজন দিক যোগ করে; বিপি যে কিনা গ্রেফতার হওয়া একজন ব্যাক্তিকে তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রদান করেছে, তারা ওই ব্যক্তির মুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে।

উভয় ভালো অংশই আবার টুইট করা হয় এবং জ্বর ছড়িয়ে পড়ার মতো এবং দ্রুত তা বিস্তার লাভ করে, কিন্তু তা করা হয় ২৪ ঘন্টা পরে।

আমি আনন্দিত যে এই সংবাদ পাবার জন্য মুলধারার সাধারণ সংবাদপত্রের জন্য আমি অপেক্ষা করিনি। যদি আমাকে তা করতে হত তাহলে ২৪ ঘন্টা পিছিয়ে যেতাম এবং আমি সেক্ষেত্রে গতকালের সংবাদ পড়তাম।

ঘটনাক্রমে আজ (১৩ জুলাই) আদনানের জন্মদিন, গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন এর পাঠকরা এই দুই গ্রেফতার হওয়া অ্যাকটিভিস্ট এর সমর্থনে যে কোন মেসেজ বা বার্তা রেখে যেতে পারবে ওএল! ব্লগে, অথবা একজন নাউ অনলাইনে গ্রেফতারকৃতদের সমর্থন করতে পারবে। ফেসবুকের একটি পাতা এমিন মিলি আর আদনান হাজিজাদের জন্য খোলা হয়েছ। এছাড়াও এখানে একটি দরখাস্ত (পিটিশন) রয়েছে, যা অনলাইনে স্বাক্ষর করা যাবে এখানে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .