- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

দক্ষিণ আফ্রিকা: সরকার, ধর্মঘটকারী ডাক্তার আর ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, প্রতিবাদ, রাজনীতি, স্বাস্থ্য

গত কয়েক মাস ধরে একটা ঝড়ের উদ্ভব হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য সেবা ক্ষেত্রের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে। ডাক্তার, সরকার আর ইউনিয়ন মুখোমুখি হয়ে আছে কোন ধরণের সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে না পেরেই। সকল পক্ষ অভিযোগ করছেন আর ডাক্তাররা ধর্মঘট করছেন যাতে তাদের দাবী মানা হয়।

এই সমস্যার মূলে আছে সরকারী ডাক্তারদের কষ্ট – তাদের পর্যায়ের যে কোন সরকারী কর্মচারীর থেকে তাদেরকে ৫০% কম বেতন দেয়া হয়। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আছে দীর্ঘ কাজের সময়, হাসপাতালের অবস্থা আর ডাক্তার রোগীর অনুপাত কম। ডাক্তাররা ফেসবুকে একটা গ্রুপ তৈরি করেছেন [1] সমর্থন লাভের জন্য যেখান থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার ইতিহাস আর তাদের কষ্টের ব্যাপারে জানা যাবে।

ফেসবুকের গ্রুপ অনুসারে, ডাক্তাররা মনে করেন যে তারা যথাযথভাবে ইউনিয়ন দ্বারা উপস্থাপিত নন যেমন দক্ষিণ আফ্রিকান মেডিকাল এসোসিয়েশন (সামা) সরকারের সাথে চুক্তিতে এসেছেন তাদের সদস্যদের সমর্থণ ছাড়াই।

তবে সামা জানিয়েছে:

আমরা সদস্যদের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে আমাদের সদস্যদের সামার প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে চাই, একটা ওএসডির জন্য কথা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা যা আমাদের সদস্যদের আকাঙ্খা আর চাহিদার প্রতিফলন। এর প্রেক্ষিতেই আমরা চেষ্টা করেছি নিয়োগকারীর প্রস্তাবের ব্যাপারে আমাদের সদস্যদের সর্বক্ষণ এবং সঠিকভাবে জানাতে। নিয়োগকারীর প্রস্তাবনা জানানো অবশ্যই এমন কোন নিদর্শন না যে সামা তার সাথে একমত। ডাক্তারের দলের দ্বারা এমন কথা বলা যে সামা স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে চুক্তিতে উপনীত হয়েছে তা কপট, ডাহা মিথ্যা আর সকল পক্ষ যারা ওএসডি আলোচনার সাথে যুক্ত তাদের জন্য অপমানকর।

আর মূলধারার মিডিয়া জানিয়েছে [2] ধর্মঘটকারী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল এএনসির দৃঢ় অবস্থানের কথা।

আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস আর কোসাটু কোয়াজুলু নাটালে একটা প্রেস রিলিজ দিয়েছেন এলাকায় ডাক্তারদের ধর্মঘটের ‘অপেশাদারী’ কাজকে তিরষ্কার করে।

কঠোরভাবে লেখা বার্তায়, জোট সদস্যরা জানিয়েছেন যে ডাক্তাররা অযৌক্তিক আর জাতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড: অ্যারোন মোতসোয়ালেদি আর প্রাদেশিক এমিসি, ড: সিবোঙ্গসিনি দোহলোমোর কোন ঐকমতে পৌঁছানোর উদ্যোগকে নষ্ট করেছে।

তারা ডাক্তারদের অভিযুক্ত করেছেন প্রক্রিয়ার সাথে আর তাদের জন্য উন্মুক্ত চ্যানেলে যুক্ত না থাকার।

প্রাদেশিক স্বাস্থ্য দপ্তর কোয়া জুলু নাটালে ২০০ জনের বেশী ডাক্তারকে ছাঁটাই করেছেন [3] আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরে কাজে না আসার কারনে:

কোয়া জুলু নাটালের বিভিন্ন হাসপাতালে ২০০ জনের বেশী ডাক্তারকে ছাঁটাই করা হয়েছে কাজে না আসার কারনে, সোমবার বিকালে এসএবিসি রেডিওর সংবাদ জানিয়েছে।

প্রাদেশিক স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছেন যে তারা এই পর্যন্ত ২২৬ জন স্বাস্থ্য পেশাজীবিকে চাকুরিচ্যুতির চিঠি দিয়েছেন।

ব্লগ থেকে কিছু দৃষ্টিভঙ্গী:

ফুলুপিলো লিখেছেন [4]

ওয়ার্ডে বসে একটা জিনিষ আমি যা শিখেছি তা হলো ডাক্তারদের এই ধর্মঘটের যে প্রভাব বেচারী রোগীদের উপরে পড়ছে। এক মহিলার কথা অনুসারে, তার ১০ ঘন্টার বেশী সময় লেগেছে হাসপাতালে আসার পরে সেবা পেতে যেহেতু কোন ডাক্তার ছিলেন না আর নার্সদের ঔষধ দেয়ার অধিকার নেই রোগী ভর্তি হয়ে কোন ডাক্তার দ্বারা না দেখা পর্যন্ত। বেদনানাশক পর্যন্ত না আর এই মহিলা পুরো সময় সেখানে ব্যাথা নিয়ে শুয়ে ছিলেন।

মোরালফাইবারে একজন ডাক্তার [5] বেনামে লিখেছেন:

রোগীদের ফেলে রাখা আর ধর্মঘটের ব্যাপারে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল যা সাধারণ মানুষ দেখছেন কেবলমাত্র বেতন নিয়ে সংঘাত হিসাবে। বিক্ষোভের এই কর্মসূচি মূলত অনেক বছরের অপব্যবহারের সমষ্টি যা স্বাস্থ্য পেশাদাররা সরকারের হাতে ভোগ করেছেন।

কাজের পরিবেশ নিয়ে শুরু করি। হাসপাতালগুলো ধারন ক্ষমতার বেশী, আর ডাক্তাররা বেশী কাজ করানো। আমার ওয়ার্ডে হিসাব মতে ‌আমাদের কাছে ৬৫ জন রোগীর জায়গা আছে। গত সপ্তাহের বেশীরভাগ সময়ে ৮৫ জনের বেশী ছিল। ওভারটাইম করলে ডাক্তাররা ৩০ ঘন্টার শিফটে কাজ করেন, আমার হাসপাতালে অন্তত ৬০ ঘন্টা সপ্তাহে কাজ করেন, কিন্তু এমন সব জায়গায় না। সাধারণত আরো খারাপ। যদিও এটা ২০০২ এর থেকে ভালো যখন শিক্ষাধীন ডাক্তার হিসাবে, আমি সপ্তাহে ১০০ ঘন্টা আর প্রতি তৃতীয় দিনে ৩০ ঘন্টার শিফ্ট করতাম। আশা করা হয় যে সুই দিয়ে আমরা কাজ করবো যখন নিজেদের আর অন্যদের এইচআইভির সংক্রমনের শিকারে পরিণত করতে পারি সুই এর আঘাত থেকে, এটা ২৪ ঘন্টা বা তারো বেশী জেগে থেকে কাজ করার পরে।

তিনি আরো লিখেছেন:

আমি হাসপাতালে যে কাজ করি সেটা করতে আমার তিনটা ডিগ্রি লেগেছে মেডিকেলের ক্ষেত্রে, কিন্তু জিমের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের থেকে কম আয় করি। সরকারী পর্যায়ের অন্য যে কোন পেশাজীবির সাথে যদি আপনি আমার কাজের প্রয়োজনীয়তা তুলনা করেন, আমাকে কম বেতন দেয়া হয় অন্তত ৫০%। প্রাইভেট প্রাক্টিসে আমি অন্তত আমার বর্তমান বেতনের ৩০০% আয় করতাম।

আর তিনি এটাও বিশ্বাস করেন যে সরকার চালাকি অবলম্বন করছেন ধর্মঘট থেকে সমর্থন সরানোর জন্য।

বুধবার মন্ত্রী যখন সাংবাদিক সম্মেলন করেন, এটা একটা রাজনৈতিক চালাকির চাল ছিল। কখন কবে কোন নিয়োগকর্তা বেতনের প্রস্তাব জনগণের সামনে এনেছেন দরাদরি না করে প্রথমে? তারা জানতেন যে এই পদক্ষেপ ব্যাপক প্রচার পাবে আর করা হয়েছিল ধর্মঘট থেকে জনগণের সমর্থন সরিয়ে নেয়ার জন্য।

ক্যারেন লিটল [6] নৈতিকতা নিয়ে লিখেছেন:

এটা নৈতিকতাকে নাড়া দেয়ার মত পরিস্থিতি। জনগণ ভুগছে আর ভালো সম্ভাবনা আছে যে ধর্মঘটের কারনে মানুষ মারা যাবে। অন্যদিকে জনগণ বিশালভাবে ভোগে আর প্রতিদিন হাজার হাজার জীবনহানী ঘটে সরকার যখন স্বাস্থ্য খাতকে কম অর্থায়ন আর খারাপ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

ক্যারেন ধর্মঘট করছেন না, কিন্তু এটাকে পুরোপুরি সমর্থন করেন।

ক্রেটার হাসপাতালে, আমরা ধর্মঘট করছি না- আমরা একমাত্র ইমার্জেন্সী সেবা দিচ্ছি শত কিলোমিটার পরিধির মধ্যে, আর এটা অনৈতিক হবে ধর্মঘট করা। কিন্তু আমি বলতে চাই যে আমি ধর্মঘটকে সমর্থন করছি আর আমার সহকর্মী যারা সাহসী হয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ- আর তাদের চাকুরিকে বিপদের মুখে ফেলেছেন- আমাদের সকলের স্বার্থে।

স্যান্ডাইল এই সব কিছুর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন [7]:

এটা পুরোটাই কথিত খারাপ বেতন নিয়ে যা ডাক্তার আর কেবলমাত্র ডাক্তাররাই পান।

কিন্তু তাদের সহকর্মীদের কি, যারা প্রশাষক, ক্লার্ক, ক্লিনার, চালক, নার্স আর অন্যান্য জরুরী সেবায় আছে? কিছু একটা গোড়াতেই ভুল যখন ডাক্তাররা তাদের ওয়ার্ড ছেড়ে দেন অসুস্থ আর মৃতপ্রায় রোগীসহ কেবলমাত্র এই কারনে যে তারা আরো অর্থ চান।

টুরিজম রেডিও সাউথ আফ্রিকা লিখেছে [8]:

আমার মতে, দুই পক্ষই ভুল। দুই জনই এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে ভাবছেন যেখান থেকে পেছোনো যাবে না কিন্তু এটা অর্থের থেকে বেশী কিছু। আমি বলি কি, মৃতপ্রায় রোগীর দিকে কিছু অর্থ ছুঁড়ে দিয়ে আমরা আবার কথা বলি। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতে আমার বিশ্বাস নেই সরকারি বা বেসরকারী, কখনো ছিল না। আমি মেডিক্যাল সাহায্যেও বিশ্বাস করি না, এটা যেন ফিয়ার ফ্যাক্টরের টেলিভিশন সংস্করণ দেখা একটা আর্থিক পুরষ্কার সহ অবশ্যই। আপনি কি পুঁজিবাদী হয়ে ডাক্তার বা রাজনীতিবিদ হতে পারে? মনে হয়। এগুলো কি একমাত্র পথ? দৃশ্যত:। তাহলে আমার তর্ক…সবার উপরে কোন ক্ষতি করে না। আমার মনে হয় সকল পক্ষ যারা যুক্ত তারা এটা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন বা অন্তত, যা দিতে পারবেন না সেই কথা দেবেন না।