যুক্তরাজ্য: আদালত একজন ব্লগারের বেনামী থাকার অধিকারের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিয়েছে

যুক্তরাজ্যের ব্লগারদের জন্য নতুন এক আইনী নজির স্থাপিত হয়েছে।

গত সপ্তাহে ইংল্যান্ড আর ওয়েলসের হাই কোর্ট এর বিচারক জনাব ইডি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে একজন পুলিশ অফিসার যিনি তার আগের কাজের জীবন নিয়ে বেনামে লিখেছিলেন তার নাইটজ্যাক নামক ব্লগে, তার কোন অধিকার নেই বেনামী থাকার।

মামলার বাদী- এখন যার আসল পরিচয় জানা গেছে – ডিটেক্টিভ কন্সটেবল রির্চাড হর্টন – অকৃতকার্য হয়েছেন দ্যা টাইমস সংবাদপত্রের (ইউকে) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আনতে তার নাম না প্রকাশের জন্য। আদালতের রায়ের ফলে হর্টনকে তার পুলিশ বাহিনী, ল্যাঙ্কাশায়ার কন্সটেবেলারী থেকে লিখিত সাবধানবাণী দেয়া হয়েছে।

এটি কি প্রকাশের স্বাধীনতার বিজয় (দ্যা টাইমস এর জন্যে) … না প্রকাশের স্বাধীনতার উপরে চুড়ান্ত বাধা (বেনামী ব্লগারদের জন্যে)? এ নিয়ে জনমত বিভক্ত, যদিও ব্লগে খুঁজলে শেষের দিকে মত বেশী ভারী হবে।

বিচারপতি বলেছেন নাইটজ্যাক (ব্লগের লেখাগুলো) ‘তথ্য হিসাবে যোগ্য না যার জন্য বাদী বেশ কিছুটা গোপনীয়তার আশা করছেন- কারন ব্লগিং একটি পাবলিক কাজ।“ বিচারপতি ইডি, যিনি যুক্তরাজ্যে তার গোপনীয়তা রক্ষা সংক্রান্ত রায়ের জন্য বিখ্যাত, বলেছেন:

“তারপরেও, আমি যদি এই ব্যাপারে ভুল হয়ে থাকি, আমি বিবেচনা করি যে বাদীর পক্ষ থেকে এমন কোন গোপনীয়তার দাবি বিচারে দুর্বল হয়ে যাবে জনগণের পাল্টা স্বার্থের কারনে যে একজন পুলিশ অফিসার এই ধরণের যোগাযোগ করছেন।“

আর ব্লগারদের জন্য এই রায়ের প্রভাব? “যারা এই মাধ্যমের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে তুলে ধরতে চান প্রায়শ:ই পদক্ষেপ নেন তাদের পরিচয় গোপন করতে, কিন্তু আমার বিচারে এটা গুরুত্বপূর্ন আরো এক ধাপের তর্ক, যদি অন্যরা তাদের পরিচয় অনুমান করতে পারে, তাদেরকে আইন দ্বারা কেন বাধ্য করা হবে সেটা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্যে?“

এটা খুব কঠিন যুক্তরাজ্য (বা আর্ন্তজাতিক) ব্লগের জগতে কাউকে খুঁজে পাওয়া যারা ব্যাপকভাবে দ্যা টাইমসের পক্ষে এই বিচারকে সমর্থন করবেন; আর এ ব্যাপারে দ্যা টাইমসের লড়াই নিয়ে লেখা নিজস্ব রিপোর্ট মন্তব্যকারীদের কাছ থেকে কঠিন সমালোচনা পেয়েছে, যদিও, ম্যালকোম কোলস যেমন বলেছেন, খারাপ মন্তব্যগুলো একটু কঠিন খুঁজে পাওয়া (মুছে দেয়া হয়েছে?) ….

তিনটি জিনিষ মনে রাখা উচিত এই তর্কের পরিপ্রেক্ষিতে:

  • নাইটজ্যাক বিচারক প্যানেলের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন ব্লগিং এর জন্য সম্মানজনক অরওয়েল পুরষ্কার জেতার জন্য। পুরষ্কারের পরিচালক, জন সেটন, তর্ক করেছেন কেন তিনি বিশ্বাস করেন যে বিচারপতি ইডির এই রায় ভুল, এখানে, গার্ডিয়ান অর্গান গ্রাইন্ডার ব্লগে
  • হর্টন, যিনি তার ব্লগে লেখা শেষ করে দিয়েছিলেন এই পুরষ্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে, তার পুরষ্কার পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ট্রাস্টে দান করেছেন।
  • দ্যা ট্যাইমসের একটা মূল যুক্তি ছিল তাকে বের করার জন্য যে ‘তিনি ব্লগ আরো ব্যবহার করছিলেন তার তদন্ত করা কেসের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করায়, যা সত্যি ঘটনার সাথে মিলে যায়।“

ব্লগার আর মন্তব্যকারীরা প্রবলভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, অনেকে আবার ব্যক্তিগতভাবে প্যাট্রিক ফস্টারকে আক্রমন করেছেন। ইনি সেই সাংবাদিক যার সম্পর্কে ইডি বলেছেন যে তিনি দি টাইমসের ‘উন্মোচন আর গোয়েন্দা’ প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে আছেন। আমি এর আগে বেশ ভালো কিছু লিঙ্ক একত্র করেছিলাম জার্নালিজম.কো.ইউকে এডিটরস ব্লগ আর আমার নিজের ব্লগে যেখানে এই গল্প বলা হয়েছে। এখানে তার থেকে কিছু প্রাসঙ্গিক ব্লগ পোস্টের বাছাই দেয়া হলো, যা মজার কিছু পার্থক্য তুলে ধরে। মতামত প্রদানকারীর মধ্যে আছেন:

  • যাদের অভিজ্ঞতা আছে ‘উন্মোচিত’ হওয়ার। যেমন, দ্যা গার্ল উইথ আ ওয়ান ট্রাক মাইন্ড ব্লগের- একসময়ের অ্যাবি লি, এখন যিনি নিজের নামে পরিচিত, জোই মারগোলিস
  • যারা ব্লগিং পুলিশ অফিসার হিসাবে তাদের অজ্ঞাতে থাকার অধিকার সমর্থন করেন। যেমন পিসি ব্লগস
  • অন্য যারা সরকারী স্থানে কাজ করেন আর তাদের জীবন ও কাজ নিয়ে লেখেন। যেমন, টম রেইনল্ডস, একজন এম্বুলেন্স চালক, যার আবার বইয়ের একটা চুক্তি আছে।
  • যারা মনে করেন নাইটজ্যাক কিছুটা সরল ছিলেন অজ্ঞাত থাকার তার প্রচেষ্টার ব্যাপারে: যেমন ট্রয় থেকে চিঠি
  • যারা মনে করেন দ্যা টাইমসের, কোন ক্ষেত্রে, যথাযথ যুক্তি ছিল নাম উন্মোচনের। যেমন মার্টিন ক্লোকে আর ফ্লিটস্ট্রিটব্লুস
  • যারা তুলনা করেন বেনামী ব্লগার আর বেনামী সাংবাদিক সূত্রের মধ্যে। যেমন সারা ম্যাকোন্নেল আর জাস্টিন ম্যাকিটিং
  • যারা এই কেসের ব্যাপারে দ্যা টাইমসের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। যেমন হোপি সেন, যিনি এক সময়ে বেনামী ব্লগার ছিলেন।
  • এটা কেবলমাত্র একটা জটিল বির্তকের সারমর্ম। হয়তো আদালতের রায় সবাইকে এতো বিষ্মিত করেছে কারন এটা যুক্তরাজ্যে হয়েছে। আমরা একটা দমিয়ে রাখা একনায়কতন্ত্রে বাস করি না যেখানে মিডিয়ার আইন ভীতির মুখে। আমাদের যেখানে কঠোর আইন আছে, আমাদের প্রকাশের স্বাধীনতা আরো বিস্তারিত অনেক সমাজের থেকে। হয়তো বিশ্বের অনেক দেশের থেকেও- আর এর কারন কেবলমাত্র এই না যে ইংরেজী ভাষা অনেকেই বোঝে। তারপরেও একজন পুরষ্কার পাওয়া ব্লগার, যার কন্ঠ, তর্ক করা যায়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সাহায্য করেছে (সিটনের প্রবন্ধ দেখুন), কিন্তু বেনামী থাকতে পারেনি।

    কোন সীমা পর্যন্ত এটা যুক্তরাজ্যের ব্লগারদের প্রাইভেসী আর বেনামী থাকার অধিকারের ভবিষ্যৎের উপরে প্রভাব ফেলে তা দেখার বিষয়। আমি আবার জানাবো। এর মধ্যে, যারা সবাই বেনামে ব্লগিং করছেন হয়তো উপকৃত হবেন যদি তারা গ্লোবাল ভয়েসেস এডভোকেসির এ সংক্রান্ত গাইডলাইন দেখেন… তাহলে তাদের সু্যোগ থাকতে পারে বেনামী থাকায় সফল হওয়ায়। ল্যাঙ্কাশায়ারের শহরে জি-জুতসু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তা নিয়ে লেখাটা হয়তো হর্টনের পক্ষে বেপরোয়া কাজ হয়েছে।

    এ নিয়ে অন্য যে কোন ভালো লিঙ্ক পেলে অনুগ্রহ করে মন্তব্যের স্থানে জানাবেন।

    1 টি মন্তব্য

    • best packers and movers in delhi

      যুক্তরাজ্য: আদালত একজন ব্লগারের বেনামী থাকার অধিকারের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিয়েছে · Global Voices বাংলা ভার্সন

    আলোচনায় যোগ দিন

    লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

    নীতিমালা

    • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .