আমেরিকা, সিঙ্গাপুর: ক্রেডিট কার্ডে বিয়ের পাত্রী কেনা

আমেরিকার চেঞ্জ.অর্গের আমান্ডা ক্লোয়ের এর হিউম্যান ট্রাফিকিং ব্লগ (মানব পাচারকারী বিষয়ক ব্লগ) শুক্রবার এক বিজয় ঘোষণা করে। এই সাফল্য এসেছে তাদের এক প্রচারণার মাধ্যমে। ক্রেডিট কার্ড কোম্পানী ডাইনার্স ক্লাব ইন্টান্যাশনাল এমন এক কোম্পানীর সাথে ব্যবসা করা বন্ধ করেছে যারা ভিয়েতনামী পাত্রী সরবরাহ করে। পাত্রী সরবরাহের এই পদ্ধতির নাম মেইল অর্ডার ব্রাইড যেখানে বিভিন্ন দেশের পাত্ররা, পাত্রী পাবার জন্য ওই সমস্ত দেশের এজেন্সিকে (ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে) টাকা প্রদান করে। ৮০০-এর বেশী লোক এক দরখাস্তে (পিটিশন) সই করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যেন ডাইনার্স ক্লাব যেন বিয়ের জন্য পাত্রী কেনাতে সহায়তা করা বন্ধ করে।

অনলাইনের দরখাস্ত (পিটিশন) বলছে:

মানব জাতি পাচার বা বিক্রির জন্য নয়, এবং তারা অবশ্যই কোন টাকা আদান প্রদানের পরিকল্পনার অংশ হতে পারে না। নারী “ব্লু লাইট স্পেশাল” (কে মার্ট নামক সুপারশপ তার পণ্য বিক্রির জন্য বিশেষ এলাকার নাম দিয়েছিল ব্লু লাইট স্পেশাল) অথবা বিক্রির জন্য রাখা কোন উপাদান নয়। মেইল অর্ডার ব্রাইড (অন্য দেশ থেকে টাকা দিয়ে কেনা পাত্রী) কেবল মানব পাচার করার ক্ষেত্রেই অত্যন্ত নাজুক বিষয় নয়, এর ফলে মেয়েরা গৃহ নির্যাতন, অপব্যবহার, ধর্ষণ, এবং শোষনের শিকার হয়। কোন মানুষকে টাকা দিয়ে কেনার জন্য পরিকল্পনা করা নৈতিক এবং দার্শনিকভাবে বিপদজনক। মেইল অর্ডার ব্রাইড দেশের একটা পাত্রী পাবার অর্থনৈতিক বাধাকে দুর্বল করে দেয়। এই বাধা অপসারন করার ফলে পাচারকারীরা আগের চেয়ে কম টাকায় পাত্রী কেনার সুযোগ পাবে যা তারা এর আগে অনেক বেশী টাকায় কিনতো। এটা একটা নতুন সামাজিক- অর্থনৈতিক অপরাধী গোষ্ঠীর জন্য দরজা খুলে দেবে যাতে তারা সহজে মেয়েদের কিনতে পারে এবং তাদের শোষন করতে পারে।

বিয়ের জন্য পাত্রী কেনা সিঙ্গাপুরে বৈধ নয়, বিশ্বের কোথাও তা বৈধ নয়। এই মাসে সিঙ্গাপুরে ইলেকট্রিক নিউ পেপারে ভিয়েতনাম ব্রাইড ইন্টারন্যাশনাল নামের এক পাত্রী সরবরাহ প্রতিষ্ঠান সমন্ধে এক ধারাবাহিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে দুটি বিষয় উঠে আসে যার একটি ছিল এই কোম্পানি কর্তৃক ডাইনার্স ক্লাবে মাসে ১৬৭ ডলার প্রদান এবং আরেকটি ছিল পাত্রীর উৎসস্থল বিবেচনা করে মুল্য নির্ধারনের পরিমান কমিয়ে আনা। সাংবাদিক ক্রিষ্টাল চ্যান সিঙ্গাপুরের ডিনার ক্লাবের বাজার বিপনন মহাব্যবস্থাপক বা জেনারেল ম্যানেজারের সাথে কথা বলেন (সেলস এন্ড মার্কেটিং)। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায়ী অংশীদারদের নৈতিকতা বিচার করি না, আমাদের জন্য ব্যবসাটি বৈধ হওয়া গুরুত্বপুর্ণ।

এই দরখাস্তের পর, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানী তার সুর পাল্টে ফেলছে এবং চেঞ্জ.অর্গের কাছে নিম্নলিখিত চিঠি পাঠিয়েছে।

“ডিসকভার ফিনান্সনিয়াল সার্ভিসের একটি অংশ ডাইনার্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ একজন ফ্রান্চাইজির সাথে আমাদের অংশীদ্বারিত্বের বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। এখন তাদের [ভিয়েতনাম ব্রাইডস ইন্টারন্যাশানালের] সাথে সর্ম্পকচ্ছেদ-এর জন্য সাধারণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

চেঞ্জ.অর্গের আমান্দা ক্লোয়ের উপসংহার টেনেছেন:

এটি একটা শক্তিশালী বিবৃতি এবং এটি বলছে সকলে মিলে এক বিশাল পরিবর্তন তৈরি করা হয়েছে। আপনাদের দরখাস্ত ডাইনার্স ক্লাবকে তার অংশীদারীত্বের ব্যাপারে সচেতন করেছে। তাদের অন্যতম ফ্রান্চাইজি যারা মেইল অর্ডার ব্রাইড (পাত্রীর ছবি দেখিয়ে বিয়ের জন্য পাত্রী) সরবরাহ করত – এই অংশীদারদের ব্যাপারে তারা সচেতন হয়েছে। আপনারা মেয়ে পাচার এবং তাদের বাজে কাজে ব্যবহার যা মেইল অর্ডার পাত্রীর মাধ্যমে যা ঘটত তা বন্ধ করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপুর্ন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করেছেন। আপনারা যে একটা আর্ন্তজাতিক কোম্পানী মেয়েদের বস্তুর মতো ব্যবহার করে বা তাদের পিছনে অর্থ বিনিয়োগ করে সেই এই বিষয়টি মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন। এটা সেই সমস্ত দুর্লভ গুরুত্বপুর্ন মুহুর্তের অন্যতম যখন আপনি দেখতে পাচ্ছেন আপনার কাজের কারনে কি ধরনের গুরুত্বপুর্ণ পরিবর্তন এসেছে এবং আপনি পৃথিবীতে কি ধরনের পরিবর্তন এনেছেন।

বিষয়টি ডাইনার্স ক্লাবের প্রতি মনোযোগ আকর্ষন করানোর জন্য অপানাকে ধন্যবাদ। এবং ডাইনার্স ক্লাব আপনাকেও ধন্যবাদ এই গুরুত্বপুর্ন সিদ্ধান্ত নেবার জন্য, মহিলা এবং কিশোরীদের নির্যাতনের হাত থেক রক্ষার জন্য, নিরপত্তা প্রদানের জন্য। আমরা যে পরিবর্তন দেখতে চাই একসাথে আমরা তা করে দেখাতে পারি।

গত এপ্রিল মাসে গ্লোবাল ভয়েসেসে একটি পোস্ট প্রকাশিত হয় যা সিঙ্গাপুরের আলভিনোলজি লিখেছিলেন ভিয়েতনামের মেল অর্ডার ব্রাইড নিয়ে টিভি চ্যানেল আল জাজিরার একটি তথ্যচিত্র সমন্ধে। এই ডকুমেন্টারিটি ভিয়েতনামের দুটি মেয়ের গল্প বলছিল যারা সিঙ্গাপুরে নতুন জীবনের সন্ধানে এসেছিল।

আলভিনোলজি বিস্মিত কেন মানুষ বিদেশী পাত্রী খোঁজে, যেখানে সিঙ্গাপুরেই পুরুষ এবং নারী রয়েছে। তিনি লিখছেন:

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ১০,০০০ সিঙ্গাপুরী ডলার মুল্যে এলাকাতে সেই মুহুর্তে একেবারে ঘটনাস্থলেই পাত্রী কেনা যাবে। ডানে যে মেয়েটি সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। তাকে ৩৫ বছর বয়স্ক এক সিঙ্গাপুরী পাত্রের কাছে বিক্রি মানে বিয়ে দেওয়া হয়। ভদ্রলোক তার মায়ের সাথে এক ঘটকালি প্রতিষ্ঠানে সাথে গিয়েছিল, যাতে তারা উভয়েই একসাথে পাত্রী পছন্দ করতে পারে।

সবচেয়ে যেটা অপমানজনক, মেয়েটিকে একটি স্থানীয় ক্লিনিকে হাজির হতে হয় যাতে সে নিজেকে কুমারী বলে প্রমানপত্র নিতে পারে এবং বিক্রি হবার আগে তার কুমারীত্ব প্রমান করতে পারে।

ভিয়েতনামী মেয়ে এবং সিঙ্গাপুরের পুরুষ উভয়ই এ ধরনের বিয়ে করতে যাচ্ছে যারা প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন। আমি বিস্মিত এ ধরনের জুটি সত্যিকারে সুখী জীবন যাপন করতে পারে কিনা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .