- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ইরানের ‘ টুইটার বিপ্লবের’ বিড়ম্বনা

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইরান, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নির্বাচন, প্রতিবাদ, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি, সরকার

[1]আমি পূর্বে ২০০৯ সালের ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রচারণায় সামাজিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বাপারে [2] লিখেছিলাম।

বর্তমানে, মির হুসেন মুসাভির [3] সমর্থকরা বিরোধীতা করছেন মাহমুদ আহমাদিনেজাদের [4] নির্বাচনে বিশাল জয়ের প্রক্রিয়ার বিপক্ষে (গ্লোবাল ভয়েসেস এ [5] হামিদ তেহরানী)।

অনেক পর্যবেক্ষক এই বিক্ষোভকে ‘ফেসবুক/টুইটার প্রতিবাদ’ নাম দিয়েছেন এই দাবী করে যে সামাজিক মিডিয়া প্রযুক্তি এই বিক্ষোভ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে (ক্লে শার্কি টেড ব্লগে [6], লেভ গ্লসম্যান টাইম এ [7], মার্ক আম্বিন্দার দ্যা আটলান্টিকে [8])। #ইরাননির্বাচন টুইটার ফিড [9] আসলেই অতি ব্যস্ত ছিল পুরো সপ্তাহ (বেন পার ম্যশেবলে [10])।

বিভিন্ন সামাজিক নেটওযার্কিং সাইট যেমন টুইটার, ফেসবুক আর ডিলিশিয়াসকেও ব্যবহার করা হয়েছে ইরান সরকার আর আহমাদিনেজাদপন্থী ওয়েবসাইটের প্রতি ডিডস আক্রমণের [11] প্ররোচণায়, যার মধ্যে আছে আহমাদিনেজাদ.আইআর [12] (নোয়া শাখ্টমান [13] ওয়াইয়ার্ডে)। মনে হচ্ছে আমেরিকার কিছু ব্লগারও এই সব ডিডস আক্রমণকে সমর্থন করছেন (টেকপ্রেসিডেন্টে ন্যান্সি স্কোলা [14]) আর ডিসিতে অবস্থিত রাজনৈতিক একটা ফার্ম আসলে তাদের সাথে অংশগ্রহণ করছে, একটা পথভ্রষ্ট (আর বেআইনি) ডিজিটাল এক্টিভিজম ক্যাম্পেইনে (ইভগেনি মরোজোভ ফরেন পলিসিতে [15])।

কিছু আহমাদিনেজাদ সমর্থকরাও ব্লগ আর টুইটার ব্যবহার করছেন এটা ব্যাখ্যা করতে যে কেন তারা বিশ্বাস করেন যে তিনি সঠিকভাবেই জিতেছেন (গ্লোবাল ভয়েসেস এ হামিদ তেহরানী [16])।

প্রতিবাদ কমানোর প্রচেষ্টায়, ইরান সরকার বেশ কয়েকটা সামাজিক নেটওযার্কিং ওয়েবসাইট ব্লক করেছেন যেমন টুইটার [17], ফেসবুক [18] আর ইউটিউব [19], আর আছে কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদের ওয়েবসাইট (রিচার্ড সামব্রুক [20] বিবিসিতে, এসোসিয়েটেড প্রেস [21])।

অন্যদিকে, শোনা যাচ্ছে যে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট ‘টুইটারকে অনুরোধ করেছে’ এই ক্রান্তিলগ্নে সময়ে সময়ে আগে থেকে ঠিক করা ওয়েবসাইট মেরামত করা থেকে বিরত থাকতে” (এলিসা লাবোত সিএনএনে [22], টেকপ্রেসিডেন্টে ন্যান্সি স্কোলা [23])।

নির্বাচনোত্তর ইরানে টুইটার বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে: বিক্ষোভ ঠিক করতে, প্রতিবাদস্থল থেকে প্রাথমিক তথ্য জানাতে, আন্তর্জাতিক দৃষ্টি বিক্ষোভের দিকে ফেরানোর জন্য আর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার খবরের দিক পরিবর্তনের জন্য।

ইরানের নির্বাচনের ঝামেলা যখন শেষ হবে, আমরা দেখবো যে মিডিয়ার হাতিয়ার হিসাবে টুইটার বেশী কার্যকর ছিল গঠণতান্ত্রিক হাতিয়ার হিসাবে না। আমরা দেখবো যে বিক্ষোভ গঠনে টুইটারে খুব বড় পরির্বতন আনতে পারেনি, কিন্তু এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আন্তর্জাতিক সমাজকে বিক্ষোভে সম্পৃক্ত করতে আর মিডিয়ার দৃষ্টি বিক্ষোভের দিকে ঘোরাতে (দেখুন ‌ইভগেনি মরোজোভ ফরেন পলিসিতে [24], ড্যানিয়াল টার্ডিম্যান সি নেটে [25] আর মার্শাল কার্কপ্যাট্রিক আরডাব্লুডাব্লু [26] তে #সিএনএনফেইল [27] এ)।

আসলে ইরানে ১০০০০ এর কম টুইটার ব্যবহারকারী আছেন (সাইসোমোস [28] বিজনেস ঊইক [29] থেকে) আর তাদের মধ্য থেকে ১০০ জনের কম মনে হয় তা ব্যবহার করছেন। এতো কম সংখ্যা দেখে, এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে তাদের টুইট এমন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে, রিটুইট ইত্যাদি প্রক্রিয়ার গুণাত্মক প্রভাব বিবেচনা করেও। (আজকের হিসাবে ইরানে টুইট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কৃত্রিমভাবে বেশী হতে পারে একটা ভ্রান্ত প্রচারণার কারনে যেখানে মানুষকে অনুরোধ করা হয় তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টের অবস্থান পরিবর্তন করতে তেহরানে যাতে ইরানী সরকারের পক্ষে কঠিন হয় অভিবাসনকারীদের খুঁজে পাওয়া)

তবে ইরানে হতে থাকা সমাবেশ হয়তোবা মোবাইল ফোন আর অফলাইন নেটওয়ার্ক দিয়ে হচ্ছে, একই নেটওয়ার্ক যা এর আগে ব্যবহার করা হয়েছিল মুসাভির সমর্থকদের বের করে এনে তার জন্য ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করতে।

ইরানের বিক্ষোভকে ‘টুইটার বিক্ষোভ’ নাম দেয়া শুধুমাত্র যে দৃষ্টিক্ষেপন তাই না বিপদজনকও কারন এটা একটা তৃণমূল পর্যায়ের বিস্তৃত প্রচেষ্টাকে সংকুচিত করে আনছে একটা সস্তা জিনিষে, মলডোভার পরে।

ডিজিএক্টিভ.অর্গ এর মেরী জয়েস [30]আমার ৪সিজ সামাজিক মিডিয়া কাঠামো [31] ব্যবহার করেন এই প্রচারনার মূল্যায়ন করতে আর বলেছেন: “এই প্রচারণা বিষয়বস্তু সৃষ্টি আর সম্মিলিত কাজে একাত্মতা পেয়েছে, কিন্তু এটা কি সমর্থ হবে একটা গোষ্ঠী তৈরি করতে যা দীর্ঘ মেয়াদী প্রতিবাদ কর্মসূচী সহ্য করতে পারবে একবার যখন ইরানী নির্বাচন শিরোনাম থেকে সরে যাবে তখন?”

ইভগেনি মরোজভ [32] টুইটার যে বিক্ষোভ সংগঠন করতে ভূমিকা রেখেছে এই দাবীর ব্যাপারে আমার সংশয় সমর্থন করেন আর মনে করেন যে এটা আসলে বেশী ভূমিকা রেখেছে ‘সংঘর্ষ বা এরই মধ্যে পরিকল্পিত বিক্ষোভ আর র‌্যালীর প্রচার করতে'।

টেকপ্রেসিডেন্ট এর ন্যান্সি স্কোলা [33] একমত যে ‘আমরা যেমন মলডোভাতে দেখেছি, ‘টুইটার বিপ্লবের ধারণা’ সব সময়ে তথ্যের ভিত্তিতে হয়না, অন্তত এই পর্যন্ত ভাবা যে বিক্ষোভ এই মাধ্যম ছাড়া ঘটতে পারত না।’

নিউ ইয়র্ক টাইমসের ব্রান্ড স্টোন আর নোয়াম কোহেন [34] আমার সাথে একমত যে ‘এই ধরনের আপাতদৃষ্টিতে স্বত:স্ফূর্ত সরকার বিরোধী বিক্ষোভকে ‘টুইটার বিল্পবের’ নাম দিয়ে এরই মধ্যে একে সস্তা বানানো হয়েছে।

অলথিংগস ডি এর কারা শুইশার [35] টুইটার নিয়ে মিডিয়ার বাড়াবাড়িতে ক্ষুব্ধ ‘কারন দৃষ্টির কেন্দ্রে আসা উচিত কিভাবে এইসব টুলস মানুষ ব্যবহার করে, টুলসগুলোর উপরে গুরুত্ব না দিয়ে।”

এথান জুকারম্যান [36] বিষ্মিত ‘কি পরিমানে ভালো ভালো পত্রিকার সাংবাদিকরা সবাই একই (ভ্রান্ত) প্রশ্ন করছেন।”

দ্যা আটলান্টিকের মার্ক আম্বিন্দার [37] ইন্টেলিজেন্স গোষ্ঠীকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে বেশীরভাগ রিপোর্ট টুইটারে কেবল বাহুল্য কিছু শব্দ, গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য না।

টেকপ্রেসিডেন্টএর টম ওয়াটসন [38] আমাদেরকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে প্রযুক্তি কি করতে পারে তার সীমা আছে, ‘বিশেষ করে যখন নারী পুরুষ রাস্তা দিয়ে মিছিল করছেন যেখানে একেবারে পূর্নাঙ্গ ধর্মীয় একনায়কতন্ত্রের সেনা মোতায়েন করা আছে এবং সেনাদের বন্দুক সবার সামনে মোকাবেলা করা আর জেলের দেয়ালের পিছনে ফাঁসির দড়ির মোকাবেলা করার ব্যাপারটি ভিন্ন মাত্রার।”