আমেরিকা: চিকিৎসার জন্যে মারিজুয়ানার ব্যবহার নিয়ে যুদ্ধ

ফ্লিকারের নীতা লিন্ড এর ছবি

ফ্লিকারের নীতা লিন্ড এর ছবি

আমেরিকার ১৩টি অঙ্গরাজ্যের নাগরিকরা বর্তমানে চিকিৎসাগত কারনে মারিজুয়ানা (গাঁজা) সেবন করতে পারে, কিন্তু এই সীমাবদ্ধ ভাবে মারিজুয়ান সেবন করার অধিকারও এখন হুমকির সম্মুখীন। একে মোকাবেলা করতে এবং মারিজুয়ানার ব্যবহার বাড়ানো এবং বৈধকরনের দাবীতে অনেক আমেরিকান নাগরিক ব্লগে লিখেছেন।

জানা যায় মারিজুয়ানা (ক্যানাবিস) বৈধ করার দাবীতে আমেরিকায় বিতর্ক শুরু হয় ১৯০০ শতকের শুরুর দিকে। সে সময় লোকজন এটিকে বিনোদনের জন্য ব্যবহার করতো। এরপর প্রায় ১০০ বছরের বেশী সময় পার হয়ে গেছে এবং শুরু থেকে এই বিতর্ক তার উত্তাপের একটু‌ও তাপ কমাতে পারেনি।

কোর্টে রাষ্ট্র বনাম রাজ্য সরকারের আইন:

ফ্রেব্রুয়ারী মাসে এটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘোষণা দেন যে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার আর মেডিকেল মারিজুয়ানা ক্লাবে হানা দেবে না যা রাষ্ট্রের আইন মেনে চলে। এই ঘোষণা সত্বেও এই ড্রাগ বা মাদক বিরোধীরা এখনো এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। খুব সম্প্রতি ওকলোহামার রিপাবলিকান সিনেটর বা সংসদ সদস্য টম কোবার্ন আইনে এক সংশোধনী আনার চেষ্টা করেন যাতে ফেডারেল সরকার বাধ্য করতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকারকে, তাদের আইন মানতে। উল্লেখযোগ্য যে মারিজুয়ানাকে সারাদেশে বৈধ করা এখনও আইনে পরিণত হয়নি। মে মাসের ২১ তারিখে এই সংশোধনী খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে আইনে পরিণত হতে ব্যর্থ হয়।

নরমাল ডেইলি স্টাশ-এর একজন ব্লগার ডিউডমাস্টার, একটি প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছে বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি, আমেরিকা ফর সেফ এক্সেস বা নিরাপদ আমেরিকা জন্য, সংগঠন আমেরিকায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে মারিজুয়ানা ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্যে ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

বর্তমানে চিকিৎসার জন্য মারিজুয়ানা ব্যবহার কেবল যথাযথভাবে সঠিক ভাবে মুল্যায়ন করার মাধ্যমে- যা ব্যাক্তিগত ভাবে অনুদানে পরিচালিত প্রতিষ্ঠিত এফডিএ দ্বারা পরীক্ষাগারে অনুমোদনের মাধ্যমে দেওয়া হয় (অন্য যে কোন ওষুধ এভাবে পরীক্ষা করার পর সরবরাহ করা হয়), যদি সিনেটর কোবার্নের উদ্দেশ্য হয় চিকিৎসাক্ষেত্রে মারিজুয়ানাকে কাজে লাগানো, তাহলে তাকে প্রথমে ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ)-এর একচেটিয়া অধিকার বন্ধ করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠান চিকিৎসার জন্য মারিজুয়ানার চাষের সুযোগ কেবল গবেষণার জন্য দিয়ে থাকে। বর্তমানে ডিইএ কেবল ন্যাশনাল ইনিষ্টিটউ ফর ড্রাগ এ্যাবিউজ (এনআইডিএ) নামের প্রতিষ্ঠানকে বিশেষভাবে চিকৎসার জন্য ক্যানআবিস চাষের লাইসেন্স দিয়েছে। তারা কেবল মারিজুয়ানা ব্যবহারের খারাপ দিক নিয়েই গবেষণা করে। এই একাচেটিয়া অধিকার আমেরিকার যে কোন তদন্ত এবং গবেষণার জন্য বাধা।

ক্যালিফোর্নিয়ায়, একটা লম্বা সময় ধরে চলা যুদ্ধ এ মাসের শুরুতে সমাপ্ত হয়েছে। এখানকার দুই কাউন্টি বা স্থানীয় এলাকা সান দিয়েগো ও সান বার্নার্দিনো ১৯৯৬ সালের রাষ্ট্রীয় আইনকে পাল্টে ফেলার চেষ্টা করে। এই অধিকার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মারিজুয়ানা ব্যবহার করার অনুমতি দেয় যা আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে কেসটিকে তুলে আনার মধ্যে দিয়ে অর্জন হয়। তারা মের ১৮ তারিখে এই মামলায় হেরে যায়। স্টপ দা ড্রাগ ওয়ার অর্গানাইজেশনের স্কট মর্গান কাউন্টির কোর্টে হেরে যাওয়া বিষয়ে ব্লগে লেখেন:

শতবার রাষ্ট্রের সাথে রাজ্যের আইনের দ্বন্দ্ব, রাষ্ট্রের এই আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বাধা নয়, যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে মারিজুয়ানা ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। রাজ্য সরকারের শক্তি প্রয়োগ করা ব্যক্তি এতে এগিয়ে আসতে পারে এবং সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু তারা রাষ্ট্রের আইনকে অকার্যকর করতে পারে না। এই সমস্ত আইন এখন প্রয়োগ করা যেতে পারে, এবং রাষ্ট্রের শৃংখলারক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে মুল্যবান নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে, যার রোগী তারা এই যোগাযোগের মধ্যে আসতে পছন্দ করে।

তবে এই চিন্তা থেকে যায় যে, রাজ্যের আইন যে ভাবে হোক রাষ্ট্রের আইন বাতিল করবে, যা কেবল তৈরী করা অর্থহীন এক বিষয় এটাই কিনা চিকিৎসা ক্ষেত্রে মারিজুয়ানা নেওয়ারর শত্রু, যার ফলে মুখ দিয়ে নেওয়া বন্ধ হয়েছ কয়েক বছরের জন্য। চমৎকার চেষ্টা, কিন্তু আপনি ভুল করেছেন। মামলা শেষ।

সান ফ্রান্সিসকোর মেডিকেল মারিজুয়ানা ক্লাব, ছবি ফ্লিকারের থমাস হোয়াক এর সৌজন্যে

সান ফ্রান্সিসকোর মেডিকেল মারিজুয়ানা ক্লাব, ছবি ফ্লিকারের থমাস হোয়াক এর সৌজন্যে


আমেরিকবা ফর সেফ এক্সেসে-এ জো এলফোর্ড ব্লগ লেখেন মেডিকেল ক্যানবিস: ভয়েস ফ্রম দি ফ্রন্ট লাইনামে, যা ক্যালিফোর্নিয়ার কোর্টরুমে তার অভিজ্ঞতা। মের ২৬ তারিখে কোর্টে তিনি চিকিৎসার কারনে মারিজুয়ানা নেবার পক্ষে মৌখিক যুক্তি দেখান। এই মামলা সচেতনতা একদল রোগীর,যারা ক্যানবিস গ্রহণ করত। তারা দাবী করেছিল যে তারা শেরিফের বিভাগ বা প্রশাসন থেকে হয়রানীর শিকার হয়েছিল।

থার্ড এ্যাপিলেট ডিস্ট্রিক এ তিন নাম্বার অপীল বিভাগে যাওয়ার আগে আমি মৌখিক যুক্তি দেখিয়েছিলাম, যা ছিল সাক্রামেন্টোর রাষ্ট্রীয় বিচারালায়। এই মামলা ছিল উইলিয়াম বনাম বাট্টে কাউন্টির মধ্যে যা স্বল্পসংখ্যক একদল রোগীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এদের বাট্টে কাউন্টির শেরিফ অফিস হয়রানি করছিল। বিশেষত উইলিয়াম এবং ছয়জন রোগীর শ্রম নষ্ট করা হয় এবং উইলিমায়ের সম্পত্তি, এই সম্পত্তির মধ্যে ৪১ টি গাছ। এই বাট্টে কাউন্টির একজন দুষ্ট শেরিফ কয়েকবছর আগে তা সরিয়ে ফেলে, ডেপুটি শেরিফ জ্যাকব হেনকক এসে উইলিয়ামের সম্পত্তিতে প্রবেশ করে কোন ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই এবং তাকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে ১২টি চারা নষ্ট করতে বলে।

মারিজুয়ানার অধিকারের জন্য ব্লগিং করা

যদিও মেডিকেল মারিজুয়ানা ক্যালিফোর্নিয়ায় বৈধ আমেরিকায় কেবল ১২টি রাজ্যে একই নীতি গ্রহণ করেছে। এই কারনেই অনেক কন্ঠস্বর ধারাবাহিকভাবে সারাদেশে এই ড্রাগ বৈধ করার প্রচারনা চালাচ্ছে। অনেক প্রতিবাদী কন্ঠস্বর ব্লগোস্ফিয়ারে প্রচারনা চালাচ্ছে, প্রায়শ:ই অনেকে শোনাচ্ছে, মারিজুয়ানা ব্যবহারে কি সুবিধা রয়েছে।

মারিজুয়ানা পলিসি প্রজেক্টে ব্লগে, এমপিপি ব্লগ, ব্রুস মিরকেন এক গবেষণা উপস্থাপন করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ক্যানাবিস সাহায্য করতে পারে এবং উৎসাহ প্রদান করতে পারে মেডিকেল মারিজুয়ানা কেবল “নেশা করার জন্য নয়”।

দি স্টিমুলিষ্ট পাঁচটি কারন উল্লেখ করেন কেন মারিজুয়ানাকে বৈধ করা হবে- এর সঙ্গে এই তথ্যটি যোগ করেন যে বেবি বুমারদের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের প্রজন্ম, যারা কম সন্তানের প্রথাকে ভাঙ্গতে চায়) বয়স বাড়ছে; ড্রাগ বা মাদক যুদ্ধের জনপ্রিয়তা আস্তে আস্তে কমে আসছে এবং তার সঙ্গে অর্থনৈতিক সুবিধাও:

ক্যালিফোনিয়ার অর্থনীতি শুয়ে পড়ছে এবং গভর্নর আর্নল্ড শোয়ারজেনেগার যে কোন ভাবে টাকা বানানোর উপায় খুঁজছেন। সান কুয়েন্টিন এবং এল এ কলিসিয়াম বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। কিন্তু সবেচেয়ে জোরালো যে উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন তা হোল মাদক বিষয়টিকে বৈধ করার জন্য গবেষণার আহবান। তিনি এ মে মাসের শুরুতে বলেন, অতিরিক্ত রাজস্ব আয় নিয়ে আমি সব সময় উন্মুক্ত বিতর্কের পক্ষে।

মারিজুয়ানা সমন্ধে অনলাইন নিউজ কমিউনিটি (সংবাদ প্রদানকারী সম্প্রদায়) সৃষ্টি হয়েছে, এর মধ্যে এক মানচিত্র রয়েছে। এর ব্যবহারকারীকে এই মানচিত্র দেখাচ্ছে সবচেয়ে কাছের ক্যানাবিস ক্লাব কোথায়, তার ফটো শেয়ারিং (ছবি ভাগাভাগি করে দেখা) সম্প্রদায় এবং এই নিয়ে আলোচনা সভা কোথায় হয় ।

অনেক সমর্থক থাকা সত্বেও মারিজুয়ান বিরোধীরা এখন শক্তিশালী এবং যার ফলে রাজ্য সরকাররে আইনের দ্বারা একে বৈধ করার বিষয়টি এখনও অনকে দুরের ব্যাপার। ডেব-হাস- গ্রান ফোরামে বা সভায় একটা লেখা পোষ্ট করেছে যার নাম গ্রীন প্যাশন বা সবুজ অনুরাগ। এটি এক মহিলার কথোপকথন, যা সম্প্রতি তিনি তার ছেলের সাথে আলাপ করেছেন।

“আমি কয়েক মাস আগে আমার ছেলের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে ভালোবাসা বাড়ছে সে সমন্ধে এবং সবুজ ভালোবাসা, আমার নতুন আগ্রহ সমন্ধে, আলাপ করছিলাম। আমি এছাড়াও তাকে বলছিলাম যতই আমি বুড়ো হচ্ছি পট বা গাঁজা যেন বৈধ হয় আমার মনের এই ইচ্ছে আরো শক্তিশালী হচ্ছে। তার উত্তরে সে যা বলল তা আমাকে বিস্মিত করেনি, কারন আমি নিজেও সে ভাবেই ভেবেছি। কিন্তু এক সময় যখন সে আমাকে বললো মা আমার বলতে খারাপ লাগছে কিন্তু সত্যি যদি বলি তাহলে বলবো আমি মনে করি না তারা মারিজুয়ানাকে বৈধ করবে। এটি বৈধ হতে আরো অনেক বছর লাগবে। এই শব্দগুলো আমার কানে কঠিন হয়ে বাজলো এবং ভাবনায় মনে হলো আমি কোনদিনই সে দিনটা দেখতে পাবো না, যখন তা বৈধভাবে জন্মাবে এবং আমি যখন ইচ্ছে তখন তার ধোঁয়া নিতে পারবো। আমি চিকিৎসার জন্য মারিজুয়ানা নেওয়াকে সকল দেশে বৈধ করার ব্যাপারে আলোচনা করছি না, আমি বলছি যখন তা সিগারেট আকারে আসবে এবং আমি খুশীমতো তা নেবার স্বাধীনতা পাব।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .