পারাচিনার পাকিস্তানের ফেডারেল এ্যাডমিনিস্ট্রেটড ট্রাইবাল এরিয়ার(এফএটিএ) কোরাম উপত্যকার রাজধানী। এলাকাটি আফগানিস্থানের পাকতিয়া প্রদেশের লাগোয়া। এক সময় এলাকাটি মুঘল বাদশাদের গ্রীষ্মকালিন আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে ১৯৮০ এবং ৯০ এর দশকে লম্বা সময় ধরা চলা আফগান যুদ্ধের পর তার মনোরোম সৌন্দর্য তালেবান বিদ্রোহের কারনে ঢাকা পড়ে গেছে। বর্তমানে তালেবান বিদ্রোহীরা এই এলাকা দখল করে রেখেছে। তারা এই অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। স্থানীয়দের ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করছে।
এখানে বিদ্রোহ নতুন কোন ঘটনা নয়। ব্লগার রাজ এর অতীতের কিছু ঘটনা দ্রুত তুলে ধরেছেন ওয়েকিং লাইফ পোস্টে:
আমেরিকা যখন আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করে তখন থেকেই পারাচিনার এবং সীমান্ত প্রদেশ তালেবান বিদ্রোহের শিকার। চলতে থাকা এই লড়াই বাস্তবিক অর্থে এই এলাকার পর্যটন শিল্পকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলেছে। এই সুন্দর এলাকা এবং পার্শবর্তী অঞ্চল (সোয়াত) মাসের পর মাস চলতে থাকা এই লড়াইয়ে বেদনায়দায়ক ভাবে ধ্বংস হয়েছে।
আলি হাসনাইন এই এলাকার ধর্মীয় মতাদর্শ নিয়ে যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সেই ইতিহাসের গভীরে প্রবেশ করেছেন:
খুররম এই উপত্যকার প্রধান শহর, এফএটিএ এলাকার একমাত্র শিয়া (ছোট্ট) সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। এই এলাকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫০০,০০ জন। এর মধ্যে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর পারাচিনারের জনসংখ্যা ৫৫,০০০ জন। পারাচিনার ও এই উপত্যকা এক সময় শিয়া অধুষ্যিত অঞ্চল ছিল। কিন্তু আফগানিস্থানকে ঘিরে রাশিয়া ও আমেরিকার যুদ্ধ শুরু হলে বিপুল পরিমান সুন্নী মুসলমান এখানে আসতে শুরু করে। সুন্নীদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এলাকায় গোষ্ঠীগত সংঘর্ষও বেড়ে যায়। কিন্তু মনে হচ্ছে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে পরিমাণগত এবং গুণগত ভাবে তা অনেক কম।
পাকিস্তানের প্রচারণা মাধ্যম এই বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগ না দেবার কারনে অভিযুক্ত হয়েছেন। প্রেস টিভি অনুসারে:
সম্প্রতি ইরানের কোম শহরে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যার শিরোনাম ছিল “পারাচিনারে শিয়া গণহত্যা”। এর মাধ্যমে জানা যায় গত ছয়মাসে পারাচিনার ও হাঙ্গু এলাকায় শত শত শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে।
জানা যাচ্ছে তালেবানপন্থী এবং আল কায়েদার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিদ্রোহীরা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। তারা এই শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় এক অর্থনৈতিক অবোরোধ আরোপ করেছে।
আম্মার ফাহিম তার আম্মার ৩৬০ ব্লগে, মিডিয়ার এ ব্যাপারে চুপ থাকায় হতাশা ব্যাক্ত করেছেন। তিনি নিজে এই ঘটনাকে শিয়াদের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যা নামে অভিহিত করেন:
“আমরা সকলেই মাথা কাটা মৃত মানুষের ছবি দেখেছি এবং তার সাথে দেখেছি আমাদের সুন্নী এবং শিয়া বন্ধুদের অসভ্যদের মতো নিষ্ঠুর আচরণ করতে। আমরা সকলেই জানি প্রতিদিন শত শত মানুষ গোষ্ঠীগত ঘৃণা ও নিষ্ঠুরভাবে দমনের শিকার হচ্ছে, এই ঘটনা ঘটছে এমন এক জায়গায় যা এক সময় এক সুন্দর উপজাতীয় এলাকা ছিল।
আমি বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি এমন এক বিশাল গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে প্রচার মাধ্যম নিরব কেন। আমরা যে বিচারের কথা বলছি তা কোথায়? মানবাধিকারের জন্য যে আওয়াজ শোনা যায় সে কোথায়? অথবা তারা কি কনসার্ট অথবা ফ্যাশন শো আয়োজনে ব্যাস্ত?
ব্লগোস্ফিয়ার এর সমাধান নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে এবং কথা ছড়িয়ে দেয়া শুরু করেছে। এই গণহত্যা নিয়ে এতদিন পর্যন্ত এই প্রচারনা মাধ্যম নিশ্চুপ ছিল। আরো চুপ থাকা বিষয়টিকে আরো খারাপ দিকে নিয়ে যাবে এবং আরো গোষ্ঠীগত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়বে। চলতে থাকা এই ঘটনার শিকার পরিবারগুলো হৃদয়ের ক্ষত না সারিয়ে বেঁচে থাকতে পারে না। ব্লগিং সম্প্রদায় এক সাথে হাতে হাত রেখে এই আশায় বুক বেঁধেছে যে তাদের কন্ঠস্বর সবাই শুনবে।
প্রো-পাকিস্তান-এ, আমার এক নিজের লেখায় আমি অন্য গোষ্ঠীর লোকদের কাছে কাছে এক দরখাস্ত করেছিলাম যেন তারা তাদের হাত এক সাথে করে, এক মানবিকতার জন্য, যাতে এই সমস্যা সবার মনোযোগ আকর্ষন করে:
কয়েক দশক ধরে কেবল বিশ্বাসের কারনে নিষ্পাপ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। কারো বিশ্বাসের কারনে করোরই কাউকে হত্যা করার অধিকার নেই। আমাদের ধর্মীয় কারনে অন্যদের বিচার করা উচিত নয়। আমরা তাদের বিচার করবো যারা ঈশ্বরের মতো আচরন করে। এই আচরন তারা তখন করে যখন তারা মানুষ হত্যা করে। প্রচারনা মাধ্যমের যারা কতৃপক্ষ তাদের এই নিরবতা বিচারযোগ্য। তবে এগুলো আমাদের কথাকে ছড়িয়ে দেবার পথে বাধা হতে পারে না। আমি ব্লগোস্ফিয়ারের সকলকে আবেদন জানাচ্ছি ব্লগে কথা ছড়িয়ে দিন। আপনি আবার পোস্ট করুন অথবা লিংক দিন, কিন্তু কথাগুলো ছড়িয়ে দিতে থাকুন।
আমাদের শিয়া ভ্রাতাদের বেঁচে থাকার সমান অধিকার রয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগিরষ্ঠরা মানুষের সহঅবস্থানে থাকাকে শ্রদ্ধা করে। আমরা তাদের শাস্তি দেব যারা ইসলামের নামে এসব কাজ ঘটায়। কারন ইসলাম আমাদের সহনশীলতা এবং একতার শিক্ষা দেয়।
একটি প্রচারনামুলক ব্লগ রয়েছে যার শিরোনাম পারাচিনারকে সমথর্ন করুন। সেখানে অনুরোধ করা হয়েছে, বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে কিভাবে তাদের সাহায্য করা যাবে।
এই ঘটনা সমন্ধে নিজে জানা এবং লোকজনকে জানানো।
প্রার্থনা সভার আয়োজন করা, নিজেদের জাগ্রত রাখা, স্থানীয় এলাকায় আলোচনার আয়োজন করা (স্কুল,ক্যাম্পাস, পাবলিক লাইব্রেরী, শুক্রবারের প্রার্থনা সভা, মসজিদ, এবং কমিউনিটি সেন্টারে, দুতাবাসে ও প্রেস ক্লাবে) লম্বা পোস্টার বানানো যার মধ্যে ছবি ও সংক্ষিপ্ত তথ্য থাকবে।
আপনারা স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক সংবাদপত্রে কলাম ও চিঠি লিখুন। লিখুন তথ্যমুলক দৃষ্টিভিঙ্গী নিয়ে। নিজেদের সরকার এবং স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থাকে লিখুন। নিজ সম্প্রদায়ে পোস্টার তৈরী করা ও চিঠি লেখার সেশন চালু করুন।
জুলফিকার আলী ভুট্টো যাকে পাকিস্তানের স্বর্গ বলে অভিহিত করেছিলেন (জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং পিপিপি বা পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা -বর্তমানে দলটি পাকিস্তানের ক্ষমতায়) যা এখন মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই পরিস্থিতি সমন্ধে সচেতন হতে হবে এবং যারা তালেবানী নিষ্ঠুরতার নিরব শিকার তাদের বাঁচানোর চেষ্টার জন্য আহবান জানাতে হবে।
1 টি মন্তব্য
৭১ এর পাপ।