- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ক্যারিবিয়ান: যখন শূকর ওড়ে!

বিষয়বস্তু: ক্যারিবিয়ান, ল্যাটিন আমেরিকা, কিউবা, গায়ানা, গ্রেনাডা, জামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, বার্বাডোজ, বার্মুডা, মেক্সিকো, সেন্ট ভিনসেন্ট, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, দুর্যোগ, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, স্বাস্থ্য

হোয়েন পিগস ফ্লাই [1] (যখন শূকর ওড়ে)” প্রবাদটি আজকাল ক্যারিবিয়ান [1] অঞ্চলেই শুধু জনপ্রিয় নয় কারন বাকী পৃথিবীর [2] আঞ্চলিক ব্লগাররা শোয়াইন ফ্লু [3] হুমকির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। [4]

এই মহামারীর উৎপত্তিস্থল মেক্সিকোর [5] ভৌগিলিক ভাবে [6] নিকটবর্তী অঞ্চল কিউবার ব্লগাররা যৌক্তিকভাবে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে বেশ আগ্রহী। হাভানা টাইমস [7] এর লেখক সার্কেলস রবিনসন এই মহামারীর হুমকি দূর করার ক্ষেত্রে তার দেশের পারঙ্গমতার প্রতি বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হয়:

এই দ্বীপে এখনও পর্যন্ত (২৮শে এপ্রিল) শোয়াইন ফ্লু আক্রান্তের কোন তথ্য প্রকাশিত হয়নি। কিছু দেশে বার্ড ফ্লু ছড়ানোর পর বিগত কয়েক বছরে কিউবা সম্ভাব্য মহামারী মোকাবেলার জন্য একটি ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটিয়েছে।

কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব করেছিল যাতে জনগণ ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার উন্নয়ন ঘটায় যার সাথে আরও ছিল হাঁচি ও কাশির সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখার ব্যবস্থা, ঘনঘন হাত ধোয়া এবং ঘরে ও কর্মস্থলে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ব্যবস্থা, সেইসাথে প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে চিকিৎসার প্রতি মনোনিবেশ সন্ধান করা।

বিশেষজ্ঞরা ব্যস্ত হচ্ছিল মেক্সিকো এবং অন্যান্য আক্রান্ত শহরের তথ্যানুযায়ী এই নতুন ধরনের টাইপ এ (এইচ১এন১) শোয়াইন ফ্লুর আক্রমনের ভয়াবহতা কত হতে পারে তা নির্ণয়ে।

দেশব্যাপী বেসামরিক প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক এর জন্য কিউবা পরিচিত যাকে গত বছর তিনটে শক্তিশালী হ্যারিকেনের মোকাবিলা করতে হয়েছে।

এর মধ্যে স্পষ্টবাদী অ্যালং দ্যা ম্যালকন [8] বলেছে:

সাধারণ এবং বাধ্য জনগণকে মানিয়ে নেয়ার জন্য কিউবা সরকারের ক্ষমতা বেশ ফলপ্রশু হয় যখন কোন মহামারী রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়। নিদর্শন সরূপ বলা যায় ডেঙ্গু জ্বরের বিরুদ্ধে প্রচারণায় কর্তৃপক্ষ সেটা প্রমান করেছে ।

যখনই কর্তৃপক্ষকে কোন হ্যারিকেনের প্রতিরোধে প্রস্তুত হতে হয় কিউবার সাংগঠনিক দক্ষতাও কাজ করে, সাধারণ মানুষের র‌্যালি অনুষ্টিত হয় অথবা লোকজনকে ভোট এর মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করতে দেয় ( অপশন এ: ফিডেল। অপশন বি: ফিডেল, অপশন সি: ফিডেল) আমি জানি, আমি জানি কিউবানদের আপন গনতন্ত্র রয়েছে।

গার্ল উইথ অ্যা পার্পাস [9] প্রতিবেদন করে যে জ্যামাইকার সরকার কোন সুযোগ নিচ্ছে না:

স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় জ্যামাইকাকে সোয়াইন ফ্লু সতর্কতার মধ্যে রেখেছে।

এটার মানে হলো দ্বীপটিতে প্রবেশের সকল বন্দর সতর্কতার সাথে স্বাস্থ্য কর্মীদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে মেক্সিকো, ইউএসএ ও কানাডা হতে আগত পর্যটকদের দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে যারা হয়তো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও থাকতে পারে…দ্বীপটির দুইটি বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে…যেগুলো সেবিকাদের দ্বারা চালিত।

জ্যামাইকান কর্তৃপক্ষের ভূমিকাকে অনুকরণ করে ব্লগার তার কথা বলেছে: তার বাকী পোষ্টটুকু [9]রোগটি হতে নিজেকে রক্ষা করার বাস্তবসম্মত তথ্যে ভরপুর।
আবার প্রাদুর্ভাবের উৎস হতে দূরে অবস্থিত গায়ানা [10], যদিও এই দেশটির নিকট প্রতিবেশী কলম্বিয়া [11] যেখানে এই রোগের প্রাদুর্ভাবের কিছু খবর পাওয়া গেছে [12] সীমানার মধ্যে, সে সম্পর্কে ব্লগার ইমরান খান [13] মনোযোগ আকর্ষন করছে:

আমি বিশ্বাস করি না যে এখনও ভীত হবার সময় এসেছে কিন্তু হঠাৎ করে কলম্বিয়াতে ১২ জন সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত বিষয়ক সন্দেহের খবরে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বলেছে আমাদের খুব একটা ভাবনার কিছু নেই [14] কেবল জনগণকে নিরাপদ রাখা ছাড়া। যখন একাবার শুকরের মাংস নিয়মতান্ত্রিকভাবে (রন্ধন করা) থাকে এটা কোন ক্ষতি করবে না। তুমি হয়তো ভাবতে পার কি এবং কোথায় সেটা খেয়েছ। এইসব কিছু শেষ হবার আগে অন্তত যতদূর সম্ভব নিজের খাবার নিজে প্রস্তুত করাই মনে হয় সবচেয়ে নিরাপদ কাজ।

বার্মুডার ক্যাচ এ ফায়ার [15] এবং ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোর কফিওয়ালা [16], যাইহোক, সত্যিই এই বিব্রতকর সময়ে মেক্সিকান লোকজনের জন্য ভাবছে। ক্যাচ এ ফায়ার [17] বলে যে মেক্সিকতে সোয়াইন ফ্লু মহামারীর চেয়েও বেশী অঘটন ঘটতে পারে এমন দু:খজনক বিষয় হলো ভূমিকম্প [18]:

ইতিমধ্যে ফ্লু প্রাদুর্ভাবের চাপে রয়েছে (বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে) এমন একটি দেশে এটা খুব একটা কাজে দেবে না। সকলে ঘরের ভেতর অবস্থান করবে এইটা ঠিক না বেঠিক তা নিয়ে আমি কিছুটা সন্দিহান- জনাকীর্ণ এলাকার লোকজন কম আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু দালানে থেকে যাওয়া লোকদের ক্ষেত্রে হয়তো এটার উল্টো হতে পারে।

এবং সেখানে ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার হার বেড়ে যাবার সম্ভাবনা হলো, ঠিকাছে, এটা এই মুহূর্তে কোন সুখপ্রদ চিন্তা হতে পারে না।

কফিওয়ালা [19], যে কিনা সম্প্রতি সমাপ্ত হওয়া ফিফথ সামিট অব দ্যা আমেরিকাস [20] এর সময় মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতির [21] সাথে সাক্ষাৎ করেছে, বলছে:

আজ আমি সত্যি রাষ্ট্রপতি ক্যালডেরন এর জন্য ভাবছি…৬.০ ভূমিকম্পে কুইডাড মেক্সিকোর বিধ্বংসে এবং শোয়াইন ফ্লুর আক্রমনের সময় আমার হৃদয় তার সাথে অন্তপ্রাণ। অনেক পশুখামার, তোমাকে অবাক করবে যদি প্রকৃতি মা তার প্রতিশোধ আমাদের উপর নেয়। এটা আমাদের বোকা মানুষেরা শেখাবে। মেক্সিকোর অর্থনীতি যা ঠিকঠাক মতো চলছিল, এখন সেটা একটা ধাক্কা খাবে। মেক্সিকোর উৎপাদন, পর্যটন শিল্প এবং লোকজন একটা আঘাত প্রাপ্ত হবে যা মোটেও ঠিক না, কেউ আশা করে যে তারা এই ঝড়ে বিবর্ণ হবে এবং অন্যদিকে দ্রুত ফিরে আসবে।

বারবাডোস ফ্রি প্রেস [22] ইতিমধ্যে দেখতে পাচ্ছে অর্থনীতির পতন অর্থাৎ মহামারী প্রাদুর্ভাবের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় পর্যটন শিল্পে, কিন্তু তারা এই বর্তমান পরিস্থিতিতে সত্যনিষ্ট :

কোন মানুষ বা জাতি বাতাস, স্রোত এবং সাগরকে রুখতে পারেনা। এবং শোয়াইন ফ্লুর ক্ষেত্রেও তাই। প্রাদুর্ভাবে বার্বাডোস যা যা করতে পারেনি, এবং যে সামান্য বার‌বাডোস করতে পেরেছে তা আন্তর্জাতিক মাপকাঠির বিষয়। আমাদের সরকার গ্রান্টেলি অ্যাডামস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র তৈরী করেছে, কিন্তু বাস্তবিক ভাবে একমাত্র এটাই করা যেতে পারে।

কিন্তু আবেনি, [23] যে সেন্ট ভিনসেন্ট এবং দি গ্রেনাডিনস হতে ব্লগ করে, এমন একটা অবস্থায় আছে যেখানে সে স্বপ্ন দেখছে “শূকর, ভাইরাস ছাড়ানো শূকর। শূকর ফ্লু দ্বারা সংক্রামিত হয় এবং আনন্দের সাথে তা আমাদের মাঝে ছড়ায়।”

সর্বত্রই লোকজন মুখোশ পড়ে ছিল যেন সুফ্রিয়ের আগ্নেয়গিরি [24] নির্গত হয়েছে এবং আমাদেরকে সালফার ও ছাই হতে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। আমি হাসপাতালে লম্বা লাইন দেখলাম প্রতিশেধকের জন্য যা আসলে আদৌ হয়তো ছিলনা অথবা ছিল চাহিদার তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত। করিলা বা অন্য কোন ভেষজ ঔষধ যদি এই হুমকীর সাথে যুদ্ধে যথেষ্ট ক্ষমতাপূর্ণ হতো ভেবে হতাশ লোকজন বেশ জোড়ে হৈচৈ করতে পারে। ইতিমধ্যে স্টিফেন কিংস এর দ্যা স্যন্ড এর লক্ষ্য এখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

তখন আমি জেগে যাই এবং টেলিভিশনে খবরে দেখি এই ফ্লুকে বাধা দেয়া যাবে না। এখন আমি ভীত এই ভেবে যে যদি আমার দ্বীপের এটা সামাল দেয়ার সামর্থ্য থাকে এটার কি আমাদের তীরে চলে আসা উচিৎ হবে।

অন্যদিকে বার্বাডিয়ান প্রবাসী ব্লগার ডোন মাইন্ড মি [25] কে মনে হয় অসচেতন, সে লিখেছে কৌতূকপূর্ণ পোষ্ট- যাকে সে বলে “শুকরের মাংস আগমনের বই”- জর্জ ওরওয়েল [26] এর এনিমাল ফার্ম [27]এর সাথে বলিষ্ঠ ভাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে পরামর্শ দিচ্ছে যে বিশ্বের শূকর যে করে হোক তার শাস্তি পাচ্ছে:

অধ্যায় ১২…
২. ঈশ্বরের নির্দেশে নোয়াহ কি তার নৌকায় শূকরকেও রক্ষার জন্য উঠায় নি? এবং যদি শূকর এতই অপরিষ্কার হবে কেনো তবে ঈশ্বর সেই সময় আমাদের আঘাত করা পছন্দ করেন নি অথবা পছন্দ করেন নি আমাদের ডুবিয়ে দিতে অথবা বিলুপ্ত করে দেন নি ডায়নোসর বা ডোডোর মত? (বোকা বানিয়েছি!)

৬. এবং পরবর্তী কালে যখন ধর্ম বিশ্বে স্বল্প প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং বিশ্ব বস্ততান্ত্রিক হয়ে উঠছিল বেশি করে, এবং গাভীগুলো ধ্বংসাত্মক জ্যাকব ক্রুজফেল্ডট এর দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিল, আশা ছিল আমাদের পাঁজর, আদ্র শুকনো শূকর মাংস এবং শূকর লেজ পাবে এক নতুন স্থান এবং পরিশেষে তাদের মূল্য সমুন্নত হবে।

৭. কিন্তু একদা উদ্ভব ঘটেছিল যাদের বলা হত পুষ্টিবিদ এবং খাদ্য মৌলবাদী এবং অন্যান্য উত্তরসূরী যারা মাংসল শূকরের মাংসের বিরুদ্ধে ক্রুসেড শুরু করছিল এবং বলেছিল এটা অস্বাস্থ্যকর এবং আমাদের এই মাংস সহজ পাচ্য নয় এবং এই ধরনের আরও বিরুদ্ধ কথা ছিল যা লোকদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং লোকদের আমাদের বিরুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছিল।

৮.কিন্তু হায় যথেষ্ট হয়েছে প্রতিশোধ সরূপ এবং এটা কি ঈশ্বর বলেনি এবং সে (ঈশ্বর) কি সকল শূকর ডন এর ঈশ্বর নয়? (যেমনি সকল সোয়াইনডন এর দ্বারা বিরোধীতা করা হয়েছে এবং যা আমি ভাবি ইউকের জন্য একটি দাগ সরূপ।)

৯. তাই প্রকৃতপক্ষে এটা আমার নিকট একটা উদ্দেশ্য বয়ে আনে। প্রতিশোধের সময় হাতের সন্নিকটে।

১০. তাদেরকে আবার আমাদের দোষারোপ করতে দাও এই সোয়াইন ফ্লুর জন্য কিন্তু সকলকে ভয়ে কাঁপতে দাও।

১২.এবং সেখানে একটা ব্যাপক গোলোযোগের উদ্ভব ঘটেছিল ঠিক বিদ্যুৎ চমকানোর মত কারন জড়ো হওয়া লোকজন জোড়ে চিৎকার করেছিল সপেক্ষে এবং কাউন্সিল অব সোয়াইন-ডন বিরবির করেছিল নেপোলিয়ানের উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলে এবং সোয়াইন ফ্লু কে শূকর বিরোধী দল ও শূকরের মাংসের ঘৃণাকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার তার ভাবনাকে।

১৩. এবং সেকারনে এটা পেরিয়ে যাবার সুযোগ পেলো।