- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

লিবিয়া: নারী, লেখিকা এবং শিল্পী

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., লিবিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, উন্নয়ন, জাতি-বর্ণ, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, লিঙ্গ ও নারী, শরণার্থী, সরকার

সোয়াইন ফ্লু এখনও লিবিয়ার ব্লগস্ফিয়ারে আলোচ্য বিষয় হয় নি। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে মেয়েদের অবস্থান নিয়ে কথা বলা সেখানে আলাপ শুরু জন্য ভালো।

হাইল্যান্ডার [1], লিবিয়ান আরবের বেশ কয়েকজন লেখকের লেখা ব্লগ ঘেটে বের করেছে যে লেখার ব্যাপারে ব্লগস্ফিয়ারকে অনুশীলন করার জায়গা হিসেবেই বিবেচনা করে ব্যবহার করা উচিত। পুরুষ সঙ্গীটির সাথে সর্ম্পক খারাপ না হওয়ার জন্যে এখানে সকল কিছু জানানোর কোন প্রয়োজন নেই।

আমি মনে করি না লিবিয়ান পুরুষরা তাদের বোন, মা ও স্ত্রী ইত্যাদির বিপক্ষে। লিখুন, কিন্তু তা যেন সামাজিক চাপ থেকে লেখা শব্দ না হয় এবং থ্রিএওয়াইবি (থ্রিএওয়াইবি আরবী শব্দ, যার মানে ঘৃণা-অসন্মান) এর অংশ না হয়। যা দেখা যায় না তার কোন অস্তিত্ব নেই…অথবা মুল্যবান মহিলারা হয়তো মুল্য পায় এবং তাদের চিন্তা ভুলভাবে ব্যাখা করা হয় এবং ঈশ্বর তাদের সুনাম নষ্ট হওয়াকে ক্ষমা করুন, কারন লিবিয়ার প্রথাগত পুরুষেরা তখন তাদের ওয়েব সাইট শিকারে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে।{রেফারেন্স [1]}

প্রায়শই ভুলে যাওয়ার একটি বিষয় এখানে কাজ করে,তা হলো লিবিয়ার বাইরে বাস করা মানেই এই নয় যে তা আলাদা অথবা একই অনুভূতির নিশ্চয়তা দেবে। দেখুন একই বিষয়ে লন্ডন এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে কি ঘটেছে। এংলো-লিবিয়ান [2], যিনি লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি এতই হতাশ যে সেখানকার পুরুষদের বলেছেন, মেয়েদের সন্মান করতে।

যখন আমি হোটেলের দিকে হাঁটছিলাম সে সময় আমি আবিস্কার করি দাওয়াত পাওয়া বেশীর ভাগ লোকেরা হোটেলের বাইরে যে হল আছে সেখানে দাড়িয়ে আছে। সেই হলে একটি ছবি দেখানো হবে, যার দরজা তখনও বন্ধ ছিল। আমি খেয়াল করলাম সেখানে খুব কমই মহিলা রয়েছে, তারা তাদের সঙ্গীদের সাথে দাড়িয়ে আছে। প্রায় ২০ মিনিট পর আমি দেখলাম হলের এক কর্মচারী হলের একটি দরজা সামান্য খুললো। তখনই আমি দেথলাম যেন মাটি ফুঁড়ে একদল লিবিয়ান মহিলা সরাসরি হলে প্রবেশ করলো। সংখ্যায় তারা ১৫ থেকে ২০ জন হবে। তারা আমাদের অতিক্রম করেই হলে ঢুকলে। এটা যেন এক আলোর ঝলাকানির মতো এসে হারিয়ে গেল। এরপর হলের কর্মচারী হলের গেট বন্ধ করে দিল। নি:সন্দেহেই তারা এই এলাকার আশেপাশেই কোথাও লুকিয়ে ছিল, যতক্ষণ না তাদের জন্য সংগঠকদের কেউ দরজা খুলে দিতে বললো, যাতে তারা লিবিয়ান পুরুষদের চোখ এড়িয়ে সেখানে যেতে পারে!!!! যখন আমাদের সকলের জন্য দরজা খোলা হল, প্রথমে আমার যে বিষয়টি চোখে পড়লো তা হলো সকল মহিলা সামনে পেছনে আলাদা আলাদা ভাবে বসেছে। আমি ঠিক তখনিই সেই কয়েকজন মহিলার দিকে তাকালাম, যাদের আমি শুরুতে তাদের পুরুষ সঙ্গীদের সঙ্গে দেখেছিলাম। দেখে মনে হচ্ছিল তারা সকলেই ধাঁধায় পড়ে গেছে। তারা বিভ্রান্ত। আমি নিশ্চিত তারা তাদের পরিবারের সাথে বসতে চেয়েছিল, কিন্তু ঘটনাক্রমে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে তাদের অন্য মেয়েদের সাথে বসতে হলো এবং তাদের সুখী দেখাচ্ছিল না। {সোর্স [2]}

অন দ্যা এজ-এ যারা লিবিয়ান পুরুষদের বিয়ে করে এবং অনেক দুর্ভাগ্যজনক ব্যবহার পায় সেই সমস্ত বিদেশি মেয়েদের নিয়ে একটি খুবই বির্তকিত লেখা লিখেছেন। তিনি বলছেন:

আমি নিয়মিত লিবিয়ান ব্লগারদের লেখা পড়ি। তারা লেখে, আমার জীবন কত সহজ, যে বিদেশিনী লিবিয়ায় বাস করা পুরুষকে বিয়ে করেছে{…} আমি জানি আসলে ঘটনা হলো….আমাদের জীবন খুবই কঠিন. সত্যিই কঠিন, আপনি যতটা ধারনা করছেন তারচেয়ে কঠিন।

যখন আমার স্বামী এবং তার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় যে লিবিয়ার মেয়েদের মতোই আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবে তখন আমাদের বাবা মা আমাদের রক্ষা করার জন্য পাশে এসে দাড়াতে পারে না। যখন তারা আমাদের সাথে খারাপ অথবা কুৎসিত ব্যবহার করে তখন আমাদের পালাবার মতো কোন নিরাপদ কোন জায়গা নেই। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আমরা যেতে পারি, এমন কোন মানুষ নেই যারা আমাদের কথা শুনবে এবং আমাদের সমস্যার কথা বুঝবে। আমাদের নেই কোন সাহায্যকারী যে ভালোবেসে হাত বাড়িয়ে দেবে, যেমনটি একজন লিবিয়ান নারীর রয়েছে। না, আমরা কেবল এই ভাবে ভাবি না, আমরা এর সাথে আটকে থাকি। আমরা পালিয়ে যাই না। আমরা নিজ অবস্থানে দাড়িয়ে থাকি, আমাদের জন্য এবং আমাদের সন্তানের জন্য আমরা লড়াই করি, যা আমাদের বলে মনে করি তার জন্য, যে কারন আমাদের পরাজিত করে তা হচ্ছে ভালোবাসা, ভালোবাসা! হ্যা, ভালোবাসা। আমরা আমাদের স্বামীকে ভালোবাসি, এমনকি যখন আমরা তাদের খুন করতে চাই। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালোবাসি, এমনকি যখন তারা আমাদের শ্রদ্ধা করে না, বা তারা আমাদের কারনে লজ্জিত হয় যে আমরা লিবিয়ান না, কারন আমরা আলাদা। হ্যাঁ এটা আমাদের অনেকের জীবনে ঘটে থাকে। আমরা যেখানে এসেছি, সেই নতুন ঘরটিকে ভালোবাসতে শিখি। ভালোবাসতে শিখি লিবিয়ার সকল উন্মত্তা, শক্তি, সৌন্দর্য, বিস্ময়, জনগণ, বিভিন্ন এলাকা এবং লিবিয়ার বিভিন্ন জিনিষ।

বলার কোন প্রয়োজন নেই যে এই বিষয় এতটা উত্তপ্ত বির্তক তৈরী করেছে যে এর উপর পর্যালোচনা করে আরেকটি পোস্ট [3]এসেছে।

অন্যদিকে ইমতিদাদ এর লেখক ঘাজি লিবিয়ান (পুরুষ বা মহিলা) লেখকদের গল্প ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করে আমাদের বিস্মিত করছে। আমি মনে করি একজন প্রকাশিত লেখক হিসেবে এর আগে তার ভালো ভবিষ্যত ছিল। ওমার কিকিস এর লেখা, যখন চা পান চলছিল তার সম্প্রতিক অনুবাদ [4], যা আমার মেরুদন্ডে এক শীতল স্রোত বইয়ে দেয়।

শাহরআজাদ এমন একজন মহিলা যিনি লিবিয়ার বিষয়ের উপর বেশ আগ্রহী। তিনি বেশ কয়েকটি তৈলচিত্রের ছবি তার পোস্টে রেখেছেন যেগুলো একেছে এক ছোট্ট লিবিয়ান মহিলা শিল্পী [5]

“এখানে কিছু তৈলচিত্র রয়েছে যা আমরা বোন তার বন্ধুর বাড়ী থেকে এনেছে। এই শিল্পী কেবল তৈলচিত্র আঁকা শুরু করেছে, এবং এখন পর্যন্ত তার কোন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়নি। কাজেই আমি তাকে বললাম, আমি তার তৈলচিত্র আমার ব্লগ-এ রাখবো এবং দেখতে চাই তার কি ফলাফল আসে” ।

ব্যাক্তিগতভাবে আমি তার একটি তৈলচিত্র কিনতে চাই যাতে সে তার একক তৈলচিত্রের প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারে।

আমি লস্টডুবিলিনার পোস্ট থেকে উপসংহার টানতে চাই। সে লিবিয়ায় বসবাসরত একজন আইরিশ মহিলা, যে কিনা পোস্টে সে তার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছে। সে এখানে তিন মাস ধরে আছে।

বাহুতে ক্যামেরা নিয়ে আমি এখানে একটা হোটেলের কামরায় বাস করছি এই আশায় যে আমি স্থানীয় সংস্কৃতির সামান্য অংশ ধরতে পারি। এক হতাশাজনক বাস্তবতা থেকেই এক চমৎকার চিন্তা এসেছে। বিশেষত প্রত্যেকটি গাড়ী যা পুরুষরা চালিয়ে আসে, তার ভেঁপু বাজা অথবা গাড়ীটি থামা নিয়ে! গাড়িতে করে আরেক স্থানে নামিয়ে দেবার আমি অনেকগুলো সুযোগ পেয়েছি, তার সাথে পেয়েছি ফোন নাম্বার এবং বন্ধুত্ব! ভীত এবং হতাশ! অর্ধেক রাস্তায় এসে আমি আমার হিলজুতো এবং মাথাকে সরাসরি হোটেলের দিকে ঘুরিয়ে ফেলি{…} হোটেলে আসি, সেখানকার সকল কর্মচারী খুবই বন্ধুভাবাপন্ন, এবং অতিথিপরায়ান। প্রত্যেকে হয় আমার নাম জানে, না হয় আমাকে বোন বলে ডাকে। সাধারণত লিবিয়ান লোকেরা বের হয়ে আসে যেন এখানে পশ্চিমের চেয়ে আরো গরম- তারা বয়ে আনে একটা শক্তিশালি উপাদান, ভালো এবং দয়ার উপাদান, যা কিনা ভারী তাজা করে তোলে। {সোর্স [6]}

উপরের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে যে কিছু লিবিয়ার বালক, যারা পুরোপুরি বখে গেছে এবং অন্যরা চমৎকার ভদ্রলোক।

লিবিয়ান সমাজ মেয়েদের ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে এবং যত্ন করে; মা, বোন, খালা, কন্যা এবং স্ত্রী হিসেবে। রাষ্ট্র স্বাধীনতা এবং ছেলে মেয়েদের মধ্যে সমতার নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু এখানে সব পরিচালিত হয় সংস্কৃতিক মতাদর্শ ও ঐতিহ্এর দ্বারা। এখানে ঐতিহ্য মানে আমি ধর্ম বোঝাতে চাইছি না। এই লেখাটি নারীবাদ নিয়ে নয়। এটি কেবল আমাদের সমাজের ব্যাতিক্রমি বিপরীত এর একটি পর্যবেক্ষণ এবং কিভাবে তাদের সাথে কাজ করতে হবে তার একটি প্রতিচ্ছবি।