ভারতীয় ব্লগোস্ফিয়ার এবং মুল ধারার প্রচার মাধ্যমে এখন এক বির্তক গুন্জরিত হচ্ছে যে জাগো রে এবং ভোট রিপোর্ট ইন্ডিয়ার মত স্বচ্ছ উদ্যোগ সত্বেও এবার মুম্বাইতে ৪৪.২ ভাগ ভোট পড়েছে। ভোট প্রদানের এই হার ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপিস্থিত কমে আসার লক্ষণ।
সেখানকার বেশীর ভাগ লোক ব্যাখা করার চেষ্টা করছে কেন মুম্বাইয়ের অনেক বাসিন্দা এবার ভোট দেয়নি।
সিএনবিসি-টিভি১৮ চ্যানেল এই ব্যাপারে একটি সম্মিলিত আলোচনা অনুষ্ঠান-এর আয়োজন করে। এতে নির্দলীয় প্রার্থী মীরা স্যান্নাল, এম্পাওয়ার্ড মুম্বাই এর মাধব ভাটকুলে, মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ভেঙ্কাটেশ কুমার এবং মুম্বাইভোট নামক প্রতিষ্ঠান থেকে বিবেক গিলানী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তারা আলোচনা সভায় ব্যাখা দেবার চেষ্টা করেছে কেন মুম্বাইতে এবার এত কম ভোট পড়েছে।
আইএএনএস ব্যাখা করেছ কেন মুম্বাইতে এইবার এত কম ভোট পড়লো। এর পেছনে তারা যুক্তি দেখাচ্ছে মুম্বাইবাসীরা কেবল মুম্বাই নিয়ে বা নিজেদের ব্যাপারেই সচেতন, যা আসলে এই নির্বাচনে উঠে আসছে না। টুইটার-এ নেহা বাগোরিয়া বলেন, মুম্বাইয়ের বেশীর ভাগ শিক্ষিত চাকুরীজীবি তরুণ ভোটাররা অন্য প্রদেশের বাসিন্দা। তারা মুম্বাইতে ভোট দিতে পারে না, কারন মুম্বাই ভোটার তালিকায় তাদের নাম থাকে না।
টুইটারের মধ্যে নিযুক্তি জানাচ্ছে, তিনি বিশ্বাস করেন পুরোন রাজনীতিবিদদের প্রতি উদাসীনতা এবং প্রচন্ড গরম মুম্বাইতে কম ভোট পড়ার অন্যতম দুই কারন। বোম্বে এডিক্ট বলছে, রাজনীতির প্রতি মধ্যবিত্তের অনাগ্রহ এবারের কম ভোট পড়ার কারন।
হর্ষদ ওক যুক্তি দেখাচ্ছেন, ভোটারদের উদাসীনতা নয়, নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতার প্রতিফলনই এবার হয়তো কম ভোট পড়ার কারন। নীলকন্ঠ ভারতে যে ভাবে ভোটার তালিকা রক্ষণাবেক্ষন করা হয় তার দিকে অভিযোগের অঙ্গুলি নির্দেশ করেন। অমিত যুক্তি দিচ্ছেন ভাঙ্গা ভোটের বাক্স আর ভোটার তালিকা থেকে হারিয়ে যাওয়া নাম কম ভোট পড়ার কারন হতে পারে না।
রণধীর সিং একটি বিস্তারিত ষড়যন্ত্রের তত্বের উল্লেখ করছেন, কেন ভারতীয় মধ্যবিত্ত ভোটাররা এবার ভোট দেয় নি। এ্যাকর্ন এ্যাট ন্যাশনাল ইনটারেস্ট ভোটকেন্দ্রে ভারতীয় ভোটারদের কম উপস্থিতির জন্য আরো গভীর ভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণের আহবান জানিয়েছেন।
মোহিনা শ্রীনিবাসন এবং ভারুশালী লাড এ কারনে হতবাক ও বিষাদগ্রস্থ যে মুম্বাইবাসীরা এবার ভোট দিতে বের হয়নি। কমল চুর্তবেদী নিজেই ভোট দিতে যাননি কিন্তু মুম্বাইকাররা ভোট দিতে না যাওয়ায় তিনি তাদের নির্লজ্জ উপাধি দিয়েছেন।
সুবিন, দিনা মেহতা, ছবি সাচদেব এবং কেয়াজাদ আদাজানি তাদের প্রথম ভোট দেবার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। ভোটার তালিকায় নাম না থাকা ছিল খুবই দুখ:জনক। এতে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা দ্বিধায় পড়ে যান, পুরো ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া ছিল অগোছালো। মডেল থেকে লেখিকায় রুপান্তরিত হওয়া শোভা দে অনেক সহজে ভোট দিতে পেরেছেন। রাজেশ জৈন ব্যাখা করেন কেন তিনি ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম ভোট দিতে যাননি, কারন এবার তার নাম ভোটার তালিকাতেই ছিল না। লাইভ মিন্ট-এ প্রিয়া রামানি ব্যাখা করেন, কেন তিনি ভোট দিতে যান নি।
আরেক দল লোক বিশ্বাস করেন যে আগে ধরা হয়েছিল এবার মুম্বাই-এ ভোট দিতে আসা লোকের পরিমান বেড়ে যাবে। তবে তা শুরুতে ভুল প্রমানিত হয়েছে।
কলাম লেখক বীর সাংভি মুম্বাই-এ কম ভোট পড়ার কারনে বিস্মিত নন এবং তিনি যুক্তি দেখাচ্ছেন মুম্বাই-এ সন্ত্রাসী হামলার পর সবার মধ্য একটা ভ্রান্ত ধারণা বিরাজ করছিল যে এই ঘটনার পর ভারতীয় শহুরে তরুণরা নাগরিক কর্মকান্ডে আরো বড় আকারে যুক্ত হবে। অনন্ত কৃষ্ণান বেশী ভোটার আসার ভ্রান্ত প্রচারণার জন্য মিডিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। কৌশল কারখানিস টুইটারে বলেছেন ভোটের ব্যাপারে সবার প্রচেষ্টা ছিল সামাজিক শ্রেণীর দিকে, গণমানুষের দিকে নয়, কিন্তু গণমানুষেরাই আসল ভোটাদের সমাজের সবচেয়ে বড় অংশ।
সবশেষে তৃতীয় আরেক দল লোক ভাবার চেষ্টা করছে কি ভাবে ভবিষ্যতে ভোট দেবার জন্য আরো বেশী পরিমান লোকদের উৎসাহিত করা যায়।
রেডিফ কম ভোটার উপস্থিতিকে হিসেব করে তার পাঠকদের জিজ্ঞাসা করছে ভোট দেওয়াকে বাধ্যতামুলক করা যায় কিনা। মোহিত আটলে বিশ্বাস করেন উপরের কোন সুযোগ বা বেছে নেবার ধারনা ভোটকেন্দ্রে আরো বেশী মানুষ টেনে আনবে না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে ভারতের জন্য এটি একটি অভূতপুর্ব নির্বাচন, কারন এবার অনলাইনে ভোটার তালিকায় নাম উঠানো, স্বচ্ছ এবং ভোট প্রদান করার জন্য সাধ্যাতিত উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে।
এই উদ্যেগ মুম্বাই-এর সন্ত্রাসী আক্রমণ-এর পর তার ভয়াবহতার ধাক্কায় আটকা পড়ে যায় যা গঠনমুলক কথার মাধ্যমে ও আবার অনলাইনে নাগরিক সমাজকে যুক্ত করার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এ কারন লেখক শশী থারুর ও নর্তকী মাল্লিকা সারভাই এবং এবিএন আমরোর ভারতীয় প্রধান মীরা স্যান্নাল-এর মত ব্যাক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হয়তো বা এই সমস্ত উদ্যেগেও ভোটকেন্দ্রে বেশী মাত্রায় ভোটারের উপিস্থিত বাড়ানো যায়নি। কিন্তু তারা ভারতীয় শহুরে মধ্যবিত্ত তরুণ উগ্রপন্থীদের গভীর ও চিন্তাশীল বিষয়ের মধ্যে নিয়ে আসার ভিত্তি তৈরী করে দিয়েছে। কাজের চেয়ে কথা সস্তা। কিন্তু নাগরিক সমাজের যুক্ততা যৌথ উদ্যোগের একটা পুর্বাভাষ দিতে পারে যে এটা একটা চক্র। ২০০৪ সালে আমরা আমেরিকার নির্বাচনে এই চক্রটি দেখা গিয়েছিল। সে বার হাওয়ার্ড ডিন অনলাইনে যুক্ত থাকালেও তার এই যুক্ততা তাকে মনোনয়ন এনে দেয়নি অথবা জন কেরিকে প্রেসিডেন্ট পদে জিতিয়ে দেয় নি, কিন্তু তা নেটভিত্তিক বা নেটরুট আন্দোলন তৈরী করে, যার মধ্য দিয়ে বারাকা ওবামা ২০০৮ সালে জনমনে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়, ২০০৯ সালে ভারতীয় নির্বাচন ২০০৪ সালের আমেরিকার নির্বাচনের অনুরুপ।
সম্ভবত ২০১৪ সালে আমরা জাতীয় পর্যায়ে একজন নানাবিধ গুণসম্পন্ন বা ক্যারিশমাটিক নেতার দেখা পাবে, যে কিনা ভারতীয় তরুণদের কল্পনাকে ধরতে পারবে। এই নির্বাচনে কংগ্রেস বা বিজেপি বা কেউ কোন ক্যারিশমাটিক প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী দিতে পারেনি যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। তাছাড়ও ভারতের তরুণ প্রজন্ম কংগ্রেস এর আত্মগর্বে হতাশ, বিজেপির সম্প্রদায়িক বাড়বাড়িতে শঙ্কিত এবং তারা ভারতের জাতীয় রাজনীতির খন্ডিত হয়ে যাওয়ার কারনে চিন্তিত। এ কারনে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজের শক্তিকে ক্ষমতাশালী করছে। ফলে আমরা দেখিছ ৪৯(০) ধারা নিয়ে আলোচনা এবং মুম্বাই আক্রমণের পর ভোটের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব। আশা করি ২০১৪ সালে বিষয়টি বদলে যাবে।
এই লেখাটি ভারতীয় নির্বাচন ২০০৯ উপলক্ষ্যে গ্লোবাল ভয়েসের বিশেষ প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে প্রচারিত হয়েছে
লেখাটি গৌরভোনমিক্স সোশাল মিডিয়া এবং এর পরিবর্তন সংক্রান্ত লেখকের ব্লগে পুর্নমুদ্রিত হয়েছে।