- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারতীয় সাধারণ নির্বাচন ২০০৯: বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা তৈরী সামাজিক সচেতনতা প্রচারণার প্রভাব

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, কৌতুক, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নির্বাচন, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রযুক্তি, ব্যবসা ও অর্থনীতি, যুবা, রাজনীতি, শিল্প ও সংস্কৃতি

ভারতের সাধারন নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে গ্লোবাল ভয়েসের বিশেষ কাভারেজের [1]আগের পোস্টে আমি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছি কিভাবে ভারতে রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রচারনার জন্য ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে [2]। একই সাথে ভারতের সিভিল সোসাইটি ওরফে সুধী সমাজ কিভাবে ভোটার রেজিস্ট্রেশন বা তালিকাভুক্তিকরন চালু রাখা এবং স্বচ্ছ প্রচারনার জন্য ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে [3]

কয়েকটি প্রচারণা তার উদ্যোগের মতোই কৌতুহল জনক। ২০০৯ সালে ভারতীয় সাধারন নির্বাচন নিয়ে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তার মধ্যে তিনটি ছিল সবচেয়ে কার্যকর। এই প্রচারণা চালিয়েছে কর্পোরেট ব্র্যান্ড বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে টাটা টির [4]প্রচারণার নাম ছিল জাগো রে [5] (জেগে ওঠো)। মোবাইল ফোন কোম্পানি আইডিয়ার সেলুলারের [6] প্রচারণার নাম ছিল মাই আইডিয়া [7]বা আমার চিন্তা। লিড ইনডিয়া [8]/ ব্লিড ইনিডিয়া [9] বা ভারতকে এগিয়ে নাও/ ভারতে রক্তপাত ঘটাও, ছিল দি টাইমস অফ ইনিডিয়ার [10] প্রচারনা ( লাইভ মিন্ট [11]/ দাইনডিয়ান [12]/ এক্সচেঞ্জ৪মিডিয়া [13]/হিন্দুস্তান টাইমস [14])।

আমার আগের চাকুরীতে ভারতের সব থেকে বড় ব্রান্ড রক্ষাকারী হিসেবে আমার ধারণা ছিল ভারতের অনলাইন প্রচারণা কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের থেকে বিজ্ঞাপন খরচ না নিয়েই নিজের অবস্থান তৈরী করতে পারবে। এই কৌশল যে খাটলো না, এই তিনটি সফল প্রচারনা আমাকে সেই উপলদ্ধি তৈরী করতে বাধ্য করেছে। অনলাইনে বাণিজ্যিক প্রচারণা মুলধারার প্রচার মাধ্যমে বিপুল পরিমান ব্যয়ের মাধ্যমে চলতেই থাকবে।

3400443177_2dd2bba65d

এক যৌথ উদ্যেগের মাধ্যমে জাগো রে [5] প্রচারনা চালায় টাটা টি [4] এবং জনগ্রহ [15]। সেপ্টেম্বর ২০০৮ থেকে জাগো রে নামে ভারতের সাধারন নির্বাচন নিয়ে এক বিশেষ প্রচারণা শুরু হয়( প্রেস রিলিজ [16])। জাগো রে-এর প্রচারণা কর্মীরা কলেজ এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে যায়। সেখানে সকলে যাতে ভোট দেবার জন্য নিজের নাম তালিকাভুক্ত করে সেই লক্ষ্যে প্রচারণা শুরু করে। সারা ভারতে ৩৫টি শহরে এই প্রচারণা অভিযান শুরু হয়ে। এর মাধ্যমে চার মিলিয়ন ভোটার রেজিস্ট্রেশন করে। এখন ভারতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজে নিজেও ভোটার রেজিস্ট্রেশন করা যায়। একটি ইন্টারএ্যাকটিভ এপ্লিকেশন বা সক্রিয় তালিকাভুক্তি করন সফটওয়ারের মাধ্যমে এটি করা সম্ভব। এটি ওয়েব ও কিয়স্ক -এ পাওয়া যেত। নিজেই নিজ নির্বাচনী এলাকা খুঁজে বের করতে ভোটাররা-এর সাহায্য নিত। এখানে ভোটার রেজিস্ট্রেশন যে ফর্ম ছিল সেটি পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রিন্ট করার জন্য তৈরী করা যেত। যে ব্যক্তি ওয়েবে ঢুকতে পারতো তাকে ওয়েবের মাধ্যমে সবচেয়ে কাছের ভোটার রেজিট্রেশন কেন্দ্রে যাবার পথ নির্দেশিকা দিয়ে দিত এবং পরে মোবাইলে মেসেজের মাধমে জানিয়ে দিত কখন তাদের নাম ভোটার তালিকায় উঠে যাবে।

এই প্রচারণা চালায় একদল তরুন, যাদের বয়স বিশের মধ্যে (এই সপ্তাহে [17])। তাদের সাহায্য করার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। এই কমিটির মধ্যে আছেন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার টি. এস. কৃষ্ণমুর্তি, ইনফোসিস এর প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মুর্তি, এবং রং দে বাসন্তি ছবির পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা (হিন্দুস্থান টাইমস [18]/ ইনডিয়ান এক্সপ্রেস [19]/ টিওআই [20])এই প্রচারণা বেশ কয়েকটি কলেজ এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করতে পেরেছে। সেখানে শতভাগ লোক ভোটের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে ( টিওআই [21]/টিওআই [22]/মিডডে [23]/টিওআই [24]/ ডেকান হেরাল্ড [25])। এমনকি তারা নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করেছে, যাতে তারা বিপুল পরিমানে রেজিস্ট্রেশন ফরম পাঠিয়ে দেয়।

জাগো-রে নামক প্রচারনার জন্য টাটা টি বেশ কয়েকটি মজার বিজ্ঞাপন [26]তৈরী করেছে। এগুলো সব ভারতীয় তরুণদের নিয়ে।

জাগো রে প্রচারনার প্রধান বিজ্ঞাপন [27]:

জাগো রে: আপনার আঙ্গুল ব্যবহার করুন ভোটের জন্য! [28]

টাটা টি অনেকগুলো টিভি চ্যানেলের সাথে একটি চুক্তি করেছে, যাতে তারা ছোট আকারের প্রচারণা চালাতে পারে। বিন্দাস টিভির আই চেঞ্জ বা আমি বদলাই [29] প্রচারণা জাগো রে প্রচারণাকে সমর্থন করার জন্য তৈরী করা হয়েছে।

জাগোরে বিন্দাস টিভি আঙ্গুল উঠাও, ভোট দাও বিজ্ঞাপন [30]


জাগোরে ডিজনি “যদি আমি প্রধানমন্ত্রী হতাম’ বিজ্ঞাপন

জাগো রে চ্যানেল ভি, ভিজে জুহি ভোট ইয়া ভাত (ভোট অথবা ভাত) বিজ্ঞাপন। [31]

জাগো রে সক্রিয় সামাজিক প্রচারণার মাধ্যমেও উপস্থিতি রয়েছে। জাগো রের ফেসবুক [32] গ্রুপে ১৫০০০ বেশী সদস্য এবং অরকুটে [33] প্রায় ১৩,০০০ সদস্য রয়েছে।

এখন এই প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে রক সঙ্গীত। ব্যঙ্গালোর ভিত্তিক ব্যান্ড দল থার্মাল এন্ড এ কোয়ার্টার (টিএএকিউ) [34] ভারতের দশটি শহরে ভারতীয় তরুণদের নির্বাচনী প্রকিয়া যুক্ত করার জন্য গান গেয়েছে। তারা বিনে পয়সায়, ‘চুপ কর আর ভোট দাও’ [35] গান শুনিয়ে যাচ্ছে। ( ডিএনএ [36]/ ইনডিয়ান এক্সপ্রেস [37]/ আইবএন লাইভ [38]/ ইনডিয়ান এক্সপ্রেস / ডিএনএ [39]):

জাগো রে ভারতে এখন এক সফল প্রচারণায় রুপ নিয়েছে। এই বিজ্ঞাপন বড় আকারের অনেক সংবাদের বিষয়ই হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ব্লগ পোষ্টের অন্যতম বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে জাগো -রে। এর ফলাফল? টাটা টির জন্য এই প্রচারণা অনেক সুনাম বয়ে এনেছে (বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড [40])। ইতিমধ্যে এই প্রচারণার মাধ্যমে ৫৩১,৩৯৫ ব্যক্তি ভোটার তালিকায় নিজের নাম উঠিয়েছে। যদিও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাজের গতিকে অনেক ধীর করে ফেলেছে (টিওআই [41])।

ভারতীয় ব্লগস্ফেয়ার জাগো রে- নামক বিজ্ঞাপন ও প্রচারনার প্রেমে পড়ে গেছে। রেশমি বনশাল [42] মনে করেন যে এই প্রচারণার মধ্যে দিয়ে টাটা কর্পোরেট সোশাল রেস্পনসিবিলিটি বা সামাজিক সচেতনতা নিয়ে যে প্রচারণা তৈরী করেছে তা সফল। এর মাধ্যমে বেশীর ভাগ ব্রান্ডের চেয়ে তারা সামাজিক সচেতনতাকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছে। রাজেশ কুমার [43]বিস্মিত কেন কেবল বেভারেজ কোম্পানীগুলো নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে সামাজিক সচেতনতামুলক বিজ্ঞাপন তৈরী করে। ইনডিয়ান হোমমেকার [44] এবং চাভভি সাচদেব [45]তাদের ভোটার রেজিস্ট্রেশন-এর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে । সংযুক্তা [46] জাগোরে প্রচারণার কো-অর্ডিনেটর বা সমন্বয়ক জাসমিন শাহের একটি মজার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
idea-celula

আইডিয়া সেলুলার – বা আইডিয়া মোবাইল কোম্পানী তৈরী করেছে মাই আইডিয়া (আমার চিন্তা) [7]। এই প্রচারণায় অংশগ্রহনমুলক গণতন্ত্র [47] নিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিজ্ঞাপনের মুল চরিত্র রয়েছে এক মহিলা রাজনীতিবিদ ও তার প্রযুক্তি নির্ভর সহকারী অভিষেক বচ্চন। রাজনীতিবিদ তার সহকারীর সহায়তায় নিজের নির্বাচনী এলাকায় যে কোন কাজে নাগরিকদের মতামত সংগ্রহ করছে। তারা মোবাইলের মাধ্যমে মতামত সংগ্রহ করছে।

এই প্রচারণা যা পিনস্টর্ম [48] দ্বারা পরিচালিত, তারা লোকদের আইডিয়া বা চিন্তা দিতে অনুরোধ করতো। এই আইডিয়া যা কিনা ভারতকে বদলে দেবে ভোট এর মাধ্যমে। এবং আইডিয়া নির্বাচিত হবে ভোটের মাধ্যমে। যতদুর জানা যায় একমাসের মধ্যে প্রায় ২০০০ এর বেশী আইডিয়া জমা পড়েছে ও ১৪০,০০০ ভোট পড়েছে( ইনডিয়ান টেলিভিশন [49])।

দি টাইমস অফ ইনিডিয়া [10] পরিচালিত একটি বিজ্ঞাপন জানুস (দুইমুখওয়ালা রোমান দেবতা) এর মুখ নিয়ে তৈরী। তার নাম লিড ইনডিয়া [8]/ ব্লিড ইনডিয়া [9]। এই বিজ্ঞাপন ভারতীয় ব্লগোস্ফিয়ারে সবচেয়ে কৌতুহলজনক আলোচনা তৈরী করেছে।

lead-india

লিড ইনডিয়া [8] প্রচারণা তার ২০০৭ এর বিষয়কেই সামনে নিয়ে যাচ্ছে। যা কিনা সারা দেশে মেধাবিদের মধ্যে দেশের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ভারতীয় নেতার খোঁজ করছে এবং সে হবে ভারতীয়দর নতুন অবতার [50]। এটি নির্বাচকদের ভাবতে বাধ্য করছে যে সঠিক ভোট দেবার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আগামী নির্বাচনে একটি অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক বির্তকের [51] মাধ্যমে এই বিষয়টি বাছাই করা এবং কোন অপরাধী রাজনীতিবিদকে [52] সমর্থন না করা এই প্রচারণার অংশ।
bleed-india

একই সময় টিওআই ব্লিড ইন্ডিয়া [9] প্রচারণা ব্যঙ্গ করছে লিড ইন্ডিয়া প্রচারণার এবং জিজ্ঞেস করছে।

ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া? কোথায়? কোন স্থানে? কোন বাগানের পথে? কোন বাকে? এবং কার দ্বারা? আমাদের নেতাদের মাধ্যমে? লোল! হায়!
সুতরাং যখন টাইমস অফ ইন্ডিয়া নতুন সময়ের নতুন নেতাদের খুজে বের করার চেষ্টা করছে (ভদ্রমহোদয়গণ, শুভেচ্ছআ রাইলো), তখন আমরা বরঞ্চ তাদের দিকে মনোযোগ দেই যারা ভারতে রক্তক্ষরণ ঘটায়: যারা স্ক্যমের বা দুনীর্তির মাস্টার, ঝুলন্ত দড়ির উপর নাচতে থাকা বাঘ: অবশ্যই তারা তাদের মেধার বিষয়টি সবাইকে জানানো উচিত, – তারা আইনের মধ্যে থেকে আইনের বাইরে ,তারা আইন তৈরী করে ভাঙ্গে, আহা! আহা! ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণ— তোমরা আমদের এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং হ্যাঁ তোমরা আমাদের ভেতরে রক্তপাত ঘটাবে।

একজন গতানুগতিক ভারতীয় রাজনীতিবিদের ব্যঙ্গ করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে। এটি করেছে পাপ্পুরাজ [53] তার নিজের ফেসবুক প্রোফাইল [54] এবং ফেসবুক পাতায় [55] (এক্সচেঞ্জ৪মিডিয়া [56])

লিড ইন্ডিয়ার প্রিন্ট এ্যাড দেখে আনন্দন [57]এর চোখ দিয়ে অশ্রু বের হয়ে আসে। আর তখন রাজিব ডিঙ্গার [58] বিস্মিত কে আসলে লিড ইন্ডিয়া/ ব্লিড ইন্ডিয়াকে তৈরী করেছে, (রান্না করছে) দ্বিভাজন এর মতো করে। অনেক টুইটার ব্যবহারকারী যেমন দীপিকা [59] এবং কনিকার [60]কাছে ব্লিড ইন্ডিয়া প্রচারণাকে একটি মজার এবং সৃষ্টিশীল প্রচারণা মনে হয়েছে। এদিকে সুমন্ত [61] এবং আধিশত [60] বিশ্বাস করেন যে ব্লিড ইন্ডিয়া যা ভূল পথে যাচ্ছে এবং খারাপ ভাবে ব্যঙ্গ করা হয়েছে

জাগো রে, মাই আইডিয়া এবং লিড ইন্ডিয়া/ ব্লিড ইন‌ডিয়া আসলে সমাজিক সচেতনতা তৈরী করা প্রচারনা, নাকি গুঞ্জন তৈরী করার একটি চেস্টা মাত্র এ নিয়ে দ্বিধান্বিত মতামত আছে। কিন্তু যদি মুল কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যাওয়া কোন বিষয়েল সাফল্যর মাপকাঠি তাহলে এইসব প্রচারণা সবচেয়ে বেশী কার্যকার, যা নির্বাচনের মৌসুমে সারা ভারত জুড়ে চলছে।