ব্রুনাই: পরিবেশগত সচেতনতা সৃষ্টি

সাম্প্রতিক উদযাপিত আর্থ আওয়ার ( বৈশ্বিক ঘন্টা) দেখিয়েছে যে বিশ্বের ধ্বংসোন্মুখ পরিবেশকে ঠিক রাখার প্রয়োজনে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচেষ্টায় সারা বিশ্ব একত্রে নেমেছিল। বিশ্বের জন্য যেন এক নির্বাচনের ডাক এসেছিল। আমার সহকর্মী গ্লোবাল ভয়েস লেখক নূর হিদায়াহ তার লেখায় বলেন যে, ব্রুনাইয়ের ক্ষেত্রে, অনেক ব্লগারকেই এই উদ্যোগের সমর্থন করতে দেখা গেছে এবং স্থানীয় পত্রিকাগুলো এই ঘটনা নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে অনেকে দেখিয়েছে যে ব্রুনাইয়ের অংশগ্রহণ একটি অর্জন সেখানে অনেকে আবার মনে করেছে পরিবেশ রক্ষায় এটি খুবই অপর্যাপ্ত একটি কাজ।

ব্রু ডাইরেক্ট নামের ব্রুনাইয়ের একটি পত্রিকা আর্থ আওয়ার এর উদযাপনে জনগনের শেষ মুহূর্তে অংশগ্রহণের প্রচেষ্টা নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। যদিও বিভিন্ন কর্পোরেশন যেমন কার ডিলারস, হোটেল এবং ব্যক্তিবর্গ যারা অংশগ্রহণ করেছিল তারা অনুভব করে যে ঐ ঘটনা সম্পর্কে জনগণকে জ্ঞান প্রদানের চেষ্টা সামান্যই করা হয়েছে।

“যেখানে গুটিকয়েক লোকদের দ্বারা নেয়া এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ খুবই কাজের ছিল, প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপক আয়োজনে ঢাকা পরে গেছে সেগুলো। ব্রুনাই এমন একটি দেশ যা বর্ণিও এর প্রাণকেন্দ্রের এক তৃতীয়াংশ দখল করে আছে এবং আবহাওয়া পরিবর্তন এবং পৃথিবীর বুকে এর ক্ষতিকারক প্রভাব দূরীকরনে বহু পেছনে রয়ে গেছে”

“মক্তব দুলী মুড়া আল-মুহতাদী বিল্লাহ তে যে ১৯ বছর বয়স্ক স্থানীয় ছাত্র অধ্যায়ন করে সে আর্থ আওয়ার বিষয়ে অজ্ঞ রয়ে যায়। যখন তাকে প্রতিবেশী মালয়েশিয়া এবং সিংগাপুরের স্কুলের উদ্যোগের কথা বলা হয়, সে বলে: “তারা কখনই স্কুলে আর্থ আওয়ার বিষয়ে কোন কিছুই জানতে পারেনি এমনকি এটা কি ন্যুনতম তাও।” স্থানীয় সরকারী ঘোষণাও জনগণকে আর্থ আওয়ার ২০০৯ এর গুরুত্ব এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বেশ “অন্ধকারে” রেখেছিল।

আশ্চর্যের বিষয় হলো ব্রুনাই দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয় আর্থ আওয়ার সমর্থন করেছিল

“ইউ বি ডি এর স্টাফ মেম্বার কিভাবে জ্বালানী সংরক্ষণ বিষয়ে ছাত্রদের সচেতনতা তাদের পাঠ্যসূচীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকা উচিৎ তা বলেছেন কারন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটা প্রয়োজন।” চ্যান্সেলরির সহকারী রেজিষ্ট্রার কেনি লিও বলেছেন যে এটি ইউবিডিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করবে। “আমাদের সম্মুখযাত্রার সেটা একটা ভালো পদক্ষেপ, কেবল মাত্র শিক্ষার ক্ষেত্রে নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যও এবং সাথে জনগণকেও সম্পৃক্ত করা”, সে বলে । “আমি মনে করিনা ব্রুনাইয়ের আর্থ আওয়ার স্বচ্ছ ছিল কারন কিছু মানুষ এর পেছনের যুক্তি টা এখনও বোঝেনা। কাউকে এর পেছনের মূল কারনটা আলোকিত করা দরকার এবং আমরা আশা করি ইউবিডি এটা চালু করতে পারে, সে বলে।

অন্য একটি স্থানীয় পত্রিকা, ব্রুনাই টাইমস প্রকাশ করেছে যে:

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আর্থ আওয়ার ২০০৯ এ যোগদানের উদ্দেশ্য এবং পন্থা সম্পর্কে অনেক ব্রুনাই বাসী এখনও অন্ধকারে আছে। “বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা গ্রহনের ধারণা বেশ চমকপ্রদ এবং উপযোগী, কিন্তু এর সম্ভাবতা প্রশ্নবিদ্ধ। ”আমি এই বিষয়ে অ্যাস্ট্রোতে একটি বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম কিন্তু সত্য বলতে কি আমার জানা ছিলনা ওটা কি অথবা ওটা কিসের জন্য”, ২৫ বছরের যুবকটি তাই বলে। “আমি মনে করি আমাদের অধিকাংশই খেয়াল করিনা বিধায় জনগণের নিকট তাদের বাতি বন্ধ করে দেয়ার এ আর্জি একধরনের বোকামী। পরিবর্তে বরং সরকার বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখার ধারণাটাই ভাল”, সে আরও যোগ করে।

ব্লগার হার্ড ব্রেক কিড আর্থ আওয়ার প্রত্যক্ষ করার স্থান নির্দেশ করে যখন নেচার নেচার আর্থ আওয়ারে ব্রুনাইয়ের অংশগ্রহণের একটি ভিডিও চিত্র আপলোড করে।

ব্লগার স্ক্রিপ্ট ডেসটিনি বিশ্বাস করে যে আর্থ আওয়ারে যোগদান পরিবেশ রক্ষায় একটি ভোট প্রদান সরূপ:

সকল বয়সের, জাতীয়তার, গোত্রের এবং পরিপ্রেক্ষিতের মানুষ এর জন্য তাদের বাতির সুইচ ভোট প্রদানের এক সুযোগ – বাতি নিভিয়ে রাখা বিশ্বের জন্য একটি ভোপ সরূপ অথবা বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য তা জ্বালিয়ে রেখে দেয়া।

ডেনকর্প খেয়াল করেছেন আর্থ আওয়ার ব্রুনাইয়ের জন্য একটি অসফলতা।

সর্বোপরী আর্থ আওয়ার পুরোমাত্রায় ব্রুনাইতে অকার্যকর হয়েছে। কোন সমর্থন ছিলনা। বয়স্ক নাগরিকরা পুরো বিষয়টাই বোঝেনি। যুবকরা খেয়াল না করে পারেনি।

স্লে৩আরজেডজেড আর্থ আওয়ারের বিস্তারিত মানে তুলে ধরেছে:

“ এই গণসংযোগের মূল উদ্দেশ্য হলো আর্থ আওয়ারের বাইরে জ্বালানী সমৃদ্ধতা বজায় রাখা, বৈশ্বিক গ্রীন হাউস গ্যাস কমানোতে আমাদের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিদিন সামান্য কাজ করা ।

জেড-ফেম ব্রুনাইয়ের আর্থ আওয়ারে যোগদানের ঘটনায় বিস্মিত হয়েছে। সিম্পিলিস্ট এই ঘটনায় ব্রুনাইয়ের অংশগ্রহণ বিশ্বে এর সম্মান বাড়াবে।

আমরা বিশ্বকে দেখাতে পারি আমরাও কিছু করতে পারি। তখন হয়তো ব্রুনাইয়ের লোকজন যে গাছে বাস করে এই ধরনের ধারণা দূরীভূত হবে। ”

গ্রীণ ক্যাম্পেইন প্ল্যাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে পুন:ব্যবহারযোগ্য ব্যাগের ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমানোর উপায় সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। গ্রীণের কিছু কিছু উদ্যোগ ইতিমধ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে কিন্তু খুব বেশীজন তার পক্ষে নেই। অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট এবং খাবারের দোকানে পুন:ব্যবহার যোগ্য কন্টেইনার এর পরিবর্তে স্টাইরোফোমস কন্টেইনার ব্যবহার করা হয়। তারা পুন:ব্যবহারযোগ্য কেনাকাটার ব্যাগও ব্যবহার করে। জনগণের উপর অনেক উদ্যেগ প্রয়োগ করা হলেও, সেগুলোর ব্যবহারে লভ্যাংশের অভাব খদ্দেরদেরকে বাড়ী চলে যেতে বাধ্য করে।

ব্যক্তিগতভাবে, আমি সেটার ব্যবহার করেছি কিন্তু সব সুপারমার্কেট সেটাকে স্বাগতম জানায়নি। আমাকে দোকানের ভেতর ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার কারনে বড় একটা সুপার মার্কেটের একজন নিরাপত্তা কর্মী আটকে দেয়। সুপারমার্কেটের স্টাফ সংঘের মাঝে যোগাযোগ এর অভাবে এই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। আবার অনেক সুপারমার্কেটে খদ্দের হারানোর ভয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে প্রবেশকে বাধা দিতে চায় না।

আর্থ আওয়ার ঘটনাটি ধ্বংসোন্মুখ পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে ধারাবাহিক সচেতনতার প্রয়োজনকেও তুলে ধরেছে। অনেক উদ্যোগই আছে যা তুলে ধরার জন্য সরকারী কর্তৃপক্ষ বা এনজিওর জন্য অপেক্ষায় না থেকে সাধারণ জনগণের দ্বারাই গ্রহণ সম্ভব।

আর্থ আওয়ারের সময় ব্রুনাইয়ের অংশগ্রহণ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .