বহু শতাব্দি ধরে ভারত এবং নেপাল উভয়ের সঙ্গে এক আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ভৌগলিক নৈকট্য এবং সংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বন্ধন দেশ দুটির মধ্যে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার অন্যতম কারন ছিল।
তবে কাঠমুন্ডুতে এখন পরিবর্তনের বাতাস বইছে। এই বাতাসে দিল্লীর মোটেও শরীর জুড়াচ্ছে না। মাওবাদীরা যখন নেপালের ক্ষমতায় আসে, তখন থেকে কাঠমুন্ডুতে এই পরিবর্তনের হাওয়া বিরাজমান। লাল (সমাজতন্ত্রী) নেপাল হতে ভারতের কতটা ভীতি তৈরী হতে পারে ভারতীয় পত্রিকা এবং রাজনীতিবিদচক্র সেটি বিশ্লেষণ করায় ব্যস্ত। কিছুদিনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে এই বিষয়টি রাজনৈতিক প্রচারণার রূপ নিয়েছে। নেপালেও বিষয়টি আলোচনার উপাদান হয়ে দাড়িয়েছে।
ভারতে এ মাসেই লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তরুণ বিজয় রেডিফডটকম ওয়েবসাইটে ভারতের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হিন্দুদের উপর এই বিষয়ের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করছেন। এক সময় নেপাল ছিল বিশ্বের একমাত্র ঘোষিত হিন্দু রাষ্ট্র। ক্ষমতায় আসার পর মাওবাদীরা নেপালকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। লেখক এই পরির্বতনকে তুলে ধরেছেন এবং দুটি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একই ধারায় কিভাবে ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে তার বর্ণনা করেছেন:
এখন আমরা একইভাবে নেপাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এক সময়কার হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল এখন হিন্দুদের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। “আমাদের পাশে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রয়েছে। তারা এক সন্ত্রাসী যুদ্ধের মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে আমাদের ভেতরে রক্তপাত ঘটাচ্ছে – খালিস্থান, অপারেশন টোপাক, কাশ্মিরের জিহাদ যা চলছে এবং কাশ্মিরের হিন্দুদের কাশ্মির থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে।”
সন্ত্রাসী আক্রমণের মধ্যে দিয়ে আমরা ৬০০০০ ভারতীয়কে হারিয়েছি। পাকিস্তান এই সন্ত্রাসী হামলায় সরাসরি সুবিধা প্রদান করে এবং এ ধরনের হামলায় উৎসাহ দিয়ে থাকে। এ সব হামলার সাথে তাদের সামরিক বাহিনী অথবা গোয়েন্দা বিভাগ -ইন্টার সার্ভিস ইন্টিলিজেন্সির যোগাযোগ থাকে অথবা তাদের নেতাদের নীরব ষড়যন্ত্র এর সাথে জড়িয়ে থাকে। কেবল বোকারাই দিব্য দৃষ্টিতে ঘটনাকে দেখতে পারে না এবং হুমকিটি অনুমান করতে পারে না।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) খুব ঘনিষ্ঠ একজন হচ্ছে তরুন বিজয়। তিনি ভারতীয় প্রচার মাধ্যমের একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করছেন যারা নেপালের মাওবাদী শাসনের ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এই বিশেষ প্রবন্ধে তিনি পাঠকদের জিজ্ঞেস করেন:
“যারা ভারতকে তাদের জীবনি শক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছে তাদের বেছে নাও। তাদের কাছে এটি কেবল টাকা তৈরীর স্থান নয় এবং অপমানজনক মৃত্যুকে বেছে নেওয়ার স্থান নয়। এই পছন্দ তোমাদের, এখন আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তার জবাব দাও।”
এই প্রবন্ধে বিষয়টি পরিস্কার যে তিনি চান ভারতের নতুন সরকারকে নেপালের প্রতি আরো সক্রিয় হতে হবে এবং প্রয়োজনে সেখানে সে নাক গলাবে।
অন্যদিকে নেপাল প্রেস এর কাছে আগামীতে ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয়। কান্তিপুর অনলাইনে ভিম প্রসাদ ভুরটেল নেপালের উপর চায়নার বাড়তে থাকা প্রভাবের উপর ভারতের আগ্রহ নিয়ে আলোচনা করেছেন:
“নেপালের সাথে চীনের সর্ম্পক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে যে চিন্তা যুক্ত হয়েছে তা অতিরিক্ত এবং সেখানে অযৌক্তিক মানসিক ভয় যোগ হয়েছে। ভারত নিজেই যখন চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নত করছে তাহলে নেপালের সাথে চায়নার সম্পর্ক উন্নয়নে ভারত এত সতর্ক কেন?”
তিনি এর সাথে যুক্তি তুলে ধরেন, ভারত এখন চীনের সাথে ভারসাম্যপুর্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে নেপালের সাহায্য নিতে পারে।
“চীন ও ভারতের মধ্যে সর্ম্পকের যে দুরত্ব রয়েছে নেপাল সেটি দুর করার ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করতে পারে। নেপালের সাথে ভারতের খোলা সীমান্ত এবং গভীর সংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বন্ধনকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। কিন্তু এখন সময় এসেছে পুরোন কিছু বিষয়কে আবার নতুন করে ভাবার যেমন ১৯৫০ সালে ইন্দো-নেপাল চুক্তি, যা পরিস্কার করে দেয় যে ভারতের একটা নিরাপত্তা কৌতুহল রয়েছে যা সে আইনগতভাবে বৈধ করতে চায় এবং তাকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করতে চায়।”
কাঠমান্ডুতে অবিস্থত নেপাল সাউথ এশিয়ান সেন্টার এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ভুরটেল। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ। তিনি এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করেন যা বেশ কিছু বিশেষ নেপালী ব্যাক্তির ভাবনার মধ্যেও রয়েছে। তারা চান না নেপালের সাথে চীনের যে সম্পর্ক তাতে যেন ভারত সন্দেহ পোষণ করে।
নেপাল টেলিগ্রাফে এনপি উপাধ্যায় ভারতের প্রতি আরো যুদ্ধাংদেহি মনোভাব পোষণ করেন। তিনি নেপালের প্রতি ভারতের বড় ভাই সুলভ আচরনে ক্ষুদ্ধ। তিনি ভারত ও নেপালের মধ্যে নতুন অতিরিক্ত চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। বর্তমান ভারত সরকার খুব দ্রুত ভারতের পরারষ্ট্রনীতির জন্য গুরুত্বপুর্ন এই চুক্তি সই করতে চাচ্ছে। নির্বাচনের সময় এই বির্তকিত চুক্তির বির্তকিত ধারা উল্লেখ করে প্রচারণার জন্য ব্যবহার করা হবে।
এই বন্দী বিনিময় চুক্তি যা ভারত সরকার তার প্রতিপক্ষ নেপাল সরকারকে সই করাতে চাইছে, তাতে কিছু কিছু ধারা এবং অনুচ্ছেদ রয়েছে। এই ধারা অনুসারে ভারতীয় কতৃপক্ষ যদি তার দেশ থেকে তৃতীয় কোন দেশের নাগরিককে বহিস্কার করে এবং সে যদি নেপালে যায় তাহলে নেপালে সেই ব্যাক্তির উপস্থিতিও ভারতের নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ভারত মনে করবে।
অন্য যে কোন তৃতীয় দেশের নাগরিক যে ভারত থেকে বিতাড়িত যদি সে নেপালে আগমন করে তাহলে নেপালও তাকে বহিস্কার করতে বাধ্য থাকবে যদি ভারত তাকে বহিস্কার করতে বলে। এই ক্ষেত্রে বহিস্কারাদেশের প্রথম শিকার হবে পাকিস্তানিরা এবং তারপর চীনের নাগরিকরা, যা হয়তো এক সময় ইউরোপ এবং আমেরিকান নাগরিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।