প্রথমবারের মত আর্থ আওয়ার পালন করল ব্রুনাই।

সবচেয়ে বেশী কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনে ব্রুনাই ২০০৪ সালে বিশ্বের মধ্যে ৬ নম্বরে ছিল। প্রতি ১০০০ জনের অনুপাতে যাত্রীবাহী গাড়ীর আধিক্যের দিক দিয়েও ব্রুনাই ৩য় স্থানে আছে যা কিনা প্রায় ৫৫০। তাছাড়া, জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্পের বার্ষিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে গতবছর ব্রুনাইকে তুলনামূলকভাবে গড়ে উচ্চহারে জ্বালানী শক্তি ব্যবহারকারী দেশ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা কিনা প্রতিজনে ৮৮৪২ কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ। তাই ব্রুনাই যখন গত মার্চের ২৮ তারিখে আর্থ আওয়ার (বৈশ্বিক ঘন্টা) পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেটা ছিল সবচেয়ে সঠিক। এটি ছিল এই উদ্যোগে ব্রুনাইয়ের প্রথম অংশগ্রহণ।

আর্থ আওয়ার (বৈশ্বিক ঘন্টা) উদযাপনের পূর্বে শুক্রবারের খুৎবা দেয়ার সময়, ইমাম প্রকৃতিবিজ্ঞান নিয়ে কথা বলছিলেন এবং বলছিলেন তা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা। ব্রুনাইতে সকল মসজিদে সব শুক্রবারের খুৎবা একইরকম। ব্রুনাই রিসোর্স এই খুৎবা বিষয়ে ব্লগে তার উল্লেখ করেছে:

কিরানাস মসজিদের ইমাম আজকের খুৎবা পাঠ করতে বেশ পরিশ্রম করেছেন। তা অবশ্যই জাওই তে লেখা হয়েছিল এবং আধুনকি সব শব্দে ভরপুর ছিল। আজকের খুৎবার বিষয় ছিল প্রকৃতিবিজ্ঞান। আমার মনে হয় মসজিদের অনেকেই আজকে মসজিদ ত্যাগের সময় ভ্রু কুচকিয়েছে। শুক্রবারের খুৎবায় প্রকৃতিবিজ্ঞান কথার উল্লেখ প্রায়ই তো আর শোনা যায়না। কিন্তু যাইহোক না কেন, প্রকৃতিবিজ্ঞান এবং পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা অবশ্যই আনন্দদায়ক। আমাদের সকলকেই প্রকৃতি এবং পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

অনেক সংখ্যক ব্লগাররা ব্রনাইয়ের বৈশ্বিক ঘন্টায় যোগদানের বিষয়ে তাদের আগ্রহ সবার কাছে তুলে ধরেছে, এবং অন্যদেরকেও তাদের ভাগের ভূমিকা পালন করার জন্য আর্জি পেশ করেছে।

আরিয়াতি মুনীরাহ এই ঘটনায় অংশ নেয়ার যৌক্তিকতা প্রকাশ করেছেন:

…সকল প্রকার দূষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার উপর আমরা একা কোন প্রভাব ফেলতে পারবনা, কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমি নিশ্চিত যে কিছুটা হলেও ভাল পরিবর্তন আমরা ঘটাতে পারব।

আমি বুঝিনা… কিভাবে কিছু লোক এই ব্যাপারে এত অজ্ঞ থাকে। জুনইয়ান আমার কাছে নালিশ করেছিল যে ‘আমার দেশের বাড়ী…উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছিল! পুরোটা সময়! (*লজ্জা* হে মানব, তুমি কি অংশগ্রহণ…)

অপ্রত্যাশিতভাবে, ব্রুনাইয়ের বেশকিছু বিখ্যাত এলাকা যেমন গাডং এবং বন্দর সেরি বেগওয়ান অঞ্চলে উজ্জ্বল আলো জ্বলতে দেখা গেছে যা হ্যাডিও উল্লেখ করেছেন:

আজকে বৈশ্বিক ঘন্টার দিন সে কারনে আমরা গাডং গিয়েছিলাম কি অবস্থা দেখার জন্য। আমরা সেখানে পৌঁছেছিলাম আনুমানিক বিকেল ৬টায় এবং অপেক্ষা করেছিলাম ২ ঘন্টার মত! কিছুই ঘটেনি। গাডং আশানুযায়ী অন্ধকারে ডুবেও যায়নি। হয়তো সামান্য কিছু কমেছিল কিন্তু সেটা যথেষ্ট ছিল না! তাই আমরা বন্দরে দেখতে গিয়েছিলাম। বন্দরও আঁধারে ঢাকেনি। কিন্তু একটি ক্যাফে বৈশ্বিক ঘন্টা দিবসের সাথে সহযোগীতা করেছিল। তার নাম কফিবিয়ান! এই উদযাপনে অংশগ্রহণের কারনে আমি কফিবিয়ানের উপর গর্বিত। ফাতহুল বলেছে যে কফিবিয়ানে কাজ করার জন্য সে গর্বিত! হাহাহা. আমি মনে করি ব্রুনাই এতটা সহযোগী মনোভাবের নয়। শুরু কর! এটা কেবল মাত্র ১ ঘন্টার জন্য। কেন এটা এত কঠিন মনে হচ্ছে?


বন্দর সেরি বেগাওয়ান এর কফিবিয়ান। হেডির তোলা ছবি।

কৌতুক করে টিও পরামর্শ দিয়েছিল যে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের উচিৎ সকলের বিদ্যুৎ সরবরাহ এক ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখা, কিন্তু ভয় ছিল এটা জনগণকে রাগান্বিত করতে পারতঃ

আমরা ব্রুনাইয়ে আছি যা একটি ছোট দেশ কিন্তু আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই আমরা কিছূ করতে পারি। তখন, হয়তো ব্রুনাইয়ের মানুষ গাছে বাস করে এই ধরনের ভ্রান্তি বিদুরীত হতো। এস্ট্রো চ্যানেলে [মালেশিয়ার স্যাটেলাইট টিভি সরবরাহকারীদের টিভি চ্যানেল] বৈশ্বিক অগ্রযাত্রার [বৈশ্বিক ঘন্টা] বিজ্ঞাপন দেখেছিল অনেকেই, কিন্তু জানে না সেটা কি? কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছিল যে কোন স্বেচ্ছা অংশগ্রহনের প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ১ ঘন্টার জন্য বন্ধ করা, কিন্তু সেটাই হয়তো লোকজনকে পাগল করে দেবে!

কিভাবে ব্রুনাইয়ের প্রথমসারির হোটেলগুলোর মধ্যে একটি পরিবেশে ৪০০০ মোমবাতি পোড়ানোর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অসচেতন থাকতে পারে তা ভেবে সেভ আর্থ উদ্বিগ্ন। একটি ফোরাম এ ব্লগাররা লিখেছে:

সম্প্রতি আমাদের দেশ বার্ষিক আন্তর্জাতিক বৈশ্বিক ঘন্টা উদযাপনে অংশগ্রহণ করেছিল এবং বিশেষভাবে একটি বিষয় আমাকে ভাবিয়েছিল… এই উদযাপনের জন্য এম্পায়ার হোটেলে ৪০০০ মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কি প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিশ্বকে কোনভাবে উপকৃত করে?

বিশেষকরে প্যারাফিন মোম থেকে তৈরী কেবল একটি মাত্র মোমবাতিই গ্রীন হাউস নিঃসরণের থেকে ১০গুন বেশী ক্ষতি করে থাকে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর সাথে তুলনা করলে। যদি আমরা মনে করি বাতি সব নিভিয়ে দেয়া এবং হাজার হাজার মোমবাতি জ্বালানোর মাধ্যমে আবহাওয়ার উন্নতি সম্ভব, ঠিক আছে আবার ভাব। আমরা আসলে এর মাধ্যমে আরও বেশী ক্ষতি করছি।

প্রথমে আনো বিজ্ঞান, যৌক্তিকতা এবং শিক্ষা। বৈশ্বিক ঘন্টা বিষয়টির মূল ধারণা হচ্ছে সকল বাতি বন্ধ করে দেয়া যাতে বৈদ্যুতিক শক্তি সংরক্ষণ হয়। বৈশ্বিক ঘন্টাকে প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় পর্যবসিত করাও অপ্রয়োজনীয় ।

বৈশ্বিক ঘন্টার আয়োজকরা আসলে ঘটনার সময় আবহাওয়ার স্বাথে মোমবাতিও জ্বালাতে নিষেধ করেছিল। আশাকরি আমাদের দেশ পরবর্তীতে অংশগ্রহনের সময় এটা অনুধাবন করবে।


বৈশ্বিক দিনে এম্পায়ার হোটেল। ছবি তুলেছেন জনাব প্যাটচিওমি

ব্রুনাই রিসোর্স উল্লেখ করেছে যে অন্যান্য আরও লক্ষ্যের মধ্যে বৈশ্বিক ঘন্টার প্রধান লক্ষ্য হলো জ্বালানী সংরক্ষণের এবং বিশ্বকে যত্ন করার গুরুত্বের উপর সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়া:

আমি পড়েছি, এক ঘন্টার বাতি বন্ধ প্রকৃতপক্ষে জ্বালানী শক্তি বাঁচাবে না। কিন্তু এটার কাজ হচ্ছে প্রত্যেককে তার প্রয়োজন সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সচেতন করা এই বিষয়ে যে ঠিক কতটা জ্বালানী আমরা ব্যবহার করি।

অগাষ্ট ১৩তম এর মতে, তার কনিষ্ঠ সন্তানের কাছে অবশ্যই সচেতনতা পৌঁছে গেছে:

এক ঘন্টার অন্ধকার কি অর্জন করতে পারে, সাইনিস বলেন। আমি বলি, ব্যাপক।

৮:২৮ মিনিটে খুবই হৃদয়নাড়ানো দৃশ্য ছিল। এই যে আমার ছোটশিশুর দল (চাচাত মামাত ভাইবোনেরা, যাদের বয়স ৭ থেকে ১৬) ঝড়ের বেগে রান্নাঘরে দৌড়ে গেলো একঘন্টার জন্য সকল বাতি বন্ধ করার দাবী নিয়ে। আশ্চর্যজনক! এখন, এইসব তরুনদের মধ্যে এই ধরনের সচেতনতা অমূল্য

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .