- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মালদ্বীপ: বাক স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, মালদ্বীপ, আইন, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, ধর্ম, প্রতিবাদ, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সরকার


মালদ্বীপের রাজধানী মালে, ছবি তুলেছেন ফ্লিকার ইউজার মোড [1] এবং ব্যবহার করা হয়েছে ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর অধীনে

মার্চের প্রারম্ভে মালদ্বীপের নতুন রাষ্ট্রপতি মোহামেদ নাশীদ [2] জাতিসংঘের মতামত এবং প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রাঙ্ক লা রু এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎে নাশীদ তার সরকারের বাক স্বাধীনতার উপর দেয়া প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যাক্ত করেন এবং ঘোষণা দেন যে বার্মার মত দেশের প্রতিবাদী লেখকদের জন্য দেশটি একটি আশ্রয়স্থল [3] হিসেবে পরিণত হতে পারে। যাই হোক এর এক সপ্তাহের মধ্যে মালদ্বীপের নিজস্ব লেখকেরা মতপ্রকাশের অধিকারের প্রতি হুমকির সম্মুখীন হয়ে ওঠে কারন সরকার দেশটির দু’টি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) কে বেশ কিছু ওয়েবসাইট এবং একটি ব্লগ বন্ধ করে দেয়ার [4] নির্দেশ দেয়।

২০০৮ সালের অক্টোবরে হাজার হাজার মালদ্বীপ অধিবাসী ঐতিহাসিক এক নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে একত্রে জড়ো হয়-যা দেশটির প্রথম বহুদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে-প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারের আবির্ভাব ঘটায়। দেশটিকে ১৯৭৮ সাল থেকে ৩০ বছর ধরে শাসন করেছে মামুন আব্দুল গাইয়ূম [5] যে কিনা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় এবং পরাজিত হয় অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক প্রিজনার অব কনসিয়েন্স মোহামেদ নাশীদ এর কাছে নির্বাচনের রান অফে (দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে)। প্রথম পর্বের নির্বাচনে যে সব রাজনৈতিক দল নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে তারা রান অফ পর্বে সহযোগীতা করেছে একজন সাবেক সাংবাদিক এবং সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক নাশীদ কে, কারন তারা আশা করেছিল ক্ষমতার কেকের এক টুকরো পাবে নতুন সরকার গঠনের পর। নতুন সরকার গঠনকালে, ইসলামী বিষয়ের উপর একটি মন্ত্রণালয় গঠন করা হয় এবং শাসক জোটের একটি রক্ষণশীল ধর্মীয় দল আধালাত দলের কাছে তার দায়ভার সঁপে দেয়া হয়। এই ইসলামী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ই ওয়েবসাইট বন্ধ করার নির্দেশ জারি করে।

যদিও বন্ধ করা ওয়েবসাইটের তালিকায় [6] কিছু পর্ণগ্রাফী সাইট ছিল, তথাপি খ্রীষ্টান ধর্ম সংক্রান্ত তথ্যের উপর একটি ওয়েবসাইট এবং ইসলাম সম্পর্কে তথ্য বিষয়ক অন্য একটি ওয়েবসাইট [7] ও ব্যান হয়ে যায়। এটি এই ভয়কে জাগ্রত করে যে বিশ্বাস-ভিত্তিক ওয়েবসাইট যারা ইসলামী সম্পর্কের মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংকলিত ওয়েবসাইট অপেক্ষা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করে সেগুলোর প্রতিও লক্ষ্য স্থির করা হবে। তার উপর, ব্লগার সিমন এর জনপ্রিয় ব্লগ র‌্যানডম রিফ্লেক্সন্স এর নিষিদ্ধ হওয়া অনেক মালদ্বীপের ব্লগারকে এই বাক স্বাধীনতার অপমান এর বিরুদ্ধে সোচ্চার করেছে।

সারি মনে করে যে ইন্টারনেট জোরালো বক্তব্যের জন্য [8], আলোচনার জন্য এবং মুক্তচিন্তা উৎসাহিত করার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিৎ:

এটি গণতন্ত্রের জন্য একটি দু:খের দিন।

আমি নিজে একজন ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসী এবং আমার খুব ভাল বন্ধু আছে যারা হয়ত নয়। অবিশ্বাসের প্রতি তাদের নিজস্ব ধারণা আছে এবং আমার তাতে কোন সমস্যা নেই। কোন কারনে যদি তারা বিশ্বাস বনাম বিজ্ঞান তর্কে লিপ্ত হয় তবে তা চলতে দেয়া উচিৎ কারন এটা বেশ দরকারী এবং এটা মানব জাতির গ্রহণ ও মুক্ত চিন্তার সামর্থেও একটা দৃঢ় পরীক্ষা হয়ে থেকে যায়।

থাড়ু– ওয়েবসাইট বন্ধ করাটাকে ব্যাখ্যা [9] করেছে ‘ইন্টারনেট কে ইন্ট্রানেট’ এ রূপান্তর হিসাবে।

মনে হচ্ছে ইসলামী মন্ত্রণালয় মালদ্বীপবাসির জন্য ইন্টারনেটকে ইন্ট্রানেটে রূপান্তর করতে চাইছে। এই কাজ মালদ্বীপকে বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে কঠোর পরিশ্রম লোকজনের প্রচেষ্টার সাথে বিরোধী। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ১২ টি দেশের নাম উল্লেখ করেছে ইন্টারনেটের শত্রু রূপে [10]। এবং ইসলামী মন্ত্রণালয় যদি জনগণকে ঠেকানোর তার বর্বর ধরন বজায় রাখে, মালদ্বীপও সেই তালিকার মধ্যে একটি হয়ে উঠতে যাচ্ছে অনেক মানুষের কর্মকে বৃথা করে দিয়ে।

সম্প্রতি সাইমনের ব্লগের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয় কমিউনিকেশন অথরিটি অব মালদ্বীপ (সিএএম) এর হস্তক্ষেপে এবং সাইমন বন্ধ করার উপর তার ভাবনাচিন্তা [11] তুলে ধরেছে:

আমি জনাব নাশীদের কাছে স্বীকার করেছি যে আমার কিছু লেখায় হয়তো সংবিধানের বাধ্যবাধকতাকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। কিন্তু সেটাও বিতর্কিত। কারও কাছে যেটা ইসলামের প্রথা অন্যকারও কাছে সেটা একই রকম নাও হতে পারে। ব্যাখ্যার বিষয়টি বেশ নাজুক। উদাহরণ স্বরূপ, আমি তর্ক করতে পারি এই বলে যে মালদ্বীপে অ্যালকোহলের বিক্রী ইসলামী প্রথার খেলাপ। তখন কি হবে?

কোন কারনে, আমি একটা সমঝোতায় এসেছিলাম। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে আমার পোষ্টগুলো আবার পড়ে দেখব এবং এই অনুচ্ছেদ অমান্য করা হয়েছে এমন কোন অন্তর্ভূক্তি ঠিক করে দেয়া হবে। তাই আমি রিভিউ করেছিলাম এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। যদি সিএএম অথবা এমওআইএ এখনও যদি এমন কিছু পায় যা তাদের কাছে মনে হয় আইন অমান্য করা হয়েছে তাহলে তারা সর্বদাই আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে।

যদি তারপরোও তারা এই ব্লগকে আবার বন্ধ করে, আমি বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরনাপন্ন হব।

আমি সেই সকল ব্লগের সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা রাষ্ট্রপতি নাশীদের সরকার কর্তৃক ওয়েবসাইট/ব্লগ এর উপর আক্রমণ এর প্রতি সোচ্চার হয়েছে। আদর্শগত ভাবে আমি বিশ্বাস করি কোন ওয়েবসাইটই বন্ধ করা উচিৎ নয় এবং কাউকেই বাক স্বাধীনতার বিষয়ে সমঝোতা করা উচিৎ নয়।

অন্য ওয়েবসাইগুলোও এখনও বন্ধ করার জন্য বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে এবং মনে হয় এই মুহূর্তে মালদ্বীপের অধিবাসীদের গণতন্ত্রের একটা কাটছাট অবস্থা [12]র মধ্যে বসবাস করতে হবে।