ইরাক: বাড়তে থাকা সংঘর্ষ এবং দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা

আমার শেষ লেখাটি পোষ্টটি করার পর ইরাকে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। আমি স্বীকার করে নিচ্ছি সেই সব সংবাদ আমি নিয়মিত জানাতে পারিনি, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত ইরাকি ব্লগে প্রাণ থাকবে আমি লেখার জন্য শ্রম দিয়ে যাবো।

আমি সেই সন্ত্রাসী
লিখেছেন: জেডজেড

আমি সে সন্ত্রাসী
আমার ভ্রাতার মুখে রুটির টুকরো ভেঙ্গে পড়ছে
সে কখনও রক্তে ভেজা রুটির স্বাদ পায়নি
সন্ত্রাসী আমি আমার নি:শ্বাস আটকে রাখি
যেমন রান্নাঘরের ছাদে আটকে থাকা ইট
এসে আমার কপালে আঘাত করে
তারপরেও আমি দাড়িয়ে থাকি
আমি সেই সন্ত্রাসী
পরিপুর্ন রাস্তায় পানির অপেক্ষায়
আমার দুগ্ধপোষ্য শিশুর জন্য
আমি আমার আঙ্গুল হারিয়ে ফেলি
রাস্তার উপরে
এক নিখুত অস্ত্রধারী ঘাতক
আমি সেই সন্ত্রাসী
মাটি খুঁড়ে পানি তুলে আনি
আমার ক্ষত থেকে থেকে যাবার পর
এবং চেষ্টা করি
আমার ক্ষত পরিচর্যা করি
যেমন সে আমার বাহুতে পড়ে থাকে
এবং এখন উষ্ণ
তার সদ্যপৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া মৃত মায়ের শরীর
আমি সেই সন্ত্রাসীকে ঘৃণা করি
আমার সদ্যজাত সন্তান
পান করুক রক্তরঞ্জিত পানি
তার জন্য কোন দুধ নেই
এক উজ্জল লাল ঠোঁটকে রাঙ্গিয়ে দিচ্ছে
তখন আমি সেই সন্ত্রাসী
উপলদ্ধি করি
সে তার মাকে পছন্দ করে
আমার ভাইকে ভালেবাসে
এবং অন্য সন্ত্রাসীকে
যার খাবার খেতে বসেছিল
সেই ফেটে যাওয়া খাবার টেবিলে
সে আসলে মায়ের দুধ পান করা বন্ধ করে দিয়েছে।

এই কবিতাটি গাজা হত্যাকান্ড থেকে বেঁচে যাওয়া একজনের গল্প থেকে উৎসাহিত হয়ে লেখা। সে তার ঘরের বর্ণনা দিচ্ছিল। আসলে সে মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে ঘরটি একসময় অস্তিত্ব ছিল। এই ঘরটি দেখতে ছিল অনেকটাই আঙ্গুলহীন রক্তাক্ত হাতের মতো।

বাগদাদ, প্রথম যখন শান্ত হলো

রাজধানী বাগদাদের শান্ত ও তিক্তমধুর চেহারার বর্ণনা সানশাইন ছাড়া অন্য কোন ব্লগার ভালো দিতে পারবে না। গতমাসে এক স্বল্পকালীন ছুটিতে ভদ্রমহিলা ইরাকের উত্তরের শহর মসুল থেকে বাগদাদে ভ্রমণ করতে এসেছিলেন। অনেক ছবি আর পর্যবেক্ষণের সাথে তিনি তার লম্বা পোস্টের উপসংহার টেনেছেন:

অনেক দিন ধরে আমি কোন ভালো ঘটনার কথা লেখতে পারিনি। আমি আনন্দিত যে বলার মতো আমার কাছে কিছু ভালো সংবাদ রয়েছে। গতকাল আমি আমার বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। সে চিকিৎসাবিদ্যার উপর পড়াশুনা করছে। দুই বছর হলে তার সাথে আমার দেখা হয়নি। তার সাথে আমি চমৎকার সময় কাটিয়েছি।

আমি আশা করি মসুল শহরটি বাগদাদের মতোই নিরাপদ হবে এবং পরবর্তী সময় যখন আমি বাগদাদে বেড়াতে আসবো তখন আবিস্কার করবো বাগদাদ আগের মতো, এমনকি তারচেয়েও নিরাপদ হয়ে গেছে।

কিন্তু এ অবস্থা বেশীদিন থাকেনি

চিকিতিতা অনেকদিন বিদেশে বাস করার পর বাগদাদে ফিরে এসেছেন। তিনি ফিরে এসেছেন কেবল বোমা বিস্ফোরনের পুনরায় বিস্তৃতির অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। কেন? ভদ্রমহিলা লিখছেন:

তারা বলছে আমি এই এলাকার জন্য কেবল দুভার্গ্য বয়ে আনি। ইরাক অনেক বেশী কুসংস্কারচ্ছন্ন এবং একবার যদি তারা এই লেখাটি পড়ে তাহলে তারা সকলে মিলে এক দরখাস্তে সই করে প্রধানমন্ত্রীকে দেবে। এই দরখাস্তে লেখা থাকবে আমাকে ইরাক থেকে দুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমার ফিরে আসার আগে ইরাক যেন পৃথিবীর স্বর্গ ছিল। বাগদাদের শান্ত রাস্তায় যে সমস্ত প্রাণঘাতী বিস্ফোরন ঘটছে সেগুলোর কারন? বেশ কল্পনা করুন কি তার কারন—-!

নিরপেক্ষতা বিষয়ে
লিখেছেন: লায়লা আনোয়ার

স্পস্ট করে নিজের কথাগুলো বল মেয়েরা,
তাদের পাল্টে ফেল, তাদের রঙ বদলে দাও,
তাদের নতুন মাত্রা দাও, সেগুলোকে মুল্যায়ন করে,
তাদের আলাদা করো পরিচয় দাও যেমন তারা
তোমাদের পরিচয় তৈরী করে এবং তাদের,
কাজেই তারা বুঝতে পারবে মনের উদ্দেশ্য–
তাদের লক্ষ্য ,সীমা এবং গভীরতা বুঝতে পারে,
তারা বুঝতে পারে নিজেদের পার্থক্য এবং ধ্বংসাত্বক শক্তি।

নিজের ভেতর ও বাইরের জগতকে পাল্টে ফেল।
মরুঝড় আর ঘুর্ণি বাতাসকে নির্বাসিত কর
নদীকে অবরুদ্ধ করো
স্রোতকে রুদ্ধ করো
একটা রাবার দিয়ে আবেগগুলোকে মুছে ফেল, তাদের শুন্য করে ফেল
পিটিএসডি নামের উদ্বিগ্ন অসুখে জম্বি নামের ভুত হও
তাদের কাছে প্রার্থণা কর যাতে তারা তোমার উপর দয়া করে
তারা আসলে ঠিক এই ধরনের প্রার্থণাই শুনতে চায় , তাদের কানে যাওয়া প্রয়োজন
তাদের পাল্টানো অংশই আমাদের ত্রাতা, উদ্ধারকর্তা
আমাদের উদ্ধারকরাই তাদের লক্ষ্য
রক্ষা করার আগে বিষয়টি বোঝা প্রয়োজন
তোমাকে সে উদ্ধার করার আগে তার নিজের কাছ থেকে

একই সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করো,
নিজের আবেগকে এবং অনুভুতিকে কারন লক্ষ্যপুর্ণ মন
এর ভেতরে থেকে যে অনুভুতি নি:সৃত হয়
তাকে মেনে নিতে পারে না—-
এটি আসলে তার চিন্তার সাথে এক হতে পারে না।

লেইথ তার অনুভুতি নিয়ে লিখছে সেই সময়ের কথা যখন তার বাড়ীর সামনে একটা বিস্ফোরণ ঘটে:

তখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে। আমি নামাজ পড়া শুরু করলাম। কয়েক কেন্ডে পরেই একটা ভয়ানক শব্দ হলো। এটি আমাকে একটা ছোট্ট পাখির মতো ভয় পাইয়ে দিল। আমি এই ধরনের শব্দের সাথে খুব পরিচিত। এবারের শব্দটাও বিস্ফোরণের শব্দ ছিল, কিন্তু এবার এই শব্দ এত জোরালো ছিল যে মনে হলো এটি আমার বাড়ীর সামনেই ঘটেছে। তারচেয়ে বেশী যা মনের মধ্যে এলো এটি মসজিদের কাছেই ঘটেছে যেখানে আমার পিতা, আমার চাচা ও প্রতিবেশীরা নামাজ পড়তে যায়। সে মুহুর্তে নামাজটাকে আমি শেষ করতে চাইছিলাম কিন্তু মনে হচ্ছিল তা অনেক লম্বা। যখন আমি নামাজ শেষ করে বাইরে বের হবার চেষ্টা করলাম ঠিক তখনই দ্বিতীয় বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম। ওহ আল্লাহ, আমি নিশ্চিত ছিলাম যে অনেক মানুষ মারা গেছে। আমি দ্রুত দৌড়ালাম এবং বিস্ফোরণের ধোঁয়া দেখতে পেলাম। আমি মানুষজনকে বিস্ফোরণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। রাস্তায় দাড়ানো একজন ব্যাক্তি আমাকে বললো রাস্তার পাশে দুটি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। আমার প্রতিবেশী বৃদ্ধ মহিলাটি বললেন, “লেইথ যাও দেখ তোমার ভাই কোথায় আছে”। তিনি আমাকে তার ছেলের ব্যাপারে এই কথা বলেছিলেন। তার ছেলে আমার কাছে আপন ভাইয়ের মতই। আমি বের করার চেষ্টা করছিলাম বোমাগুলো মসজিদের ভেতরে বিস্ফোরিত হয়েছিল কি না। আল্লাহকে ধন্যবাদ, বিস্ফোরণ মসিজদে নয় তার কাছেই হয়েছিল। আমার আরেক প্রতিবেশী বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে তার বাসা থেকে বের হয়ে এলো। সে চিৎকার করে কাঁদছিল আর বলছিল, ‘আমি আমার ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছি, আমি আমার সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছি’। আমি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সে আমার কথা শুনলো না এবং যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেদিকে দৌড়াতে শুরু করলো। আল্লাহ তাআলাকে আবার ধন্যবাদ, তার ছেলে এই বিস্ফোরণে সামান্য আঘাত পেয়েছিল।

মনে হচ্ছে শান্তিতে বাস করার স্বপ্ন ইরাকের সামনের বছরগুলোতেও দেখা যাবে না। বেশ কিছুদিন দিন ধরে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় তা ইরাকের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাস্তবাতকেই তুলে ধরেছে।

বাগদাদ কানেক্ট যখন ভাবছেন নতুন এই বোমা বিস্ফোরণ- এর পরিমান বৃদ্ধি সম্প্রতি ইরাকে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচন এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ইরাক থেকে সৈন্য সরিয়ে আনার ঘোষণার প্রতিক্রিয়া কিনা।

বাগদাদ কানেক্ট সম্প্রতি সাদ্দাম হোসেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ্জত আল দুরির মন্তব্যর উপর একটি তথ্য প্রকাশ করেছেন। আল দুরি প্রক্তন সকল সামরিক বাহিনীর অফিসারকে সরকারে প্রস্তাবে রাজী হয়ে তাদের পুরোন পদে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন এবং তাদের বাথ পার্টির ভয় দুর করতে বলেছে। এই ব্লগ লিখছে:

গ্রীন জোন আর বেশীদিন তার অস্তিত্ব নিয়ে থাকবে না, আমেরিকার দুতাবাস রাজধানীতে ক্ষমতা প্রকাশের একমাত্র প্রতীক হয়ে থাকবে। সকল কিছুই যেন দ্বিগুন চিজ দেওয়া হুপার বা বার্গার এর মতো, এখানে তা আচারের মতো পিচ্ছিল গতিতে চলছে। জোর করে এখানে আসা এইসব ব্যাক্তিদের এক দোভাষীকে একটি বন্দুক দেওয়া হয়েছে যাতে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। সে আমাদের বলেছে, এইসব আমেরিকানরা এখন হার স্বীকার করছে।

একজন অধ্যাপক বলছেন, ‘বাথ পার্টি আবার ফিরে আসছে। আমাদের মুল জায়গা থেকে শুরু করতে হবে; এটাই আমাদের কাজ করার পন্থা’।

কারাদন্ড আর কারাদন্ড:

সম্প্রতি অনেক কারাদন্ড দেয়া হচ্ছে সারাবিশ্বে, যেমন প্রাক্তন ইরাকী সরকারী কর্মকর্তাদের, পদে থাকা রাষ্ট্রপতিকে এবং জুতা নিক্ষেপকারীকেলায়লা আনোয়ার ‘সেন্টেন্স’ শব্দের অর্থ নিয়ে মজা করেছেন (ইংরেজিতে সেন্টেন্স মানে বাক্য ও কারাদন্ড দুটিই হয়):

শব্দের ক্ষমতা- বাগধারা, সিদ্ধান্ত এবং বাক্য….. তারা আপনাকে উঠাতে ও নামাতে পারে, তারা আপনাকে তৈরী করতে পারে, ভাঙ্গতে পারে এবং আপনার জীবনকে চিরতরে বদলে দিতে পারে, চির জীবনের জন্য।

এখানে সেন্টেন্স (বাক্য/কারাদন্ড) একটি জেলখানা, একটি গিলেটিন বা গলায় চাকু চালিয়ে তৈরী করা মৃত্যুদন্ডে পালনকারি যন্ত্রে পরিণত হওয়া ২১ শতকের কারাগার।

সেন্টেন্স এখন ড্যাগার এবং চাকুতে পরিণত হয়েছ। সেন্টেন্স আঘাত করতে উদ্যত… তারা সার্কসের জন্য সেন্টেন্স চালাচালি খেলা খেলে ও কারাদন্ডকে মুখোশ এ পরিণত করে—- আজ সেন্টেন্স অর্থহীন, কারন তাদের সামনে ও পেছনের মধ্যে কোন যোগসুত্র নেই,

তারা তাকে আজীবনের জন্য কারাগারে প্রেরন করেছে, তাকে মৃতুদন্ডে দন্ডিত করেছে—- তারা আর্তনাদ করেছে।
কে বিচারক এবং কে দোষী? আজ তার কোন মানে আছে?
যখন বিচারক অপরাধী এবং দোষী নিষ্পাপ … তাহলে সেন্টেন্স আর কি অর্থ তৈরী করতে পারে?
পরে সেন্টেন্সকে অনেক বেশী গুরুত্বের সঙ্গে বাছাই করে তাকে প্রকাশ করা হয়
আল- বশির, আল -মাজিদ, আজিজ…. এরকম কিছু নাম যা মাথায় আসে
কে সত্যিকারের খুনীদের ফাঁসি দেবে….. এমন কোন কি কোন কোর্ট রয়েছে যে আইনের মধ্যে দিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর দেবে।
কে তাদের ফাঁসি দেবে যারা ‘মাংস আর যৌনতায় আচ্ছন্ন ’ খুনী লক্ষ নিরাপরাধ লোককে হত্যা করে।
সেই সমস্ত দায়িত্বশীলদের ফাঁসিকাষ্টে ঝোলাবে যারা গণতন্ত্রের জন্য ইতিহাসে অবৈধ গণহত্যা ঘটিয়েছে।
কে আসলে সত্যিকারের অপরাধীদের ফাঁসি দেবে।

এবং অবশেষে

আমাদের যারা ইন্টারনেট সেবা দেয় তাদের কারনে আমাদের সকলকে সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু সালাম পাক্স এর আইএসপি তার সবকিছুই কেড়ে নেয়

এটি আজ আমাকে হাসালো…ইরাকের টেলিকম কোম্পানী কালিমাত তার ওয়েব এর প্রথম পাতায় একটি জনমত জরীপ করার ব্যবস্থা করে, ইরাকের ইন্টারনেট সেবা ব্যবস্থার মান কেমন?

এই জরীপে তাকে মুল্যায়ন করার সীমিত সুযোগ ছিল, তা হলো চমৎকার, খুব ভালো, ভালো এবং চলনসই….! কিন্তু আমি যে ভাবে তাকে মুল্যায়ন করতে চাইছিলাম, তা হলো খারাপ, বাজে, বেশী দামী এবং এই সার্ভিস আমাকে পাগল করে দেয়।

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .