ইরান: ফিল্টারের মধ্য দিয়ে যখন ইন্টারনেট দেখতে হয়

ইরানে একটা গুরুত্বপূর্ন অনলাইন গোষ্ঠী আছে এবং প্রায় ৬০,০০০ সচল ব্লগ আর প্রায় ২ কোটি মানুষ ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। যেহেতু ইরানের সাইবার বিশ্ব খুবই প্রাণবন্ত, তার সাথে কি বস্তু ইরানের নাগরিকরা দেখতে পাবে সেই সংক্রান্ত সরকারের ফিল্টারও তাল মিলিয়ে চলে।

পর্নোগ্রাফী ওয়েবসাইট ছাড়াও ইরানী কতৃপক্ষ অনেক সামাজিক ব্লগ ও ওয়েবসাইটকে তাদের লক্ষ্য করে, আর অনেকে সেইসব মতামত পড়া বা তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। ইরানী সরকারের পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা কোন সীমারেখা নেই, আর এদের ফিল্টার করার নীতি এরা প্রায়শই পরির্বতন করে, ভার্চুয়াল জীবন ইচ্ছা মতো যাপন করতে ‘দেয়’ বা ‘কেড়ে নেয়'।

ইরানী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা উপরের চিত্র দেখতে পায় যদি তারা ফিল্টার করা বিষয়বস্তু দেখতে চায়।

এই পোস্টে আমরা ফিল্টারের সাথে সম্পৃক্ত বেশ কিছু ব্যাপার আলোচনা করবো আর কিছু সাধারন ভুল বোঝাবুঝির অবসান করার চেষ্টা করব।

- বিশাল সংখ্যা:

২০০৬ সালে ইরানী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে প্রায় ১ কোটি ব্লগ আর ওয়েবসাইটকে ফিল্টার করা হয় আর এর মধ্যে ৯০% সাইটেই ‘অনৈতিক’ বিষয়বস্তু আছে। কয়েক মাস আগে আর একটা রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে ৫০ লাখ ওয়েবসাইট আর ব্লগ ব্লক করা হয়। একজন আইনজীবি গত বছরের শেষে বলেছিল যে অন্তত আমেরিকান ডলার ৫ মিলিয়ন বিনিযোগ করা হচ্ছে নতুন একটা ‘ফিল্টারিং ব্যবস্থায়'। এইসব অদ্ভুত সংখ্যার সম্মুখীন হয়ে ব্রুস এটলিং খুব বেশী আশান্বীত ছিলেন না হারভার্ড ল স্কুলের বার্কম্যান সেন্টারের ‘ইন্টারনেট ও গণতন্ত্র প্রসার প্রকল্প’ ব্লগে লেখার সময়ে যে ইরানী সরকারের দাবীটি বাড়িয়ে বলা, আর তাদের নিজেদের গবেষণা দেখায় যে ইরানী ব্লগ জগতের ছোট একটা অংশ ব্লক করা হয়।

- ফিল্টারের জন্যে সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি:

* ফার্সী সংবাদ ওয়েবসাইট যেমন বিবিসি পার্সিয়ান, আমির কাবির (একটা ছাত্র সংবাদ প্রকাশনা) আর একটি জনপ্রিয় নাগরিক মিডিয়া পোর্টাল বালাটারিন
* নারী অধিকার কর্মী, ছাত্র আন্দোলন, সরকার বিরোধী, রাজনৈতিক, ফিল্টার বিরোধী আর মানবাধিকার ব্লগ: উইফরচেঞ্জ, একটা নারী অধিকার কর্মীর ব্লগ/ওয়েবসাইট, ২০ বারের বেশী ফিল্টার করা হয়েছে। বাস্তবে, কোন ওয়েবসাইট বা ব্লগ ফিল্টার থেকে নিরাপদ না।
* সামাজিক নেটওয়ার্কিং: ফ্লিকার আর অর্কুট সম্প্রতি ব্লক করা হয়েছে। কিন্তু গত দুই মাসে ইরানীরা ফেসবুক আর ইউটিউব দেখতে পেয়েছে, যদিও এগুলো আগে ব্লক করা ছিল। ইরানীরা মাইস্পেস আর টুইটারেও যেতে পারে।

ইরানী সরকারের ফেসবুক আর ইউটিউবের ব্যাপারে নীতির পরিবর্তন তাদের ফিল্টার নীতির পরিবর্তনের ধরন দেখায়। নীতি পরির্বতনের এই কারন ঘোষণা করা হয়নি আর মানুষ শুধুই অনুমান করছে। কেউ কেউ ভাবছে যে সরকার ‘বেশী নরম আর উন্মুক্ত’ হয়েছে যেহেতু গ্রীষ্মে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। অন্যরা বেশী হতাশাবাদী আর মনে করেন যে নিরাপত্তা বাহিনী সামাজিক নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষকে দেখে বুঝতে চাচ্ছে ইন্টারনেটে ‘বেনামের কে আসলে কে'।

- ইংরেজী সংবাদ সাইটের ব্যাপারে কি?

ইরানীরা বেশীরভাগ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম যেমন নিউ ইয়র্ক টাইমস বা ইজরায়েলী সংবাদ ওয়েবসাইট দেখতে পারে। অবাক অনেকে হতে পারে যে বুশ বিরোধী বা ইরাক যুদ্ধ বিরোধী প্রকাশনা যেমন হাফিংটন পোস্ট বা ইনফর্মড কমেন্ট যেখানে ইরানের সাথে আমেরিকার সরকারের যোগাযোগের অনেক দাবীকে ফিল্টার করা হয়েছে জনগনের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে।

- ইসলামিক ওয়েবসাইটকেও কি ফিল্টার করা হয়?

উত্তর হলো হ্যাঁ। ফাতেমা রাজাবি হচ্ছেন ইরানী সরকারের এক মুখপাত্রের স্ত্রী আর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের শক্তিশালী সমর্থক। তার পরেও তার সাইট/ব্লগ ফিল্টার করা হয়। তিনি বেশ কিছু উচ্চ পদের ইরানী রাজনীতিবিদকে অপমান করতেন। যে সকল ওয়েবসাইট ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামির পক্ষে যেমন ইয়ারি নিউজ, তাদেরকেও ফিল্টার করা হয়।

-কে ফিল্টারিং করে?

একটা সরকারী ফিল্টারিং কমিটি গঠিত হয় সংস্কৃতি আর ইসলামিক গাইডেন্স মন্ত্রানলয়, গোয়েন্দা মন্ত্রানলয়, জাতীয় টিভি আর রেডিও এর সদস্যদের নিয়ে। তাদের আদেশ পালন করে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। শোনা যায় যে পুলিশ বাহিনী চাচ্ছে একজন সদস্য এই কমিটিতে পাঠাতে।

-স্বীকারোক্তি আর গল্প:

* প্রত্যক্ষদর্শীর স্বীকারোক্তি, জামহাউর নামে ইরানী ব্লগারের সাথে সাক্ষাতকার।
* ইরানী ব্লগারদের বাধা বিষয়ে কয়েকটা গ্লোবাল ভয়েসেস এর রাউন্ড আপ, সম্মিলিত ফিল্টারিং থেকে একজন ফিল্টারকৃত ব্লগারের অনুভূতি।
* আমি জানি অনেক ব্লগার ফ্রিকিবোর্ড এর সাথে একমত হবেন যে ফিল্টারিং আসলেই বোকার কাজ। তিনি দাবী করেন যে দুই মাস আগে তার ব্লগ ফিল্টার করা হয়, কিন্তু এখন তিনি আগের থেকে অনেক বেশী পাঠক পাচ্ছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .