- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ওমর আল বশিরের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা: “কেবল কথা আর কথা…”

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, সুদান, আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট [1] (আর্ন্তজাতিক অপরাধ আদালত) বুধবার সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা [2] জারি করেছে। ওমর আল বশির [3] হলেন বিশ্বে প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হলেন। সুদানের দারফুরে অনুষ্ঠিত সংঘর্ষে [4] তার ভূমিকার কারনে এই অভিযোগ আনা হয়।

এই পোষ্টে আমরা সুদানি ব্লগারদের মতামত এবং চিন্তার উপর আলোকপাত করছি। কিছু ব্লগার, ‘অপেক্ষা কর এবং দেখ’ এই নীতি গ্রহণ করেছে, অন্যদিকে কিছু ব্লগার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছে, আসলে কিছুই ঘটবে না। রাস বাবিস জানাচ্ছেন “তুমি নাচবে এবং চিৎকার করবে — কেবল এই বিষয়গুলো বলবে এবং আলাপ করবে……”। আর একজন ব্লগার বলছেন পশ্চিমা সরকারগুলো জোর করে ওমর আল বশিরকে গ্রেফতার করবে না। যদি সে তার দেশে থাকে তাহলে সে নিরাপদেই থাকবে। আরেকজন অপেক্ষা করে আছেন ‘বিনোদন’ কখন শুরু হবে তার জন্য।

মিমজ সুদানবাসীদের ভীতসন্ত্রস্ত হতে নিষেধ [5]করছেন। কারণ তার মতে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে যা ঘটে এক্ষেত্রেও আসলে তাই ঘটবে, মানে কিছুই ঘটবে না। এই জন্য মিশরের লোক জড়ো করার প্রয়োজন নেই।

দেশটি এর ফলে হয় খুব বেশী পাল্টে যাবে অথবা আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে (অনেক বেশী অপছন্দনীয় একটা ব্যাপার হবে), অথবা আমার মতে এ সব ঘটনায় বেশীর ভাগ সময় যে দৃশ্য তৈরী হয় তাই হবে, ‘কিছুই হবে না’!

সুতরাং সুদানের জনগণ, অপনারা যারা সুদানে বাস করেন …….উদ্বিগ্ন হবেন না এবং আপনার বাক্সপেটরা গোছানো বন্ধ করুন! আমি অনেক লোককে চিনি যারা এখন এখান থেকে চলে যাচ্ছে ,কারণ তারা ভয় পেয়েছে। তাদের ভয় যদি গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয় তাহলে কি হবে। আমি আপনাদের বলছি মিশরের এই ঘটনায় লোক জড়ো করার কোন প্রয়োজন নেই।

কোন কিছুই ঘটবে না। না আমি ঘটনাটিকে প্রত্যাখান করছি না। আমি এই ঘটনার সবচেয়ে যৌক্তিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করছি। আপনি আপনার নিজের ঘরে আক্রান্ত হবেন না। আপনি আপনার সকল মূল্যবান অবস্থান হারাবেন না । আপনার প্রিয় কাউকে আপনার ঘরের সামনে মৃত পড়ে থাকতে দেখবেন না। এই ঘটনায় খুব বেশী নাটকীয় হবার দরকার নেই।

সুদানিজ থিংকার আইসিসির সিদ্ধান্ত নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা [6] করেছেন। তিনি তার পোষ্ট শেষ করেছেন, ‘বিনোদন শূরু করা যাক’ বলে ।

প্রিয় সুদানিজ ব্লগার, আপনারা নিজেদের ব্লগ পোষ্টে মন্তব্যের ঘরে এই বিষয়ে একটা লিঙ্ক দিন যেন প্রচার মাধ্যম এই বিষয়ে জানতে পারে। বেশ কিছু সাংবাদিক আমাকে ই-মেইল করেছে। তারা শুনতে আগ্রহী যে আমরা, সুদানি ব্লগাররা এই বিষয় নিয়ে কি বলছি বা আলোচনা করছি ।

যদি এই বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা থাকে প্রত্যেকেই নিজের চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন, ইতিহাসের এই এক সম্ভাব্য নির্মাণ নিয়ে। ইতিমধ্যে আমি আমার জন্য কিছু পপকর্ণ আনতে যাচ্ছি, চলুন বিনোদন শুরু করা যাক।

সুদানিজ অপটিমিস্ট [7] খুব সাধারণ ভাবে প্রশ্ন করেছে, “আমি অবাক– কেন জন গারাংকে মরতে হলো?”

ডাইং ইন দ্যা ডাষ্ট [8] তার পোষ্ট শুরু করেছেন বিস্ময় দিয়ে, এই শুরুই আসলে শেষ। এই ব্লগার মনে করেন আল বশির যতক্ষন তার ঘরে থাকবেন, নিরাপদেই থাকবেন।

এই শুরুই কি আসলে শেষ ? আজ হেগের আর্ন্তাজাতিক অপরাধ আদালত সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমার আল বশিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে। পাঁচ বছর ধরে সুদানের দারফুরে চলা সংঘর্ষের কারনে তার বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। এই প্রথম কোন রাষ্ট্রপ্রধান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আর্ন্তজাতিক বিচার ব্যবস্থায় যুদ্ধঅপরাধে অভিযুক্ত হলেন।

এখন কৌতুহল বা দেখার বিষয় বিশ্বে ও সুদানে, বিশেষ করে দারফুরের গ্রামে প্রাথমিকভাবে কিভাবে এই নাটক মঞ্চস্থ হবে। আমার দুটি প্রশ্ন রয়েছে এটা কি আসলে যথেষ্ট? এটা কেবল এক গ্রেফতারী পরোয়ানা, এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই সুদান তার রাষ্ট্রপ্রধানকে অন্য কারো হাতে তুলে দেবে না। পশ্চিমা বিশ্বের কোন সরকার জোর করে বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়টিকে সমর্থন করবে না। কাজেই যতক্ষন পর্যন্ত ওমর আল বশির নিজ দেশে থাকবেন, সম্ভবত তিনি নিরাপদেই থাকবেন। এই আর্ন্তজাতিক চাপ এবং তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা বশিরকে কি সংস্কারের দিকে নিয়ে যাবে? আমি, আমার বন্ধু এবং তাদের পরিবার যারা অনেক কষ্ট করেছে তাদের খাতিরে বলতে চাই, হ্যাঁ তা হবে। কিন্তু ইতিহাস এই বিষয়টি সমর্থন করে না।

এতে কি দারফুর কোন সুবিধা পাবে? বশির এবং তার অনুগত গোত্র এই ঘটনায় কিভাবে সাড়া দেবে? আমি জানি তারা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসি ও পশ্চিমা উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, কিন্তু আমি শংকিত যে এরপর তারা দারফুরের পুরুষ নারী এবং শিশুদের উপর পাল্টা অত্যাচার করবে। এই অত্যাচার দারফুরের লোকদের আরো বেশী সংর্ঘষ ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দেবে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে তার কর্মীদের সামনের কয়েকটি দিন অতিরিক্ত সর্তক হয়ে থাকতে বলেছে। এইউ বা আফ্রিকার শান্তিরক্ষী বাহিনী কি লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুকে রক্ষা করতে পারবে?

রাস বাবিস [9] তার চিন্তাগুলোকে একটা কবিতার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেছেন। এই কবিতায় তিনি উল্লেখ করেন তিনি আর্ন্তজাতিক আইনে বিশ্বাস করেন না বিশেষ করে যখন তা বশিরের মতো কোন মানুষের উপর প্রয়োগ করার বিষয় আসে। “আপনি নাচবেন এবং জোরে কথা বলবেন/ কোন কাজ হবে না, কোন বিচার নেই/ কেবল আলোচনা আর আলোচনা/ সুদানিজদের জন্য —“। তিনি তার কবিতা শুরু করেছেন আল বশিরের একটি বাণী দিয়ে। আল বশির আইসিসিকে তার গ্রেফতারি পরোয়ানার কাগজ চিবিয়ে খেতে বলেছেন।

ওমর আল বশির বলেছেন, আরে
আইসিসি তার গ্রেফতারী পরোয়ানা চিবিয়ে খেতে পারে
তিনি হাসলেন এবং নাচলেন তারপরে
তার সাথে তার হাজার অনুসারী
তিনি বললেন, এই পরোয়ানার দাম কি ভাবে ধরতে পারি
যে কালিতে লেখা কাগজখান
এর দাম নয় তার সমান

কেউ কি সুদানকে মনে করতে পারে
কি ভাবে তোমাদের অধিনায়ক আল তুরাবীর সমর্থনে হায়
সুদান একজন মহান মাস্টারকে ফাঁসিতে ঝোলায়
মোহাম্মদু মোহাম্মদ তাহা একজন মাস্টার
আহ সুদান! কি গতি হলো তার
আমরা প্রিয় সুদান, আমরা অহংকার।
হাজার পার্থক্য রয়েছে হে
একজন খুনী এবং প্রভুর মধ্যে।

এমন পৃথিবীতে আমরা বাস করি যেখানে দ্বন্দ এবং ন্যায়বিচার আজ
একজন সাধারন মানুষের বিচার করা খুব সহজ কাজ
একজন সত্যিকারের বীর হবে ধন্য
অথবা আমাদের মধ্যে ভাবে যারা
আসলে আইন তৈরী হয় জনতাকে নিয়ন্ত্রুনের জন্য
এবং আইনের কাজ শক্তিশালিকে রক্ষা করা

আমি কোন কিছুতেই আর বিশ্বাস রাখতে পারি না
আমি আপনাদের আর্ন্তজাতিক আইনে বিশ্বাস রাখতে পারি না

চে গুয়েভারাকে হত্যা করেছিল কে
কে লুমুম্বাকে হত্যা করেছিল
কে তাকে হত্যা করেছিল
এটি আসলে আর্ন্তজাতিক আইন, তুমি সে
এ কারনেই
যখন আল বশির নামের মানুষের নাম আসে
তুমি নাচো এবং তোমার জোর আওয়াজ , তাতে পৃথিবী আসলে হাসে
কোন কাজ নয়
কোন বিচার নয়
কেবল আওয়াজ আর আওয়াজ
সুদানিদের একমাত্র পাওনা আজ

কিজি যিনি আইসিসির ঘোষণার পুর্বে তার পোস্ট লিখেছেন, জানাচ্ছেন বশিরের দল এই ঘটনায় বিভক্ত হয়ে গেছে [10]

অনেক সুদানি বিশেষজ্ঞ ভবিষ্যতবাণী করেছেন সুদানের এক সমস্যার কথা। এই সমস্যা হতে পারে সুদান নামক সংযুক্ত রাষ্ট্রের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। সুদানে আমেরিকার প্রাক্তন বিশেষ দুত এ্যান্ড্রু নাতসিওস এখানে সোমালিয়ার মতো পরিস্থিতি উদ্ভব হাওয়ার মতো অবস্থা নিয়ে চিন্তিত। তার মতে এই ঘটনার শেষ পরিণতি হতে পারে আফগানিস্তানে আমেরিকার হস্তক্ষেপ-এর মতো।

আফ্রিকা এবং আরব নেতারা একসাথে আইসিসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যখন এই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয় তখন তারা নিশ্চুপ ছিলেন। বশিরের দল ইতিমধ্যে দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। তার বেশীর ভাগ উপদেষ্টা তাকে পদত্যাগ করতে বলেছে। কিন্তু তিনি তা করেন নি।

চলুন, আমরা কি ঘটে তার জন্য অপেক্ষা করি।