- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখী নেপাল

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, নেপাল, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ, রাজনীতি

বর্তমানে বিশ্বে সব জায়গায় আলোচিত হচ্ছে শক্তির খরচ কমানো আর পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি। উন্নত দেশ আর তাদের উন্নয়নশীল সহযোগীদের জন্য শক্তি দ্রুত একটা গুরুত্বপূর্ণ ‘বিষয়ে’ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। শক্তির হাহাকার কবলিত ভবিষ্যৎের ভীতি এখন জরুরীভাবে আলোচনা করা হচ্ছে – ওয়াশিংটন থেকে রিয়াদ পর্যন্ত।

বিশ্বের একটি খুবই দরিদ্র দেশ নেপাল এখন প্রচন্ড শক্তি সংকটের মুখোমুখি, আতঙ্কের ভবিষ্যৎ এসে গেছে। সরকার ‘রাষ্ট্রীয় শক্তি সংকট’ ঘোষণা করেছে আর দেশে প্রতিদিন ১৬ ঘন্টার লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হতে পারে।

এএফপির [1] কাছে পানি সম্পদ মন্ত্রী পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন:

“জাতীয় শক্তি সংকট ঘোষণা ছাড়া আমাদের কোন উপায় ছিলনা কারন বিদ্যুতের ভয়ঙ্কর অভাব চলছে।”

যদিও বর্তমানের শক্তি সংকট অনেক বেশী, নেপালে ঘাটতি কয়েক বছর ধরেই চলছে। আমার মনে আছে ছাত্র হিসাবে ১৯৯০ সালের দিকে কাঠমুন্ডুতে বাড়ির কাজ মোমের আলোতে করতে হত। শুষ্ক শীতের সময়ে, ব্লাকআউট খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল।

রাজধানী কাঠমুন্ডুর বাসিন্দারা, যেখানে নেপালের সার্ভিস বানিজ্য কেন্দ্রীভূত বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন আর এর প্রভাব কষ্টে থাকা অর্থনীতির উপরে কি হবে তাও বলেছেন।

নাউপাব্লিকে [2] উজ্জ্বল নামে একজন পাঠকের মন্তব্য – একজন সাধারণ জনতার উৎকন্ঠার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুত সংকটের কারনে:

“বিদ্যুৎের উপরে নির্ভরশীল কোন ধরনের সার্ভিস বা বানিজ্য কাঠমুন্ডুতে চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি সামনে বড় একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আমি ভয় পাচ্ছি যে দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে যেতে পারে যদি এটা বৈদেশিক মুদ্রা নির্ভর অর্থনীতির সাথে মেলানো হয় যেটা নির্ভরশীল মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতির উপরে…”

মোমের আলোয় নেপাল। ফ্লিকার ব্যবহারকারী রন লেইটার্স (http://www.flickr.com/photos/ronlayters/487914677/) এর সৌজন্যে এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় প্রকাশিত [3]

মোমের আলোয় নেপাল। ফ্লিকার ব্যবহারকারী রন লেইটার্স (http://www.flickr.com/photos/ronlayters/487914677/) এর সৌজন্যে এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় প্রকাশিত

মাওবাদি নেপালী সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য উপায় খুঁজছেন, কিন্তু এদের কিছু সিদ্ধান্ত অনেক দেরীতে নেয়া হচ্ছে আর অকার্যকরী মনে হচ্ছে। যেমন: হোর্ডিং বোর্ডে বিদ্যুৎ নিষিদ্ধ করা।

চন্দন শাপকোতা [4] সরকারের অন্যান্য পদক্ষেপ সম্পর্কে তালিকা দিয়েছেন:

“সরকার কম্প্যাক্ট ফ্লোরোসেন্ট বাতি (সিএফএল) এর ব্যবহার উৎসাহিত করছে। এই ধরনের বাতি আমদানীর উপরে ভর্তুকিও দিয়েছে, ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন থার্মাল প্লান্ট থেকে শুরু করেছে, আর ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানীর চেষ্টা করছে…এত দেরীতে কেন? কেন নেতারা এই আসন্ন সংকটের ব্যাপারটা আগে গ্রাহ্য করেনি? দূর্নীতি? দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতার অভাব?”

থার্মাল প্লান্ট শক্তির বিকল্প উৎস হিসাবে নেপালে অনেক আগ্রহের সৃষ্টি করছে যেখানে হাইড্রো ইলেক্ট্রিসিটি ‘সাধারণ’ উৎস।

ব্লগার উতসভ মাদেন [5] সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন আর সংশয় দেখিয়েছেন:

“৯.৬ বিলিয়ন রুপীজ এর বেশী বিনিয়োগের খবর এমন একটা প্রযুক্তিতে যেটা তিরস্কৃত হয়েছে জলবায়ু পরির্বতন আর অন্যান্যের সাথে সম্পর্কের কারনে। অর্থের জন্য বাধা পড়ে আছে এমন একটা সরকার দ্বারা এই উদ্যোগ বেশ অস্বাভাবিক মনে হয়। শক্তি বিশেষজ্ঞ আর সংস্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের (নেপাল বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের) কাছ থেকে এর বিরুদ্ধে মতামত পাওয়া সত্ত্বেও এটাকে সবুজ সংকেত দেয়া উদ্যোগটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”

শক্তি উৎপাদনের বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে তর্ক আর দেশ কেন এই সংকটের মুখোমুখী হচ্ছে এই প্রশ্নের মধ্যেই, চিন্তা হচ্ছে সব থেকে স্পর্শকাতর এলাকায় বিদ্যুত ঘাটতি কি প্রভাব ফেলতে পারে যা মাই রিপাব্লিকাতে [6] তুলে ধরা হয়েছে। সঙ্গীতা রিজাল বলেছেন যে বিদ্যুত ঘাটতি হাসপাতালের জরুরী সার্ভিসের উপর প্রভাব ফেলছে:

“পুতালিসাদাকে (কাঠমুন্ডু) ক্যাপিটাল হাসপাতালও খুব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার প্রকাশ অধিকারি বলেছেন যে তারা একটা ইনভার্টার ব্যবহার করছেন, কিন্তু এই ইনভার্টার বেশী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনা তাদের বেশীরভাগ যন্ত্র চালানোর জন্য, যেমন এক্স রে মেশিন। এক্স রে মেশিনের দরকার হয় প্রায় ২৫০ কিলো ভোল্ট (কেভি) বিদ্যুত। হাসপাতালে ব্যবহৃত ইনভার্টার এই লোড নিতে পারেনা।”