বাংলাদেশ: বিদ্রোহ থেমেছে, কিন্তু রয়ে গেছে প্রশ্ন

গতকাল (২৬শে ফেব্রুয়ারী) ঢাকায় ছিল উৎকণ্ঠার এক দিন। ৩৩ ঘন্টা ব্যাপী আধাসামরিক বাহিনী বিডিআর এর নিম্নপদমর্যাদার অসন্তুষ্ট জওয়ান কর্তৃক বিদ্রোহ এবং জিম্মি ঘটনার অবসান ঘটল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর সদর দপ্তরে তাদের অস্ত্র সমার্পনের মাধ্যমেসংবাদ পত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১৭ বিডিআর সদস্য (বেশীর ভাগ আর্মি অফিসার যারা এই বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ছিল) এবং ৪ জন সাধারণ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। জিম্মিরা মুক্ত হয়েছে কিন্তু ৬৫-১০০ আর্মি অফিসার এবং নিম্ন পদমর্যাদার জওয়ানকে এখনও পাওয়া যায়নি এবং বেশীর ভাগই মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সারাদিন ঘটনা নানান দিকে মোড় নিতে থাকে যেহেতু সশস্ত্র বাহিনী বিদ্রোহ দমনের জন্য সর্বপ্রকার প্রস্তুতি নিয়ে ছিল। ঢাকা শহরে ট্যাঙ্ক নেমে পড়ে এবং বিডিআর সদরদপ্তরের নিকটস্থ লোকজন বাড়ীঘড় ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে বিদ্রোহীরা বিনা সংঘর্ষে আত্মসমর্পণ করে। স্বভাবত:ই আশেপাশে অনেকরকম গুজব ছড়িয়ে পরে এবং ব্লগসমূহ ও টুইটার মেসেজ তথ্য প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

সারাদিন প্রকৃতপক্ষে অবস্থা কেমন তার কিছু পাওয়া যেতে পারে নিচের টুইটার মেসেজগুলোতে:

PurpleRome It all started in Dhaka but now its spreading to the rest of the country. Prime Minister Sheikh Hasina will address the nation in a while.

পার্পল রোম ঢাকায় ঘটনার সবটুকু শুরু হলেও দেশের অন্যত্রও তা ছড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোন মুহুর্তে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন।

phpfour crowd rattled in shahbag…continuous gunshots heard near dhaka uni(versity)

পিএইচপি ফোর শাহাবাগে জনতা উৎকণ্ঠিত ছিল…ঢাকা ভার্সিটির নিকটে অনবরত গুলির আওয়াজে।

mahmudur #bdr army high officials told doctors of dhaka medical college to be prepared for mass causalities to be happened in short time

মাহমুদুরবিডিআর: আর্মি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের বলেছিল অল্পক্ষণের মধ্যেই অনেক যুদ্ধাহতদের আগমনের জন্য প্রস্তুত থাকতে।

seoexpertbd: The #BDR panic is still live and leaving office early now.

সিওএক্সপার্টবিডি: বিডিআর ঘটনার ভীতি এখনও কাটেনি এবং দ্রুত অফিস ত্যাগ করছি।

rajputro: 9 more bodies found from #bdr hq, one of which was of a little girl's:(

রাজপুত্র: বিডিআর সদর দপ্তর থেকে আও ৯টি লাশ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে একটি মেয়ে শিশুর।

আরও অনেক টুইটার মেসেজ পাওয়া যাবে নিচে লিংক সমূহে:
http://twitterfall.com/dhaka
http://twitterfall.com/BDR
বিডিফ্যাকট এর মত ব্লগাররা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সরাসরি ব্লগিং করছিল। আনহার্ড ভয়েস ব্লগ সারাদিনই নিয়মিত নতুন তথ্য পোষ্ট করছিল। জরুরী খবর ফেসবুকের স্ট্যাটাস মেসেজগুলো সংকলিত করছিল যেখানেও ঘটনার বর্ণনা ছিল।

জেসিকা লিম তার ব্লগে কিছু ছবি যুক্ত করেছিলেন এবং তার ফ্লিকার একাউন্টে মানুষেরা কি পরিমাণ ভীতির মধ্যে দিয়ে গেছে তা প্রকাশ করেছে। ঢাকা ডেইলি ফটোতে অনেক ছবি ছিল। শহরে ট্যাঙ্ক নামার সাথে সাথে ইন্টারনেটে ভিডিও পোষ্ট হতে থাকে। এখানে সেরকম একটি দেয়া হলো।


Original Video- More videos at TinyPic

ঢাকা ডুয়েলার ব্লগের শাহনাজ বিডিআর সদস্যদের বিদ্রোহের কিছু প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে এবং তুলেছেন কিছু প্রশ্ন:

And this is how the seeds of discontent were first sown. The masters considered them an elite class, far above the lowly serfs. There was great disparity between pay, benefits, working conditions and career advancement between the officers and rank and file, and issues of corruption practiced by senior officers. [..] Soldiers raised their grievances again and again with their officers, to no avail. Their Director General had promised to place the soldiers demands to the Prime Minister Sheikh Hasina when she inaugurated the BDR week events. But he must have forgotten his promise, for he only spoke on behalf of his officers on that august occasion. Disgruntled soldiers grumbled all night.

All Sector Commanders were assembled in the Darbar Hall the next morning when in the course of an argument between the soldiers and officers, weapons were drawn and fired. We do not know who fired first, but the results were the same. Soldiers and officers died. And innocent civilians were killed and wounded. Gunshots and heavy mortar firing were heard. Plumes of smoke were seen rising from the BDR complex.

In a democracy, in a people's republic, grievances should not be allowed to explode in this manner. This situation has caught the government unaware, but really, did the government (albeit newly elected), have absolutely no idea this was brewing? Could it not have been prevented?

এবং এভাবেই অসন্তোষের বীজ ছড়িয়েছে। মনীবগণ নিজেদেরকে ভাবত উন্নত শ্রেনীর, দুস্থ কর্মীদের থেকে অনেক উপরের। বেতন, সুবিধা, কর্ম অবস্থা এবং চাকুরীর অগ্রগতিতে অফিসার এবং জওয়ানদের মধ্যে ছিল ব্যাপক অসামাঞ্জস্যতা এবং দুর্নীতির ইস্যুগুলো যা সিনিয়র অফিসাররা করেছে। সৈন্যরা তাদের দাবীগুলো বারবার তাদের অফিসারদের কাছে উত্থাপন করেছে, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। মহাপরিচালক ওয়াদা করেছিলেন সৈন্যদের দাবীগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করবেন যখন তিনি বিডিআর সপ্তাহের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করছিলেন। কিন্তু তিনি হয়তো তার ওয়াদা ভুলে যান, তিনি তার অফিসারদের পক্ষে কেবল বলেছিলেন সেই মহতী অনুষ্ঠানে। সারারাত অসন্তুষ্ট সৈনিকরা ক্ষুব্ধ হয়েছে।

সকল সেক্টর কমান্ডারা পরদিন সকালে দরবার হলে একত্রিত হয় এবং যখন অফিসার এবং সৈনিকদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয় তখন অস্ত্র বের করা হয় এবং গুলি করা হয়। আমরা জানিনা কে প্রথম গুলি করেছিল, কিন্তু ফল তাতে একই থেকে যায়। সৈনিক এবং অফিসাররা নিহত হয়েছে। এবং নিরীহ সাধারণ নাগরিক মারা গেছে ও আহত হয়েছে। গুলি এভং ভারী মর্টার এর শব্দ শোনা গেছে। বিডিআর কমপ্লেক্স হতে নির্গত ধোঁয়ার কুন্ডুলী দেখা গেছে।
গণতন্ত্রে, একটি প্রজাতন্ত্রে, দাবী দাওয়া এইভাবে উত্থাপন করা উচিৎ নয়। এই ঘটনা সরকারের অসচেতনাতাকে প্রকাশ করে, সত্যিই কি সরকারের (যদিও সদ্য নির্বাচিত) কোনই ধারণা ছিলনা? এটা কি প্রতিহত করা যেতনা?

ব্লগাররা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত যেমন বিডিআর সদস্যরা অফিসারদেরকেই হত্যা করার জন্য কেন বেছে নেয় এবং বিশেষত: কে ‘আগে গুলি করেছে’ এই বিতর্কিত বিষয়ে। একজন আর্মি অফিসার যে কিনা দৃশ্যে উপস্থিত ছিল তার উদ্ধৃতি দিয়ে মিডিয়া প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে বিডিআর জওয়ানরা প্রথম গুলি করে অফিসারদের উপর। কিন্তু এই ব্লগার তার ঘটনাস্থলে উপস্থিত তার একজন চাচর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশ করে যে বিডিআর প্রধান একজন জওয়ানের উপর গুলি করেছিলেন তর্কাতর্কির সময় এবং সেটাই এই ঘটনার উদ্ভব করে। এখন প্রশ্ন কে সত্য বলছে।

খবরের কাগজ এবং বেঁচে যাওয়া লোকদের দেয়া সিটিজেন মিডিয়া প্রতিবেদনগুলো একত্রিত করেছে আতিকুল হক। অফিসারদের কয়েকজন যারা বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি ছিল তারা তাদের উপর বর্বর আচরণের কথা বলে। জনগণের সহানুভূতি বিডিআর বিদ্রোহীদের থেকে সেনাবাহিনীর অফিসারদের উপর চলে যায় যাদের উপর বর্বর নির্যাতন হয়েছে। ধ্রুব হাসানের মত অনেক ব্লগার মৃত্যুর জন্য শোকপ্রকাশ করেছে। নিঘাত তিথি নামক এক মন্তব্যকারী বলেন:

খারাপ লাগছে মানুষের সহমর্মিতা পাবার জন্য তাদের মিথ্যাচার দেখে, শুরুতে টিভিতে একজন জোয়ান বলেছিলেন, মাত্র একজন অফিসার মারা গেছেন, তার নাম বলা যাবে না। অথচ বিদ্রোহের শুরুতেই ৭০ জন (প্রথম আলো'র সংবাদ অনুযায়ী) অফিসারকে গুলি করে মারা হয়েছে। শুধু তাই না, তাদের গুলির পাশাপাশি বেয়নেট নিয়ে খুচিয়ে আঘাত করে হয়েছে। এই কি স্বাধীন দেশের মানুষের নিজের ভাইয়ের প্রতি আচরন? এইসব তথ্য সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছিলো ! আহারে, মাত্র ১৭ জনের লাশ পাওয়া গেলো। বাকি লাশগুলোকে কি করা হয়েছে? তাদের কি দাফনও হবে না?

সরকার বিডিআরদের বিদ্রোহের জন্য সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শণ করে তাদের দাবীর নিকট মাথা নত করে । কামালউদ্দিন বলেন কাদের কে সাধারণ ক্ষমা করা হলো? যারা বর্বরভাবে হত্যা করেছে অফিসারদের এবং সাধারণ জনগণকে?

আনহার্ড ভয়েস ব্লগ সরকারের নিকট শনিবার, ফেব্রুয়ারী ২৮ তারিখকে বিদেহী চাকুরীজীবী এবং নিরীহ সাধারণ ব্যক্তিদের সম্মানে জাতীয় শোকদিবস ঘোষণা করার আবেদন করে এবং নিহতদের জন্য ন্যায়বিচার দাবী করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .