- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বাংলাদেশ: বিডিআর বিদ্রোহ কভার করছে নাগরিক সাংবাদিকেরা

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রতিবাদ, প্রযুক্তি, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ

রাজধানীর কেন্দ্রে অবস্থিত বাংলাদেশ রাইফেলসের [1] (বিডিআর- প্যারামিলিটারি সীমান্ত রক্ষী বাহিনী) হেডকোয়ার্টারের ভিতরে ভয়ঙ্কর এক বন্দুক যুদ্ধের খবরে আজ সকালের ঢাকা চমকে উঠেছে। চারিদিকে গুজব ছড়াতে থাকে আর পরে জানা যায় যে জুনিয়র অফিসাররা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এবং সিনিয়র অফিসারদের জিম্মি করে পরিস্থিতি নিজেদের দখলে নিয়েছে। মুহুর্মূহু বন্দুক আর মর্টার শেলের আওয়াজ শোনা গেছে আর স্থানীয় মিডিয়া জানায় যে ৩ জন সাধারন মানুষ ও ২ জন বিডিআর সেনা কর্মকর্তা ইতিমধ্যে মারা গেছেন। কিন্তু আসল মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে যেহেতু বিডিআর এলাকার মধ্যে আরো দেহ নিয়ে যেতে দেখা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী এলাকা ঘিরে রাখে আর সেনাবাহিনীকে পাঠানো হয় বিদ্রোহ দমনের জন্য কিন্তু বিডিআর সদস্যরা তাদের প্রতিহত করে। বিবিসি কিছু ছবি [2] প্রচার করছে আর বিডিআর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছে [3]

সেসময় সবাই তথ্যের জন্যে হাহাকার করছিল আর দেশের প্রধান ২৪ ঘন্টার অনলাইন সংবাদ সূত্রের ওয়েবসাইটে [4] ঢোকা যাচ্ছিল না সম্ভবত বেশি লোক একসাথে দেখতে চাওয়ার কারনে। এখানেই নাগরিক সাংবাদিকরা শুন্যতা পূরন করেন।

বেসামরিক লোকেরা ঘটনাস্থল থেকে পালাচ্ছে। ছবির কপিরাইট দৃষ্টিপাত এবং অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত [5]

বেসামরিক লোকেরা ঘটনাস্থল থেকে পালাচ্ছে। ছবির কপিরাইট দৃষ্টিপাত এবং অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত

মানবাধিকার ভিত্কি সংস্থা দৃষ্টিপাতের ব্লগ আনহার্ড ভয়েস [5] প্রায় সাথে সাথে লাইভ ব্লগিং শুরু করে আর অনেক চাক্ষুস সাক্ষী মন্তব্যের স্থানে সর্বশেষ খবর জানান। এখানে আছে প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা কিছু ছবি [6] যা আনহার্ড ভয়েসেস ব্লগে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে।

চারিদিকে প্রশ্ন ছিল যে বিদ্রোহ কেন হলো আর এগুলো বাংলা আর ইংরেজী বিভিন্ন নাগরিক মিডিয়া সাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে:

* সেনা বাহিনি আর বিডিআর এর পে স্কেলের বৈপরীত্য বিশেষভাবে ক্ষোভের বিষয় ছিল
* (সেনা অফিসার কর্তৃক) খারাপ ব্যবহার ও পক্ষপাতিত্ব
* উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দূনীর্তি বিশেষ করে অপারেশন ডাল ভাত প্রকল্পে [7]
* তাদের জন্য কোন শান্তি রক্ষী মিশন না থাকা

২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই বাংলা ব্লগে [8] অপারেশন ডাল ভাত সংক্রান্ত কিছু অসামঞ্জস্য বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল।

এখানে বিদ্রোহী সেনাদের দাবীর একটি ভিডিও রয়েছে যা ইউটিউব ব্যবহারকারী আজাদভিশন [9] আপলোড করেছেন:

বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম সচলায়তন সংবাদ আপডেট করছে তাদের ঢাকার নাগরিক সাংবাদিকদের ফোন রিপোর্ট পোস্ট করে [10] । কেউ কেউ সংবাদ আপডেট করছেন টুইটারের মাধ্যমে যেমন আসিফ সালেহ [11] আর রাজপুত্র [12]

বিডিফ্যাক্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপডেট করছেন [13]। এই ব্লগার কিছু যথাযত প্রশ্ন করছেন [14]:

১) তারা কি আর্থিক সাহায্য ও অতিরিক্ত সুবিধা দাবী করেছিল? কতদিন ধরে এইসব দাবী করা হচ্ছিল কিন্তু শোনা হচ্ছিল না? কেন? আমাদের ধারাবাহিক কাহিনী দরকার।

২) আজকের দরবার হলের মিটিং এ সব সেক্টর কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন। তাই এটা দুঘর্টনা হতে পারে না। এটা পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা। কে এর পরিকল্পনা করেছে?

৩) রাজধানীর বাইরে এখন কি হচ্ছে? আমরা কি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, কি না?

এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বিশেষ মুহুর্ত।

এই ব্লগার বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনা অবস্থার [15] আপডেট দিয়েছেন:

১৫ সদস্যের বিডিআর দল নানকের নেতৃত্বে (এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী) প্রধানমন্ত্রীর বাসায় গিয়েছেন আলোচনা করতে। তাদের তাৎক্ষনিক দাবি হচ্ছে বিডিআরকে সেনার নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা।

এরই মধ্যে ইউএনবি জানিয়েছে যে সেনারা গোয়ালখালি বিডিআর ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বাংলাদেশ রাইফেলস হেডকোয়ার্টার ঢাকায় তাদের সহকর্মীদের বিদ্রোহের পরে। এতে দক্ষিণের এই শহরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

কর্তব্যরত সাংবাদিকরা গুলি থেকে রক্ষা পেতে সচেষ্ট। ছবির কপিরাইট দৃষ্টিপাত এবং অনুমতি নিয়ে প্রকাশিত।

কর্তব্যরত সাংবাদিকরা গুলি থেকে রক্ষা পেতে সচেষ্ট। ছবির কপিরাইট দৃষ্টিপাত এবং অনুমতি নিয়ে প্রকাশিত।

আর আমার নিজের ব্লগে আমি জানিয়েছি [16]:

ইউএনবি (চ্যানেলের) টিকার জানাচ্ছে: “প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন, বিডিআর প্রতিনিধিদল অস্ত্র সমর্পনের কথা দিয়েছে।” এলজিআরডি মন্ত্রী নানক প্রধানমন্ত্রী আর বিডিআর প্রতিনিধির সাক্ষাৎকারের পরে সাধারণ ক্ষমার কথা নিশ্চিত করেছেন। জওয়ানরা কথা দিয়েছে তারা অস্ত্র সমর্পন করবে (সম্ভবত পরের দিন সকালে, সেনা আর র‌্যাব প্রত্যাহারের পরে)। বিদ্রোহী জোয়ানরা দাবী করছে যে তাদেরকে আগে গুলি করা হয়েছে, সকালে দরবার হলে মিটিং এর সময়ে।

আনহার্ড ভয়েসে ব্লগে একজন মন্তব্যকারী কঠিন একটা সত্যি কথা বলেছেন [17]:

বিডিআরের পেশ করা দাবী সাথে সাথে গ্রহণ করা অন্য দলের জন্য একটা বিপদজনক উদাহরণ হিসাবে থাকছে যাতে তারা একই কাজ করতে পারে কোনঠাসা হয়ে পড়লে। বাংলাদেশে আপনার কথা যদি কেউ না শোনে তাহলে ভাংচুর করতে হবে আর আপনার দাবী সাথে সাথে মেনে নেয়া হবে। এটা ছাত্র, গার্মেন্টস শ্রমিক, রাজনৈতিক দল আর এখন বিডিআরের জন্য সফল উপায় হিসাবে প্রমানিত হিয়েছে।

সাতমসজিদ রোড ৭/এতে এক এক গান। ছবির কপিরাইট দৃষ্টিপাত এবং অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত

সাতমসজিদ রোড ৭/এতে এক এক গান। ছবির কপিরাইট দৃষ্টিপাত এবং অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত

বিকালে ঢাকায় সব কিছু শান্ত ছিল তবে কিছুক্ষণ আগে রাজপুত্র এই টুইটার বার্তা [18] পাঠিয়েছেন:

Twitter message

বিডিআর প্রধানমন্ত্রীর লিখিত ক্ষমা ঘোষণার কাগজ না পাওয়া পর্যন্ত অস্ত্র জমা দেবে না।

পরিস্থিতি শেষ হতে এখনও অনেক দেরী আর পরিস্থিতি এখনো বিপদজনক। অনুগ্রহ করে উপরে উল্লিখিত নাগরিক মিডিয়া সোর্সগুলোতে নজর রাখবেন সর্বশেষ আপডেট পাওয়ার জন্য।