আমেরিকা: তাদের স্বপ্নের নাগরিকত্বের জন্য ব্লগিং করছেন

প্রতি বছর অন্যদেশ থেকে হাজার হাজার শিশু আমেরিকায় আসে। এদের পিতামাতার বৈধ কোন কাগজপত্র থাকে না। বৈধ আবাসন প্রক্রিয়া ছাড়াই এইসব অভিবাসী পিতামাতার সন্তানরা নিয়মিত পাবলিক স্কুলে যেতে পারে। যদিও তারা অন্য দেশ চেনে না কিন্তু তারপরেও তাদের জন্য একটা বিপদ থেকে যায় বড় হয়ে জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত হবার ভয়।

এই সমস্যা সমাধানে এক প্রস্তাবনা তৈরী করা হয়েছে, যার ফলে এই সব প্রমানপত্রহীন ছাত্র-ছাত্রীরা আমেরিকার বৈধ বাসিন্দা হতে পারবে। এই প্রক্রিয়াটি ঘটবে ড্রিমএ্যাক্ট নামে এক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে ২০০৭ সালে এই অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়েছিল (একই আইন ২০০১ ও ২০০৬ সালেও বাতিল করা হয়েছিল)। এখন অন্তত ৬৫,০০০ প্রমানপত্রহীন ছাত্র এই ঘটনায় সুবিধা লাভ করতে পারে।

যেদিন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন তার আগের দিন প্রায় ৬৫,৫০০ ব্যাক্তি এক অনলাইন ভোটে অংশগ্রণ করে। এই ভোট কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ছিল চেঞ্জডটওআরজি (Change.org) নামের এক একটিভিস্ট ওয়েব সাইট ২০০৯ সালে আমেরিকার কোন কোন সমস্যার প্রতি মনোযোগ দেবে তা নির্ধারন করা। ড্রিমএ্যকটিভিস্টডটওআরজি নামের ওয়েব সাইট ও অন্য অভিবাসী কর্মীদের প্রচারণাকে ধন্যবাদ কারন তাদের তৎপরতার ফলে এই আইন সেরা ১০টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ঐ ওয়েবসাইটে।

এটি বাক্তিগত

প্রেরণা ক্যালিফোর্নিয়ার একজন স্নাতোকোত্তর ছাত্রী এবং ড্রিমএ্যাকটিভিস্ট। তিনি নিজের ব্লগকে বর্ণনা করে অভিবাসী অধিকারের এর জন্য লড়তে থাকা একটিভিস্টদের মধ্যে যোগাযোগের এক প্লাটফর্ম হিসেবে। এটি ঘৃণা এবং উপেক্ষার বিপরীতে অর্থপূর্ণ অভিবাসী আইন সংশোধনের জন্য এক অনলাইন আওয়াজ। তার ব্লগের নাম ‘নো বর্ডারস এন্ড বাইনারীস‘।

আমেরিকায় বাস করতে এসে তাকে যে কষ্ট করতে হয় সে সমন্ধে দেশীক্রিটিকস নামক ব্লগে প্রেরণা লিখছেন যে সে সময় তার বয়স ছিল ২৪। তার পক্ষে বৈধভাবে আমেরিকার আবাসন দাবী করা সম্ভব ছিল না, যদিও তার পুরো পরিবারের আমেরিকায় বসবাসের বৈধতা ছিল। বিয়ে করার মাধ্যমে আমেরিকায় বৈধ হওয়াই ছিল তার একমাত্র সুযোগ।

তিনি অন্য সব ব্যক্তিগত বিষয় তুলে ধরেছেন:

ফিজি নামের দেশটিতে আমি জন্মগ্রহন করেছি। কিন্তু সেদেশের আইন অনুযায়ী আমাকে বলা হয়েছিল আমি একজন কলোনীবাসী বা বাইরের লোক। আমি সেখানকার কেউ না।

ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ, যেখানে আমার পুর্বপুরুষরা কোন একসময় বাস করতো, এসব দেশের আইন অনুযায়ী আমি সেখানকার বৈধ নাগরিক নই, কাজেই একজন অপরাধী। যদিও আমি ভারতীয় উপমহাদেশের কোন রাষ্ট্রে কখনই পা রাখিনি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এই দেশটিতে আমি এক যুগ ধরে বাস করছি। তারা বারবার আমার কাছে গ্রীন কার্ড দাবি করছে। আমাকে গ্রহণ করার জন্য তারা নয় সংখ্যার এক নাম্বার চাচ্ছে । তারা এই বাস্তবতাকে বাদ দিচ্ছে যে আমার বাকী পরিবার এই দেশকে ট্যাক্স প্রদান করা নগারিক এবং এখনকার বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা।

অন্য একজন ব্লগার সোমফোলনালকো মেক্সিকো থেকে আগত এক অভিবাসী। তিনি ২০০৭ সালে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি হাসিল করেন। তিনি তার ব্লগ ডকুমেন্টিং মিতে প্রশ্ন করেছে আসলে সঠিকভাবে ‘অবৈধ বলতে কি বোঝায়’।

আমি কিছু বিষয় পরিস্কার করার জন্য কিছু সময় নিচ্ছি। আমি (এখানে আমার নাম প্রবেশ করাচ্ছি) আইনের দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হচ্ছি না।

কাজেই কেন নির্ভুল নয় এমন একটা স্তর আমাকে তার সাথে একত্রিত করতে অস্বীকার করছে। কারণ এটি বিষয়টিকে আরো সহজ করে।
আমাকে অবৈধ হিসেব চিহ্নিত করা মানেই আমি সহসা সমাজে আমরা যোগ্যতার অধিকার হারিয়ে ফেলি। আমি আমার মানবিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছি। যা কিনা অন্যদের জন্য আমার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করার অনেক সহজ সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এটি যেন আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।

ব্লগার মারিপোসা, যার কাগজপত্রও ঠিক নেই, তিনিও একই বাস্তবতা আবিস্কার করছেন। তিনি চিহ্নিত আমেরিকানদের সাথে তার মিল এবং পার্থক্য আবিস্কার করছেন।

সারা দেশ জুড়ে ব্লগিং এর মাধ্যমে অনেক অন্য মতামতও পাওয়া যাবে। যার মধ্যে রয়েছে মারিয়া এম। তিনি পেনসিলভানিয়ার ব্লগার। তিনি ড্রিমএ্যাক্ট বলতে কি বোঝেন তাই জানাচ্ছেন তার গিভ দিস কিড এ চান্স লেখায়। ক্যালির্ফোনিয়া বাস করা একজন লেখক এল র‌্যানডম হিরো তার আমেরিকান ওয়েটব্যাক ব্লগে লিখছেন গ্রীন কার্ড বিবাহ নিয়ে, এবং আলেকজান্ডার সেপ্ররো তার ড্রিমিং টু লিভ ব্লগে তার অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন।

ড্রিমএ্যক্ট নিয়ে যে বির্তক তৈরী হয়েছে তার উপর ইউটিউবে একটা উপস্থাপনা রয়েছে। এই ভিডিওতে লস এ্যাঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্ররা তাদের গল্প বলছে। গল্পগুলো নীচের এই ভিডিওটিতে রয়েছে। একই ভিডিও ২০০৭ সালের মে মাসে কংগ্রেসের এক শুনানিতে দেখানো হয়।

২০০৭ সালের জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার ছাত্ররা এ ব্যাপারে অসংখ্য ভিডিও প্রকাশ করে সারা সপ্তাহ জুড়ে যাতে তারা দ্রুত ড্রিমএ্যাক্ট এর পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারে।

ড্রিম এ্যক্ট কি ন্যায্য?

ভিভিএর ল্যাটিনোর ব্লগের মেগান লা মালার মতে এই বিষয়টি ব্যক্তিগত, কারণ এটি তার বন্ধুদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে:

আমার কিছু বন্ধু রয়েছে যারা তাদের কলেজের শিক্ষা (পেরো) শেষ করে কোন কাজ পায়নি। কারণ তাদের কোন বৈধ কাগজ ছিল না। আমি অনেককে চিনি যারা হাইস্কুলে গ্রাজুয়েশন করছে, কিন্তু কলেজে ভর্তি হবার ব্যাপারে তারা শংকিত। এর কারণ তাদের কাছ কোন বৈধ কাগজ নেই। আমি চিন্তিত কারণ সাধারণত আমরা যখন প্রচারণা চালাচ্ছি বিশেষ কিছু শ্রেণীকে বৈধ করার জন্য, যে সুযোগ অন্যরা পাবে না। আমাদের উচিত এই শ্রেণী বৈষম্যমূলক চিন্তা, কেবল শিক্ষিত লোকদেরই বৈধ হবার সুযোগ পাবে এই ছায়া থেকে বের হয়ে আসা। ড্রিমএ্যাক্ট প্রয়োজন, কারণ এটি তরুণ প্রজন্মকে অভিবাসী হিসেবে সামনে এগিয়ে নেবার একটি প্রচেষ্টা, আর আমরা কি আমাদের নিজেদের জন্য আরো ভালো কিছু অর্জন করতে পারি না? সমগ্র আমেরিকা যে স্বপ্নের কথা বলে এটি কি সেটি নয়?

মালা অবশ্য এর সাথে যোগ করেন এই প্রস্তাবিত আইনের আরেকটি সমস্যার কথা – বৈধ করনের পর তাদের সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারটি।

যদিও ড্রিমএ্যাক্টের অনেক সমর্থক রয়েছে, ল্যাটিনা লিসটার ব্লগে ল্যাটনসজল নামের এক মন্তব্যকারী লিখছেন ড্রিমএ্যাক্ট একটি বোঝা হয়ে দাড়াবে। ব্লগার ভদ্রমহিলা নিজেই এক অভিবাসী পরিবার থেকে এসেছেন।

আমি লোকদের সুযোগ দেবার পক্ষে, কিন্তু আমি যেটিকে সমস্যা হিসেবে দেখি যখন একজন অভিবাসী এখানে আসে এবং আরো শিক্ষার নিতে চায় তখন তার শিক্ষার জন্য ট্যাক্স দেওয়া ডলারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এখন এই কঠিন সময়ে শিক্ষা গ্রহণ-এর সুযোগ আরো কঠিন হয়ে আসছে।

আরো বলা যায় অন্য দেশে গিয়ে আমেরিকানদেরও কি একই সুযোগ থাকে? যে সমস্ত দেশের লোকেরা এই দেশে এসে দরখাস্ত দিতে চায় তাদের মতো কি একই বাস্তবতা তাদের দেশে থাকে। আমি তা মনে করি না। এখানে আমেরিকাতে দুই ধরনের বাস্তবতা রয়েছে, বিদেশী যারা তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এখানে এসে যুক্ত হচ্ছে (যা আমি হতে চাই না)।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .