রাশিয়ার ৩৪ বছর বয়স্ক মানবাধিকার আইনজীবি স্টানসিলাভ মারকেলভ জানুয়ারীর ১৯ তারিখে খুন হন। গুলিবিদ্ধ হবার আগে তিনি এক সংবাদ সম্মেলন শেষ করে মস্কোর মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত প্রেচিশটেনকা স্ট্রীটে হাটছিলেন। তার সাথে ২৫ বছর বয়স্ক সাংবাদিক আনাস্তিসিয়া বাবুরোভাও গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার সময় তিনি মারকেলেভকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। হাসপাতালে নেবার কয়েক ঘন্টা পরে তারও মৃত্যু ঘটে।
বাবুরোভা নোভায়া গেজেটা পত্রিকার একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ছিলেন।
মারকেলভ ছিলেন এলিজা(খেদা) কুঙ্গায়েভার পরিবার দ্বারা নিয়োজিত আইনজীবি। এলিজা ১৮ বছর বয়স্ক এক চেচেন মহিলা যাকে রাশিয়ান কর্নেল ইয়ুরি বুদানভ ২০০০ সালের মার্চে হত্যা করে। বুদানভ জামিন পেলে পালাবে না এই শর্তে জেল থেকে অগ্রিম মুক্তি পান ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসের ১৫ তারিখে। জানুয়ারী মাসের ১৯ তারিখের সংবাদ সম্মেলনে মারকেলভ বলেন, তিনি ইউরোপের মানবাধিকার কোর্টে বুদানভের এই অগ্রীম মুক্তিলাভের বিরুদ্ধে আপীল করবেন।
মারকেলভের আরেক গুরুত্বপূর্ণ ও নামকরা মক্কেল ছিল সাংবাদিক মিখাইল বেকাতভ। ২০০৮ সালে তাকে আক্রমণ করে মারাত্বকভাবে আহত করা হয়। (আরো বিস্তারিত জানতে শিকাগো ট্রিবিউন এর রিপোর্ট দেখুন)
নিউ ইয়র্ক টাইমস নোভায়া গেজেটার একজন মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে, আনা পলিটকোভসকায়ার বিষয়ে যখনই কোন মামলা হয়েছে সেটাতেই মারকেলভ জড়িত ছিলেন। আনা পলিটকোভসকায়া ছিলেন একজন প্রতিশ্রুতিশীল রাশিয়ান সাংবাদিক যিনি ২০০৬ সালের অক্টোবরে নিহত হন।
রাশিয়ার অনেক ব্লগার প্রকাশ্যে দিবালোকে মারকেলভ ও বাবুরোভার এই নির্মম এবং ভয়ানক হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নীচে তার কিছু প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানানো হলো। এগুলো রাশিয়ান ভাষা থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।
লাইফ জার্নাল ব্যবহারকারী টুপিকিন বলছেন:
ঈশ্বরই জানেন কত বছর আগে থেকে আমি স্টাসকে চিনতাম। সম্ভবত ১৯৯০ সালের শুরু থেকে। সে সময় সে ছিল আইনের এক ছাত্র। তারপর সে তার লেখাপড়া শেষ করলো। তার লম্বা চুল কেটে ফেললো এবং একজন আইনজীবিতে পরিণত হল। আইনজীবি হিসেবে তার কাজ ছিল সত্যকেও মানবাধিকারকে রক্ষা করা, এমনকি যদিও তখন মনে করা হতো এগুলোকে রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব কাজ।
তিনি রাস্ট্রের বিপক্ষে দাড়িয়ে চেচনিয়াতে কাজ করেছেন। তিনি পুলিশের বিপক্ষে লড়েছেন। তিনি নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন।
তার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা দু:স্বপ্নের মতো ঘটনা ঘটা সত্বেও তিনি ছিলেন একজন অবিশ্বাস্য উৎফুল্ল এবং আশাবাদী মানুষ।
লাইফ জার্নাল ব্যবহারকারী আলিশেজু লিখছেন:
আমি ধারণা করতে পারছি না কে স্টাস এবং আনসটাসিয়া বাবুরোভাকে হত্যা করতে পারে। যেই করুক সে একজন খারাপ ব্যাক্তি।
স্টাস তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত যারা ছিল সবচেয়ে বেশী আঘাতপ্রাপ্ত। সবচেয়ে যারা গুরুত্বহীন এবং অবজ্ঞার শিকার, যাদের জীবনে আর কোন যোগ্য আইনজীবির শরনাপন্ন হবার ক্ষমতা ছিল না সে তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিত।কোন কোন সময় আমি আমার নিজের বন্ধুদের স্টাসের টেলিফোন নাম্বার দিতাম। কাউকে সাহায্য করতে সে কখনই না করতো না। সে একটাও মামলা হারেনি। তার কথা আমার সবসময় মনে পড়বে।
লাইফ জার্নাল ব্যবহারকারী ওলেগ -শাইনে লিখছেন:
মারকেলভ অনেকগুলো মামলা নিয়ে কাজ করেছন, যা কিন সরকারী ব্যাক্তিদের অবৈধ কাজকর্মের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছিল। আমরা সাক্ষাৎ করি পাঁচ বছর আগে যখন প্রতিবাদকারীদের পেটানো হয় (এলিসটাতে) এবং সে সময় একজন ব্যাক্তি মারা যায়। সে সময় আমরা সফলভাবে সরকারী উকিলদের প্রতিস্থাপন করেছিলাম এবং প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করার উপর যে বাধা ছিল তা স্থগিত করেছিলাম। এ রকম আরো অনেক ঘটনা।
সে ছিল আন্তরিক, সাহসী এবং দয়ালু এক ব্যাক্তি যার কিনা বৈপরিত্য এবং ব্যাঙ্গোক্তি সম্বন্ধে ভালো ধারণা ছিল, সত্যিকারের ভয়ভীতির বাস্তবতায় ফেলে দেওয়া সাধারণ লোকদের মুক্ত করাই ছিল তার কাজ।
(অনুবাদটি ঈষৎ সংক্ষেপিত)