একটি বিলাসবহুল ক্রুজ লাইনারে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া দেশের সংগঠন (আসিয়ান) আর জাপান থেকে প্রায় ৩০০ জন প্রাণবন্ত তরুণকে জড়ো করেন, তাদেরকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয় আর সামাজিক যোগাযোগে সংযুক্ত করেন। ফলাফল: শক্ত একটা বন্ধন আর সারা জীবনের বন্ধুত্ব। এটা দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ইয়ুথ প্রোগ্রামের(এসএসইএওয়াইপি) জাহাজের গল্প। আসিয়ান দেশসমুহ আর জাপানের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ার লক্ষ্যে এম.এস. নিপ্পন মারুতে ‘প্রোগ্রাম কাপাল্বেলিয়া এশিয়া টেংগারা’ চলছে যার ব্যয় বহন করছে জাপান সরকার।
গত বছরের ৩৫ তম এসসিয়াপ এ অংশগ্রহনকারীদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি ব্লগ
বিপিওয়াই ২০০৮ অনুসারে এটি একটি বাৎসরিক তরুণদের প্রোগ্রাম যা চেষ্টা করে:
“জাপান আর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার তরুণদের মধ্যে বন্ধুত্ব আর পারষ্পরিক সমঝোতা বাড়ানো যাতে বিশ্ব সম্পর্কে তাদের দৃষ্টি প্রসারিত হয়, আর তার সাথে প্রেষণা দেয়া যাতে তারা নিজের দেশকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে পারস্পরিক আলোচনায় লিপ্ত হতে পারে। এছাড়াও জাহাজের উপর বিভিন্ন দেশের মধ্যে বা যেসব দেশে ভ্রমণ করা হবে সেসব দেশের মধ্যেও পারস্পরিক আদান প্রদানে উৎসাহ দেয়া হয়।”
জাহাজে অবস্থানরত তরুণ-তরুণীরা আলোচনা, বিভিন্ন দলীয় কার্যক্রম, নিজের দেশকে উপস্থাপন, বক্তৃতা দেয়া এবং শোনা এবং নানা সামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার যেসব দেশে জাহাজটি ভিড়ছে সেসব দেশে তাদের নিজস্ব দেশের ছোট দুত হিসেবে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। এদের কেউ কেউ সেসব দেশে কিছু দিন থেকে স্থানীয় তরুণ তরুণীদের সাথে সাংস্কৃতিক ও বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি করে।
ব্রুনাইয়ের একজন অংশগ্রহণকারী টারকয়েস এন্ড রোজেজ জাহাজে ৫২ দিনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন। তার কথায় এই অভিজ্ঞতা ছিল খুবই ফলপ্রসু:
আমরা খুবই ভাগ্যবান ছিলাম এই প্রোগ্রামের জন্যে নির্বাচিত হয়ে। যোগ্য লোকদের নির্বাচনের উপর জোর দেয়া হয়েছিল এবং এই জাহাজের উদ্দেশ্য ছিল জানা। এতে যোগদান করার পর আমার মনে হয়েছে যে অনেক বন্ধু তৈরি হয়েছে, অনেক বন্ধন জুড়েছে।
এই ব্লগার বলছেন যে এই ভ্রমণ তার জীবনে বেশ প্রভাব ফেলেছে। তিনি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে তার সহপ্রশিক্ষণার্থীর কাছে ব্যাক্তিগত ভ্রমণে গিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি সরকারী ভ্রমণেও গিয়েছেন যার ফলে তার বেশ অনেকের সাথে চেনাজানা হয়:
এই প্রোগ্রামে না আসলে হয়ত ভিয়েতনামীজ ফ্যাক্টরির মালিকদের সাথে কোনদিনই দেখা হত না। কে জানে…হয়ত কোনদিন আমার কোন উদ্যোক্তাকে দরকার পরল তাহলে আমি জানব যে কাকে ফোন করতে হবে। আমার তরুণ উদ্যোক্তা বন্ধুরা এই প্রোগ্রামের এই সুবিধা নিয়ে খুশী।
এছাড়াও বাড়ীতে থাকার আয়োজনও বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল। ইন্দোনেশিয়ায় সে একজন রাজনীতিবিদের বাসায় ছিল যিনি তার স্বামী মারা যাবার পর সন্তানকে একলা মানুষ করেছেন। ব্যাংককে গৃহকর্তা ছিলেন একটি থাই ব্যান্কের মালিক একজন ধনী ব্যক্তি যিনি তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন।
আমি কখনও চিন্তা করিনি এই প্রোগ্রাম ছাড়া এই সমস্ত বন্ধুদের সাথে পরিচিত হব। একে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। যদি সম্ভব হত তাহলে সবাই প্রতিদিন একসাথে হতাম। আমরা গত ৬-৭ মাস একসাথে থাকার পরও আমাদের গল্প বলে শেষ করতে পারব না।
এম এস নিপ্পন মারু শেষ বারের মত তীর ছেড়ে যাচ্ছে।
১৯৮০ সালের প্রথম দিক থেকেই পর্যবেক্ষক হিসেবে ব্রুনাই এই প্রোগ্রামে যুক্ত হয় এবং পরে মূল অংশগ্রহণকারীর মর্যাদা পায়। প্রত্যেক দেশকেই মোট ২৮জন অংশ্রগ্রহণকারীদের কোটা দেয়া হয় যার মধ্যে ১৪ জন তরুণ, ১৪ জন তরুণী এবং একজন জাতীয় নেতা। তবে প্রত্যেক দেশের জন্যেই ভিন্ন নিয়ম রয়েছে। ব্রুনাইতে যোগ্যতা হিসেবে অবিবাহিত হতে হবে এবং বয়স ১৮-৩০ এর মধ্যে থাকবে। তাদের কোন তারুণ্য নির্ভর সংগঠনে যুক্ত থাকতে হবে এবং শিল্পকলার যে কোন শাখায় পারঙ্গমতা থাকতে হবে।
এর ফলে ব্রুনাইতে এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের একটি এলামনাই নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। এর নাম বেরাতসু (যার মানে হচ্ছে একসাথে থাকা), যা একটি স্থানীয় এনজিও এবং যুবাদের সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত এবং এটি:
এসএসইএওয়াইপি প্রকল্পে অংশ নেয়া ব্রুনাই দারুসসালামের যুবাদের গতিময় চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে তাদের মধ্যে এবং জাপানসহ অন্যান্য নয় আসিয়ান দেশসমুহের অংশগ্রহণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব অটুট রাখে।
আমার কাছে তার অভিজ্ঞতার বিবরণ পড়া:
একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা!! নিপ্পন মারু স্বপ্নের জাহাজ।
এই ধরণের গল্প আসিয়ান দেশসমুহ ও জাপানের ভবিষ্যৎ নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই পোস্টের ছবিগুলো নেয়া হয়েছে বিপিওয়াই ২০০৮ এর সৌজন্যে।
1 টি মন্তব্য
good