আজারবাইযান: আশুরার দিন

গতকাল ছিল আশুরা। এটি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর দৌহিত্র হুসেন এর কারবালার যুদ্ধে শহীদ হওয়া উদযাপন করার জন্য একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রথমেই যে চিত্র অনেকের চোখে ভাসে তা হচ্ছে চেইন দিয়ে নিজেকে আঘাত করা। এই দিবস আজারবাইযানে উদযাপিত হয় অন্যভাবে যেটা একটা শিয়া অধ্যুষিত কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ দক্ষিন ককেশাসের দেশ।

২৭ মান্থস ইন আজারবাইযান এ ব্লগ করা একজন আমেরিকান পিস কর্পস স্বেচ্ছাসেবক এই উৎসব সর্ম্পকে জানতো না। কিন্তু লক্ষ্য করেছে যে কিছু একটা ঘটছে:

স্কুলে যাওয়ার পথে আজকে সকালে আমি পথে অনেক লোক দেখেছি যা স্বাভাবিক না এমন শীতের দিনের জন্য। মানুষ কালো পোশাক পরা , যেটা যদিও পোশাকের স্বাভাবিক পছন্দের রঙ, তবুও মনে হচ্ছিল যে জাতীয় কোন শোক হচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম আজারবাইযানের কোন কালো দিবসের সাথে এটা যুক্ত, কিন্তু আমার সঙ্গীর সাথে কথা বলে আমি বুঝতে পারলাম যে আজকে আশুরা।

ইমাম হুসেন এর জন্য এতো বিশাল শোক পালন আমার কাছে একটু খাপ ছাড়া মনে হয়েছে। কারন গতকাল রাত্রেই আমি আলোচনা করেছিলাম যে এরা কতোটা ধর্ম নিরপেক্ষ। সব থেকে ভালো যে উত্তর আমি দিতে পারি তা হল, আর্মেনিয়ার মতো, সবাই আলাদা যখন ধর্মের ব্যাপার আসে।

থটস অন দ্যা রোড সে সময়ে গাঞ্চায় ভ্রমন করছিল। বাকুতে ফেরার পথে এই ব্লগার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল আর এই উৎসব সর্ম্পকে মন্তব্য করেছেন

আজ একটি বিষন্ন জানুয়ারীর দিন। বলার কি প্রয়োজন আছে যে দিনটি ভেজা আর ঠান্ডা? আমি আজ সকালে একটা স্কার্ফ কিনতে গিয়েছিলাম, আর দেখলাম যে শহরটা বেক্ষাপ্পাভাবে চুপচাপ। দোকান যে সকাল ১০টার আগে খোলে নি সেই ব্যাপারে আমি অবাক হইনি, কিন্তু বাজারও অস্বাভাবিক চুপচাপ ছিল। কোন কাজ ভেতরে চলছিল না, যদিও লোকে শাক, পনীর আর লেবু বিক্রি করছিল বন্ধ দরজার বাইরে। কিছু লোক কাফেতে চা বানাচ্ছিল, কিন্তু টেবিল বাইরে ছিল। জায়গাগুলো মনে হলো বন্ধুদের জন্য, ক্রেতাদের জন্য না। অস্বাভাবিক। আমার মনে হয় বাণিজ্যিক কাজের এই অভাব আজকের শিয়া ছুটি-আশুরার জন্য, হুসেন ইবনে আলির শাহাদাত পালনের জন্য। দোকান বন্ধ থাকায় আমি অবাক হয়েছিলাম, কারন আমি গাঞ্চাকে খুব বেশী শিয়া শহর বলে মনে করিনি, কিন্তু সত্যি কথা যে আমি এই শহরকে খুব ভালো জানি না, এখানে এর আগে মাত্র দুই বার থেকেছি।

[..]

শহরতলীর প্রধান মসজিদের বাইরে ভীড় করে লোক জমা হয়েছে। পুরুষরা ছোট কালো একটা চাবুক দিয়ে প্রথা অনুযায়ী নিজেদেরকে মারছে। আসলে ঠিক নিজেদেরকে চাবুক মারা না- অনেকটা দেখানোর মতো একটা কাজ।

গত বছর উইন্ডো অন ইউরেশিয়াতে লেখার সময়ে পল গোবল বর্ণনা করেছিলেন আজারবাইযানীরা কিভাবে এই অনুষ্ঠান পালন শুরু করছে রক্ত ঝরাবার পরিবর্তে রক্ত দান করে:

আজারবাইযান যেখানে দুই-ত্রিতীয়াংশ মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে শিয়া। আশুরা আলাদা ধরনের একটা সমস্টিগত উদযাপনের দিন। এই পবিত্র দিন যেমন বিশ্বাসীদের কাছে পরিচিত। তবে শিকড় গাড়ছে আরেকটি ধারণা যেখানে ডাক দেয়া হচ্ছে বিশ্বাসীদের বিনা কারনে তাদের রক্ত না ঝরিয়ে রক্ত দরকার এমন শিশুদের জন্য তা দান করার জন্য।

সোভিয়েত আমলেও অনেক শিয়া আজারবাইযানে আশুরা চিরাচরিতভাবে পালন করতো। আর এখনো যদিও কয়েকজন তেমন করেই করে, অনেক বেশী জন ঠিক করেছে বাকুর জুমা গোত্রের প্রথা অনুসরন করতে যারা ১৯৯৯ এ তাদের সদস্যদের উৎসাহ দিয়েছিল তাদের রক্ত দান করে প্রথাগত রক্ত ঝরানোর জন্য।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বাকু কর্তৃপক্ষের সরব একজন সমালোচক ইল্কার ইব্রাহিমোগ্লুনুন ব্লকু একটা সাক্ষাৎকার পোস্ট করেন যেখানে আশুরা কিভাবে পালন করা হবে সে সর্ম্পকে যে দৃশ্যত: পরিবর্তন তাতে সমর্থন জানিয়েছেন। একই সাথে আধুনিক দিনের আজারবাইযানে ইসলাম সর্ম্পকে তার মতামত ও আছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .