গাজা শহর আর ইজরায়েলী এসদেরোত শহরের মধ্যে ব্যবধান মাত্র কয়েক কিলোমিটারের। এক বছর আগে যখন গাজার লোকেরা ইজরায়েলী অবরোধের মধ্যে করুণভাবে দিনাতিপাত করছিল আর এসদেরোত যখন গাজা থেকে আসা রকেটের চলতি লক্ষ্য ছিল, তখন দুইজন লোক এ নিয়ে ব্লগ শুরু করেন; উভয় যায়গা থেকে একটি করে। তখন থেকে তারা তাদের অভিজ্ঞতা আর এই অঞ্চলের বিভিন্ন ঘটনার উপরে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী জানাচ্ছে, যার মধ্যে গত সপ্তাহের ঘটনাবলিও আছে।
গ্রুপ ব্লগ লাইফ মাস্ট গো অন ইন গাজা এন্ড এসদেরোত হচ্ছে গাজায় ‘পিস ম্যান’ আর এসদেরোতে ‘হোপ ম্যানের’ লেখা। মধ্য প্রাচ্যের সমস্যার প্রতি নিবেদিত একটা এনজিওতে কার্যরত ড্যানি গাল এই দুইজনকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর তারা ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ব্লগ শুরু করছেন:
এই ব্লগ দুইজন বন্ধু লিখছেন… ইজরায়েল আর গাজার মধ্যে যে সংঘর্ষ চলছে তা অক্টোবর ২০০০ থেকে প্রবল হয়েছে। অনেকে হতাহত হয়েছেন। দুই দিকের মিডিয়া কাভারেজ পক্ষপাতদুষ্ট। আমাদের ব্লগ ২ জন আসল ব্যক্তি দ্বারা লেখা যারা সীমান্তের দুই দিকে বাস করছে আর নিয়মিত যোগাযোগ করছে।
পিস ম্যান তার সাম্প্রতিক একটি পোস্টে বলছে:
গাজা স্ট্রিপে অপারেশন শুরু হওয়ার পরে, দুই দিনে ৩০০ জন নিহত আর ২০০ জন হারিয়ে গেছে আর ১৬০ জন সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায় আছে।
ইজরায়েল সব পুলিশ স্টেশন আর সরকারী কেন্দ্র ধ্বংস করেছে। পুলিশ, জনগন আর অনেক বাচ্চা এই অপারেশনে নিহত হয়েছে।
গাজায় কি হচ্ছে তা বর্ণনা করা মুশকিল। একটা ভয়ঙ্কর বির্পযয়, যেখানে উড়োজাহাজ সামরিক আর বেসামরিক আর বাচ্চাদের মধ্যে পার্থক্য করে না।এখন গাজার চারপাশে ট্যাঙ্ক ঘুরছে গাজা স্ট্রিপে আক্রমনের প্রস্তুতিতে।
আমি আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে বলছি গাজায় যা ঘটছে তা থামানোর জন্য, আমি যুদ্ধবিরতিতে ফিরে গিয়ে সংঘাত থেকে সরে যেতে চাই। কারন সংঘাত আরো সংঘাত আনবে। আমি পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট করবো।
হোপ ম্যান আমাদেরকে তার দৃষ্টিভঙ্গী জানায়:
অনেকে এসদেরোত ছেড়ে গেছে আর আমার হিসাবে ৫০% এর কম লোক এখন আছে। খুব কম লোক রাস্তায় হাঁটছে আর কোন বাচ্চা কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
এই যুদ্ধ বিশাল একটা ভুল, তবে এটা আশ্চর্যজনক না যে ইজরায়েলের এতো লোক একে সমর্থন করে। চলতি বাস্তবতা যে এসদেরোতে আর অন্যান্য জায়গায় ৮ বছর ধরে রকেট পড়ছে সেটাই একটি ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। অনেকে বছরব্যাপী এই এলাকা একেবারের মতো ছেড়ে গেছে। বাচ্চাদেরকে এমন একটা বাস্তবতায় মানুষ করা অন্যায় আর অবশ্যই অনির্ভরশীল কাজ।
বেশীরভাগ ইজরায়েলী সমাজে এই মত আছে যে, কোন উপায় ছিল না গাজায় আক্রমণ করা ছাড়া আর রকেটগুলো একেবারের মতো থামানো। চলতি পরিস্থিতিতে এটা একটা প্রত্যাশিত মানবিক প্রতিক্রিয়া।
এটা বলার পরে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে এটা একটা বিরাট ভুল যেটাকে পাশ কাটানো যেত। প্রায় ৫ মাস সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ছিল। এই দীর্ঘ সময়ের শান্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে একটা দীর্ঘমেয়াদী সমঝোতায় না এসে, দুই পক্ষ এই সময় ব্যায় করেছে এই যুদ্ধের পরিকল্পনা আর সশস্ত্র হতে। কথোপকথন শুরু করার কোন গভীর চেষ্টা করা হয়নি। ইজরায়েলের অবোরোধ চলেছে আর হামাসের অস্ত্র লুকিয়ে আনাও চলেছে। এটা যুদ্ধবিরতি ছিল কিন্তু কেবলমাত্র পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতির জন্য যেটা এই মুহূর্তে আমরা দেখছি।
এই মুহূর্তে আমি খুবি নিরাশায় আছি। আমার ভয় যে ভূমি আক্রমণ আসছে আর অনেক দু:খ সামনে আছে। ক্রমশ: কোন ধরনের মতৈক্য হয়ত আসবে। আমি আশা করি তা দ্রুত হবে, তবে আমি ভয় পাচ্ছি তা হবে না।
পিস ম্যান আর আমি প্রতিদিন কথা বলি। আমরা একে অপরকে সমর্থন করি আর একে অপরের ভালো থাকা নিয়ে চিন্তা করি। আমি গাজায় অন্যদের সাথেও যোগাযোগ করছি আর আমার পরিস্থিতি তাদেরকে জানাই তাদেরটা শোনার সাথে সাথে। দুই দিকেই অনেক কষ্ট আর ব্যাথা।
আমি আর অন্যরা যা করছি তা হলো গাজায় বন্ধুদের সাথে কথা চালাচ্ছি। আমরা কাজ করি এই কথোপকথনকে গভীর আর প্রশস্ত করতে দুই দিকে আরো বেশী লোক নিয়ে। যুদ্ধের পরের দিন আমরা পথ খুঁজে পেতে চাই একসাথে কাজ করে স্বাভাবিকতা তৈরি করতে। আমরা মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে আর এটা কখনো পাল্টাবে না। আমাদের কথোপকথোনকে প্রশস্ত করা আর যারা কথা বলতে চাচ্ছে তাদের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টি করা খুবই গুরুত্বপূর্ন। তারা যেন আমাদের গল্প, ভয় আর আশা ভাগ করে নিতে পারে। যুদ্ধের পরের দিন আমাদের নতুন একটা শুরু দরকার। আসুন আমরা মানবিকতা আর বিশ্বাসের বীজ বোনা শুরু করি।
সম্প্রতি ফ্রেঞ্চ-জার্মান সাংস্কৃতিক টেলিভিশন স্টেশন আর্টে একটা প্রোজেক্টে হাত দেয় গাজা এসদেরোত নামে যেখানে ছোট ছোট ভিডিও ইজরায়েলী আর ফিলিস্তিনি দল দ্বারা তোলা হয় দৈনিক দুই মাস ধরে, যেখানে গাজার ছয়টি চরিত্র আর এসদেরোতের ছয়টি চরিত্রকে অনুসরণ করা হয়। আপনারা এখানে তার ফল দেখতে পেরেন।
ছবি উইকিপিডিয়া কমন্সের সৌজন্যে।