আমলাতন্ত্র, মানুষের দুর্ভোগ আর সেন্ট পিটার্সবার্গে অনলাইন এক্টিভিজিমের এই গল্পটি শুরু হয় যখন ফেব্রুয়ারী ২০০৬ এ লাইভ জার্নাল (এল যে- একটি ব্লগিং প্লাটফর্ম) ব্যবহারকারী লাচ্ছির মা তার পায়ে আঘাত পান:
[…] তাকে একটি এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় [সিটি হাসপাতালে #২৬ কস্টোয়োস্টো স্ট্রিট], যেখানে সম্পূর্ণ সময়টুকু তিনি বারান্দায় পার করেন। একটি রুমের ভাড়া ২৫৯৯ রুবল [প্রায় ১০০ ডলার]। হাসপাতালের প্রায় সম্পূর্ণ বারান্দা মানুষে ভর্তি ছিল […]
মার্চ ২০০৮ এ এল যে ব্যবহারকারী লাচ্ছি'র মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় ছিলেন – তার একটি ব্যয়বহুল অস্ত্রপচারের প্রয়োজন হয়.
[…]এখন পর্যন্ত এই অস্ত্রপাচারের জন্য দুই বছরের অপেক্ষমান তালিকা আছে। একজন পেনশনভুক্ত মানুষের পক্ষে একটাই সুযোগ – যদি সরকার তাকে কোন ‘কোটা’ দেয় […]
কিন্তু এরকম একটি দরকারী কাগজ সরকার থেকে বের করে আনা খুব একটি সহজ কাজ নয়:
[…]সেইন্ট পিটার্সবার্গ আর লেলিনগ্রাদ অঞ্চলের জন্য কোটা বরাদ্দ হয় বুধবারে, ২৪ রুটনেভ স্ট্রিটের আদালত প্রাঙ্গনে অর্থোপেডিক্স এবং ট্রমাটোলজি মেডিক্যাল সেন্টারে, সকাল ১০ থেকে দুপুর পর্যন্ত। যেহেতু আমার মা আমাকে বিরক্ত করতে ভয় পেতে, তাই আমাকে বলার আগে মা চারবার সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং ব্যর্থ হয়। এজন্য হুইলচেয়ার আর ক্র্যাচ অবলম্বনকারী মানুষগুলো, সেই সাথে তাদের স্বজন এবং বন্ধুরা ওই আদালত প্রাংগনে একটি জায়গার জন্য রাত আড়াইটা থেকে লাইনে দাড়াত। […]
বলা নিস্প্রয়োজন যে এল যে ব্যবহারকারী লাচ্ছি তার মা'কে সাহায্য করে সার্টিফিকেট পাইয়ে দিতে এর সাথে যুক্ত হবার সিন্ধান্ত নেয়। যেভাবে হয়েছিল:
[…]ভোর ৫ টায় গিয়ে শীতের জ্যাকেট পরা আমি ৩০ জনের ভিতরেও থাকতে পারলাম না। অন্ধকারে মানুষ ক্র্যাচে, হুইল চেয়ারে করে দাঁড়িয়ে ছিল এবং একে অন্যকে চিনত। […] সর্বত্রই গাড়ী পার্ক করা ছিল। প্রত্যেক মানুষই একে অন্যকে সাহায্য করছিল যেমন করেছিল লেনিনগ্রাদ দখল করার সময়, অপরিচিত মানুষকে নিজেদের গাড়ীতে বসিয়ে উষ্ণ হতে সাহায্য করছিল[…] ঠান্ডা, অন্ধকার, কোন শৌচাগার নেই, মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল […]
মা আমার জায়গায় আসল সাড়ে আটটায়। ঐ সময়ের মাঝে আমি ঠান্ডায় জমে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে তিনি তার কাগজ ১১ ৫০ মিনিটে পেয়ে যান, বন্ধ হওয়ার মাত্র ১০ মিনিট আগে। পঞ্চম চেষ্টা সফল ছিল […]
এই অগ্নিপরীক্ষা এল যে ব্যবহারকারী লাচ্ছিকে অন্যদেরএবং মিডিয়াকে প্রতিবন্ধী প্রবীন মানুষদের এই অমানুষিক যন্ত্রণার ব্যাপারটি নিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জাগ্রত করল – তার ব্লগের মাধ্যমে:
[…]আমাকে বলুন – এমন কোন চিকিৎসক আছেন যিনি আমাকে দরকারী সাইটের ঠিকানা দিতে পারবেন যেখানে আমি এই সম্পর্কে লিখতে পারব অথবা এমন কোন সাংবাদিক যিনি আমার সাথে পরবর্তী বুধবারে যোগ দিয়ে এই দুরাবস্থা সম্পর্কে লিখবেন।
হ্যাঁ, আমার মা তার প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট পেয়ে গেছেন। কিন্তু আমি জানি অন্য মানুষদের এখানে দাঁড়াতে কেমন লাগে – যারা আমার পেছনে ছিলেন। ফ্লাশ মব সবসময়ই ভাল ব্যাপার, কিন্তু আমরা আসল অবস্থায় সাহায্য করতে পারি, মজা করার জন্য নয়? আমি সেখানে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত যাব এবং অন্তত গরম চা নিয়ে যাব ওই মানুষগুলোর জন্য।
[…]
আসল দৃশ্য হল – কফি বা চা কাজ করবে না, তারা তা পান করতে ভয় পান। কারন তারা অফিস শুরু হওয়ার আগে ৮/৯ ঘন্টা ধরে ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে আছেন এবং সেখানে কোন শৌচাগার নেই বা কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। […]
উপর্যুক্ত উক্তিটি পোস্টটিতে অক্টোবরের ১০ তারিখে প্রকাশ হয়। ৫ দিন পর অক্টোবর ১৫ তে এল যে ব্যবহারকারী নিসভস্কি এবং লাচ্চির উদ্যোগে সেইন্টপিটার্সবার্গের অর্থপেডিক্স এবং ট্রমা সেন্টার থেকে একটি ছবি পাওয়া যায়, যা অক্টোবরের ১৯ তারিখ এল যে ব্যবহারকারী নিসভস্কি'র ব্লগে প্রকাশ করা হয়। “অন সেল্ফ রেসপেক্ট” নামক পোস্টটি ইয়ানডেক্স ব্লগস পোর্টালের শীর্ষ ৩০ এর মাঝে জায়গা করে নেয়। মিডিয়া সেন্টারের ভিতরে এবং বাইরে দাঁড়ানো'র ১৬ টি ছবির বার্তা নিচে একটি ছোট অংশে দেয়া হল:
[…] [একজন বয়ষ্ক মহিলার ছবি যিনি রুমাল দিয়ে তার মুখ মুছছেন]
ইয়ারশভ তামারা গ্রিগরিয়েভনা […] ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন শল্য চিকিৎসক। তিনি হাঁটু এবং মেরুদন্ডের আর্থারাইটিসে ভুগছিলেন। এটি তার তৃতীয় চেষ্টা ছিল। তিনি বলেন: আমি ৮ টার ১০-১৫ মিনিট আগে এসেছি। আমি এখন ওয়েটিং লিস্টের ৪০ এর দিকে আছি। যখন আমি প্রথমবার এসেছিলাম, আমি তখন দেরী করে ফেলেছিলাম তারপরও অপেক্ষা করেছিলাম। দ্বিতীয়বার আমার সময় এলে তারা রোগী দেখা বন্ধ করে দেয় – শল্যচিকিৎসক আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়। আমাকে বিশ্রাম নিতে বাধ্য করা হয় – অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। এখানে দাঁড়ানো আমার জন্য অপমানজনক। আমি সোভিয়েত আমলে কাজ করেছিলাম এবং কখনও চিন্তাও করিনি যে এটি সম্ভব। এমনকি লেনিনগ্রাদ দখলের সময়ও আমি সেখান থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। আমরা রুটির লাইনে দাঁড়ানোর সময়ও উষ্ণ ছিলাম – তারা অন্তত আমাদের দোকানের ভিতর ঢুকতে দিত । কিন্তু তখন আমার বয়স ১৪ ছিল এবং জীবনটা সাধারণের চেয়ে আনন্দের ছিল […]
এই গল্পটি কয়েকটি স্থানীয় মাধ্যমে চলে আসে। এল যে ব্যবহারকারী বেনামী ফ্রম রুস সেই সাংবাদিকদের একজন যারা অক্টোবরের ১৫ তারিখ নিসভস্কি এবং লাচ্ছির সাথে মেডিক্যাল সেন্টারে ছিল এবং তিনি এখানে লিখেছেন তাদের সেই জনসমর্থনের উদ্যোগের কথা:
[…]কয়েকটি লেখা প্রকাশের পর, সেন্টারটির প্রশাসন দেখার সময় বাড়াতে সম্মত হয়; এমনকি সপ্তাহের দুইবার রোগী দেখার ব্যাপারেও; একবারেই নয়, যা হওয়ার কথা ছিল […]