মালায়েশিয়া: মুখোশধারী রহস্যময় লোকের জন্য প্রশংসা

সাংবাদিক আর বিপ্লবী কর্মী মুহাম্মাদ শুক্রি হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত মাসে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ২৮ বছর। মালয়েশিয়ার সাপ্তাহিক আলোক মিছিল প্রতিবাদে তিনি সব সময়ে উপস্থিত থাকতেন। তাকে সবাই চিনত কারন তিনি একটি মুখোশ পরতেন। তার হঠাৎ মৃত্যু তার সহকর্মী আর ব্লগারদেরকে বিষ্মিত করেছে।

শুক্রি

আনিলনেট্টো বলছেন যে মালায়শিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নীতির বিরুদ্ধে সাপ্তাহিক বিক্ষোভের সময়ে শুক্রির সাথে তার দেখা হয়েছিল:

“যদিও ব্যক্তিগতভাবে তার সম্পর্কে আমি বেশী কিছু জানি না, শুক্রি সব সময়ে তার মুখে একটা মুখোশ পরে আসতেন। হ্যা, হ্যালোউইনের মতো সত্যিকারের মুখোশ। অদ্ভুত কিন্তু গত রবিবারে সবাই তাকে কোন কারনে লক্ষ্য করেছে। তিনি হেঁটে বেড়াতেন আর লোকের সাথে মিশতেন। আমরা তার হাল্কা মেজাজের, মজায় ভরা আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। দৈবাচিৎভাবে যখন জোররো লোকের সাথে কথা বলছিল তখন তিনি সেখানে খাঁড়া হয়ে বসে গিয়েছিলেন। জোররো, প্রথম এবং দু:খজনকভাবে শেষ বারের মতো সবার সাথে শুক্রিকে পরিচিত করে দেয়।”

এস্ত্রেলিতা শুক্রিকে শ্রদ্ধা জানান:

“আজকের আলোকমিছিল শুক্রি হোসেনকে উৎসর্গ করা হয়। কেউ কেউ এই সুযোগে তার সম্পর্কে দুই এক কথা বলেন। এটা অদ্ভুত একটা অনুভুতি ছিল যেন একজন বন্ধু হারানোর সাক্ষী হয়েছিলাম আমরা। আমি তাকে চিনতাম না, চিনতে হয়নি। শুধুমাত্র তার সম্পর্কে বলা কথা শুনেই বোঝা যেত যে তিনি ‘বিশেষ'। তিনি যা বিশ্বাস করে তার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন আর তার জীবন তার ইচ্ছা মতো পরিচালনা করেছেন। আমাদের মধ্য থেকে বেশী কেউ এটা করতে পারি না- ১০০% অন্তত না- অন্তত যে ভাবে শুক্রি করেছে সেই ভাবে! সেই অর্থে, শুক্রি নিজের কাছে সৎ ছিলেন আর আমি খুব দু:খ বোধ করছি না যে সে এতো অল্প বয়সে মারা গেল। সে সম্পূর্ণ জীবন বেঁচেছে আর তার ২৮ বছরের জীবনের প্রতি সেকেন্ডের মূল্য আছে! তাকে লোকে মনে রাখবে। সে পৃথিবীতে তার চিহ্ন রেখেছে।”

শুক্রি কুয়ালালামপুরে “বুকে কোন বোমা না” প্রচারণার আযোজন করেছিলেন। তার অন্যান্য ব্লগ হল: সেরুয়ান কাইদিলায়োন আর কুয়ালা তেরেংগানু উন্তাক পাকাতান রাক্যাত। তার ফ্লিকারের পাতা আর ফেসবুকের প্রোফাইলও দেখতে পারেন।


ছবি: জিরো মাস্কড ব্লগের সৌজন্যে

মালয় মেল শুক্রিকে একজন সাহসী ব্যক্তি হিসাবে অভিবাদন জানিয়েছে:

“ যা উল্লেখযোগ্য তা হলো যে কোন মূল্যে, তিনি একটা’ কল্পবাস্তব’ অস্তিত্বের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছেন। তিনি যে সত্য বিশ্বাস করতেন সেটার মধ্য দিয়েই শুধু তিনি গিয়েছেন। অনেকেই বলে যে এগুলো তাদেরও বিশ্বাস শুক্রি আরো বেশি ‘সাহসী’ ছিলেন কারন প্রথা বহির্ভুতভাবে তিনি তার আকাঙ্খা তুলে ধরেছেন।”

রাইসকুকার শুক্রিকে স্মরণ করেছে:

“আমরা সবাই শুক্রিকে সেই ব্যক্তি হিসাবে চিনি যে কোথাও তার ল্যাপটপ ছাড়া যেত না, আর তার যখন সুযোগ এলো, সে সাথে সাথে অনলাইন হতো, যা সে করতে পছন্দ করতো তাই করতো, যার মধ্যে লোকের পাতায় অদ্ভুত মন্তব্য রাখা, যার মুল লক্ষ্য ছিল রাগানো আর খেপানো।

বেশ কয়েকবার শুক্রিকে মারাও হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে তেরাতাক দাংদুত কনসার্টের ঘটনার কথা আমাদের সবার মনে আছে, যখন সে বেশ কয়েকটা মাস্তানকে খেপিয়েছিল এবং তারপরে তাদের কনসার্টে গিয়েছিল। তাকে বাউ বাউ কাফেতে ঘুষি মারা হয়। ”

ই-কন্টারিও বিশ্বাস করে শুক্রি একটি বর্ণময় ওবং উদ্ভাবনশীল জীবন যাপন করে গেছেন:

“এই যুবক আমাদের সময়কার বিভিন্ন চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে হিমসিম খেত। আমি বুঝতে পেরেছি যে সে জীবনের নানা বৈষম্য ও প্রতিকুলতা দুর করার চেষ্টা করত। তার লেখায় উঠে আসে বিভিন্ন বিষয় যেমন ধর্ম, রাজনীতি, দর্শন ইত্যাদি। তার মাথা এইসব নিয়ে দ্বন্দ্বে পূর্ণ থাকত।

শুক্রি একটি বর্ণময় ওবং উদ্ভাবনশীল জীবন যাপন করে গেছে এবং তার পরিচিতদের কাছে অনেক স্মৃতি রেখে গেছে। তার বেদনা এবং দ্বন্দ্বগুলোও আমাদের প্রভাবিত করে। তার নিরবতা আমাদের নিজেদের জীবন এবং সংকটময় যুবাদের দিকে তাকাতে বাধ্য করে। তার চলে যাওয়া আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে অস্থির জীবন ভঙ্গুর হয়।”

শুক্রির এই ইউটিউব ভিডিও ক্লিপ দেখুন:

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .