অনেক দিন পর্যন্ত ইরাকী সাংবাদিক মুন্তাদার আল-জাঈদিকে মানুষ চিনবে জুতা ছোঁড়া [1] বীর হিসাবে। গত রবিবার তিনি সমর্থ হয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে বাগদাদে একজোড়া জুতা ছুঁড়ে মারতে।
সেই জুতোজোড়া এখন অমূল্য। একজন সৌদি ব্যবসায়ী একপাটি জুতার জন্য ১০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার [2] দিতে চেয়েছেন।
বিশ্বের অনেক মানুষ এই জুতা ছোঁড়ার ঘটনাকে নায়কোচিত কাজ বলে সমর্থন করেছেন, বিশেষ করে যারা বিদায়ী আমেরিকান প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র নীতির বিরোধীতা করেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ব্লগার আর সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া কি?
সিঙ্গাপুর থেকে হাফরিজ [3] মনে করেন আল-জাঈদির উচিৎ বিশ্বের প্রেসিডেন্ট হওয়া:
“এখনো কি কেউ আছেন যিনি এই জুতা ছোঁড়ার ঘটনাতে আলোড়িত হননি? এই মুন্তাদার আল-জাঈদি বিশ্বব্যাপী নায়কে পরিণত হয়েছেন। তিনি একজন বিখ্যাত ব্যক্তি। তার উচিত বিশ্বের প্রেসিডেন্ট হওয়া।”
সিঙ্গাপুর থেকে কাটাক [4] জানিয়েছেন যে এই ঘটনা আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতা তুলে ধরে:
“বিদেশে অজনপ্রিয় ও অপদস্থ হওয়া সাধারণত: একজনের বিদায়ের সময় খুব ভালো একটি ছাপ রাখে না বিশেষ করে যাকে পৃথিবীর নেতা বলা হয়।
এই ঘটনা দেখায় কিরকম ঘৃণা আর দ্বন্দ্ব জমা হয়েছিল স্থানীয় মানুষের মধ্যে যার বেশীরভাগ তাদেরকে সহ্য করতে হয়েছিল তার পররাষ্ট্র নীতির সঠিক মূল্যায়নের ব্যর্থতার কারনে, বিশেষ করে ২০০৩ সালে ইরাকের উপর আক্রমণ।”
আর একজন সিঙ্গাপুরের ব্লগার, মি: ব্রাউন.কম প্রশ্ন তুলেছেন কেন সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা [5] জুতাগুলো ধরতে পারেনি:
“এটা ভাবতে বাধ্য করে যে সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা যেহেতু দুটি বা নিদেনপক্ষে একটি উড়ন্ত জুতা থামাতে পারেন নি, তাহলে আরো ভয়ঙ্কর অস্ত্র থেকে প্রেসিডেন্ট বুশকে বাঁচানোর তাদের পরিকল্পনা কি ছিল?
নাকি তারা ইচ্ছা করে এই জুতোগুলোকে উড়ে যেতে দিয়েছে? হুমমমম…”
ফিলিপিনো সাংবাদিক কার্লোস কোন্ডে [6] একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে জুতা ছোঁড়ার ঘটনাটা বিশ্লেষণ করেছেন:
“তিনি যা করেছেন তা হলো সবার আগে তিনি যে একজন নাগরিক তা দেখিয়েছেন, যে তিনিও তার সহ ইরাকীদের কষ্ট অনুভব করেন।
আল জাঈদি একজন সাংবাদিক। তিনি অন্যদের থেকে সম্ভবত ইরাকের কাহিনী আরো বেশী জানেন। কিন্তু সব কিছুর উপরে তিনি একজন ইরাকী নাগরিক। তিনি বাগদাদের অন্যান্য সাংবাদিকদের থেকে বেশী হয়তো তার মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারেন। আমরা কি আসলেই আশা করেছিলাম যে সে ওখানে চুপ করে বসে দেখবে বুশকে মিথ্যা কথা বলতে আর ইরাকে যারা আমেরিকার আগ্রাসনের কারনে দুর্ভোগ পেয়েছে তাদের স্মৃতিকে অসম্মান করতে?”
ফিলিপাইন্স থেকে ক-ব্লগ [7] আল জাঈদির উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে:
“আল-জাঈদি যা করেছে তা কি ঠিক? এভাবে বলি- যদি আপনার দেশ ধ্বংস হতো একটা যুদ্ধে যা শুধুমাত্র ভিত্তিহীন দাবি দিয়ে যথার্থ দেখানো হয় (মারনঘাতী অস্ত্র- ডাব্লিউ এমডি); যদি কোটি কোটি দেশবাসী এর কারনে মারা যায়, যদি বিদেশী আগ্রাসনকারী এখনো আপনার দেশে থাকে; আর যদি এই সব কিছুর পিছনের মাথা (এখন এটা একটা ভুল কথায় পরিণত হচ্ছে) আপনার দেশে এসে বলতে থাকে যে সে ঠিক ছিল, আপনারও কি একই ধরনের রাগ হবে না যা এই সাংবাদিকের হয়েছিল?
টেলিভিশনে আমি যা দেখেছি তা দেখে আমি হতবাক, আর আমি যখন এটা আবার ইউটিউবে দেখেছি তখনো হতভম্ব ছিলাম। আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছি যে একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সাথে এমন ব্যবহার কি করে হয়। কিন্তু নিজেকে যখন আমি আল-জাঈদির জায়গায় রাখি আমি তাকে তিরষ্কার করতে পারিনা। আসলে, ইরাকী সাংবাদিককে নিয়ে আমার একমাত্র সমস্যা হলো তার লক্ষ্য।”
ইন্দোনেশিয়া থেকে আরিফ [8] লিখেছেন যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট- মনোনীত বারাক ওবামাকে আমেরিকার ভাবমূর্তী পুনরুদ্ধার করতে হবে যা তার পূর্বসূরীরা ধ্বংস করেছেন:
“পৃথিবীর বুকে ঘৃণা থেকে গেছে। জুতা ছোঁড়া শুধুমাত্র পৃথিবীর ঘৃণার প্রকাশ। মনে হয় বারাক ওবামাকে জর্জ ওয়াকার বুশ আমেরিকার যে ভাবমূর্তী নষ্ট করেছে তা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
জুতো মারা কিছুই না। কিন্তু বুশ ভাববে যে সে খারাপ ভাবমূর্তী আর ঘৃণা সৃষ্টি করেছে। বুশ ইরাকের প্রাচীন নিদর্শনও ধ্বংস করেছে। সে অর্থনৈতিক প্রাপ্তি ধ্বংস করেছে। সে আমাদের কাছে মিথ্যা বলেছে। ইরাকে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কোন অস্ত্র নেই।”
হয়তো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খারাপ প্রতিক্রিয়া আসবে ধরে নিয়ে, মালায়শিয়া থেকে সালাক [9] ভয়ে আছেন যে “একদিন হয়ত আমাদের জুতোর জন্য আমাদেরকে লাইসেন্স নিতে হবে।”
অনেক দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ব্লগাররা ঐসব ফ্লাশ-নির্ভর খেলাতে মজা পেয়েছেন যেগুলো জুতো ছোঁড়ার ঘটনার পর তৈরী করা হয়েছে। এরকম দুটি খেলার ভিডিও স্যাম্পল নীচে দেয়া হলো: