২০০৮ সালের মার্চ মাসে কেনিয়ার বিশাল কর্পোরেট কোম্পানী ইস্ট আফ্রিকান ব্রিউয়ারিজ লিমিটেড নতুন একটা এল্কোহলবিহীন পানীয় উৎপাদন শুরু করেছে আল্ভারো নামে। তাদের জনপ্রিয় পণ্যের মধ্যে টাস্কার বিয়ার রয়েছে। নতুন এই মল্ট সম্বলিত পানীয় আল্ভারোকে শুরুতেই সফল ধরে নেয়া হয়েছে কিন্তু এটি হয়তো স্থানীয় জুস উৎপাদকদের বাজার দখলের কারন হতে পারে, কিন্তু আরো বেশী নিশ্চয়ই প্রভাব রাখবে কোকা কোলার বাজারের উপর যারা স্থানীয় সোডার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। বাজারে আসার পর পরই আল্ভারো আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে কেনিয়ার সংসদে, সরকারী আফিসে আর অবশ্যই কেনিয়ার অনলাইন কমিউনিটিগুলোতে। আমরা কেনিয়ান ব্লগারদের কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরছি।
ওয়াঞ্জিকু আনলিমিটেড এর শিকো-মাসা আল্ভারোর আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন:
‘একটা শব্দও না উচ্চারণ করে অনেক কিছু বোঝানো” এই বাক্যটি ইস্ট আফ্রিকান ব্রিয়ারীর নতুন বাজারে আসা পণ্য আল্ভারোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। স্টাইলিশ সবুজ বোতলে এর একটা পরিশীলিত ও আকর্ষণীয় চেহারা রয়েছে যা ২৪-৩৫ বছর বয়সীদের বেশ পছন্দের। মূলত: এই বয়সশ্রেনীর উদ্দেশ্যেই এটাকে বাজারে ছাড়া হয়েছে। আনারস আর পিয়ার ফ্লেভারে উৎপাদিত এই পণ্য বাজারে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে আর ইতোমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার তিনগুণ বেশী বিক্রি হচ্ছে। পাব আর সুপারমার্কেটে বলা হচ্ছে যে এই পানীয় তাক থেকে যেন উড়ে যাচ্ছে।
সায়রা পোস্টে একটা মন্তব্য রেখেছেন কোকা কোলার প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে:
অবশই কোক এখন বিপদের মধ্যে আছে আর এখন একটা মজার কর্পোরেট যুদ্ধ দেখা যাবে। এইবার তাদের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসার কাজ চালানো একটু কঠিন হতে পারে ..
রাফিকি কেনিয়া, অবশ্য আল্ভারোকে প্রাকৃতিক পণ্য হিসাবে বলায় অখুশী হয়েছেন:
আল্ভারো দুইটা স্বাদে আসে: আনারস আর পিয়ার। হ্যা, অবশ্যই ফ্লেভার। আর এখানেই সমস্যা, যেহেতু ফ্লেভারের ব্যাপারে প্রাকৃতিক বলে কিছু নেই। আল্ভারো স্বাদে অনন্য হতে পারে- কিন্তু প্রাকৃতিক একেবারেই না।
মার্কেটিং ব্লগ ব্রান্ডকেমিস্ট্রি আল্ভারোর সফলতা নিয়ে লিখেছে, যা এরই মধ্যে ৭ মিলিয়ন বোতল বিক্রি হয়ে গেছে:
… কোকা কোলা কি করবে আল্ভারোর উঠতি বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য? এই পযন্ত বার্ন নামে একটা এনার্জি পানীয় বাজারে ছেড়েছে কোকা কোলা আর একটা ৫০ মিলিয়ন শিলিং প্রোমোশন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়না এতে বাজারে আল্ভারোর প্রসার বিঘ্নিত হবে। এখন সময় দেখা আর অপেক্ষা করার কিন্তু প্রথম বারের মতো ইএবিএল [পূর্ব আফ্রিকান ব্রিউয়ারী] এল্কোহলবিহীন পানীয় ঠিকমতো তৈরি করতে পেরেছে। কয়েকজন যাজক যেমন সম্প্রতি বলেছেন যে এই দেশের খ্রীষ্টানরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিল ইএবিএলের টেবিল থেকে খাওয়ার জন্য, তাদের অপেক্ষা বেশ ভালোভাবেই পুরস্কৃত হয়েছে আল্ভারোর মাধ্যমে।
আমি শুধু ভাবছি যে কোকা কোলা কেমন করে আল্ভারোর উত্থানকে সাম্লাবে… আমার ধারণা সময় বলে দেবে।
প্রপ৪জি৪এন্ড৪কালি কোকা কোলার বিরূদ্ধের পোস্টে একটা মন্তব্য রেখেছেন:
কোকা কোলার বিতরণ ব্যবস্থা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তারা বাজার তাদের অংশ বজায় রাখে বিক্রেতাদের জোর করে শুধুমাত্র তাদের পণ্য দোকানে রাখার শর্তে। কোন ধরনের বাজারজাতকরন বা বিনিয়োগ প্রতিদ্বন্দ্বীকে সাহায্য করতে পারবে না। আপনার মনে হয় আপনার কাছে অন্য উপায় থাকে? আপনি পছন্দ করেন বলেই কোকা কোলার পণ্য পান করেন? এটা করেন কারন এটা সব জায়গায় আছে আর হাতের কাছে একমাত্র একেই পাওয়া যায়।
গত জুলাইতে, আল্ভারো বিপদের মধ্যে পড়েছিল যখন কেনিয়ার সংসদে দাবী করা হয়েছিল যে এই পানীয়তে এল্কোহল আছে যার ফলে স্কুলের বাচ্চারা রায়ট করেছিল যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব ফেলে:
আল্ভারো সম্প্রতি সংসদে নিজের নাম শুনতে পায় যখন মনোনীত এমপি রাশেল শেবাশ শিল্পমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন সঠিক ভাবে স্বীকার করতে বা না বলতে যে এই পানীয়তে এল্কোহল নেই। তার দাবীর সমর্থনে, তিনি জানান যে স্কুলের ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষার ফলে দেখা গেছে যে এই পানীয়তে এল্কোহলের ছোঁয়া পাওয়া গেছে। ইয়াট্টার এমপি চালাস কিলোঞ্জো যোগ করেন যে এই পানীয় যদি সূর্যের আলোয় একঘন্টা রাখা হয় এটা এল্কোহলিক হয়ে যায় বা এতে এল্কোহলের ছোঁয়া পাওয়া যায়।
কয়েকজন এই পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানান:
আমি সংসদের বিতর্ক নিয়ে হাসতাম যদি না এটা এতো বিশ্রী ধরনের অদ্ভুত হতো, আমি ভাবছি কেন আমাদের বেশী বেতন পাওয়া এমপিরা করদাতাদের সৌজন্যে গড়া গবেষণার জায়গার ব্যবহার ঠিকমত করতে পারেন না?
আমি সংবাদে যখন এই বিতর্কের ব্যাপারে শুনলাম আমি প্রায় আমার রেডিও টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে ফেলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু যখন দেখলাম এটা খারাপ হবে তখন তা বন্ধ করে দিলাম!
আল্ভারোকে মল্ট বেইজড এল্কোহলবিহীন পানীয় বলা হচ্ছে আর এটা জানা যায় যে মল্ট বেজড এল্কোহলবিহীন পানীয় পৃথিবীর কোথাও বিতর্কের উর্ধ্বে ছিলনা।
কোকা কোলা শেষ পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় সাড়া দিয়েছে আর নভেম্বর ২০০৮ এ তারা আল্ভারোর সমমানের নোভিদা নামে একটা পানীয় বাজারজাত করেছে। রাফিকি কেনিয়া জানিয়েছেন যে সেটা স্বাদে বেশী ভালো:
নভিদা হচ্ছে পর্তুগীজ ভাষায় ‘নতুন জীবন'। আর এখন আপনি এই নতুন জীবন নাইরোবিতে পেতে পারেন মাত্র ২৫ ববের বিনিময়ে! নভিদা তিনটা ফ্লেভারে পাওয়া যায়: আনারস, আপেল আর ট্রপিকাল।
স্বাদের ব্যাপারে তুলনা করলে, আমি আমার নভিদা আনারস আল্ভারো আনারসের মতো বেশ তাজা করার মতো লেগেছে, হয়তো একটু বেশী মিষ্টি।
স্বীকৃত আল্ভারো ভক্ত ল্যারিম্যাডস নভিদা নিয়ে অভিভূত না:
নভিদা আনারস একেবারে আল্ভারোর মতো খেতে! শুধু আল্ভারো থেকে ৩০ মিলি কম যা ৩৩০ মিলি বোতলে আসে। তাহলে এটা নিয়ে এত কেন হৈ চৈ?
স্টক্সকেনিয়া নামক বিনিয়োগ বিষয়ক ডিসকাশন ফোরামে একটা থ্রেডের বিষয় হচ্ছে নভিদা বনাম আল্ভারো, একটা আলোচনা ফোরাম শেয়ার আর বিনিয়োগ বিষয় নিয়ে, আর এখানে অনেক ধরনের মতামত ছিল:
সিএমকে:
কোকা কোলা আল্ভারোর ‘কার্বন কপি’ বাজারজাত করছে তাদের বাজারের ক্ষতি এড়াবার জন্য
আলি বাবা:
আপনারা আপনাদের পানীয় ইএবিএল আর কোক থেকে নেন, আমার মতো অন্যরা যারা এল্কোহল জাতীয় পানীয় পান করেনা, সোডা আর কোমল পানীয় পান করেনা, আমরা এখনো অপেক্ষা করছি আমাদের পছন্দের পানীয় প্রস্তুত করবে এই আশায়।
গর্ডন গেক্কো:
আমি ধারনা করছি যে এই দুই ব্রান্ড সম্পূর্ণ নতুন একটা বাজারের কাছে আবেদন রাখছে- যেমন যারা বারে যায় কিন্তু এল্কোহল পান করেনা। আমি আমার বাচ্চাদের কোক থেকে নভিদা পান করতে দেখতে পাচ্ছি না, বা কিওস্কের পিপাসিত লোকটাকেও মূল্যবোধ রক্ষার খাতিরে পরিবর্তিত হতে দেখছি না (এইসব পানীয় ২০০ মিলি কম আর ১০ মূদ্রা মূল্য বেশী)।
ম্যাজিক:
যদিও আমি ইএবিএলকে সম্মান করি- আমি শুধু মনে করি কোকা কোলা- তাদের টাকা, অভিজ্ঞতা দিয়ে কোমল পানীয় এর বাজারে জিতবে। কিন্তু- আমি সময়ের সাথে ভবিষ্যৎবাণী করছি- সোডা জনপ্রিয় হবে না- যার জন্য তারা নতুন পন্যের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আমার ধারণা হলো দীর্ঘসূত্রে ইএবিএল জিতবে।