ফাইনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া সম্প্রতি মাদাগাস্কারের অর্ধেক চাষযোগ্য ভূমি লিজ নিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় মালাগাসী ব্লগোস্ফিয়ারে ভূমি স্বাধীনতা আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো অবশ্য পরিষ্কার না যে ভূমি চুক্তি দুই দেশের মধ্যে সই হয়েছে কিনা। এর মধ্যে ব্লগাররা তর্ক করছে যে এই ধরনের চুক্তি ‘নব ঔপনেশিকবাদ‘ হিসাবে ধরা যায় কিনা।
এখানে এখন পযন্ত যা জানা গেছে তার একটা চিত্র তুলে ধরা হলো।
নভেম্বরের ১৯ তারিখে ফাইনান্সিয়াল টাইমস দক্ষিন কোরিয়ার ডেইউ লজিস্টিক কোম্পানি আর মালাগাসী সরকারের মধ্যে এই চুক্তির ব্যাপারটা তুলে ধরে ।
গ্লোবাল ড্যাশবোর্ড ব্লগে এলেক্স ইভান্স যা জানা গেছে তার সারসংক্ষেপ দিয়েছেন:
দক্ষিণ কোরিয়া সবে মাত্র মাদাগাস্কারের সাথে ৯৯ বছরের একটা চুক্তি করেছে যেখানে তারা বেলজিয়ামের অর্ধেক আয়তনের ভূমি লিজ নেবে পাম তেল চাষের জন্য যা দক্ষিণ কোরিয়ায় এই আনাজের চাহিদার অন্তত অর্ধেক মেটাবে। বিডওয়েলস এগ্রিবিজনেস এর পরামর্শক কার্ল আটকিন্স বলেছেন যে মাদাগাস্কারে ডেইউ লজিস্টিক্সের এই লগ্নি তার দেখা সব থেকে বড়। “এই প্রকল্প আমাকে অবাক করে না, যেহেতু অনেক দেশই খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু এর পরিধি আমাকে অবাক করেছে।”
কয়েক ঘন্টা পরে, ফাইনান্সিয়াল টাইমসের একটা ফলো আপ আর্টিক্যাল যোগ করেছে যে ডেইউ লজিস্টিক্স লিজের জন্য কোন ফিস দেবে না, বরং তারা ভূমি চাষ আর উন্নয়নের জন্য প্রযোজনীয় সাহায্য করবে।
এলেক্স ইভান্স, দ্বিতীয় প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে তিনি যা ভেবেছিলেন খবর তার থেকেও খারাপ:
কয়েক ঘন্টা পরে, এই কাহিনীর সম্পুর্ণ নতুন একটা দিক উন্মোচিত হয়। ভেবে দেখুন তো দক্ষিণ কোরিয়া ৯৯ বছরের লিজের জন্য কতো দিয়েছে? উত্তর: শুন্য, কিছুই না। এক পয়সা না। মাদাগাস্কারের জন্য মূল লাভ, ডেইউ এর ভাষ্যকারের বক্তব্য অনুযায়ী? “ওখানে চাষাবাদ করার ফলে আমরা তাদের জন্য কাজের সুযোগ করে দেবো, যা মাদাগাস্কারের জন্য ভালো হবে।” এই দেশে ৩.৫% লোক ডাব্লুএফপি এর খাদ্য সাহায্যের উপর আছে…
অন্য দিকে দক্ষিন কোরিয়ার লাভ:
“ওখানে আমরা আনাজ লাগাতে চাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এই বিশ্বে খাদ্য অস্ত্র হতে পারে,” বলেছেন ডেউ এর ম্যানেজার হং জং-ওয়ান। “আমরা ফসল অন্য দেশে রপ্তানী করতে পারি বা খাদ্য সংকটের সময়ে কোরিয়ায় আনতে পারি।”
ছবি ফোকো মাদাগাস্কারের সৌজন্যে
এই ব্যাপারে মালাগাসী সরকারের সরকারী ভাষ্য এখনো পাবার অপেক্ষায়। রয়টার্স জানিয়েছে যে এই চুক্তি চুড়ান্ত হতে এখনো অনেক বাকি। ডেইউ লজিস্টিক্স অবশ্য অনেক বিবৃতি দিয়েছে যা এইসব প্রতিবেদনের সততাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে।
রবার্ট কোয়েহলার, সিউল থেকে যিনি দ্যা মারমটস হোলে ব্লগ করেন, দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানীর সাথে বিবাদের বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন:
মেইল গিওঙজে আর একটা প্রতিবেদনে বলেছে যে বিশেষজ্ঞরা মনে করে ফাইনান্সিয়াল টাইমস প্রতিবেদনে ‘নব ঔপনেবেশিকবাদ ‘ আর ‘ডাকাত’ সম্বলিত উস্কানীমূলক অনেক কথা ছিল যা ইউরোপকে বাদ দিয়ে আফ্রিকায় এশিয়ার বড় ধরনের উপস্থিতির বিরুদ্ধে সতর্কবাণী হিসেবেই করা হয়েছে। খবরে ডেইউ এর একজন লজিস্টিক অফিসারের উদ্ধৃতি অবশ্য ছিল যিনি বলেছিলেন যে এই ব্যাপারে মাদাগাস্কার বেশ আবেগপ্রবণ কারন তুলনা করলে যখন চীন লগ্নি করে তখন তারা শুধু নিজেদের লাভের পিছনে ছোটে।
জুঙ্গাংগ ইল্বো পত্রিকা ইতোমধ্যে এফটিকে আক্রমন করে একটা সম্পাদকীয় লিখেছে এটা জিজ্ঞাসা করে যে এই পত্রিকা মাদাগাস্কারে (বায়োডিজেল জ্বালানীর উৎপাদনকারী) ব্রিটিশ জাত্রোফা ফার্মগুলোর দিকে না তাকিয়ে আর দ্বীপে আরও ফরাসী ক্ষেত না দেখে কেন শুধু একটা কোরিয়ান কোম্পানীর পিছনে পড়েছে। আর তা ছাড়া যে ভূমি ডেইউ নিচ্ছে তা অনুন্নত, সেখানে চাষাবাদের উপযোগী করা নতুন ক্ষেত কাজের সুযোগ করে দেবে, আর মাদাগাস্কার সরকার ক্ষেতের লাভ থেকে কর বাবদ ৩০% কেটে নেবে।”
মালাগাসী ব্লগগুলোতে এই ভূমি চুক্তি নিয়ে উত্তপ্ত আর বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে:
মালাগাসী প্রবাসী ওয়েবসাইট সোবিকা ফাইনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক মুহুর্ত পরে এই চুক্তির ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে (ফরাসী ভাষায়) আর তাদের পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এই প্রতিবেদনের উপর ১০০টার বেশী মন্তব্য দেয়া হয়েছে। পরবর্তী একটা প্রতিবেদনে, সোবিকা ধারনা করেছে (ফরাসী ভাষায়) যে ইন্টারনেটে যে ক্ষোভের প্রকাশ হয়েছে তার থেকে কোম্পানী চুক্তির ব্যাপারটা জানাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
ক্ষোভ অবশ্য এক না সবার ক্ষেত্রে। কিছু ব্লগার মনে করেন যে এই ভূমি চুক্তির ফলে মাদাগাস্কার উপকৃত হতে পারে কারন এই ভূমির কিছু অংশে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কমিউনিটি ব্লগ মালাগাসী মিরার আইকি আরো যোগ করেছেন:
Ny tombontsoa indray kosa raha jerena amin’ny saina tsy miangatra dia :
– ny fanomezana asa ireo tantsaha eny ambanivohitra ka miteraka fidiram-bola maharitra ho azy ireo izany.
– ny fanajariana ireo tany izay tsy noeritreretina fa afaka ambolena na ihany koa tany ngazana ka rahatrizay vita ny fifanarahana izany hoe afaka zato taona dia mba ho moramora ho an’ireo taranaka fara aman-dimby ny hampiasa sy hamboly azy (raha tsy lasa fanan’olom-bitsy indray avy eo)
– raha misy fidiram-bola maharitra ireo tantsaha dia mety ho hita ihany koa ny fiatraikan’izany ka mahasoa ho an’ny manodidina na “effet d’entraînement”. […]
-Asa na tafiditra ao anaty fifanarahana fa mety hihatsara ihany koa ireo lalana sy tambanjotra misy any amin’ireo faritra.
– afaka mifehy ny fiakarana an-tanandehibe ny mpitondra raha misy asa eny ambanivohitra (maîtrise de l’exode rural)
* কৃষকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ যার ফলে রাজস্ব আয়ের নতুন সুযোগ হবে।
* যে ভূমির মূল্য খুব কম তাকে লিজ হবার পর কাজে লাগানো।
* রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে ধারাবাহিক যে পরিবর্তন হবে।
* দেশের ওই অঞ্চলের রাস্তা আর অন্যান্য সুবিধার যে সম্ভাব্য উন্নয়ন হবে।
* একটা সম্ভাব্য উপায় যা গ্রাম থেকে মানুষের চলে আসা রোধ করবে।
এই বিতর্কের পুরো একমাস আগে, গত অক্টোবরে আন্তানানারিভোবাসী একজন উকিল আর ব্লগার আন্ড্রিডাগো দ্যা সাইবার অব্জারভারে ব্লগে বিষ্ময়কর অন্তদৃষ্টি প্রকাশ করেছিলেন ভূমি আর বৈদেশিক বিনিয়োগের আইঙ্গত দিক নিয়ে প্রশ্ন করে। এটা বিষ্ময়কর যে এই লিজ যেসব আইনের অধীনে হচ্ছে তা এই বছরের শুরুতে সংশোধন করা হয়:
সম্প্রতি, নতুন মালাগাসী বিনিযোগ আইনের ধারা ২০০৭-০৩৬ জানুযারী ১৪, ২০০৮ এ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন এনেছে যাতে বিদেশীরা মাদাগাস্কারে ভূমির মালিক হতে পারে। এই আইন অনুযায়ী বিদেশী কোম্পানী বা বিদেশী বিনিযোগকারী (ব্যক্তি যাদেরকে বিনিয়োগ ভিসা দেয়া হয়েছে), নিম্নের শর্ত সাপেক্ষে মালাগাসী ভূমি কিনতে পারবে:
১) ভূমি শুধুমাত্র পেশাগত সাথে ব্যবহৃত হবে। তারা যা মালাগাসী সরকারকে কথা দিয়েছে তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে অন্য কোন ধরনের ব্যক্তিগত ব্যবহার বা স্বার্থের প্রয়োগ নিষিদ্ধ। যদি এমন অবস্থার লঙ্ঘন হয়, সরকার আইনসঙ্গতভাবে তাদের ভূমি মালিকানা ফিরত নিতে পারে;
২) বিদেশী কোম্পানী বা বিনিযোগকারীকে তার ব্যবসার নকশা জমা দিতে হবে (মাদাগাস্কারে বিনিয়োগ পরিকল্পনা) একটা জনগনের প্রতিনিধির সামনে যার নাম ইডিবিএম (মাদাগাস্কারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বোর্ড)। এই পরিকল্পনায় ব্যাখ্যা আর বর্ণনা করা থাকবে তাদের পরিকল্পিত ব্যবসা আর মাদাগাস্কারে তাদের সম্ভাব্য বিনিয়োগ সম্পর্কে;
৩) বিদেশী কোম্পানী বা বিনিয়োগকারী একটা আনুষ্ঠানিক সম্মতির জন্য আবেদন করবেন যা ‘ভূমি গ্রহনের জন্য ক্ষমতাপ্রদান’ নামে অভিহিত ইডিবিএমের সামনে যাতে তারা আইন্সম্মতভাবে মালাগাসী ভূমি ক্রয় করতে পারে। এই ক্ষমতাপ্রদান যদি করা হয়, তাহলে এটা বিদেশী কোম্পানী বা বিনিয়োগকারীকে একজন মালাগাসীর সমান অধিকার দেবে মালাগাসীতে ভূমি ক্রয় ও তার মালিক হওয়ায়।