ভারত: আতঙ্কগ্রস্ত কলকাতা

কিছুদিন আগে ভোরবেলার কাগজে চোখ রেখে কলকাতা এই হেডলাইন দেখে চমকে উঠেছিল terror alert in Kolkata (আতঙ্কের সতর্কবাণী কলকাতায়)। খবরে বলা হয়েছিল যে ১৫-৩০ নভেম্বরের মধ্যে যে কোন দিন কলকাতা শহরে উগ্রপন্থীদের দ্বারা ধারাবাহিকভাবে বোমা বিস্ফোরণ জাতীয় আক্রমণের সম্ভাবনা আছে। উফ্‌ না! কলকাতা আর্তনাদ করে উঠে তারপর সারা দিন এই ভাবনায় কাটিয়ে দেয় যে সত্যি যদি আক্রমণ আসে তাহলে সে কিভাবে তার মোকাবেলা করবে।

খবরটা চিন্তার বটেই তবে কিছু মানুষের রসবোধ তখনও টিকে ছিল। ব্লগার সায়ন্তনী লিখছেন:

I thought it's remarkable that the authorities can now pinpoint a terrorist attack projection to that acute a point. Fifteen days!! That almost gives you time to pack your bags, picnic hampers and your bedding, put in your toothbrush and air your monkey caps and muffler, so that you can make it warmly out of the city.

আমার মনে হল এটা তো দারুন যে সরকারী কর্তৃপক্ষ আজকাল উগ্রপন্থীদের কার্যকলাপের সময়সূচির এত সুক্ষ্মভাবে পূর্বাভাষ দিতে পারে! ১৫দিন!! এই সময়সীমার মধ্যে তো পোটলাপুটলি গুছিয়ে, ব্যাগ, পিকনিক বাস্কেট, বেডিং, টুথব্রাশ, মাঙ্কি ক্যাপ, মাফলার সব নিয়ে আরামসে শহর ছেড়ে যাবার সময় পাওয়া যাবে

আতঙ্কের হুঁশিয়ারি কলকাতায় আগেও জারি হয়েছে, এই প্রথম নয়। যবে থেকে ভারতের অন্যান্য শহরগুলিতে ধারাবাহিক বোমা বিষ্ফোরণ হয়েছে, কলকাতায় কর্তৃপক্ষ শহরে নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রচেষ্টা করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে এক অতি দূষ্কর কাজ কারণ অক্টোবর- নভেম্বরের দিকে পশ্চিম বঙ্গে তথা কলকাতায় পরপর বেশ কয়েকটি বড় উৎসব পালন হয়।

প্রথমত: ছিল সপ্তাহব্যাপী দূর্গাপূজা, পশ্চিম বঙ্গের সব চেয়ে বড় উৎসব। এই সময়ে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায়, ও প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।

অন্য বছরের মতন এই বছরে সেই ঢল নামলেও এবার কিন্তু অল্পবিস্তর তফাৎ নজরে এসেছিল। হ্যা, নিরাপত্তার কড়াকড়ি। ২০,০০০ এরও বেশি পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল শহর জুড়ে যাতে কোন অঘটন ঘটার সুযোগ না পায়। নিউজ অন ইন্ডিয়া, পিটিআই থেকে উদ্ধৃত করে জানায়

“All pujas, particularly the major ones have been requested to install close circuit television cameras to monitor movement of the people,” Home Secretary Asok Mohan Chakraborty said. Hand held metal detectors, emergency exits and electronic information boards have been made mandatory and the organisers have also been asked to erect watch towers to monitor movements, he said.

“সমস্ত পূজা, বিশেষত বড় পূজাগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর জন্য যাতে মানুষের যাতায়াতের ওপর নজর রাখা যায়,” হোম সেক্রেটারী অশোকমোহন চক্রবর্তী জানালেন। “মেটাল ডিটেক্টর, জরুরী নিস্ক্রমণ দ্বার, ইলেক্ট্রনিক তথ্যের বোর্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ও পূজা সংগঠকদের বলা হয়েছে তারা যেন ওয়াচ টাওয়ারের ব্যবস্থা রাখেন যাতায়াত মনিটর করার জন্য”, তিনি জানান।

আইএএনএস থেকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়াআইডি আরো জানাচ্ছেন কোলকাতার অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে:

Watch towers, hidden cameras and commandos trained in combating militant strikes are the novel features as the city was wrapped in a thick security blanket for the Durga Puja – the main festival of West Bengal…

ওয়াচ টাওয়ার, গোপন ক্যামেরা, আর উগ্রপন্থী আক্রমণ মোকাবেলা করার ট্রেনিং পাওয়া কম্যান্ডোর দল এই সব এখন কলকাতার নতুন বৈশিষ্ট; নিরুপদ্রব দূর্গাপূজার জন্য শহরটি ঢেকে ফেলা হয়েছে একটি পরিপূর্ণ নিরাপত্তার মোড়কে।

তবুও, পুলিশকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী, কমান্ডো, ক্লোজ সার্কিট টিভি অটোম্যাটিক বন্দুকধারী কুইক রেস্পন্স টীম এরই মধ্যে কলকাতা প্রাণভরে মেতে উঠল দূর্গাপূজার আনন্দ উৎসবে (কেনই বা না, সে যে একটা গোটা বছর অপেক্ষা করে ছিল এই দিনগুলিরই জন্য)। কিন্তু মনের এক গোপন কোনায় রয়ে গেল একটা উদ্বেগ, যা সামনে টেনে আনলেন উপাসনা মল্লিক, দ্য ভিউসপেপার এর মাধ্যমে:

Fortunately, my city Kolkata has not witnessed any serial bombings recently, though I am certain that our serene days are counted. I might get blown out at this very moment while I am writing this to you all… It is an unnerving feeling that wakes me up every morning and puts me to sleep each night…

ভাগ্যক্রমে আমার শহর কলকাতায় এখনো পর্যন্ত কোনো ধারাবাহিক বম্বিং হয়নি যদিও আমি জানি যে আমাদের শান্তির দিন শেষ হয়ে এসেছে। এই লেখাটা লিখতে লিখতেই হয়তো আমি টুকরো টুকরো হয়ে ঊড়ে যেতে পারি… একটা চোড়া আতঙ্ক আমায় রোজ সকালে জাগিয়ে তোলে ও রাতে আমায় ঘুমোতে পাঠায়।

অক্টোবর-নভেম্বর মাস আরো তিনটে পূজা নিয়ে আসে কলকাতায় – লক্ষীপূজা, কালিপূজাজগদ্ধাত্রীপূজা

বাঙ্গালিরা আনন্দে মেতে থাকাকালীন কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার দিকে কড়া নজর রাখার প্রচেষ্টা করে। কিন্তু এটা বলতেই হবে যে এতো কড়াকড়ি আরামপ্রিয় বাঙ্গালির মনে একটা চাপ সৃষ্টি করছিল। কতদিন এইভাবে “হাই এলার্টে” থাকা যায়? উত্তর হিসেবে কলকাতাবাসীরা তাদের নিজেদের যুক্তি খাড়া করতে শুরু করে কেন কলকাতা একটি নিরাপদ শহর যেখানে মানুষ নিশ্চিন্তে বাস করতে পারে, নানান সতর্কবানী উপেক্ষা করে (আমরা তো আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কবাণীও আরামসে উপেক্ষা করি তাই না?)।

সায়ন্তনী তার ব্লগে লিখছেন:

The general consensus on the impending terrorist insurgency in kolkata, is that it will not happen. because the terror mongers live in Kolkata and they happen to make regular trips to the capital and all over India to do there jobs, like say a normal factory worker would on a regular basis, travel to far out places by local trains, to earn his daily bread. Hence who gives a damn about what the local nostradamus's say? As it is the Met office can't predict the weather.

কলকাতার সাধারণ মানুষের বিশ্বাস যে এই শহরে উগ্রপন্থীরা আক্রমন করবে না। কারন তারা এই শহরে থাকে ও কলকাতা থেকে রাজধানি দিল্লী ও দেশের নানান প্রান্তে গিয়ে তাদের কাজকর্ম করে আসে যেমন কোনো ফ্যাক্টরী কর্মী ট্রেনে করে তার দৈনিক কাজকর্ম করতে যায়। তাই স্থানীয় নস্ত্রাদামুস কি বলল তাতে কি যায় আসে? (আমাদের আবহাওয়া দফ্তরও তো আবহাওয়া সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না)।

সাধারণ বাঙ্গালীর ভাবনার প্রতিফলন পাওয়া যায় সায়ন্তনীর বাবার আত্মবিশ্বাসী ভাষায়

“They're not going to attack. No one attacks there own house.”

ওরা এখানে কিছু করবে না। নিজের বাড়িতে কেউ আক্রমন করে না।

কিন্তু ওরা কারা? আমরা কি তা জানি? আর আমাদের বাড়ি কি সত্যিই নিরাপদ নাকি ভিতর থেকে ঘুণপোকা তাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে? হয়তো সময়ই তার উত্তর দেবে।

ফটো ক্রেডিট – অপর্ণা রায়

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .