ভারত: কলকাতার যুবরাজ অবসরে গেলেন

অনেক ভারতবাসীর হৃদয়ে নভেম্বর ৯ তারিখটি আঁকা থাকবে কারন এই দিন ‘অফসাইডের দেবতা’ গাঙ্গুলী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। সৌরভ গাঙ্গুলি ভারতের সব থেকে সফল টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক যিনি তার সাথে খেলা অনেক তরুন ক্রিকেটারকে সহায়তা করেছেন তাদের খেলোয়াড়ী পেশার উৎকর্ষ সাধনে।

Ganguly
সৌরভ গাঙ্গুলী: সৌজন্যে ফ্লিকার ব্যবহারকারী হাসমিল এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স এর লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত

গাঙ্গুলী তার দেশে পরিচিত ‘দাদা’ আর কলকাতার যুবরাজ’ নামে এবং এখনো লাখ লাখ মানুষের ছেলেবেলার স্বপ্নের সাথে সংযুক্ত। এটা শুধু সামান্য একটা খেলার ব্যাপার না।

স্যান্ডম্যান তার ব্লগ ‘সে লা ভি’ তে লিখেছেন যে দাদার ভক্ত হওয়ার মানে কি:

আমি বরাবর দাদার একজন ভয়নক ভক্ত। ভয়নক অবশ্যই সেই শব্দ, সেইসব পাঠকদের জন্য যারা আমার কথায় আঁতকে উঠছেন। কারন কানপুরের শেঠ আনন্দ রাম জায়পুরিয়া স্কুলের, ২০০৪ সালের ব্যাচের ১২বি ক্লাসের যে কাউকে জিজ্ঞাসা করেন তারা সমর্থন করবে যে আমি একবার উত্তপ্ত এক বিতর্কে ৫০ জনের পুরো এক ক্লাসের সাথে লড়েছিলাম তাকে (গাঙ্গুলীকে) নিয়ে। বিগত বছরগুলো ধরে আমার ব্যক্তিত্বের বিকাশে দাদার প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে। তাই আমি বিষ্মিত নই যে আমার আসলে লিখতে ইচ্ছা করছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ দিনটি স্মরণে, সবাইকে ধারণা দেবার জন্য যে তার ভক্ত হওয়া বলতে কি বোঝায়।

ভিএমমিনারভা তার ব্যক্তিগত অনুভুতি জানাচ্ছেন ‘সৌরভ গাঙ্গুলী: আমার কাছে তিনি কি‘ লেখায়:

আজকে গাঙ্গুলীর অবসরের সাথে সাথে, আমি একটা শুণ্যতা অনুভব করছি। কারন অন্যান্য কারন ছাড়াও তার সরে যাওয়া আমার ছেলেবেলার একটা অংশের স্মৃতিকে রোমন্থন করাচ্ছে যা নিয়ে আমি এতদিন পর্যন্ত বেঁচে আছি। গাঙ্গুলীর ভারত আমার কাছে অনেক আকাঙ্খার মুহুর্ত মনে করিয়ে দেয়; স্কুল থেকে লুকিয়ে ফলাফল দেখতে যাওয়া, সেইসব বিতর্ক যে রাণী মুখার্জি নাকি সৌরভ গাঙ্গুলী বাংলাকে বেশী ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করে, ৯৯ সালের বিশ্ব কাপের অনুভূতি পুনরুজ্জ্বীবিত করার জন্য মে মাসে বৃষ্টির জন্য আকুল অপেক্ষা, বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট রাত জেগে চোখ লাল করে দেখে পরের দিন সকালের ক্লাসে ভুতুরে অবয়ব নিয়ে যাওয়া, ২০০৩ সালের মার্চের বিশ্ব কাপ ফাইনালের সেই রাত, খেলার দিনের বোকার মতো সব কুসংস্কার আরো কতো কি।

ক্রুসেডআরটিভিএমের প্রভীন ‘গাঙ্গুলী: আমাদের নিজের দাদা‘ শিরোনামে তার লেখায় বলেছেন তরুণ প্রজন্মের জন্য পথ তৈরিতে গাঙ্গুলীর সংশ্লিষ্টতার কথা:

তিনি বেশ কয়েকজন তরুণ যেমন যুবরাজ, হরভজান, শেভাগদের সামনে এনেছিলেন আর ভবিষ্যতের জন্য একটা দল তৈরি করেছিলেন। তিনি তাদেরকে এমনভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে তাদের মধ্যে নিজের কিছু গুণাগুণও ঢুকিয়ে দেন। এই পরিবর্তন স্পষ্ট ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে যখন গাঙ্গুলীর শহরের মাঠে (কলকাতায়) খেলার সময়ে ভারত দল অসম্ভবভাবে পেছন থেকে ঘুরে এসে সিরিজ জিতে নেয়। তখনই দাদার উপাখ্যানের জন্ম হয়। তিনি আসলেই তার দলের সদস্যদের আর সাথে সাথে কোটি কোটি তরুণ ক্রিকেট ভক্তদের বড় ভাই হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।

‘সিলি পয়েন্ট’ এ চায়নাম্যান গাঙ্গুলীকে একটা পোস্ট লিখেছেন ‘মন যেখানে ভীতিহীন- মাথা সেখানে উঁচু থাকে‘ শিরোনামে:

যারা ‘ভারতীয় ক্রিকেট’ বোঝে তাদের মধ্যে খুব কম লোকই আজকে আপনার সাথে দ্বিমত করবে। এটাও নিশ্চিত যে তাদের মধ্য থেকে অনেকে এটা কখনো স্বীকার করবে না। তারা আপনাকে অধিনায়ক হিসাবে চায়নি অথবা আপনাকে ওই পদে বসিয়েছিল যাতে আপনি ব্যর্থ হন। আপনার কারনে আমরা দল হিসাবে, এখন সহজ কোন শিকার না- দেশে বা বাইরে। আপনার দলের সঙ্গী আর বিশ্বের খেলোয়াড়রা স্বীকার করেছে আপনি আমাদের জন্য কি করেছেন, ভারত দলের জন্য।

আপনি আপনার মতো করেছেন। আর কারো কাছে নিজেকে প্রমান করতে হবে না আপনাকে। আপনাকে শুভেচ্ছা।

2 টি মন্তব্য

এই জবাবটি দিতে চাই না

আলোচনায় যোগ দিন -> debabrata pal

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .