মিশর: নোহা মিশরীয়দের ক্ষুদ্ধ করেছে!

গত ২৪ শে অক্টোবর নোহা মিশরবাসীকে গর্বিত করেছিল যখন এক অভূতপূর্ব মামলার রায়ে নোহা রোশদী সালেহকে রাস্তায় জড়িয়ে ধরার অপরাধে যৌন-উত্যক্তকারী শেরিফ গোমাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং সেইসাথে ৫০০১ মিশরীয় পাউন্ড জরিমানায় দন্ডিত হয়েছিল।

ব্লগীয় পরিমন্ডলে নোহার বিজয়টি উদযাপিত হয়েছিল ভালভাবে। ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা নোহার সাহসের প্রশংসায় বেশ কতগুলো গ্রুপ তৈরি করেছিল; নোহা রোশদি’র জন্য সবাই, আমরা সবাই নোহা রোশদি, রাষ্ট্রপতির পদে নোহাকে চাই ইত্যাদি। একইসাথে অন্য দলগুলো মামলার রায় তাদের দেয়ালগুলিতে পোষ্ট করেছিলো এবং তাদের সদস্যদের অভিনন্দনবার্তা এখানে, সেখানে এবং এখানে পাওয়া যাবে (আরবী ভাষায়)।

অক্টোবরের ৩০ তারিখে নোহা মিশরীয়দের ক্ষুব্ধ করে যখন আল মাসরি আল ইয়ুম পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় নোহার আইনজীবি নাগলা আল ইমাম উত্যক্তকারী শেরিফ গোমার পক্ষে আপীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারন তিনি আবিষ্কার করেছেন নোহার জন্ম জাফা’য় এবং সে ইজরায়েলি পাসপোর্টধারী। তার আইনজীবি আরও বলেছেন দেড় বছর আগে নোহা যখন ফ্রান্সে অবস্থান করছিলো তখন সে এক ফরাসি অফিসারকে বিরক্ত করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল।

নোহার সংবাদ আরো একবার মিশরীয় ব্লগস্ফেয়ারে আলোচনার ঢেউ তোলে যেখানে হয় তার বিরুদ্ধে আক্রমণের সুরে অভিযোগ করা হয় না হলে তাকে জোরালোভাবে সমর্থন করা হয়। আল ওলেয়াত আল মোতাইদাত (নারী ঐক্য) তার আইনজীবিকে এখানে বিশ্বাসঘাতক বলে ঘোষণা করেন, অত:পর আল হায়াত চ্যানেলে নোহা এবং তার আইনজীবির মুখোমুখী সাক্ষাতকার এখানে প্রকাশ করেন। এই বাদানুবাদমূলক স্বাক্ষাৎকারে নোহা তার আইনজীবিকে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন। জনৈক মিশরীয় ব্লগার নোহার প্রতিক্রিয়া ছাপেন (আরবী ভাষায়):

নোহা পরিস্কার করে বলেন নাগমা আল ইমাম তার আইনজীবি নন এবং সে তাকে প্রথম দেখে ‘৯০ মিনিট’ নামের এক টিভি শোতে যেখানে তারা দুজনেই অতিথি ছিলেন।  সে শুনানীর সময়টাতে সমর্থক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অফিসিয়াল আইনজীবি হিসেবে নয়। নোহা আরও বলেন নাগলা শুধু খ্যাতির আশায় টিভি ইন্টারভিউ এর আয়োজন করে চলেছে এবং নোহার আইনজীবি হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে চায়। নোহা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

নোহা আরও পরিস্কার করেন যে তার জন্ম ১৯৮১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর লিবিয়ার ত্রিপোলীতে হয়েছিল, জাফায় নয়। চার বছর বয়সে তার পরিবার মিশরে চলে আসে। সে আইনজীবির অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন যে তার মা মিশরীয় এবং বাবা ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত যিনি কখনোই প্যালেস্টাইনে ছিলেন না। তার দাদা ৬০ বছর পুর্বেই মিশরে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। সে আর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে সে মিশরীয় বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন, ২০০৫ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগের স্নাতক।

সবশেষে নোহা বলেন যে অভিযুক্ত উত্যক্তকারীর পক্ষে এই আইনজীবি মিশরীয় আইনের ভিত্তি তে আপীলের দাবি করেছে তা নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি আরো বলেন যে, নাগলার অবস্থান, তার মিথ্যা অভিযোগ এবং পক্ষপাতযুক্ত মুল্যায়ন আইনজীবি হিসেবে তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

দেমাঘীজাতীয়তা এবং যৌন নির্যাতন” শিরোণামের এক পোষ্টে নিচের প্রশ্নগুলিকে তুলে ধরেন (আরবী ভাষায়):

১- ইজরায়েলী বংশদ্ভুত হবার জন্যই কোন মেয়ে কি কায়রো’র রাস্তায় নিরাপদে হাঁটার অধিকারে অস্বীকৃত হন? এমন কোন কি বিধান আছে যা কতিপয় জাতীয়তার ক্ষেত্রে যৌন হয়রানীকে অনুমোদন করে?

২- কোন ব্যাক্তির জাতীয়তা ও তার নিজস্ব মতাদর্শের মধ্যে সম্পর্ক কি?

৩- নাগলা আল ইমামের মিডিয়াকে দেয়া তথ্য কতটুকু সঠিক?

৪- এই আইনজীবি কতটুকু অবগত ছিলেন যে কোন মামলার রায়ে তিনি বাদী এবং বিবাদীর মধ্যে পক্ষ পরিবর্তন করতে পারবেন না?

৫- ঈশ্বরের কোথায় আমাদের বলেছেন যে মানুষকে তাদের জাতীয়তা, ধর্মীয় অথবা রাজনৈতিক পক্ষপাতের জন্য বিচার করতে, তাদের নিজেদেরকে সততার সাথে আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্বেই।

‘বাই বাই নাগলা আল ইমাম‘ শিরোণামের এক পোষ্টে (আরবী ভাষায়) বাসেম সামির নোহাকে অভিনন্দিত করেছেন তার সর্বশেষ বিজয়কে এই বলে যে:

“কোন ইতর কোন নারীকে চলতিপথে যৌন উত্যক্ত করার পূর্বে চিন্তা করবে (আপনার কারণেই) কি সাজা সে পাবে?

এবং ফেইসবুকে ‘যদিও বা সে ইজরায়েলি হয়, তবু সে তার সম্মাণ রক্ষার অধিকার রাখে’ শিরোণামে নতুন গ্রুপ তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে বিপরীত শিবিরে শেডী সামির মন্তব্য করেছেন:

বিচারক নোহার পক্ষে রায় দিয়েছেন কারন সে এক সুন্দরী মহিলা এবং পুরো আদালত সুন্দরী মহিলাদের দ্বারা পূর্ণ ছিলো।

ফেসবুকে “এন্টি-নোহা” নামে এখানে, সেখানে এবং অন্যখানে কতগুলো গ্রুপ তৈরি হয়েছে এবং এখানে আমার লিখিত এক পোষ্টে লোকজন নোহাকে এক গুপ্তচর, যৌন হয়রানীর মামলার মাধ্যমে স্বার্থ সিদ্ধিকারী, এবং সে ইজরায়েলকে একটি সম্মানজনক রাষ্ট্র বলে মিশরকে প্রকারান্তরে অপমান করেছেন -এমন মন্তব্য রেখে গেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .