- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

নেপালী সেনার সাথে গেরিলাদের অঙ্গীভূতকরন নিয়ে বিতর্ক

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, নেপাল, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি, সরকার

দাশাইন [1] আর তিহার [2] উৎসব পালনের জন্য বিরতি নেয়ার পরে, নেপালের রাজনীতিবিদরা আবার তাদের পুরাতন রাজনৈতিক খেলায় কঠোরভাবে মেতেছে। তারা একে অপরের পিছনে লাগা ও দোষ দেয়া শুরু করেছে দেশের জাতীয় সেনাবাহীনিতে মাওবাদীদের ভূতপূর্ব গেরিলা দলকে কি করে একীভূত করা যায় এই প্রশ্নে। এই গেরিলা বাহিনী জনপ্রিয়ভাবে পরিচিত পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নামে।

নেপালের জাতীয় সংসদে বেশী আসনধারী এবং বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে থাকা মাওবাদী দল [3] চাচ্ছে তাদের ভুতপূর্ব গেরিলা যোদ্ধাদের নেপালে জাতিসংঘের মিশন (ইউএনমএমআইএন) এর নজরদারীতে ক্যাম্পে না রেখে মূলধারার সেনাবাহিনীতে নিয়ে আসতে। কিন্তু দেশের অন্য দুটো বড় রাজনৈতিক দলের মনে হচ্ছে না যে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। নেপালী কংগ্রেস সোজাসুজি জানিয়ে দিয়েছে যে তারা মাওবাদীদের এই পরিকল্পনার বিরোধী [4]। নেপালী কমিউনিস্ট পাটি (সংযুক্ত মার্ক্সিস্ট আর লেনিনিস্ট- ইউএমএল) বলেছে যে সরকার পূর্বের করা চুক্তি ভঙ্গ করছে এই দাবীকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে। বিভিন্ন আঞ্চলিক দল তাদের নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যে করে সেনাবাহীনিতে এই গেরিলাদের ঠিকমত অঙ্গীভূতকরন করা যায়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই গোলমেলে।

এই ব্যাপারে ব্লগে বিতর্ক এখনও সংযত পর্যায়ে আছে। খুব কম লোকে এর পক্ষ বা বিপক্ষে বলছে, বেশীরভাগ ব্লগারই সমস্যাটি দূর থেকে দেখে তাদের পর্যবেক্ষন জানাচ্ছে।

ইরিন নিউজ [5] তুলে ধরেছে যে নেপাল কি কি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে ভূতপুর্ব মাওবাদী জঙ্গীদেরকে পুনর্বাসন করতে আর এই প্রক্রিয়া কি করে জাতীয় সেনাবাহিনীর গঠন আর স্থায়িত্বকে প্রভাবিত করতে পারে। তাদের প্রতিবেদন ইঙ্গিত করে যে এই অঙ্গীভূতকরন জাতীয় সেনাবাহিনীর সংহতির জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

“বিদ্রোহের সম্ভাবনা আছে নেপালী সেনাবাহিনীতে যদি ভূতপুর্ব বিদ্রোহীদের অঙ্গীভূতকরন করা হয়,” এমন একজন বিশ্লেষক বলেছেন যিনি নাম উল্লেখ করতে চান নি। পিএলএ গেরিলা যোদ্ধারা আর সেনাবাহিনী কিছুদিন আগেও পরস্পর স্বীকৃত শত্রু ছিল আর তারা প্রায়শ:ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হত, বলেছেন এই বিশেষজ্ঞ।”

অঙ্গীভূতকরন পদক্ষেপ যে প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে তা মাইক ডানহামও তুলে ধরেছে [6]। তিনি জোর দিচ্ছেন মাওবাদীদের দাবীকে প্রতিহত জন্যে নেপালী কংগ্রেস জনসম্মুখে আর আড়ালে যে পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটার উপর:

“পর্দার আড়ালে গুজব শোনা যায় যে কৈরালা (ভুতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী আর নেপালী কংগ্রেস নেতা গিরিজা কৈরালা) তার পুর্বপুরুষের বাড়ী বিরাটনগরে ছুটির সময় কাটিয়েছেন আরেক ভুতপুর্ব প্রধানমন্ত্রী নেপালী কংগ্রেস নেতা শের বাহাদুর দুবের সাথে তার পার্থক্য কমানোর জন্য মিটিং করে। নেপালী কংগ্রেসের মধ্যকার বিবাদ মাওবাদীদের লক্ষ হাসিল করতে সাহায্য করেছে।”

যদিও বেশীরভাগ ব্লগাররা শুধুমাত্র পর্যবেক্ষক থাকার দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে, কেউ কেউ আবেগপ্রবণ হয়ে পক্ষ নিচ্ছে। ব্লগদাই [7] (দাই হচ্ছে বড় ভাইএর নেপালী শব্দ) বলেছে যে তার ‘হ্রদয়ের পরিবর্তন’ হয়েছে আর এখন সে সেনাবাহিনীর সাথে অঙ্গীভূতকরনকে সমর্থন করে। কিন্তু এই ব্লগার বলে যে ভুতপুর্ব মাওবাদী যোদ্ধাদের সরাসরি অঙ্গীভূতকরন না করে, কিছু মান আরোপ করা দরকার:

“আমি বলি, ‘তাদেরকে আসতে দাও!’ তাদেরকে জঙ্গল আর গ্রাম থেকে বের করে এনে তাদেরকে বেতন, প্রশিক্ষণ আর নিয়মানুবর্তিতা শেখানো দরকার। এর সাথে থাকতে হবে সেই সব সশস্ত্র দলের বিরুদ্ধে কঠোর আইন যারা গ্রামে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। অঙ্গীভূতকরনের পর নিজেদেরকে মাওবাদী দাবী করে কোন দল কর্তৃক ভীতিপ্রদর্শন, অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখানো বা দমননীতি আইন সম্মত ধরা হবে না; যেহেতু এমন কোন দলের প্রযোজন হবেনা- শুধুমাত্র নেপালী সেনাবাহিনী ছাড়া।”

ব্লগদাইর অন্য প্রান্তে আছে রেড নেপাল [8] যেই ব্লগ কঠোরভাবে অঙ্গীভূতকরনের বিপক্ষে। এই ব্লগার প্রতিবাদ করেছে “রাজনৈতিকভাবে অনৈতিক সেনাদের না বলেন!” আর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এইসব ভুতপূর্ব গেরিলা যোদ্ধাদের জাতির প্রতি অঙ্গীকার আর স্বার্থের ব্যাপারে:

“কি করে আপনারা রাজনৈতিকভাবে অনৈতিক সেনাদের রাখবেন জাতীয় সেনাবাহিনী হিসাবে? তারা কি দায়িত্বসম্পন্ন থাকবে জাতির প্রতি নাকি আরো বেশি সিপিএন মাওবাদীদের দলগত স্বার্থের প্রতি? শেষেরটা হতে বাধ্য- তাদেরকে যেভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।”